মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়া
আমরা যে কোন বিপদে অথবা যে কোন মনের কামনা বাসনা পূরণের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট দুই হাত তুলে দোয়া করি। তবে কিছু দোয়া আমল বা দোয়া কবুলের সময় রয়েছে যেসব সময় বা আমলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নিকট্য লাভ ও মনের আশা পূরণ করা যায়। সেসব আমল করলে আল্লাহ তায়ালা খালি হাতে কোন বান্দাকে ফেরায় না। আজকে আমরা মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়া আমল নামাজ ও তাজবিহ সহ বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – ভালো বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া
মনের আশা পূরণ এর উত্তম দোয়া
মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়া আমল হিসেবে ইসমে আজম খুবই পরিচিত। আলেমদের মধ্যে ইসমে আজম মনের আশা পূরণ করে বলে বহুল প্রচলিত মতামত রয়েছে। ইসমে আজম ছাড়াও দোয়া কবুলের আরো অনেক দোয়া রয়েছে। তবে সেসব আমলের মধ্যে ইসমে আজম অন্যতম। কেউ যদি ইসমে আজমের আমল করে থাকে তবে তার মনের আশা খুব সহজেই পূরণ হয়ে যায়। নবীজির বর্ণনায় রয়েছে ইসমে আজম এমন একটি আমল যা তার পাঠকের সব কামনা বাসনা পূরণ করে দেয়।
আরো পড়ুন – গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া
ইসমে আজম কি?
ইসমে আজম মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়া আমল ও দোয়া নামে পরিচিত। ইসমে শব্দের অর্থ নাম আযম শব্দের অর্থ মহান বা শ্রেষ্ঠ। পুরো ইসমে আজম এর অর্থ হল মহান স্রষ্টার নাম অর্থাৎ মহান আল্লাহ তাআলার অনেক নাম রয়েছে। কুরয়ানে যেসব নামের কথা এসেছে সে নাম গুলোর বিপুল ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। সেগুলো ছাড়াও যেসব নাম আল্লাহর বড়ত শ্রেষ্ঠত্ব সর্বোচ্চভাবে প্রকাশ করে সেগুলোকে ইসমে আজম বলা হয়ে থাকে ।
আরো পড়ুন – মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়া আমল
ইসমে আজম অর্থসহ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু গুরাইদা আল – আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু তার বাবা থেকে বর্ণনা করেছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে তার দোয়া এভাবে বলতে শুনেন-
১। “আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আংতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ”
অর্থ – হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি একমাত্র ইলাহ। তুমি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই। তুমি একক সত্তা স্বয়ংসম্পূর্ণ যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তার সমকক্ষ কেউ নেই।
বর্ণনাকারী বলেন ওই ব্যক্তির মুখে এ বাক্যগুলো শুনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তখন বললেন সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন। নিঃসন্দেহে এই লোক আল্লাহ তাআলা্র নামের উসিলায় তার কাছে প্রার্থনা করেছে। যে নামের উসিলায় দোয়া করা হলে তিনি কবুল করেন এবং যে নামের উসিলায় কোন সাহায্য প্রার্থনা করা হলে তিনি তা দান করেন। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
২। “আল্লাহুম্মা লা ইলাহা ইল্লা আন্তাল মান্নান বাদিউ সামাওয়াতি ওয়াল আরতি ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম”
ইসমে আজম এর ফজিলত
ইসমে আজমের ফজিলত উপকার অনেক বেশি। বিভিন্ন হাদিস এবং উলামায়েদের মতে ইসমে আজম হলো মনের আশা পূরণ করার জন্য আল্লাহ নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় দোয়া। আল্লাহর কিছু গুণবাচক নামকে ইসমে আজম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পাশাপাশি ইসমে আজমের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ও বর্ণনা করা হয়েছে।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত- তিনি বর্ণনা করেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করেছেন এমন অবস্থায় এক লোক নামাজ শেষে এই দোয়া করেছিলেন-
“আল্লাহুম্মা লা ইলাহা ইল্লা আন্তাল মান্নান বাদিউ সামাওয়াতি ওয়াল আরতি ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম”
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তাকে বললেন তুমি কি জানো তুমি কি দিয়ে দোয়া করেছ তুমি দোয়া করেছ ইসমে আজম দিয়ে। এর মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন এবং তার দ্বারা কিছু চাইলে আল্লাহ তা প্রদান করেন। (হাদিস নাম্বার- ৩৫৪৪)
কোরআনে ইসমে আজম
আসমা বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু সূত্রে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু সালাম এরশাদ করেন – মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়া আমল এই দুই আয়াতের মধ্যেই নিহিত তা হলো সূরা বাকারার ৩৬৩ নাম্বার আয়াত এবং সূরা আল ইমরানের প্রথম আয়াত। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নাম্বার- ১৪৯৬)
মনের আশা পূরণ হওয়ার নামাজ
মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়ার পাশাপাশি মনের আশা পূরণ করার জন্য নামাজও পড়তে হয়। তার মধ্যে সালাতুল হাজাত অন্যতম। সালাত মানে নামাজ আর হাজত মানে হল প্রয়োজন অর্থাৎ প্রয়োজনের নামাজ। মানুষের বিশেষ কিছু প্রয়োজন হলে কিংবা শারীরিক মানসিকভাবে কোন দুশ্চিন্তা দেখা দিলে বা ইচ্ছা পূরণের জন্য যে বিশেষ নামাজ পড়তে হয় তাকেই সালাতুল হাজত বা প্রয়োজনের নামাজ বলা হয়ে থাকে।
