চীনে মেডিকেলে পড়ার খরচ
চীন একটি উন্নত দেশগুলোর একটি। মূলত শিক্ষাকে অনেক গুরুত্ব দেয় বলেই খুব তাড়াতাড়ি চীনের অনেক উন্নতি হয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হওয়ার পাশাপাশি এই দেশটি অর্থনীতি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা অর্জন করেছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে চিনে এমবিবিএস পড়তে অনেক ছাত্র-ছাত্রীদের যেতে দেখা যায়।
আজকে আমরা চীনে মেডিকেলে পড়ার খরচ সহ এর সুবিধা, অসুবিধা বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ 2023
চীনে ভর্তির জন্য মেডিকেলের সংখ্যা
চীনে প্রায় এক হাজারেরও বেশি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিছুদিন আগে একটি সংস্থা ১ হাজার সেরা মেডিকেলের তালিকা তৈরি করা যার মধ্যে এশিয়ার দেশ চীনে রয়েছে সর্বোচ্চ ৯২ টি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে চীনের বিশ্ববিদ্যালয় ওভারসির স্টুডেন্ট বা বিদেশি শিক্ষার্থী নেয় না।
আবার যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ার সুযোগ রয়েছে সেগুলো সেগুলো সব কয়টি তে বাংলাদেশীদের জন্য পড়ার সুযোগ হয় না। বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলর অনুমোদিত ৫২ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। চীনে কেউ চাইলে যে কোন একটিতে বিডিএমসি থেকে এলজিবিলিটি সার্টিফিকেট নিয়ে ডাক্তারি পড়তে যেতে পারে।
চীনের মেডিকেলে পড়ালেখার মান
চীনে পড়াশোনার বিশ্বমানের হয় বলেই চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতি বছর রেংকিংয়ে ভালো অবস্থানে থাকে। ওভারসিজ স্টুডেন্টদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষক রাখা হয়। প্রতিটা বিষয়ের জন্য আলাদা ল্যাব, কয়েক লাখ বইসমৃদ্ধ সুবিশাল লাইব্রেরী এবং প্র্যাকটিসের জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল রয়েছে।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য শিক্ষার ক্ষেত্রে অনুবাদক রয়েছে।
চীনে মেডিকেলে পড়ার খরচ কেমন?
চীনে মেডিকেলে পড়ার খরচ সম্পর্কে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েন। চীনে মেডিকেলে পড়ার জন্য টিউশন ফি, হোস্টেল ফি, থাকা খাওয়ার সব মিলিয়ে পাঁচ বছরে নূন্যতম ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়। তবে এখানে বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিকেলের মত কোন এক্সট্রা হিডেন চার্জ বা ডোনেশন সিস্টেম নেই।
এই মেডিকেল কলেজ গুলোতে টিউশন ফি প্রতিবছর একবার পে করতে হয়। তাই ফ্যামিলির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না।
চীনে পড়ার জন্য যোগ্যতা
চীনে এমবিবিএস শেষ করার পর চাইলে দেশে এসে ইন্টার্নেশন করা যায়। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশের মেডিকেলের মতোই মানে নতুন নিয়ম অনুসারে এসএসসি ও এইচএসসি মিলিয়ে ৯ পয়েন্ট থাকতে হবে। সুতরাং এসএসসি ও এইচএসসি তে খারাপ রেজাল্ট করে চীনে পড়তে গেলেও পাস করার পর শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে ডাক্তারি সনদ পাওয়া যায় না।
চীনে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পাওয়ার নিয়ম
অন্যান্য সাবজেক্টে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পাওয়া গেলেও মেডিকেলে পড়ার জন্য খুব কম ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়া হয়। প্রতি বছর ভালো রেজাল্ট করলে নিজ কলেজ থেকে কয়েকজনকে চিনি পড়তে যাওয়ার জন্য স্কলারশিপ দেওয়া হয়। তবে চীনে যে মেডিকেল কলেজে পড়ার ইচ্ছা থাকে সে কলেজের সাথে যোগাযোগ করলে তারা স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা করে দেয়।
চীনের এম্বাসিতে গিয়েও কোন স্কলারশিপের ব্যাপারে আলোচনা করা যায়।
চীনে কেন পড়তে যাওয়া উচিত
- চীনের মেডিকেল ইনস্টিটিউট গুলো এনসিআই এবং ডাব্লিউএইচও অনুমোদিত। যেকোনো স্বীকৃত ইনস্টিটিউট থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে ক্যারিয়ার একটি দুর্দান্ত ক্যারিয়ার যুক্ত করা যায়।
- এক্ষেত্রে নিজের দেশের পাশাপাশি ও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও অনুশীলন করতে পারা যায়
- ইউরোপীয় আমেরিকান এমনকি ভারতীয় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গুলোর চাইতে চীনের মেডিকেল ইনস্টিটিউটের ফি অনেক পার্থক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে চীনের এমবিবিএস কোর্সের মোট ব্যয় অনেক সাশ্রয় হয়।
- এদেশে এমবিবিএস প্রোগ্রামের সামগ্রিক ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম এবং এজন্যই শিক্ষার্থীরা চিনে এমবিবিএস করতে বেশিরভাগ যায়
- দেশটিতে অনেক আধুনিক বিল্ডিং রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। বাজেটের মধ্যে প্রচুর পরিচ্ছন্ন এবং হোস্টেল রয়েছে। চীনে এমবিবিএস অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের খাদ্য পরিবহন এবং আশ্রয় কেন্দ্রের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের চিন্তা করতে হয় না কারণ এ দেশে সবকিছুই যুক্তিসঙ্গত মূল্যে পাওয়া জায়।
- চীনের মেডিকেল কলেজে কোন ভর্তি পরীক্ষা নেই এবং তালিকাভুক্তি দুইটি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর গুলির উপর নির্ভর করে। শিক্ষার্থীর অবশ্যই ক্লাস টু স্তরে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে বিজ্ঞান থাকতে হবে এবং মোট সমষ্টিতে ৭৫% বা তার বেশি হতে হবে।
বাংলাদেশীদের জন্য চীনে পড়ার সুবিধা
- ভর্তি পরীক্ষা লাগে না
- আইইএলটিএস করার প্রয়োজনীয়তা নেই
- বাংলাদেশের মতো একই পাঠ্যক্রমে পড়াশোনা করা যায়
- ৫২ টি বিশ্ববিদ্যালয় বিএমডিসি বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল অনুমোদিত
- চায়না প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় ডব্লিউ এইচ ও বিশ্ব সংস্থা স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত
- সেখানে এমবিবিএস করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়
- বিশ্বের সনামধন্য পাবলিক মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে
- লম্বা ছুটিতে দেশে আসার সুযোগ রয়েছে
- নিরাপত্তার সুবিধা বিশাল
- ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে হোস্টেল সুবিধা ও খাওয়া দাওয়া ব্যবস্থা রয়েছে
- পড়াশুনার খরচ বাংলাদেশের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের চেয়েও কম
চীনে উচ্চশিক্ষার অসুবিধা
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিদেশি শিক্ষক দেওয়া হয় না। চীনা শিক্ষকেরাই পাঠদান করে থাকেন। এতে করে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ চীনারা ইংরেজিতে খুবই দুর্বল। অবশ্য চীনা শিক্ষকদের মধ্যেও কিছু ভালো ইংরেজি জানা শিক্ষক আছেন যারা খুব সুন্দর ও সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন।
তবে চিন্তার কিছু নেই, দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বিদেশি শিক্ষকেরা ক্লাস নেওয়া শুরু করে। তবে চিনি পড়ার অসুবিধার চাইতে সুবিধা বেশি।
চীনা ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা
চীনের হাসপাতালগুলোতে শিক্ষার্থীদের কাজের ক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যা হয় না। পড়ালেখার ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে ছাত্রদের চার-পাঁচ জনের ছোট ছোট গ্রুপ করে দেয়া হয়। প্রতিটা গ্রুপকে সহযোগিতা করার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক বা সমন্বয় থাকে।
ভাষাগত সমস্যা তারাই সমাধান করে দেয়। রোগীর সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে তারাই অনুবাদকের কাজ করে থাকে।
সাবধানতা
বিএমডিসির রেজিস্টার বলেন, বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী মিনিস্ট্রি অফ এডুকেশন অব দ্য পিপল রিপাবলিক অফ চায়না ওয়েবসাইটে টেস্টের মেডিকেল ইউনিভার্সিটি তালিকা দেয়া আছে ওই তালিকার বাইরে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস বা বিবিএস পাস করলে সেই সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে না।
কেননা চীনে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার ফলে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আদেশ বাতিল করা হয়। তাই বাংলাদেশে অনেক শিক্ষার্থী না জেনে বাতিল বা স্থগিতকৃত মেডিকেলের পড়াশোনা চালিয়ে যান এ ধরনের শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট কোন মূল্যায়ন করা হয় না।
মন্তব্য
আজকে আমরা চীনে মেডিকেলে পড়ার খরচ ও চীনে মেডিকেলে পড়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এটি অনেক উপকারে আসবে। চীনে মেডিকেলে পড়ার খরচ সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত রিপলাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –