গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
অনেকেই গর্ভবতী হলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাদ দিয়ে বিশ্রামের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। কিন্তু অতিরিক্ত বিশ্রাম নিলেও শরীরের ক্ষতি হতে পারে। এ সম্পর্কে অনেকেই অসচেতন। আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় এবং গর্ভাবস্থায় কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করব।
গর্ভবতীদের অতিরিক্ত শুয়ে থাকার ক্ষতিকর দিক
প্রেগনেন্সি মেয়েদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত। তাই এ সময়টাতে নিজের এবং অনাগত সন্তানের খেয়াল রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরী। গর্ভবতীদের অতিরিক্ত শুয়ে থাকার অনেকগুলো ক্ষতিকর দিক রয়েছে।
- অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া
- শরীরের পেশি স্ট্রং না হওয়া
- সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করা
- বাচ্চার মাথা বড় হয়ে যাওয়া
- বাচ্চা নিচের দিকে না নামা
- নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাওয়া
- পেট এবং কোমর ব্যথা হওয়া
- পা ফুলে যাওয়া
- পায়ে পানি জমা হওয়া
গর্ভাবস্থায় কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রমাণিত গর্ভবতী মায়েদের বিশ্রাম নেওয়া অবশ্যই জরুরী। গর্ভাবস্থায় অন্ততপক্ষে ১০ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। রাতে ৮ ঘন্টা এবং দিনে দুই ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। গর্ভবতী মা বিশ্রাম নিলে মা এবং নবজাতকের শরীর ভালো থাকে। তাই গর্ভের সন্তান সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন সঠিক নিয়মে ঘুমানো উচিত।
গর্ভাবস্থায় সঠিক শোয়ার ধরন
প্রেগনেন্সি প্রথম তিন মাসে যে কোনভাবেই শোয়া যায়। তবে পেটের উপর চাপ দিয়ে মোটেও ঘুমানো উচিত নয়। তবে তিন মাসের পরবর্তী সময় থেকে ডেলিভারির আগ পর্যন্ত সবসময় বাম কাত হয়ে শোয়া উচিত।
এতে নবজাতকের শরীরের রক্ত সঞ্চালন হয় এবং নবজাতকের সঠিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কিভাবে শোয়া উচিত নয়
গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে শরীরে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায়। যার ফলে হাঁটাচলা করতে অনেক সমস্যা হয় তবে শোয়ার সময় অবশ্যই এক পাশ হয়ে শুতে হবে। চিৎ হয়ে অথবা ডান হাত হয়ে শোয়া উচিত নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো উপুড় হয়ে মোটেও শোয়া যাবে না। এতে করে বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।
আরো পড়ুন – গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া
গর্ভাবস্থায় কোন কোন কাজ করা ঠিক নয়
গর্ভাবস্থায় অনেকক্ষণ কাজ করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ সময় অনেক ধরনের কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এতে গর্ভবতী মা এবং নবজাতক দুজনের জন্যই নিরাপদ।
- অনেকক্ষণ শুয়ে থাকা
- উপর হয়ে কাজ করা
- পা ঝুলিয়ে বসা
- পেটে চাপ পড়ে এমন কাজ করা
- ভারী কোন কিছু তোলা
- উপর হয়ে শোয়া
- ডানকাত হয়ে শোয়া
- টাইট ফিট জামা কাপড় পরা
- উঁচু জুতা পরে হাটা
গর্ভের সন্তান সুস্থ রাখতে করনীয়
গর্ভের সন্তানকে সুস্থ রাখতে মাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। নিজের এবং সন্তানের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন অবশ্যই কাজগুলো করা প্রয়োজন-
- নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপে থাকা
- আইরন ভিটামিন ট্যাবলেট সেবন করা
- বাচ্চার মুভমেন্ট খেয়াল রাখা
- যথেষ্ট পরিমাণ শরীরের ওজন বাড়ানো
- সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
- স্বাভাবিক হাঁটাচলা করা
- সংসারের টুকিটাকি ছোটখাটো কাজ করা
- দুর্ঘটনা হতে পারে এমন কাজ এড়িয়ে চলা
- সঠিক পরিমাণে পানি পান করা
- প্রয়োজন এর চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া বিপদজনক
অনেক খাবারের মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের শরীর অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। যার ফলে নবজাতকের জন্মের সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় এসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- কাঁচা পেঁপে
- আঙ্গুর
- আনারস
- কাঁচা পেঁপে
- চা
- কফি
- কোল্ড ড্রিংকস
- বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার
- ভাজাপোড়া খাবার
- ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবার
- বাসি বা কয়েকদিন আগে খাবার
- অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি
গর্ভাবস্থায় কতবার চেকআপ করা উচিত
সাধারণত গর্ভাবস্থায় সবচেয়ে ভালো হয় প্রতি মাসে ডাক্তারের কাছে গিয়ে একবার আল্ট্রা সাউন্ড করে রিপোর্ট চেক করালে। তা সম্ভব না হলে অন্তত দুমাস পরপর একবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এতে গর্ভে সন্তান সুস্থ আছে নাকি সে সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।
বিশেষ করে তৃতীয় ট্রাই মিস্টার বা ডেলিভারি পূর্বের তিন মাস অবশ্যই ডাক্তারে পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের টেস্ট গ্রহণ করে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্ন
গর্ভাবস্থায় বিপন্ন পাঁচটি। এগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। নিজের এবং নবজাতকের সুস্থতার জন্য এই বিপদ সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন।
১। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ- ডেলিভারের পূর্বে অথবা ডেলিভারি পরবর্তী সময়ে গর্ভকূল না না পড়লে বা অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হলে অবশ্যই হসপিটালে যেতে হবে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নবজাতকের মায়ের মৃত্যু হতে পারে। তাই এই সিমটোম্প দেখা দিলে সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা উচিত।
২। খিচুনি হওয়া- গর্ভাবস্থায় অথবা ডেলিভারির পরবর্তী সময়ে গর্ভবতী মায়ের খিচুনি দেখা দিলে সাথে সাথেই হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে। কেননা খিচুনি হল আটলম্বিয়ার একলামসিয়ার প্রধান লক্ষণ। তাই খিচুনি দেখা দিলে মা এবং শিশু সুস্থতার জন্যই অতি তাড়াতাড়ি চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
৩। চোখে ঝাপসা দেখা বা তীব্র মাথাব্যথা- গর্ভাবস্থায় বার ডেলিভারির পর মায়েদের বিভিন্ন ধরনের জটিলতা লক্ষ্য করা যায়। তার মধ্যে চোখে ঝাপসা দেখা বা তীব্র মাথাব্যথা অনুভব করা অন্যতম। এগুলো গর্ভবতী বা নবজাতকের মায়ের জন্য বিপদ চিহ। এগুলো দেখা দিলে সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
৪। অতিমাত্রায় জ্বর- গর্ভাবস্থায় অতিমাত্রায় জ্বর হলে বা গর্ভবতী মায়েদের ডেলিভারি পরবর্তী সময়ে তিন দিনের বেশি দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব দেখা দিলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সাধারণত গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া বা তীব্র জর থাকলে শরীরের অন্য কোন কারণের ফলেও এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে। সঠিক সময় চিকিৎসা করলে খুব অল্প সময়ে সব থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
৫। বিলম্বিত প্রসব- ডেলিভারির সময় প্রসব ব্যথা যদি ১২ ঘণ্টার বেশি সময় নেয় এবং বাচ্চার মাথা ব্যতীত অন্য কোন অঙ্গ বের হয়ে আসে তাহলে দেরি না করে অতি শীঘ্রই হাসপাতালে ভর্তি করানো উচিত কেননা এই সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক সময় চিকিৎসা না করলে বিপদ ঘটতে পারে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত
গর্ভাবস্থায় মায়েদের বিভিন্ন শরীরের বিভিন্ন পরিবর্তনের ফলে হরমোনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। গর্ভাবস্থার শুরু থেকে সবচেয়ে ভালো হয় একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবা গ্রহণ করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে, বা বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে না পারলে অবশ্যই সাথে সাথে হাসপাতালে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মন্তব্য
আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে এটি অনেক কাজে লাগবে। গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয় এ সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুতই কমেন্টের রিপ্লাই দেয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া
- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে করনীয়
- শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার