বাচ্চাদের কৃমি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়
ছোট বাচ্চাদের সমস্যাগুলো সবচেয়ে বেশি পরিমাণে দেখা যায় তা হচ্ছে কৃমি সমস্যা। আপনারা অনেকেই জানেন কৃমি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকা, পরিষ্কার টয়লেট ব্যবহার না করা, কিংবা ময়লা হাতে খাবার গ্রহণ করেন। ছোট বাচ্চাদের সমস্যাগুলো সবচেয়ে বেশি পরিমাণে দেখা যায় কেননা তারা ময়লা জিনিস মুখে দেয়া, ময়লার মধ্যে খেলাধুলা করার প্রবণতা বেশি থাকে। কৃমির সমস্যা দেখা দিলে ছোট বাচ্চার পেটে ব্যথা, খাবারের অরুচি এবং শুকিয়ে যাওয়ার মত কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অনেকে ছোট বাচ্চার কৃমি সমস্যা দেখা দিলে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। কিন্তু বাচ্চাদের কৃমি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় জানা থাকলে খুব সহজে ঘরে বসে সমস্যার সমাধান করা যায়। আজকে আমরা বাচ্চাদের কৃমি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় – ছোট বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ নিয়ে আলোচনা করব। আশা করছি যাদের বাচ্চা আছে তাদের জন্য খুবই উপকারী হবে।
বাচ্চাদের কৃমি কেন হয়
বাচ্চাদের কৃমি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের জানতে হবে বাচ্চাদের কৃমি কেন হয়। আপনি যদি কৃমি হওয়ার কারণ জানতে পারেন তাহলে ইন বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অনেকটাই সহজ হবে। কৃমি অনেক কারণে হতে পারে নিচে আমরা এর কয়েকটি প্রধান কারণ গুলি করার চেষ্টা করছি।
- টয়লেটের পর ভালোভাবে হাত পরিষ্কার না করলে
- অপরিষ্কার রাতে খাবার গ্রহণ করলে
- হাতের নখ বড় রাখলে নখ পরিষ্কার না করলে
- ৬ মাসের আগে বুকের দুধ ছাড়া বাইরের খাবার খাওয়ালে
- শ্যাতশ্যাতে স্থানে শিশু খালিপায়ে থাকলে
- অর্ধসিদ্ধ গরুর মাংস খেলে
আমাদের সমাজে প্রচলিত কথা আছে অতিরিক্ত মিষ্টি খেতে দেখলে কি সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা নেই। অর্থাৎ মিষ্টি খেলে কৃমি হয় এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং ছোট বাচ্চাদের জন্য পরিমান মত মিষ্টি খাওয়া অনেক উপকারী এতে তাদের ব্রেন ভালো থাকে।
বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার লক্ষণ
সাধারণত বড় মানুষের কৃমির সমস্যা হলে আমরা খুব সহজে বুঝতে পারি কিন্তু পাচ্ছি না অনেক সময় বুঝিয়ে বলতে পারেন। তাই মা বাবা হিসেবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে কৃমি হয়েছে কিনা। কৃমির লক্ষণ এবং পেট ব্যথার লক্ষণ প্রায়ই হয়ে থাকে। নিচে আমরা বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার লক্ষণ আলোচনা করার চেষ্টা করছি
- বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে মলদ্বারে চুলকানি।
- কোন কারন ছাড়াই ছোট বাচ্চারা যদি খামচি দেয়, কামড় দেয় তাহলে বুঝতে হবে কৃমি সমস্যা বেড়েছে।
- অনেক সময় মলের সাথে কৃমি বের হয়ে আসে। এজন্য কৃমি হয়েছে সন্দেহ হলে বাচ্চাদের মন মোহনের দিকে নজর রাখতে হবে।
- বাচ্চা যদি ঘন ঘন থুথু ফেলে তাহলে ধরে নিবেন হয়ত তার পেটে কৃমি হয়েছে।
- বাচ্চার ঘন ঘন পেটে ব্যথা এবং মুখে খাবারের অরুচি হলে বুঝতে হবে হয়তো কৃমি হয়েছে।
উপরের এই কয়টি বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার প্রধান লক্ষণ। তবে সাধারন পেটে ব্যথা হলেও এই ধরণের কয়েকটি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই চিকিৎসা নেয়ার আগে কনফার্ম হয়নি বেচারা আসলেই কৃমি হয়েছে কিনা।
আরো পড়ুন – বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স – প্রথম বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময়
বাচ্চাদের কৃমির ঘরোয়া চিকিৎসা
অনেকেই মাছের ট্রেনিং হলে সাথে সাথে হসপিটালে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে আমি যেহেতু অপরিষ্কার পরিবেশের কারণে হয়ে থাকে তানি বাচ্চার কৃমি হলে প্রথমে চিহ্নিত না হয় ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকিৎসা নেয়ার চেষ্টা করুন। একটি করে নম্বর সময়ের জন্য বাচ্চা সুস্থ থাকবে। নিচে আমরাবাচ্চাদের কৃমি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করছি
ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ – অনেক মা আছেন যারা অতিরিক্ত পুষ্টি দেয়ার জন্য ছয় মাসের আগে বুকের দুধের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের বাইরের খাবার বাচ্চা থেকে শুরু করে। সমস্যা হচ্ছে ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চা মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোন খাবার পরিপাক করতে পারেনা ভালো হয়। যার ফলে পেটে কৃমি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ছয় মাসের বাচ্চাকে কোন প্রকার বাইরের খাবার দেয়া যাবে না শুধুমাত্র বুকের দুধ ছাড়া।
পরিষ্কার পানি – কৃমির সংক্রমণথেকে বাচার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে পরিষ্কার পানি পান করা। অপরিষ্কার পানির মাধ্যমে কৃমির ডিম বাচ্চাদের অন্ত্রে প্রবেশ করে। ভাইবোনচোদাচুদি বারবার কৃমির সমস্যা দেখা দেয় তাহলে পরিষ্কার পানি পান করানোর চেষ্টা করুন। এতে করে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস দূর করুন – যেমনটা বলেছি ছোট বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার সবচেয়ে বড় একটি মাধ্যম আছে খালি গায়ে হাঁটাহাঁটি করা। বিশেষ করে শ্যাতশ্যাতে পরিবেশ কৃমি হওয়ার আরেকটি বড় উপাদান। খেলাধুলার সময় খেয়াল রাখবেন জুতা পরে থাকে এবং বাচ্চা যেখানে খেলে সেসব যায়গা শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করবেন।
নিয়মিত হাতের নখ কাটুন গোসল করেন – আপনি যতই চেষ্টা করুন বাচ্চারা ময়লা জিনিসে হাত দিবেই। তাই তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিষয়টি বেশি খেয়াল রাখতে হবে। চেষ্টা করবেন সপ্তাহে অন্তত একবার বাচ্চার নখ কাটা এবং পরিষ্কার করা। এবং নিয়মিত হালকা গরম পানি দিয়ে বাচ্চাদের গোসল করা এতে করে শরীরে কৃমির ডিম লেগে থাকলেও তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ছোট বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ
বাচ্চার বয়স ও কৃমির ধরন অনুযায়ী চিকিৎসক ভিন্ন ভিন্ন বাচ্চাকে ভিন্ন ধরনের কৃমির ঔষধ দিয়ে থাকে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দেয়া হোক না কেন তার পরিপূর্ণ নিয়ম ফলো করে এবং সম্পূর্ণ ডোজ পূর্ন করলে খুব সহজেই কৃমির সমস্যা দূর হয়ে যায়। নিচে কৃমির জন্য কার্যকরি কয়েকটি ঔষধের নাম দেয়া হলো।
পাইরেনটাল পামোয়েট – বাজারে মেলফিন বা ডিলেনটিন নামে এই গ্রুপের ঔষধ গুলো পাওয়া যায়। এক বছরের বেশি বয়সী শিশুর জন্য এক ডোজ দিতে হবে। কৃমীর পরিমান বেশি মনে হলে দুই সম্পাত পর ১ মাত্রার আরেক ডোজ দেয়া যাবে।
অ্যালবেনডাজোল – বাজারে এলবেন বা সিনটেল নামে এই গ্রুপের ঔষধ গুলো পাওয়া যায়। দুই বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুর জন্য ৪০০ মিলি গ্রামের এক ডোজ ( দুই চামচ সিরাপ) এবং দুই বছরের কম বাচ্চাদের জন্য অর্ধেক ডোজ দিতে হবে।
উপরের এলইডি কৌশল হচ্ছে বাংলাদেশের বাজারের সর্বাধিক ব্যবহৃত বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ। তবে এই ঔষধ এর বাহিরেও অনেক সিরাপ এবং ট্যাবলেট পাওয়া যায়। আমাদের সাজেশন থাকবে শুরু থেকেই বাচ্চাদের কৃমি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় ফলো করতে পারেন।
বাচ্চাদের কৃমির ওষুধ খাওয়ার নিয়ম
বাচ্চাদের কৃমি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় ফলো করার পাশাপাশি বাচ্চাকে নিয়মিত কৃমির ঔষধ খাওয়ানো ভালো। সাধারণত ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সি বাচ্চাদের প্রতি 6 মাস পর পর কৃমির ঔষধ খাওয়ানো উচিত। এতে করে বাচ্চার কৃমি সংক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাবে।
অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চান বাচ্চাকে কৃমির ঔষধ কখন খাওয়াবেন খাবারের আগে নাকি পরে। এর উত্তর হচ্ছে কৃমির ঔষধ খালি পেটে না ভরা পেটে খাওয়াতে পারেন এতে কোন সমস্যা নেই। ডাক্তাররা বলে থাকেন শুধুমাত্র এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়াতে হয় এছাড়া বাকি যেকোনো ঔষধ খালি বা পেটে খেলে সমস্যা হয় না।
আরো পড়ুন – বাচ্চাদের কাশির সিরাপ – বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম
বাচ্চাদের কৃমি হলে কি খাওয়ানো উচিত
বাচ্চাদের কৃমি হলে কি খাওয়ানো উচিত। যেমনটা আমরা বলেছি বাচ্চাদের কৃমির সমস্যা হলে মেজাজ খিটখিটে থাকে এবং খাবারের রুচি আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। তাই এই সময়ে এমন খাবার দিতে হবে যা অল্পতে শরীরের পুষ্টি পূর্ণ করে। চেষ্টা করতে হবে দুধ ডিম এবং তরল জাতীয় খাবার বেশি দেয়া। এ সময় বাচ্চাকে এমন খাবার দেয়া যাবে না যা অধিক সময় ধরে খেতে হয় কিংবা হজমে সময় নেয়। সুজি, সেমাই এর মত খাবারগুলো নিয়মিত খেতে দিতে পারেন। এ ছাড়া নিরামিষ খিচুড়ি দেয়ার জন্য ডাক্তারের সাজেশন দিয়ে থাকেন।
মোদ্দা কথা হচ্ছে এই সময়ে এমন খাবার দিতে হবে যা আপনার বাচ্চা পছন্দ করে আবার একই সাথে অল্প খাবারের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ হয়। সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন। বিশেষ করে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বাচ্চার মুখের রুচি বাড়বে এবং বিরুদ্ধে ভালো কাজ করবে। সেইসাথে উপরে আলোচনা করা বাচ্চাদের কৃমি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় শুরু থেকেই মেনে চলতে হবে।
বাচ্চাদের কৃমি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায়
উপরে আমরা বাচ্চাদের কৃমি তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় – ছোট বাচ্চাদের কৃমির ঔষধ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনার প্রিয়জন কিংবা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন এতে করে তারা উপকৃত হবে। আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্য ও টেকনোলজি বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট করে থাকি। ভাল লাগ্লে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়ুন। আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে এই পোষ্টের কমেন্ট বক্সে করতে পারেন আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন
- বাচ্চাদের কাশির সিরাপ – বাচ্চাদের সর্দি কাশির ঔষধের নাম
- শিশুর পাতলা পায়খানার ঔষধ – বাচ্চার ডায়রিয়া হলে করনীয়
- বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স – প্রথম বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময়