নখকুনি কি?
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। আমাদের ব্লগের মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি আপনাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন টিপস দিতে। তার ই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা নখকুনি নিয়ে আলোচনা করতে চলে এসেছি। নখকুনি বা নখ চিপা একটি সাধারন সমস্যা। বিশেষ করে যারা গ্রাম সাইডে বসবাস করেন তাদের জন্য এই সমস্যাটা আরো বেশি কমন। আজকে আমরা মূলত নখকুনি কি? নখ চিপার ঔষধ, নখকুনি হোমিও ঔষধ ও নখকুনি ভালো করার উপায় এইসব কিছু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ। আশা করছি এই ব্লগটি সম্পূর্ন পড়লে নখকুনি বা নখচিপা নিয়ে বিস্তারতি জানতে পারবেন। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
নখকুনি কি? নখকুনি হচ্ছে মূলত ক্যানডিডা অ্যালবিক্যানস এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমনে হাত ও পায়ের নখের কোনায় পূজ জমা, ব্যথা হওয়া ও ফুলে যাওয়া ই আমরা বাংলা ভাষায় নখকুনি বা নখচিপা বলি। তারমানে নখের চিপায় এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমনে হয়ে থাকে।
নখকুনি কেন হয়
নখকুনি বা নখচিপা কি এটা আমরা সবাই কম বেশি জানি। কিন্তু প্রশ্ন হহে নখকুনি কেন হইয়। আমরা অনেকেই জানি না নখকুনি কেন হয়। কারন আপনি যদি না জানেন নখকুনি কেন হয় তাহলে এর থেকে বেচে থাকতে পারবেন না। তাই চলুন নখচিপার মূল কারন টা আগে জেনে নেয়া যাক।
- নখকুনি যেহেতু মূলত ক্যানডিডা অ্যালবিক্যানস এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমনে হয়ে থাকে তাই আপনাকে মূলত এই ছত্রাক থেকে বেচতে হবে।
- নখচিপা হাত ও পায়ের নখে হতে পারে। তবে সাধারনত পায়ের নখে বেশি হয়। তাই পায়ের নখের দিকে বেশি যত্নশীল হতে হবে।
- নখের কোনা পরিষ্কার না করলে নখ চিপা হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই নখের কোনার ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষ করে যারা মাঠে কাদায় কাজ করেন তারা বাইরে থেকে এসে নখের কোনা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- ময়লা পানিতে হাটার কারনে নখচিপা হতে পারে। ময়লা পানিতে সুক্ষ ও ছোট ছোট অনেক ধুলা কনা থাকে যা আপনার নখের কোনায় আটকে গিয়ে নখচিপা সৃষ্টি করে।
- বাজেভাবে নখকাটা, অতিরিক্ত ম্যানিকিউর করা, টাইড জুতা পরার কারনে নখে ক্ষত সৃষ্টি হওয়া।
- অন্যকোন ভাবে নখে ক্ষত সৃষ্টি হলে সেখানে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনেও নখচিপা হতে পারে।
নখকুনি রোগের লক্ষন
নখফুলে গেলেই বা নখ লাল গেলেই আপনার নখকুনি হয়েছে বিষয় টা আমন না। নখকুনির বিশেষ কিছু লক্ষন থাকে যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন এটা নখচিপা বা নখকুনি হয়েছে। এবং সে হিসেবে ঔষধ গ্রহন করতে পারবেন।
প্রাথমিক অবস্থায় নখ ফুলে যাওয়া ও নখ লাল হয়ে যাওয়া এই রকম সমস্যা গুলো দেখা দেয়। কয়েকদিন পর নখ প্রচন্ড লাল হয়ে যায় ও ব্যথা হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ সনাক্ত করে চিকিতসা নিলে প্রাথমিক অবস্থায় ই ভালো হয়ে যায়। তবে চিকিতসায় অবহেলা করলে নখে ইনফেকশন হয়ে পুজ তৈরি হওয়া ও ময়লা রক্ত বের হতে পারে। পুজ ও রক্ত বের হলে বুঝবেন নখচিপা বাজে অবস্থায় আছে এবং দ্রুত এর চিকিতসা করাতে হবে।
নখকুনি ভালো করার উপায়
যেমনটা আমরা উপরে বলেছি নখকুনি মূলত নখের পাশে ছত্রাক ও ময়লা জমার কারনে হওয়া ইনফেকশন ছাড়া কিছু ই না। তাই নখকুনি ভালো করার উপায় আলোচনা করার আগে এটা আপনাকে বুঝতে হবে পরিষ্কার থাকা ই এই রোগ থেকে বাচার একমাত্র উপায়। অর্থাৎ নিয়মিত নখ পরিষ্কার করা ও নখের যত্ন নেয়া প্রধান উপায় এই রোগ থেকে বেচে থাকার। এর পর ও যদি এই রোগ দেখা দেয় তাহলে প্রথমে ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বল করলে আশা করা যায় ঠিক হয়ে যাবে।
- হালকা গরম পানিতে কিছু সময় পা ডুবিয়ে রাখুন। গরম পানিতে ১০ মিনিটের মত আক্রান্ত নখ ডুবিয়ে রাখলে ছত্রাক কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার এইভাবে করলে আঙুলের ব্যথা অনেকটাই কমে যাবে।
- বাসায় লিকুইড ডেটল বা সেভলন সব বাসায় ই থাকে। সেভলন খুবই ভালো এন্টি ভ্যাক্টেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সময় নখের গোড়া ভালোভাবে পরিষ্কার করে দুই ফোটা করে ডেটল বা সেভলন দিয়ে ঘুমাবেন। এভাবে ৫ থেকে ৭ দিন টানা এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে আশা করা যায় নখচিপা সেরে যাবে।
- একবোল হালকা গরম পানিতে এক টেবল চামচ ইপসম লবণ মিশিয়ে সেখানে পা ডুবিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট করে দিনে দুইবার এটি করবেন। এভাবে সপ্তাহ খানেক এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে আশা করা যায় ব্যথা কমে যাবে।
- দুই কাপ হালকা গরম পানিতে ১ টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এরপর আক্রান্ত আঙুল টি ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে করে সাথে সাথে ব্যথা কিছুটা প্রশমন হবে।
- নখচিপায় আক্রান্ত নখে এক দুই ফোটা দেশী লেবু (কাগুজি লেবু) রস দিন। লেবুর রস খুব ভালো এন্টিব্যাক্টেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। এভাবে টানা ৩ দিন এই পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেন।
- নখ কাটার সময় নখের মাথা গোলা করবেন না। এই ভুল টা আমাদের প্রায় সবাই করে থাকে। নখের মাথা গোল করে কাটলে কোনা খালি থাকে আর সেখানে ময়লা জমে ইনফেকশন সৃষ্টি হয়। তাই নখ কাটার সময় নখের মাথা সমান রাখুন।
- নখকুনি বা নখচিপা যেহেতু নখের কোনায় ময়লা জমার মাধ্যমে হয়। তাই সর্বদা নখের বিশেষ করে পায়ের নখ পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। কারন পরিষ্কার রাখলে আশা করা যায় সমস্যা অনেক কম হবে।
ব্রেস্ট টিউমার কী, ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ, চেনার উপায় ও করনীয়
নখের রোগ প্রতিরোধ করার উপায়
নখচিপা রোগ বা নখকুনি যেহেতু ছত্রাক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে তাই আপনি এই রোগ প্রতিরোধ করতে হলে ছত্রাক থেকে বেচে থাকতে হবে এটাই মূল কথা। আমরা কিছু সাজেশন দিতে পারি যেগুলো ফলো করলে আশা করা যায় আপনি এই রোগ থেকে পরিত্রান পাবেন।
- নখ পরিষ্কার করতে হবে, নখ কাটার সময় নখের কোন গোল করা যাবে না। কারন নখের কোনা গোল করলে ময়লা জমার সুযোগ হয়। তাই নখ কাটার সময় নখের মাথা সোজা ই রাখতে হবে।
- যারা প্রতিদিন লম্বা সময়ের জন্য মোজা পরেন তারা পরিষ্কার মোজা পরতে হবে।
- জুতা পরার সময় অতিরিক্ত টাইট ও ফিটিং জুতা এভোয়েড করে চলুন। কারন অতিরিক্ত টাইট জুতা নখকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
- নখ কাটার সময় ব্লেড ব্যবহার করা উচিত নয়। নেইল কাটার দিয়ে নখ কাটুন। কারন ব্লেড দিয়ে নখ কাটতে গেলে অনেক সময় নখ অসমান ও বেশি কাটা হয়ে যায়।
- কাঠি বা শলা দিয়ে নখের কোন খোচাবেন না।
- পায়ে বাতাস লাগার ব্যবস্থা করে দিন ও পা পরিষ্কার রাখুন। সারাদিন মোজা পরে থাকা উচিত নয়। যদি একান্তই মোজা পরে থাকতেই হবে তবে চেষ্টা করুন কিছুক্ষন পর পর পা খুলে পরিষ্কার করে আবার পরতে। কারন লম্বা সময় মোজা পরে থাকলে পায়ের যথেষ্ট ক্ষতি হয়।
নখ কাটার সঠিক নিয়ম
আপনারা হয়তো খেয়াল করেছেন উপরে আমরা বার বার ভালোভাবে নখ কাটার উপর বেশ জোর দিয়েছি। কিন্তু ভালোভাবে নখ কাটার সঠিক নিয়ম যদি জানা না থাকে তাহলে এই রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব নয়। নিচে সংক্ষেপে নখ কাটার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বলার চেষ্টা করছি।
- প্রথমত নখ কাটার জন্য নেইল কাটার ছাড়া অন্য কিছু ব্যবহার করা ঠিক না। আমরা সাধারনত ব্লেড ব্যবহার করি নখ কাটার জন্য যা মোটেই ঠিক না। তাই আপনি যদি এখনো ব্লেড ব্যবহার করেন নখ কাটার জন্য তারা দ্রুত এটা ছাড়ার চেষ্টা করুন।
- নখ কাটার সময় নখের মাথা সোজা করে কাটুন। আমরা সাধারনত নকের মাথা গোল করে কাটি কিন্তু নখের মাথা গোল করে কাটলে ময়লা জমতে সহজ হয়। তাই নখ কাটার সময় চেষ্টা করবেন নখের মাথা সোজা করতে।
অনলাইনে গামকা মেডিকেল রিপোর্ট চেক | gamca medical report check online bangladesh
নখকুনি হোমিও ঔষধ
নখকুনি রোগের হোমিও ঔষধ আছে কি না এই প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন। নখকুনি মূলত ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ তাই ঔষধ খেলে এই রোগ ভালো হবে এমন সম্ভাবনা নেই। তাই আমরা সাজেশন করবো এই রোগের লক্ষন দেখা দিলে হোমিও ঔষধ না খেয়ে ডেটল বা স্যাভলনের মত এন্টিব্যাক্টেরিয়াল লিকুইড ব্যবহার করুন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হোমিও ঔষধ কাজ করলেও সময় লাগে। তাই চেষ্টা করবেন হোমিও ঔষধ এভোয়েড করতে।