রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ
পরিপাকতন্ত্রের একটি মারাত্মক রোগ হচ্ছে Bacillary dysentery (রক্ত আমাশয়) । রক্ত আমাশয় অবশ্যই এমন একটি মারাত্মক রোগ যা কারো একবার হলে খাওয়া-দাওয়া চলাফেরা ঘুম একেবারে হারাম হয়ে যায় । তার অস্বস্তির কোন শেষ থাকেনা। অথচ শুরু থেকেই লক্ষন সনাক্ত করে সঠিক চিকিৎসা নিলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আজকের আর্টিকেলে রক্ত আমাশয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। বিশেষ করে রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ, আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
রক্ত আমাশয় কি?
রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের জানতে হবে রক্ত আমাশয় কি।
রক্ত আমাশয় সিগাফ্যাকশনার বা শনি জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে । ইয়ারা সকলে গ্রাম জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। স্যাঁতসেঁতে জায়গা কিংবা অপরিষ্কার জায়গা বা যেখানে বহু লোক একত্রে বাস করে সেখানে এ রোগ বহুল পরিমাণে হয় । এবং ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের শতকরা ১৫ ভাগ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত এবং এই পরিমান দিন দিন বেড়েই চলছে।
আমাশয়ের প্রকারভেদ
আমাশয় মুলত দুই প্রকার হয়ে থাকে।
- অ্যামিবিক ডিসেন্ট্রি
- ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি
রক্ত আমাশয় রোগ হওয়ার কারণ
এনটা নিবা হিস্টোরিকা এবং আর একটি জীবাণু জীবাণুর নাম হচ্ছে শিগিলা জীবাণু গুলো পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণ করে। পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ করে তার কারণে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। এছাড়া এছাড়া মশা মাছি দূষিত পানি এবং নদী নালার পানি খাওয়া, শাকসবজি ভালো করে ধুয়ে না খেলে জীবাণুগুলো খাদ্যের মাধ্যমে হাতের মাধ্যমে খাওয়া মাধ্যমে এটি স্টমাকে চলে যায় যার কারণে এ রোগ হয়ে থাকে।
নিচে রক্ত আমাশয় রোগের প্রধান কয়েকটি কারন উল্লেখ করা হলো
- অপরিষ্কার চলাফেরা করা
- ময়লা পানি ও খাবার গ্রহন
- অনিদ্রা ও অধিক দুশ্চিন্তা
- ইত্যাদি
রক্ত আমাশয় রোগের লক্ষণ
রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার পূর্বে এই রোগের প্রধান লক্ষন গুলো আমাদের জানতে হবে। কেননা এই রোগ শুরুতে সনাক্ত করতে খুব সহজের মুক্তি পাওয়া যায়।
নিচে আমরা রক্ত আমাশয় রোগের প্রধান কয়েকটি কারন ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি
- ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হয়।
- পেট ব্যাথা করে।
- জ্বর 101 থেকে 103 ডিগ্রি হতে পারে।
- রোগীর খিছুনি হতে পারে ।
- পায়খানার সাথে কাঁচা রক্ত বের হতে থাকে।
- পানির স্বল্পতা হয়ে থাকে।
- রোগী দুর্বল হতে থাকে।
রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ
এই ধরনের রক্ত আমাশয় হলে দ্রুত একটি চিকিৎসা মা-বাবারা আশা করেন। খারাপ ধরনের রক্ত আমাশয় যদি হয়, এটি অনেক সময় অন্যান্য অঙ্গে, মস্তিষ্ককে, হাড়কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি থেকে মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে। এ কারণে আমাদের চিকিৎসা দিতে হয়। হলে যেসব চিকিৎসা করতে হয়-
১ রক্ত আমাশা হলে প্রচুর পরিমাণ তরল খাদ্য খাওয়াতে হবে ।
২. Antibiotic খাওয়াতে হবে ,through machine, এজিথ্রোমাইসিন দিনে দুইবার খাওয়াতে হবে
৩ বেশি ব্যাথা হলে টাইমোনিয়াম নিডাল বা সালফেট জাতীয় ঔষধ দিতে হবে দিনে তিনবার।
৫, মানসিক দুশ্চিন্তার জন্য ক্লোবাজাম দিতে হবে
৬, জ্বর বেশি হলে প্যারাসিনটামল দিতে পারেন।
রক্ত আমাশয় রোগ সিরাপ
রোগিকে রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ এর পাশাপাশি কিছু সিরাপ দেয়া যেতে পারে।
- রিবোপ্লাবিন
- সিরাপ
- টযাবলেট
আমাশয় রোগের এন্টিবায়োটিক
আমাশয় হলে প্রথমেই ঘরোয়াভাবে চিকিতসা গ্রহন করতে হবে। এরপর কাজ না হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক নিতে পারেন। কোনভাবেই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত এন্টিবায়োটিক নেয়া যাবে না। সাধারনত ডাক্তাররা যেসব এন্টিবায়োটিক ঔষধা সাজেস্ট করে থাকেন এখানে তেমন কিছু ঔষধের নাম উল্লেখ করা হলো –
- Zox 500 Mg Tablet
- Flagyl 400 Mg Tablet
- Doxicap Capsule
রক্ত আমাশয় রোগ হলে করণীয়
রক্ত আমাশয় হলে শুরু থেকেই কিছু সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। বিশেষ করে খাবার গ্রহনের ক্ষেত্রে সাবধান হতে হবে।
গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, হাঁসের ডিম অনেক সময় এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। বা রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে এগুলো প্রয়োজনীয় না খাওয়াই ভালো ।
প্রচুর পরিমাণ তরল জাতীয় খাদ্য খেতে হবে, তিন মাস পর পর ক্রিমের ঔষধ খাওয়াতে হবে, বাজারের খোলা খাবার খাওয়া যাবে না, বা না খাওয়াই ভালো। জর্দা বিড়ি সিগারেট ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করতে হবে ।
তেল ঝাল ভাজাপোড়া ইত্যাদি না খাওয়াই ভালো। খাবার সব ভালোভাবে ডেখে রাখতে হবে। এবং দূষিত পানি খাওয়া যাবে না । হাত পরিষ্কার রাখতে হবে ভালো করে হাত ধুয়ে খাবার খেতে হবে। এবং মলত্যাগের পর অবশ্যই ভালো করে সাবান সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
আমাশয় রোগীর খাবার তালিকা
উপরে আমরা রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। যেহেতু রক্ত আমাশয় পরিপাকতন্ত্রের একটি রোগ এই রোগ হলে খাবারের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
নিচে আমাশয় রোগীর জন্য বিশেষ কয়েকটি খাবারের নাম উল্লেখ করার চেষ্টা করছি…
- অতিরিক্ত ঝাল জাতীয় যে কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা
- তরল ও নরম খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে
- একসাথে অধিক খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে খেতে হবে
- সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে
- সবচেয়ে মধ্যে লাউ ও পেঁপে নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে
ছোট বাচ্চার আমাশয় হলে করণীয়
সাধারণত জুন-জুলাই মাসে অত্যাধিক গরমের কারণে বাচ্চাদের এই রোগটি বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত বাচ্চাদের আমাশয় 10 থেকে 12 দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায় এবং এই সময়ের মধ্যে তেমন বড় কোন চিকিৎসা করাতে হয় না। অর্থাৎ এ নর্মাল ডায়রিয়া চিকিৎসা মত সাধারণভাবে চিকিৎসা করার মাধ্যমে 10 দিনের মধ্যে আমার সব ভালো হয়ে যায়।
তবে কোনো কারণে যদি 10 দিনের মধ্যে আমার সাথে ভালো না হয় সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শিশুদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ দিতে হবে।
পুরাতন আমাশয় রোগের ঔষধ
আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা ক্রনিক ডিসেন্ট্রি বা পুরাতন আমাশয় বিভিন্ন নামে এই রোগ পরিচিত। এবং এটি আমাদের দেশে খুব বেশি কমন একটি রোগ। আইবিএস থেকে বেচে থাকার সবচেয়ে বড় ও কার্যকরী উপায় হলো বেশি করে পানি পান করা ও নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খাওয়া। নিয়মিত পানি ও সাকসবজি গ্রহন করলে ঔষধ ছাড়া ই অনেক ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়।
এছাড়া প্রোবায়োটিকস ইউজ করা হয়। প্রোবায়োটিকস হলো এক ধরনের উপকারি ব্যকটেরিয়া যা খারাপ ব্যাকটেরিয়াকে দূর করে এবং পুরাতন আমাশয় রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
উপরের দুইটি ধাপে ও যদি কাজ না হয় সেক্ষেত্রে মেবেভেরিন হাইড্রোক্লোরাইড জাতিয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত সেবনে পুরাতন আমাশয় রোগ দ্রুত সেরে যায়।
রক্ত আমাশয় রোগ ঔষধ
রোগীর শরীর থেকে যদি পদার্থ বের হয়ে যায় বা পানি সল্পতা হয় তাহলে ডায়রিয়ার মত হলে রক্ত আমাশয় রোগের ঔষধ এর পাশাপাশি দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
যদি আমরা ব্যক্তিগতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকি তাহলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব এটি একটি সাধারণ সমস্যা। যদি আমরা ভালো করে হাত ধুয়ে খাবার খায় বা শাকসবজি ভালো করে খায় বা বা কাঁচা ফলমূল যদি সরাসরি না খায় ধুয়ে খায় তাহলে এরূপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।
আরো পড়ুন –
- বাচ্চাদের বমির ঘরোয়া চিকিৎসা, বাচ্চাদের বমির সিরাপের নাম 2022
- চোখ উঠা রোগের চিকিৎসা, চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে বিস্তারিত জানুন