গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয়
গর্ভকালীন সময়ে যেকোনো নারীর জন্য বিশেষ এক সময়। এ সময় শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তার মধ্যে গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা অন্যতম। তবে গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয় কি তা জানলে এই কষ্টকর অবস্থা থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে। আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয় ও এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করব।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক অনেক পরিবর্তন হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী নারীর বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যথা বা ব্যাক পেইন ইন হতে পারে। তবে এ অবস্থায় নিয়মিত ডাক্তারের চেকআপে থাকতে হবে।
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে
- শরীরের তুলনায় পেট বেশি বড় হলে
- শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব থাকলে
- গর্ভকালীন জটিলতা থাকলে
- গর্ভকালীন সময়ে পিঠের উপর চাপ বৃদ্ধি পায় বলে
- প্রসবের পূর্বে ফলস পেইন এর ফলে কোমর ব্যথা হতে পারে
- এ সময় জরায়ুর বৃদ্ধির ফলে শরীরের ভার কেন্দ্র পরিবর্তিত হয়
- মাতৃকালীন দুশ্চিন্তার ফলে কোমর ব্যথা হতে পারে
আরো পড়ুন – বাচ্চা নেয়ার আগের প্রস্তুতি ও খাবারের তালিকা – গর্ভধারণের সঠিক নিয়ম
কখন কোমর ব্যথা হয়
মাতৃকালীন সময়ে মায়েদের অনেক সাবধানতার সাথে চলাফেরা করতে হয়। এ সময় শরীরের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় কোমর ব্যথা হতে পারে। তবে কোমর ব্যথা মাতৃকালীন সাধারণব্যথা কিনা তা অবশ্যই যাচাই করা প্রয়োজন। অনেক সময় প্রেগনেন্সির জটিলতার কারণে ও কোমর ব্যথা হতে পারে।
- সাধারণত রাতে ঘুমানোর সময় এপাশ থেকে ওপাশ ফেরার সময় কোমর ব্যথা হয়।
- এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে কাজকর্মে ভারে কিছু তোলার সময় কোমর ব্যথা হয়
- তৃতীয় ট্রাই মিস্টার এ কোমর ব্যথা বেশি লক্ষ্য করা যায়
- সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কোমর ব্যাথা থাকে
- নিচু হয়ে ঝুকে কাজ করার সময়
কি কি করলে স্বস্তি মিলবে
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয় কি তা জানলে মাতৃকালীন সময়ে মায়েদের অনেক কষ্ট করা অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সাধারণত গর্ভাবস্থায় নিজের খুঁটিনাটি যত্ন নিলেই এই কষ্টকর কবর ব্যথা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
ব্যায়াম- গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের পেশিগুলো দুর্বল হয় না। গর্ভাবস্থায় শরীরের পেশী অনেক বেশি ভার বহন করে থাকে তাই প্রতিদিন ব্যায়াম করলে পিঠের এবং পেটের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা কমানোর জন্য অনেক ব্যায়াম রইয়েছে।
পেশিকে সঠিক ভাজে রাখা- যেহেতু এই অবস্থায় শরীরের অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায় তাই শরীরের বেশি গুলোকে সঠিকভাবে রাখতে হবে। এ অবস্থায় কিভাবে বসবে কিভাবে ঘুমাবে তার উপর নির্ভর করে কোমর ব্যথা বা পেট ব্যথা হয়ে থাকে। এ অবস্থায় ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী চলাফেরা করতে হবে।
হেলান দিয়ে বসা- কোথায় বসতে হলে সোজা হয়ে বসতে হবে। মেরুদন্ড সোজা হয়ে না বসলে কোমরে ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও কোথাও বসতে গেলে কোমরের পাশে বালিশ দিতে হবে।
মাসাজ- গর্ভকালীন সময়ে প্রতিদিন পেট এবং পিঠের মাসাজ করলে কোমর ব্যথা হয় না। প্রতিদিন এই মাসাজ করার জন্য বাড়ির সদস্যদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। অথবা ম্যাসাজ এর জন্য জন্য একজন মাসাজ থেরাপিস্ট এর কাছেও যাওয়া যেতে পারে।
আরামদায়ক জুতা পরা- শরীরের সম্পূর্ণ ওজন পা এবং কোমরের অংশের উপর হয় বলে কোমর ব্যথা হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কোন হিল বা উচু বা শক্ত জুতা পড়া উচিত নয়। সময় নরম এবং আরামদায়ক পাতলা জুতা পরা উচিত।
প্রসূতি বেল্ট- বাজারে বিভিন্ন ধরনের প্রসূতি বেল্ট পাওয়া যায় যা এই প্রসবকালীন সময়ে অনেক বেশি উপকার করে। এই প্রসূতি বেল্ট বা পেটের বেল্ট ব্যবহার করলে পেটে অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে যার ফলে মেরুদন্ডের উপর প্রভাব পড়ে না।
ভারী জিনিস বহন করা- সাধারণত গর্ভাবস্থায় ভারী জিনিস বহন করতে ডাক্তাররা নিষেধ করেন তাই এ অবস্থায় কোনো ভারী জিনিস তোলা উচিত নয়। ভালো জিনিস তোলার ফলে শরীরের বেশিতে এবং মেরুদন্ডে প্রভাব পড়তে পারে যার ফলে কোমর ব্যথা হয়।
আংকু পাংচার- পাংকু পাংচার সাধারণত একজন শিক্ষকের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। এটি গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা উপশমে অনেক উপকারী।
পিঠ সোজা রাখা- গর্ভকালীন সময়ে যেখানেই বসা বা দাঁড়ানো হয় সব সময় পেট সোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে। প্লেট সোজা না রাখলে কোমর ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দীর্ঘসময়ের কাজ না করা- অনেক কর্মজীবীর মা গর্ভকালীন সময়ে দীর্ঘ সময় একই স্থানে বসে নিজের কর্ম ক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন। একই কাজ অনেক সময় না করে কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নিয়ে করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করলে কোমর ব্যথা হতে পারে।
ঢিলেঢালা পোশাক পরা- গর্ভাবস্থায় সবসময় ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরা উচিত কেননা এ সময় ঢেলেঢালা পোশাক না পড়লে পিঠ এবং পেটের উপর চাপ পড়ে। যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এবং কোমর ব্যথার কারণ হতে পারে
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম
আধুনিক সময় গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম রয়েছে।গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয় কাজগুলো সম্পর্কে জানলেও অনেকের কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম সম্পর্কে জানা নেই।
কার্ডিও ভাস্কুলার ব্যায়াম- গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা কমানোর ব্যায়াম গুলোর মধ্যে কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম অন্যতম। প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য হাটা, মাঝে মাঝে ধীরে সাঁতার কাটা এই ব্যায়ামের অন্তর্ভুক্ত। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার বার এই ব্যায়াম করা উচিত।
কিগাল ব্যায়াম- গর্ভাবস্থায় পিঠের ব্যথা কমাতে কিগাল ব্যায়ামও করা যেতে পারে। এর জন্য প্রথমে মাটিতে বসুন বা শুয়ে থাকুন। এখন পেলভিক মেঝে ভিতরের দিকে প্রসারিত করুন, তবে এই ব্যায়াম করার সময় উরু, পেট বা নিতম্বে কোনও অস্বস্তি অনুভব করলে এই ব্যায়াম করা উচিত নয়।
শ্রোনিতল ব্যায়াম- শ্রেণী তল ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয় উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই ব্যায়ামের মাধ্যমে পিঠের ও পেটের ব্যথা উপশম করা যেতে পারে। প্রথমে পিঠ মেঝের সাথে রেখে পা সমান করে সামান্য উপরের দিকে তুলে কতক্ষণ রাখতে হবে।
