মরা নখ ভালো করার উপায়

মরা নখ ভালো করার উপায়

আমরা সাধারণত শরীরের অন্যান্য অঙ্গের খুব বেশি যত্ন নিলেও নখের খুব একটা যত্ন নেই না। তবে নখের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ময়লা জমে থাকে ময়লা পরিষ্কার না করার ফলে সাধারণত নখের বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। নখ মরে যাওয়ার বিভিন্ন কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ছত্রাকের আক্রমণ। নখে ব্যথা পাওয়া, নখ উল্টে যাওয়া, এছাড়াও বিভিন্ন কারণে নখ মরে যেতে পারে।

আজকে আমরা মরা নখ ভালো করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – হাত ফাটার ক্রিম এর নাম

নখ মরে যাওয়ার কারণ

১। ত্বকের মতো নখে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস সংক্রমণ করতে পারে। সাধারণ ভাষায় অনেকেই বলে নখ মরে যাচ্ছে বা নখ উঠে যাচ্ছে। ছত্রাক আক্রমণ করলে নখের রং পরিবর্তন হয় প্রথমে সাদা ও পরে কালো হয়ে যায় মুখ মোটা ও পুরু হয়ে যায় তারপর সহজে ভেঙে যেতে থাকে। নখের নিচের ত্বক থেকে নখ আলাদা হয়ে আসে।

২। সাধারণ মানুষের ধারণা দাদ কেবল শরীরের উপরিভাগে বিভিন্ন জায়গায় ত্বকের হয়ে থাকে। জেনে রাখা উচিত নখে ও বিভিন্ন ধরনের দাদ হয়। নখে দাদ হলে নখের আগা ভেঙ্গে যেতে পারে এবং ছোট হয়ে যায়। নখের রং পাল্টায় নখের রং কালো রঙের থেকে কালো রং হয়ে যায় আস্তে আস্তে নখ পড়ে যায়। এটাকে নখ মরে যাওয়া বলে মনে করা হয়।

মরা নখ ভালো করার ঘরোয়া উপায়

আপেল সিডার ভিনেগার- আপেল সিডার ভিনেগারের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যে কোন একটি বালতিতে অ্যান্টিসেপটিক মাউথ ওয়াশ ও আপেল সিডার ভিনেগার একসাথে মিশিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য পা ডুবিয়ে রাখতে হবে। গামলা থেকে পা তুলে তোয়ালেতে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এবার একটি সমপরিমাণ টিটোরি অয়েল থাইমায়েল এবং অলিভ অয়েল মিশিয়ে পায়ের নখের তেলের মিশ্রণ ম্যাসাজ করতে হবে।

আধা ঘন্টার জন্য পায়ে তেল রেখে দেওয়ার পর পরিষ্কার ব্রাশের সাহায্যে নখের আশেপাশের অংশ মাসাজ করে নিতে হবে এবং কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে তোয়ালে সাহায্যে শুকিয়ে নিতে হবে। ইনফেকশনের ধরন অনুযায়ী একদিন পরপর এই নিয়মে পা পরিষ্কার করা যেতে পারে।

হলুদ- হলুদ ত্বকের বিভিন্ন রোগের এন্টিসেপটিক উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি রোগের প্রতিকার এবং রোগটি আবার হওয়া থেকে বিরত রাখে। পানির মধ্যে এক চা চামচ হলুদের গুড়া নিতে হবে। এটি আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করলে প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘণ্টা এভাবে ব্যবহার করলে মরা নখ ভালো হয়ে যেতে পারে। হলুদ ব্যবহার করার পর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

বেকিং সোডা- বেকিং সোডার প্রকৃতি হল এলকেলাইন। এটি মরা নখ কমাতে চমৎকার ঘরোয়া উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি নখে দিয়ে রেখে পরিষ্কারভাবে ধুয়ে মুছে ফেলতে হবে।

পেঁয়াজ- পেঁয়াজের মধ্যে থাকা অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানের কারণে এটি ফাঙ্গাসে সংক্রমণকে ধ্বংস করে। পেঁয়াজের টুকরোকে সামান্য স্লাইস করে নিতে হবে। একে পাঁচ মিনিট আক্রান্ত নখের মধ্যে ঘষতে হবে। ২০ মিনিট রেখে এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

ট্রি টি ওয়েল- মরা নখ ভালো করার জন্য টি ট্রি ওয়েল খুবই উপকারী। এই তেল ব্যবহার করলে নখের ফাঙ্গাল ইনফেকশন দূর হয়ে যায়। এর মধ্যে এন্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান থাকে। সরাসরি একটি তুলো টিউটোরিয়ালে ভিজিয়ে নখে লাগিয়ে নিতে হবে

অলিভ পাতার নির্যাস- এটি এন্ট্রি ফাঙ্গাল উপাদানের সমৃদ্ধ। তাছাড়া এই পাতার মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। এই পাতা নির্যাস নখের ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়া থেকে দূরে রাখে এবং ইনফেকশন হওয়া নখে লাগালে খুবই উপকার পাওয়া যায়।

অরিগান অয়েল- এটি নখের যত্নে খুবই উপকারী। এর মধ্যে থাকে তাইবল যা অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি একই পদ্ধতিতে তুলো ব্যবহার করেন নখে লাগানো যেতে পারে। তবে এর থেকে এলার্জি হতে পারে তাই ব্যবহার করার আগে দেখে নিতে হবে।

চিনি ও লেবুর রসের স্কার্ব- পায়ের নখ কালচে দাগ দূর করতে স্ক্রাবিং খুবই জরুরী। মরা কোষ দূর করে পা মোট নরম ও মসৃণ করে এবং নতুন নখ গজাতে সহায়তা করে। হালকা গরম পানিতে কিছুক্ষণ পা ভিজিয়ে রাখতে হবে এবার লেবু কেটে এর উপর চিনি ছড়িয়ে পাঁচ মিনিট পায়ে সক্রাব করতে হবে। পানি দিয়ে পা ধুয়ে ফেলতে হবে এরপরে মশ্চেরাইজার লাগাতে হবে।

আরো পড়ুন – চিকেন পক্সের দাগ দূর করার ক্রিম

মরা নখ ভালো করার ক্রিম

বাজারে মরা নখ ভালো করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রিম এবং অয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায়। ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে মরা নখ ভালো করার জন্য এন্টিফাঙ্গাল ট্যাবলেট ও মলম জাতীয় অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। নিয়মিত সব ক্রিম ব্যবহারের ফলে মরা নখ নতুন করে গজায়।

নখের বিভিন্ন রোগ এর নাম

নখে সাদা সাদা দাগ- ফাঙ্গাসের আক্রমণে সাধারণত নখে এই সাদা সাদা দাগ হতে পারে। নখের পাশের ত্বকে কোন ফাংগাস আক্রমণের কারণে সাদা দাগ হতে পারে। সাধারণত এই দাগ একমাস পরে স্বাভাবিকভাবে চলে যায়। তবে এক মাসের মধ্যে না চলে না গেলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

নখ ভেঙে যাওয়া- বেশি সাবান ব্যবহার, নেইল পালিশ ব্যবহার থেকে নখ ভেঙ্গে যেতে পারে। অনেকের নখ মোটা হয়ে হলুদ হয় এবং ঝরে পড়ে এটি একটি ধরনের ছত্রাক জনিত রোগ। এতে নখের সামনের অংশ এবং পেছনে চামড়া সঙ্গে লাগানো অংশ সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

নখে ক্যান্সার- বর্তমানে নখে মেলানোমা নামক ক্যান্সার হতে পারে। এতে নখে লম্বা লম্বা কালো দাগ পড়ে থাকে নখের পেছনের অংশ ফুলে ব্যথা হয়। যারা খুব বেশি পানির সংস্পর্শে আসেন এবং রান্নাবান্না এবং কাপড় কাছে বিশেষ করে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এসব সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। একে প্যারালাইকিয়া বলে হঠাৎ করে এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণেও এটি হতে পারে। এন্টিফাঙ্গাল ট্যাবলেট ও মলম লাগাতে হয় নখের এই সমস্যার কারণে।

ত্বকের ভেতর নখ ঢুকে যাওয়া- সাধারণত এই সমস্যা পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এটি ব্যথা যুক্ত এবং রোগীরা দীর্ঘ সময় এই রোগে ভুগেন। নখ ছোট করে মুড়িয়ে না কেটে নখ বড় রাখতে হবে এবং জুতা পরলে নখ যেন জুতায় না লাগে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। তাহলে ত্বকের ভিতরে নখ ঢুকে যাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

নখ ভেঙ্গে যাওয়া রোধে করণীয়

আমাদের মধ্যে অনেকেই নখ ভেঙে যাওয়া সমস্যা ভোগেন। নখ ভালো রাখার ক্ষেত্রে-

  • প্রতিদিনই খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখতে হবে
  • এবং পাশাপাশি নখের যত্ন নিতে হবে
  • নখ ভেঙ্গে যাওয়ার রোধে পানি যথাসম্ভব কম স্পর্শ করা
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা
  • নখ সঠিক কিউটিকল সুস্থ রাখতে হবে
  • নখে উপকারে তেল ব্যবহার করতে পারেন
  • এছাড়াও সমস্যা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন

নখের যত্নে যেসব খাবার প্রয়োজন

সাধারণত ত্বক এবং নখের যত্নের জন্য খাবার তালিকা প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর শাকসবজি এবং ফল রাখা উচিত। তবে কিছু খাবারের মধ্যে জিংকের পরিমাণ খুব বেশি থাকে যার নখের বিভিন্ন রোগ সারাতে সাহায্য করে। যদি কোন ব্যক্তির খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ জিংক না থাকে তবে তারা জিনক সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে পারে। যেমন-

  • গোটা শস্য দানা
  • মুরগির মাংস
  • লাল মাংস
  • কাঁকড়া
  • গলদা চিংড়ি
  • প্রাতরাশের সিরিয়াল
  • সকালের বিভিন্ন নাস্তা কোর্স
  • বাদাম
  • দুগ্ধজাত পন্য
  • ঝিনুক

নখের যত্নে করণীয়

  • থালাবাসন ধরার সময় হাতে প্লাস্টিক কিংবা রাবারের গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে
  • কম দামে বাজে গ্লাভস না কিনে ভালো দেখে কিনতে হবে
  • গ্লাভসকে সব সময় পরিষ্কার এবং শুকনো রাখার চেষ্টা করতে হবে
  • পানি ব্যবহারের পর দ্রুত হাত পা শুকিয়ে নিতে হবে
  • ভিজা অবস্থায় থাকলে নখে বিভিন্ন ধরনের রোগের সংক্রমণ হতে পারে
  • ক্রিত্তিম জিনিস ব্যবহার করা এড়িয়ে যেতে হবে
  • তবে নেলপালিশ বিভিন্ন ধরনের বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহার না করাই ভালো
  • সব সময় হাইড্রেটেট থাকা
  • নখ কামড়ানো এড়ানো
  • নখ ছাটাই করে রাখা
  • নেল পালিশ রিমুভার ব্যবহার না করা
  • নিয়মিত হাত ও পায়ের মশ্চারাইজিং করা
  • কৃতীম নখ ব্যভার করা এড়ানো

মন্তব্য

আজকে আমরা মরা নখ ভালো করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনাদের আর্টিকেলটি অনেক ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

মরা নখ ভালো করার উপায়

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply