ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম
বর্তমান সময়ে কেউ টাকা ফেলে রাখতে চায় না। হাতে কিছু টাকা জমলে আমরা সবাই চাই এই টাকা থেকে কিভাবে লাভ বের করা যায়। কিন্তু চাকরি বা নিজের কর্ম ব্যস্ততায় অতিরিক্ত কোন কাজ বা ব্যবসা করে আয় করা টা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। সাধারনত আমাদের হাতে কিছু টাকা আসলে আমরা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করে ফেলে রাখি আর বছর শেষ ৪-৫% লাভ আসে। কিন্তু আমি আজকে আমরা আপনাদের এমন একটি ডিপোজিট এর কথা বলবো যেটা ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা ডিপোজিট করতে পারবেন এবং বছরে ৯-১১% পর্যন্ত লাভ পাবেন।
আজকে আমরা মূলত ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম, ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার এই ব্যাপারগুলো নিয়ে বিস্তারতি আলোচনা করবো। ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কি, ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম ও কিভাবে টাকা জমা দিতে হয় বা তুলতে হয় এইসব ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে আজকের আলোচনায়।
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কি?
সঞ্চয়পত্র হচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রিত জাতীয় সঞ্চয় স্কিম যা এক ধরনের ফিক্সড ডিপোজিট। অর্থাৎ সহজভাবে বললে আপনি নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান টাকা জমা রাখবেন যার বিনিময়ে বছর প্রতি আপনার একাউন্টে কিছু টাকা অতিরিক্ত যোগ হবে। এবং মেয়াদ শেষে আপনার লাভের টাকা সহ সম্পূর্ন টাকা তুলে নিবেন।
বর্তমানে ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট রাখলে বছরান্তে ৫-৬% লাভ দিচ্ছে সেক্ষেত্রে মানুষ ব্যাংকে বিনিয়োগের আস্থা হারিয়ে ফেলছে। সেহিসেবে ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ৯% থেকে ১১% পর্যন্ত বছরান্তে লাভ দিয়ে থাকে। এছাড়াও ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে তেমন কোন কঠিন নিয়ম নেই। তাই আপনার হাতে যদি কিছু অতিরিক্ত টাকা থাকে তাহলে কোন সমস্যা ছাড়াই ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারেন। নিচে আমরা ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম বিস্তারিত জানবো।
সঞ্চয়পত্র কত ধরনের হয়
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম বলার আগে আমরা চেষ্টা করছি সঞ্চয়পত্র নিয়ে আপনাদের একটা পরিষ্কার ধারনা দিতে। এই পর্যায়ে আমরা দেখবো সঞ্চয়পত্র কত ধরনের হয়। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে মূলত ৪ ধরনের সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়।
- পরিবার সঞ্চয়পত্র
- তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
- পেনশন সঞ্চয়পত্র
- পাচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম সবগুলো সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেই প্রায় একই।
ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার
যারা ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ক্রয় করার পরিকল্পনা করছেন তাদের মনে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি আসে তা হলো টাকা জমা রাখলে লাভ কত দিবে। অর্থাৎ ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কেমন তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আসে। আসলে লাভ নির্ভর করে আপনি কত বছর মেয়াদী ডিপোজিট করবেন তার উপর।
সাধারনত ১ বছর, ২ বছর ও ৩ বছর মেয়াদী হিসাব খোলা যায়।
- ৩ বছরের জন্য ১১.২৮% হারে মুনাফ পাবেন।
- ২ বছরের জন্য ১০.৭০% হারে মুনাফা পাবেন।
- ১ বছরের জন্য ১০.২০% হারে মুনাফ পাবেন।
এছাড়াও একজন ব্যক্তি ৬ মাস পর পর মুনাফা ইত্তলন করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ১ম বছরে ৯.০০%, ২য় বছরে ৯.৫০% এবং ৩য় বছরে ১০.০০% হারে মুনাফা প্রদেয়।
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কত টাকা জমা দেয়া যায়
অনেকেই ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কত টাকা জমা দেয়া যায় সে ব্যাপারে পরিষ্কার জানেন না। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী একক হিসাবে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা এবং যুগ্ম হিসাবে সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ টাকা জমা দেয়া যাবে।
ইতঃপূর্বে একক হিসাবে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা জমা দেয়া যেত। তবে সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী একক হিসাবে ১০ লক্ষ ও যৌথ হিসাবে ২০ লক্ষ টাকা করা হয়েছে।
একক হিসাব বলতে একজন মাত্র ব্যক্তির নামে টাকা জমা হবে আর যৌথ বলতে দুইজন ব্যক্তির নামে একাউন্ট হবে।
আরো পড়ুন – প্রতিবন্ধী আইডি কার্ড করার নিয়ম, অনলাইনে প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট আবেদন
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কিনতে কি কি লাগবে
এখন আমরা ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো দেখে নিবো। সাধারনত ডাকগর সঞ্চয়পত্র বাংলাদেশের যেকোন শ্রেনী পেশার মানুষ ক্রয় করতে পারেন। আর এটি ক্রয়ে তেমন কোন জটিল কাগজপত্র প্রয়োজন হয় না। নিচে আমরা ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কিনতে কি কি লাগবে তা এক নজরে দেখে নিচ্ছি।
১। আবেদন ফর্ম – প্রথমত পূরন করা সঞ্চয়পত্র আবেদন ফর্ম এর প্রিন্ট কপি লাগবে। আপনি চাইলে আবেদন ফর্ম টি সরাসরি অফিস থেকে নিতে পারেন অথবা অনলাইন থেকে ডাউনলোড করেও হাতে পূরন করতে পারেন। ডাকঘর সঞ্চয়পত্র আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
২। জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি– যিনি টাকা জমা রাখবেন তার জাতীয় পরিচয় পত্র ফটোকপি ও পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি রঙ্গিন ছবি লাগবে।
৩। টিন( TIN ) নাম্বার – বর্তমানে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নগদ টাকার বিনিময় ডাকঘর সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবেন কিন্তু ৫ লক্ষ টাকার উপরে ক্রয় করতে চাইলে আপনার Tax Identification Number (TIN) নাম্বার অর্থাৎ আয়কত পরিশোধের কপি দেখাতে হবে।
৪। ব্যাংক স্টেটমেন্ট – টাকা জমা দেয়ার পর যে মানি স্টেটমেন্ট বা রশিদটি প্রদান করবে তা দেখাতে হবে। রশিদের অপর পাশে অবশ্যই ব্যাংক কর্মকর্তার Good for payment এই সিল টি থাকতে হবে। অন্যথায় এই রশিদ গ্রহনযোগ্য হবে না।
৫। নমীনি – প্রতিটি একাউন্টে একজন নমীনি অবশ্যই থাকতে হবে। আপনার অবর্তমানে যে এই টাকা পাবেন তাকে নমীনি বলা হয়। আবেদনের সময় নমীনির জাতীয়পরিচয় পত্র ও ২ কপি ছবি লাগবে।
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম
বর্তমানে ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনা পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে গেছে। প্রথমত আপনি চাইলে মূলত ব্যাংক অথবা পোষ্ট অফিস থেকে ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। প্রথমে উপরে আমরা ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কিনতে কি কি লাগবে তা আলোচনা করেছি। প্রয়োজনিয় কাগপত্র নিয়ে নিকটস্থ পোষ্ট অফিসে চলে যাবেন এবং ডকুমেন্টস ও ডাকঘর সঞ্চয়পত্র আবেদন ফরম জমা দিয়ে খুব সহজেই হিসাব খুলতে পারবেন।
৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নগদ টাকা দিয়ে ক্রয় করতে পারবেন। কিন্তু ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলেই ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
সঞ্চয়পত্র আবেদন ফরম
উপরে ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম আবেদন করার সময় আমরা দেখেছি সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সময় দুই পৃষ্ঠার একটি আবেদন ফর্ম পূরন করতে হয়। আপনি চাইলে সরাসরি ব্যাংক কিংবা জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো থেকে আবেদন ফরম নিয়ে সরাসরি হাতে পূরন করতে পারেন। তবে আপনি যদি আগে থেকেই আবেদন ফরম টি পূরন করে রাখতে চান সেক্ষেত্রে অনলাইন থেকে সঞ্চয়পত্র আবেদন ফরম টি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিযে পূরন করে নিতে পারেন।
অনলাইন থেকে সঞ্চয়পত্র আবেদন ফরম ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। সবধরনের সঞ্চয়পত্রের আবেদন ফরম এই লিংকে পেয়ে যাবেন। আপনি খুব সহজেই ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারেন।
সঞ্চয়পত্র কোথায় কিনতে পাবো
উপরে আমরা ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে সঞ্চয়পত্র কোথায় কিনতে পাবেন বা কোন যায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করবেন। মূলত ৩ যায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যায়।
- জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো
- বাংলাদেশ ব্যাংকা সহ সকল তফশিলি ব্যাংক
- পোষ্ট অফিস
পোষ্টঅফিস সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম
উপরে আমরা ডাকঘর সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম, ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ব্লগ টি আপনাদের উপকারে এসেছে। সঞ্চয় পত্র সম্পর্কিত যে কোন আপডেট তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। আমরা নিয়মিত এই ধরনের কনটেন্ট আপনাদের জন্য পোস্ট করে থাকি। ভালো লাগে আপনার বন্ধু প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
এছাড়া আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত জানার থাকে কমেন্ট বক্সে করতে পারেন। আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন – সুইডেন জব সিকার ভিসা ২০২২, জব অফার ছাড়াই সুইডেন ওয়ার্ক পারমিট ভিসা