সালাতের মাধ্যমে আল্লাহতালার কাছে সাহায্য চাওয়া হয় এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- “ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু আসতাইনু বিচসবরে আসসালামাতি ইন্নাল্লাহা মায়া সবিরীন”
অর্থ – হে ঈমানদাররা তোমরা স্বীয় প্রভুর নিকট শবর এবং সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা, আয়াত নাম্বার- ১৫৩)
হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত – তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম যখন কোন সংকটে পড়তেন তখনই সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন।
সালাতুল হাজত পড়ার নিয়ম
সালাতুল হাজত অন্যান্য নামাজের মতই একটি নফল। এই নামাজ পড়ার নিয়ম হলো নামাজের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে ১০ বার সূরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে ১০ বার সূরা এখলাস পাঠ করে নামাজ শেষ করতে হবে এবং নামাজ শেষে সালাম ফিরাবার পর পুনরায় সেজদায় গিয়েছে কোন দরুদ ১০ বার পাঠ করবে এবং এই দোয়াটি দশবার পাঠ করবে। নামাজ শেষ বৈঠকে তাশাহুদ এর পর সালাম ফেরানোর পূর্বে মনের ইচ্ছের বিষয়টির কথা নিয়ত করে এনে মূলত দোয়াটি পাঠ করতে হবে।
“আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া আছে না তাও মাহফিল আখিরাতি হাসানাতাও ও কিনা আজাবান্নার”
অর্থ – হে আল্লাহ! হে আমার পালনকর্তা আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দিন এবং আখেরাতে মঙ্গল দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন।
এভাবে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে বসে বসে জিকির করতে হবে। দূরুদ পাঠ করতে হবে এবং তার সাথে হাদিসে বর্ণিত দোয়াটি পাঠ করতে হবে। দোয়াটি হল-
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু হালিমুল কারিম সুবাহানাল্লাহি রাব্বিল আর শীল আজিম আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিকা ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক ওয়াল গনিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসমিন লা তাদাওলি জাম্বেনা ইল্লা গাফার তাহু ওয়াল হাম্মান ফাররাজতহু ওয়াল হা যাতান হিয়া লাকা রিজান ইল্লা কাজাইতাহা ইয়া আর হামার রাহিমিন”
মনের আশা পূরণ হওয়ার কিছু আমল
- যে কোনদিন রাতে একটা থেকে দুইটার মধ্যে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে হবে
- ৩০০০ বারইয়া মুনতাকিমু
- ১২০০ বার ইয়া কাদের
- ১০০ বার সামিউন পড়তে হবে
- রবিউল আউয়াল মাসে ৭৭৪১ বার আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুল্লাহ এই দোয়াটি পড়তে হবে
- ঘুমানোর সময় পাক পবিত্র হয়ে বিছানায় শুয়ে ডান হাত বুকের উপর রেখে ১১ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করার পর আলিমুল্লাজিয়া ইয়া লামুল যাহরা ওয়াল আখফা এই দোয়াটি ৭০ বার পড়তে হবে।
মনের আশা পূরণের তদবির
মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়া আমল নিয়ে বিস্তারিত জানার পর এখন আমরা মনের আশা পূরণের তদবির নিয়ে বিস্তারিত জানবো।
- তাহাজ্জুদ নামাজ নিয়মিত পড়া
- প্রতি নামাজের পর আল্লাহর কাছে হাত তুলে একাগ্র চিত্তে দোয়া করা
- বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা
- কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা
- নফল রোজা রাখা
- বেশি বেশি দান সদকা করা
- হারাম থেকে বেঁচে থাকা
- যে কোনো ভালো কাজে গরিব অসহায় মানুষকে অর্থ বা শক্তি দিয়ে সাহায্য করা
দোয়া কবুলের কয়েকটি বিশেষ সময়
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী দোয়া কবুল হওয়ার নির্দিষ্ট কিছু সময় রয়েছে। তা হল-
- বৃষ্টির সময়
- আজান এবং একামতের মধ্যবর্তী সময়
- রাত্রে দ্বিপ্রহরে
- ইফতার সামনে রেখে দোয়া করা বা ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে দোয়া করা
- সফরে বসে দোয়া করা
- শুক্রবার থেকে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত পবিত্র সময় দোয়া করা
- তাহাজ্জুতের সময় দোয়া করা
- অসুস্থ ব্যক্তি থেকে দোয়া নেওয়া
দোয়া কবুল না হওয়ার কারণ
উপরে আমরা মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়া আমল ও দোয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পর্যায়ে আমরা দোয়া কবুল না হওয়ার কিছু কমন কারন নিয়ে বিস্তারিত জানবো।
- হারাম থেকে দূরে না থাকা
- ফরজ ইবাদত সঠিকভাবে পালন না করা
- আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা
- দোয়ায় পূর্ণ মনোযোগ না থাকা
- পাক পবিত্র না থাকা
- অন্যায় বা জুলুমের সাথে সম্পৃক্ত থাকা
- খারাপ বা কারো ক্ষতির জন্য অথবা খারাপ উদ্দেশ্যে দোয়া করলে সে দোয়া কবুল হয় না
মন্তব্য
আজকে আমরা মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়া আমল নামাজ ও তাজবিহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- ইউনিয়ন গর্ভবতী কার্ড করতে কি কি লাগে ২০২৩
- ভালো বিয়ে হওয়ার আমল ও দোয়া
- ত্রিশ রোজার ত্রিশ ফজিলত
- গর্ভের সন্তান সুস্থ থাকার দোয়া