প্যানিক অ্যাটাক হলে করণীয়
বর্তমান আধুনিক সময়ে মানুষের বিভিন্ন ধরনের মানসিক নতুন রোগের সৃষ্টি হয়েছে। প্যানিক অ্যাটাক তাদের মধ্যে অন্যতম। চিকিৎসার ভাষায় প্যানিক অ্যাটাক বলতে প্রচন্ড ভয় শরীরের কিছু অস্বাভাবিক আচরণ অনুভব করাকে বুঝানো হয়। এ অবস্থা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় এবং প্যানিক অ্যাটাক হলে করণীয় কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
প্যানিক অ্যাটাক কি
প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে ভীতি ও উদ্যোগে তীব্র অনুভূতি। যদি কেউ জীবনে ঘটেছে এমন কোন দুর্ঘটনা কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তাবোধ করে অথবা কঠিন মানসিক চাপ যুক্ত কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। তখন মানসিক যে অবস্থা হয় সেটাকে প্যানিক অ্যাটাক বলে। মানুষ এক দুশ্চিন্তার ফলে মূলত প্যানিক অ্যাটাক হয়।
প্যানিক অ্যাটাক শিশুদের জন্য খুবই ভীতিকর মনে হয়। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের সাধারণত প্যানিক অ্যাটাক বেশি হয়ে থাকে।
প্যানিক অ্যাটাক হবার কারণ
প্যানিক অ্যাটাক এর নির্দিষ্ট কোন কারণ নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। তবে বিশেষজ্ঞরা কিছু কারণ কে দায়ী করে থাকে। যেমন-
- খুব বেশি সময় হতাশা বা খারাপ সময় পার করলে
- অতীতের কোন দুর্ঘটনা মস্তিষ্কে ঘুরে বেড়ালে
- যৌন নির্যাতন এর শিকার হলে
- শারীরিক নির্যাতন
- অতিরিক ধূমপান
- বা মাদকাসক্তির ঘটনা
- পিতা মাতার ডিপ্রেশন
- বাইপোলার ডিসঅর্ডার
- একা একা বসবাস করলে
প্যানিক অ্যাটাক এর লক্ষণ
প্যানিক অ্যাটাক হলে করণীয় কি তা জানার পূর্বে অবশ্যই প্যানিক অ্যাটাক এর লক্ষণ সম্পর্কে জানা থাকা প্রয়োজন।প্যানিক অ্যাটাকের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো-
- বুক ধরফর করা
- হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
- শরীর ঘেমে যাওয়া
- হাত-পা সহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কাপতে থাকা
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
- শ্বাস রোদ হচ্ছে মনে হওয়া
- বমি বমি ভাব
- পেট কামড়ানো বা
- পেট শক্ত হওয়া
- মাথা ঘোরানো
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- অসারতা
- শরীর ঝিনঝিন করা
- ঠান্ডা বা গরম লাগা
- আশেপাশের সবকিছুকে অবাস্তব মনে হওয়া
- মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা
- মৃত্যু হয়ে যাচ্ছে এমন মনে হওয়া
প্যানিক অ্যাটাক হলে করণীয়
হঠাৎ প্যানিক অ্যাটাক শিকার হলে তা থামানোর জন্য নিজেকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সময়মতো সেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে খুব সহজেই প্যানিক অ্যাটাক এর মত সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
- প্রথমেই নিজেকে শান্ত করতে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে হবে। এতে কিছুটা স্বস্তি মিলবে
- যখন এ ধরনের ভয় করবে তখন নিজের যে কাজটা সবচেয়ে ভালো লাগে সেটাই করা উচিত
- মস্তিষ্ককে অন্য কিছুতে ব্যস্ত রাখা। গান গাওয়া টিভি দেখা বা ফোন দেখা হতে পারে একটি ভালো উদাহরণ
- দিনে কিছু সময় নিয়মিত মেডিটেশন করা উচিত। এতে উপকার পাওয়া যায়।
- মানসিক প্রশান্তির জন্য নিয়মিত যোগাসন করার অভ্যাস করতে হবে
- দিনের বেশিরভাগ সময়ে বেশিরভাগ মানুষ অতিরিক্ত চিন্তা করে যা জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। তাই যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
- শরীর ও মনকে ভালো রাখতে নিয়মিত শরীর চর্চা করার অভ্যাস করতে হবে। প্রতিদিন ৩০ মিনিট শরীর চর্চা মানসিক স্ট্রেস অনেকটাই কমিয়ে আনে।
- যার সঙ্গে কথা বলে স্বস্তি পাওয়া যায় তখন তার সঙ্গে কথা বলা উচিত
- চারপাশে এমন কিছু মানুষ থাকে যাদের কথা বলার কোন মাপকাঠি থাকে না সম্ভব হলে এদেরকে এড়িয়ে চলা উচিত
- প্যানিক অ্যাটাক হলে তখনই সাথে সাথে সোজা হয়ে একটি চেয়ারে বসতে হবে। পায়ের পাতা মাটিতে চেপে রাখতে হবে এভাবে পাঁচ মিনিট বসে দীর্ঘশ্বাস নিলে ধীরে ধীরে নরমাল হয়ে যায়।
- নিজেকে ভালো করে হাইড্রেট রেখেও অনেক সময় এ অবস্থায় মোকাবিলা করা যায়
- একবার প্যানিক অ্যাটাক দেখা দিলে পরবর্তী অ্যাটাক হলে কিভাবে তা হ্যান্ডেল করবে তার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে
- এ সময় ঘর থেকে বারান্দায় গিয়েও বসলে অবস্থার উন্নতি হয়
- কোথায় যাবে কাকে ফোন দেবে আগে থেকে ঠিক করে রাখতে হবে
- রিলাক্সেশন পদ্ধতি- প্যানিক অ্যাটাক হলে শরীরের নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। রিলাক্সেশন পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে। দুই হাত শক্ত করে তারপর দশ পর্যন্ত গুনে হাত ছেড়ে দিন। আবার শক্ত করুন এবার একই কাজ কাজ করতে হবে।
প্যানিক অ্যাটাক স্থায়িত্ব
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে প্যানিক অ্যাটাক এর ক্ষেত্রে শারীরিক সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম অত্যাধিক সক্রিয় হয়ে যায়। সাধারণত কারো প্যানিক অ্যাটাক হলে এর স্থায়িত্ব হয় ১০ মিনিট বা তারও বেশি সময়। এরপর শারীরিক প্রতিক্রিয়া আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
চিকিৎসকরা বলেন প্যানিক অ্যাটাককে ভয়াবহ মনে হলেও শরীরের ক্ষতি হয় না। তবে প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হলে খুব দ্রুত তা বন্ধ করার চেষ্টা করতে হবে।
প্যানিক এটাকে কি মৃত্যু হতে পারে
অনেকেই চিন্তায় থাকে প্যানিক অ্যাটাক হলে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিনা। প্যানিক অ্যাটাক হলে মৃত্যু হবার সম্ভাবনা খুবই কম। যদিও রোগীর মনে হয় সে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছে। তবে প্যানিক অ্যাটাক হলে পরবর্তী জীবনে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেড়ে যায়। প্যানিক অ্যাটাক আক্রান্ত হলে অবশ্যই হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে সুস্থ থাকা যেতে পারে।
দীর্ঘদিন প্যানিক অ্যাটাকে ভোগা মানুষের ভেতর আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে পরিবারের সচেতন থাকা উচিত কেননা কোন বিশেষ পরিস্থিতি বা জিনিসে ফোবিয়া তৈরি করতে পারে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে দুশ্চিন্তায় ঢুকতে পারে, সামাজিক যোগাযোগে বাধা সৃষ্টি হয়, ড্রাগেকশন হয়, শিক্ষা বা কর্মক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
প্যানিক অ্যাটাক চিকিৎসা
কিছু ওষধ ও মানসিক থেরাপি প্যানিক অ্যাটাক নিরাময়ে বেশ কার্যকর। তার ভেতর সিবিটি অর্থাৎ কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি সবচেয়ে কার্যকর বলে প্রমাণিত। এই থেরাপিতে থেরাপিস্ট শান্ত হওয়া ট্রেনিং দিয়ে থাকে। চিন্তা নিয়ন্ত্রণ ও মনের শক্তিকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করতে দেখা যায়। প্যানিক অ্যাটাক পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুন – পেটের গ্যাস দূর করার ব্যায়াম
প্যানিক এ্যাটাক ঔষধ
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এসব জটিল রোগের কোন ্মেডিসিন গ্রহণ করা উচিত নয়। তবে প্যানিক অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য এন্টিডিপ্রেসেন্ট ঔষধ গ্রহণ করলে এর কিছুটা তীব্রতা কমে আসে। এছাড়াও benzodayajepinous প্যানিক অ্যাটাক চিকিৎসা করার জন্য এবং এর প্রতিরোধের জন্য ডাক্তারদের সবচেয়ে বেশি সুপারিশকৃত ঔষধ হলো এটি।
শারলিন ৫০ এমজি ট্যাবলেট ও পুনরাবৃত্তিমূলক চিন্তাভাবনা এবং আচরণের মতো আবেগী রোগের জন্য ব্যবহার করা হয়
প্যানিক অ্যাটাক এড়াতে করণীয়
সাইকো থেরাপি সেশনের সময় যেগুলো প্যানিক অ্যাটাক এর বেশি উত্তেজিত করে সেগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে এবং নিম্নলিখিত কাজগুলো করলে জীবনে প্যানিক অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- চিন্তা নিয়ন্ত্রণ করা
- ক্যাফিন কম পরিমাণে খাওয়া
- যে কোন প্রকার প্রতিরোধে বিকল্প খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা
- একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য মেনু বজায় রাখা
- দুশ্চিন্তা না করা
- কাজের সময় মনোনিবেশ করা
- ঠিকভাবে ঘুমানো
- আশেপাশে মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা
- নিজেকে ব্যস্ত রাখা
- নিজেকে সময় দেওয়া
- নিজেকে খুশি রাখা
ডাক্তারের পরামর্শ
সাধারণত প্রথমবার প্যানিক অ্যাটাক বিপদজনক নয়। এমনকি পরে মাঝেমধ্যে প্যানিক অ্যাটাক হলেও ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু প্যানিক এটাকের ফলে জীবনে কোন পরিবর্তন আসলে তা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। এটাতে আগোরাফোবিয়া রূপ নিতে পারে।যা খুবই বিপজ্জনক।
এরকম দুশ্চিন্তা সহজে তাড়ানো যায় না। তাই প্যানিক অ্যাটাক হলে অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন আছে। তাই ঘন ঘনপ্যানিক অ্যাটাক হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
মন্তব্য
আজকে আমরা প্যানিক অ্যাটাক হলে করণীয় বিষয় এবং প্যানিক অ্যাটাক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উপায় গুলো আপনাদের খুবই কাজে লাগবে। প্যানিক অ্যাটাক হলে করণীয় আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আরো পড়ুন –