বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স
সন্তান সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ ধরনের উপহার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য প্রাণীর মতো সভ্যতা রক্ষার্থে মানুষ পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্ন থেকেই সন্তান নিয়ে আসছে। তবে পূর্বে যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে নারীদের বাচ্চা না হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি প্রধান কারণ হচ্ছে দেরিতে বিয়ে করা এবং বিয়ে করার পর দেরিতে বাচ্চা নেয়া। অনেকেই বাচ্চা নেওয়ার সঠিক বয়স সম্বন্ধে জানে না যার কারণে নির্দিষ্ট বয়সের পর বাচ্চা নিতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। তাদের জন্য আজকের এই ব্লগ টি খুবই উপকারী হতে পারে।
নারীদের জন্মের সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম্বানু নিয়ে জন্ম হয় এবং এ সংখ্যাটা হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ লাখ। অর্থাৎ জন্মের পর নারীদের নতুন করে কোনো ডিম্বানু শরীরে তৈরি হয় না তাই বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিম্বাণুর পরিমাণ কমতে থাকে এবং একসময় গিয়ে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা নারী সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে পুরুষের জন্মের সময় কোন শুক্রাণু নিয়ে জন্মায় না বরং বয়সন্ধিকালে শুক্রাণু তৈরি হবে এজন্য বাচ্চা নেয়ার ব্যাপারে পুরুষের যে নারীদের বেশি সচেতন হতে হবে।
নারীদের প্রজনন ক্ষমতা কত বছর পর্যন্ত থাকে
বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স ছাড়াও অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চান নারীদের প্রজনন ক্ষমতা কত বছর পর্যন্ত থাকে।
সাধারণতঃ নারীরা জন্মের সময় অনেক নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম্বাণু নিয়ে জন্মায় এবং নারীদের শরীরে নতুন করে কোনো ডিম্বানু উৎপন্ন হয় না একজন স্বাভাবিক নারী জন্মের সময় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ ডিম্বাণু নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং এটি তার সারা জীবনের সম্বল। ৩০ বছর পর্যন্ত নারীদের প্রজনন ক্ষমতা সর্বাধিক থাকে কিন্তু ৩০ বছরের পর ডিম্বানুর পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে এবং ৩৫ বছরের সময় নারীদের ডিম্বানু সংখ্যা থাকে মাত্র ২৫ হাজার । এবং ধারণা করা হয় ৪১ বছরের পরে নারীরা প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
তবে এই বয়সে শুধুমাত্র একটি ধারণা মাত্র। জীবনযাত্রার মান এবং শরীরের অবস্থার উপর নির্ভর করে এই বয়স কম বেশি হতে পারে। আমি অনেক নারী আছেন যারা ৫০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা নিতে সক্ষম হয়েছেন আবার এমন অনেক নারী ও আছেন যাদের ৩৫ বছরের পর ডিম্বাণু ফুরিয়ে গেছে। সুতরাং কত বছর পর্যন্ত বাচ্চা হবে তা ডিপেন্ড করে নারীর শারীরিক অবস্থার উপরে। তবে স্বাভাবিক ভাবে একজন নারী ৪১ বছর পর্যন্ত তেমন কোন ঝামেলা ছাড়াই বাচ্চা নিতে পারেন।
বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স
বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স কত এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন আছে আমরা চেষ্টা করব আজকে ব্যাপারটি ভালোভাবে দেখা করতে আমরা যে তথ্য-উপাত্ত করে দিব তার মুখ কারো মনগড়া যায় সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক এবং ডাক্তারদের গবেষণার ফল থেকে বিশ্লেষণ করে বানানো
বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স কিংবা প্রথম বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স নির্ভর করবে আপনি মোট কতটি বাচ্চা নিতে চান তার উপর নিচে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করছি
যদি একটি বাচ্চা নিতে চান
- ৩২ বছর পর্যন্ত সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ
- ৩৭ বছরে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ
- ৪১ বছর হয়ে গেলে সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ
আপনি যদি আপনি একটি বাচ্চা নিতে চান সেক্ষেত্রে ৩২ বছর বয়সে বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করলে সফল সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। ৩৭ বছর বয়সে বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৭৫ শতাংশ। এবং ৪১ বছর বয়সে চেষ্টা করলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। যেমনটা উপরে বলেছি ৪১ বছর বয়সের পর নারীদের ডিম্বানুর সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমতে থাকে। তাই ৩০ বছরের মধ্যে সন্তান নেয়ার চেষ্টা বা পরিকল্পনা না করাই ভালো।
আপনি যদি দুই সন্তান নিতে চান
- ২৭ বছর পর্যন্ত সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ
- ৩৪ বছরে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ
- ৩৮ বছর হয়ে গেলে সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ
অর্থাৎ আপনি যদি সর্বমোট দুটি সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন সেক্ষেত্রে প্রথম সন্তানকে ২৭ বছর বয়সের মধ্যে নিলে সর্বমোট দুটি বাচ্চা নিতে পারবেন এ সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। ৩৪ বছর বয়সে প্রথম বাচ্চা নিলে সর্বমোট দুটি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ এবং যদি ৩৮ বছর বয়সে প্রথমবার চ্যানেল সে ক্ষেত্রে দুটি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশে নেমে আসে।
আপনি যদি তিন সন্তান নিতে চান
- ২৩ বছর পর্যন্ত সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ
- ৩১ বছরে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ
- ৩৫ বছর হয়ে গেলে সম্ভাবনা থাকে ৫০ শতাংশ
এবার আমরা আলোচনা করবো যাদের সর্বমোট তিনটি সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের উপযুক্ত বয়স নিয়ে। আপনার যদি তিনটি বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা থাকে সে ক্ষেত্রে ২৩ বছর বয়সে প্রথম বাচ্চাদের বছর বয়সে নিলে সর্বমোট তিনটে বাচ্চা নিতে পারে পারবেন এই সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। আপনি যদি ৩১ বছর বয়সে প্রথমবার জানেন সে ক্ষেত্রে সর্ব মোট তিনটি কোশ্চেনের সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ এবং ৩৫ বছর বয়স প্রথম বাচ্চা হয়েছে এক্ষেত্রে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশে নেমে আসে। তাই সর্বমোট ৩ টি বাচ্চা নেয়ার ইচ্ছা থাকলে ২৩ বছর বয়সে প্রথম বাচ্চা নেয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
বিয়ের কত দিন পর বাচ্চা নেওয়া ভাল
বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স নিয়ে ইতঃমধ্যেই আলোচনা করেছি। বিয়ে করার কতদিন পর বাচ্চা নেওয়া উচিত এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকেন। সাধারণত বিয়ে করে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে বাচ্চা নেয়া সবচেয়ে ভালো। কেননা এরপরে নারীর শরীরের বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং একসময় বাচ্চা নিতে চাইলেও সম্ভব হয় না। বিশেষ করে বর্তমানে নারীদের বিয়ের পর বাচ্চা না হওয়ার জন্য অনেক টেবলেট কিংবা ইনজেকশন নিয়ে থাকেন এতে করে জরায়ুতে জটিলতা সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীতে যখন বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করে তখন চাইলে নিতে পারেন।
আমাদের সাজেশন হচ্ছে বিয়ের পর ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যেই প্রথম চেষ্টা করুন। সর্বমোট কতটি বাচ্চা নেয়ার পরিকল্পনা আছে সেই অনুযায়ীপ্রথম বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময় তা আমরা উপরে বলে দিয়েছি।
- আরো পড়ুন – লজ্জাস্থানের দুর্গন্ধ দূর করার উপায় – মেয়েদের গোপনাঙ্গে গন্ধ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
নারীদের প্রজনন ক্ষমতা কত বছর পর্যন্ত
বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স নিয়ে উপরে আলোচনা করেছি। এখন আমরা জানবো কতবছর পর্যন্ত নারীরা চাইলে বাচ্চা নিতে পারেন। নারীরা জন্মের সময় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ ডিম্বাণু নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং এটি তার সারা জীবনের সম্পদ। নারীদের শরীরে নতুন করে আর ডিম্বাণু তৈরি হয় না।অন্যদিকে পুরুষরা জন্মের সময় শুক্রানু নিয়ে জন্মগ্রহণ না করলেও বয়সন্ধিকালের পর পুরুষের শরীরে প্রতিদিন ১০ কোটির মত শুক্রাণু তৈরি হয়। বয়সের সাথে পুরুষের তুলনায় নারীরা বাচ্চা জন্ম দেয়ার ক্ষমতা দ্রুত হারিয়ে ফেলেন। তাই একজন নারী হিসেবে আপনাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।
সাধারণত নারীদের ৩০ বছর পর্যন্ত প্রজনন ক্ষমতা ভালো থাকে এবং এই সময় বাচ্চা নিলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ৩০ এর পর থেকে থেকে ডিম্বাণু আশঙ্কাজনকভাবে কমতে থাকে এবং ৩৫ বছরের পর ডিম্বাণু সংখ্যা মাত্র ২৫ হাজার। গবেষণায় দেখা গেছে 90 শতাংশ নারী ৪১ বছর বয়সের পর প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অর্থাৎ ৪১ এর পর বেশিরভাগ নারী চাইলেও মা হতে পারে না।প্রথম বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময়
মেয়েদের পেটে বাচ্চা না আসার কারণ
এখন আমরা প্রথম বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স নিয়ে আলোচনা করেছি। অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের পর প্রথম বাচ্চা নিতে চাইলে পেটে বাচ্চা আসে না। নিচে আমরা কিছু লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো আপনার শরীরে থাকলে বুঝে নিতে হবে হয়তো আপনার শারীরিক কোনো জটিলতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দ্রুত অভিজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিন।
- নিয়মিত মাসিক না হলে।
- ৩৫ দিনের বেশি সময় পর পর মাসিক হওয়া।
- ২১ দিনের কম সময় পর পর মাসিক হওয়া।
- মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব হওয়া ও অতিরিক্ত রক্ত যাওয়া।
প্রথম বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময়
উপরে আমরা বাচ্চা নেওয়ার উপযুক্ত বয়স – প্রথম বাচ্চা নেওয়ার সঠিক সময় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি ব্লগ টি আপনাদের উপকারে এসেছে। যেমনটা আমরা বলেছি ৩০ বছরের মধ্যে বাচ্চা নেয়া সবচেয়ে নিরাপদ। এক্ষেত্রে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না তবে ৩০ বছর পরেও বাচ্চা নেয়া যাবে সে ক্ষেত্রে কিছু শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই যেসব মেয়েরা বিয়ের পর বাচ্চা নিচ্ছেন না দেরি করে নিতে যাচ্ছেন তাদের বলব অবশ্যই দ্রুত সময়ের মধ্যে বাচ্চা নেয়ার চেষ্টা করুন।
ভালো লাগলে আপনার বন্ধু কিংবা আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আমাদের ওয়েবসাইটের ব্লগ পড়তে পারেন। আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পোস্ট করে থাকি। ধন্যবাদ