দেয়ালে squad- মূলত অনেক ব্যায়ামের মাধ্যমে ব্যাক পেইন বা মেরুদন্ডের ব্যথা দূর করা সম্ভব। তবে গর্ভাবস্থায় সব ব্যায়াম উপযোগী নয়। ব্যায়াম গুলোর মধ্যে এটি অন্যত্ম। এর জন্য প্রথমে দেওয়ালে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং পায়ের মধ্যে ১ থেকে 2 ফুটের একটি কুলুঙ্গি রাখতে হবে। কোমর থেকে প্রাচীর ধাক্কা দেওয়ার সময়, ডানদিকে 90 ডিগ্রিতে হাঁটু গেড়ে নিতে হবে।
বিড়াল এবং উটের ব্যায়াম- মূলত গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম গুলোর মধ্যে এই ব্যায়ামটি কোমরের ব্যথা দূর করতে অনেক কার্য করে। মূলত নিচু হয়ে হাঁটু গেড়ে বিড়ালের মতো হাঁটতে হয় বলে একে বিড়ালের ব্যায়াম বলা হয়। কিছুক্ষণ পরপর মাথা এবং পা পিঠের মাধ্যমে বাঁকা করে ধনুকের মত রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে ঘরোয়া সমাধান
গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয় অনেক ধরনের উপায় রয়েছে। তবে ঘরোয়া ভাবে এই কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। নিজের যত্ন নিলে এবং ঘরে থাকা বিভিন্ন ধরনের হাতের হাতের কাছে জিনিস দিয়েই নিজে যত্ন নেওয়া যায়।
- ডাক্তারের নিষেধ না থাকলে শোয়ার জন্য ম্যাট্রেস বা নরম তোষক ব্যবহার করা
- পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেওয়া
- ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া
- প্রেগনেন্সির আয়রন এবং ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট নিয়মিত সেবন করা
- কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা
- অতিরিক্ত স্ট্রেস না নেওয়া
- হাতে কোন কিছু নেওয়ার সময় দুই হাতে সমানভাবে ওজনের জিনিস নেওয়া
- বসার সময় সোজা হয়ে বসা
- প্রেগনেন্সি পিলো ব্যবহার করা
- সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা না করা
- কোন দিকে ঘুরতে হলে হঠাৎ করে না ঘুরে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তারপর ঘোরা।
- মেঝে থেকে কিছু তুলতে হলে প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করে বসা
কোন কোন খাবার ক্যালসিয়াম থাকে
সাধারণত ঔষধ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাবারের মধ্যে ক্যালসিয়াম বিদ্যমান থাকে। গর্ভাবস্থায় বা গর্ভাবস্থার পূর্বে এ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেলে গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা কম হয়। এবং শরীরের হাড় মজবুত থাকে।
- পালং শাক
- ডিম
- দুধ
- চিনা বাদাম
- সামুদ্রিক মাছ
- টক দই
- আলমন্ড
- সবুজ শাকসবজি
- রঙিন ফল
- ডাল
- চিজ
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
মূলত গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা একটি স্বাভাবিক অবস্থা। কিন্তু মাঝে মাঝে এটি অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। তখন এটিকে হেলাফেলা না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। শরীরের অন্যান্য কারণেও এই কোমর ব্যথা হতে পারে।
- কোমর ব্যাথার তীব্র হলে
- ব্যথা শুরু হলে দীর্ঘস্থায়ী হলে
- কোমর ব্যথার সাথে পেট ব্যথা থাকলে
- প্রস্রাবের সময় ব্যথা থাকলে
- ব্যথা কোমর থেকে এক পা এবং অপর পায়ে হলে
- ব্লিডিং হওয়া
- জ্বর আসা
- কোমর ব্যথার সাথে বুকের ব্যথা করা
মন্তব্য
আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয় ও এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে একটি আর্টিকেল শেয়ার করেছি। গর্ভাবস্থার কোমর ব্যথা হলে করণীয় কোন কিছু সম্পর্কে আপনাদের মন্তব্য বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতিরিক দ্রুতই কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- বাচ্চা নেয়ার আগের প্রস্তুতি ও খাবারের তালিকা – গর্ভধারণের সঠিক নিয়ম
- ছোট বাচ্চাদের পায়খানা না হলে করনীয়
- মেয়েদের তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো ডে ক্রিম কোনটি