বাংলাদেশ থেকে কুয়েত যাওয়ার নিয়ম
আসসালামু আলাইকুম। কুয়েত হচ্ছে পৃথিবির সবচেয়ে উন্নত দেশ গুলোর মধ্যে একটি এবং এর টাকার মান পৃথীবির সব দেশের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ সহ ভারত ও পাকিস্তান থেকে প্রতিবছর মূলত কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় অনেক কর্মী বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে যায়। এছাড়াও বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সম্পদশালীরা কুয়েত সিটির সৌন্দর্য্য দেখতে যায়। আজকের ব্লগে আমরা মূলত বাংলাদেশ থেকে কুয়েত যাওয়ার নিয়ম ও বিভিন্ন ধরনের ভিসার দাম ও আবেদনের নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করছি আজকের ব্লগটি ভালোভাবে পড়লে বাংলাদেশ থেকে কুয়েত যাওয়ার নিয়ম নিয়ে আর কোন প্রশ্ন আপনার মনে থাকবে না।
কুয়েত বিভিন্ন ধরনের ভিসা বিস্তারিত
কুয়েত রাজ্য দক্ষিণে সৌদি আরব ও উত্তরে ইরাক বেষ্টিত রাজতান্ত্রিক ও তেল সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। আনুষ্ঠানিক ভাবে কুয়েত রাজ্য পশ্চিম এশিয়ার একটি উপসাগরীয় দেশ। এটি পারস্য উপসাগর এর প্রান্তে পূর্ব আরব, উত্তরে ইরাক ও দক্ষিণে সৌদি আরব দ্বারা পরিবেষ্টিত একটি দেশ। ইরান এর সাথেও কুয়েত এর সামুদ্রিক সীমান্ত রয়েছে। কুয়েত এর উপকূলীয় দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০০ কি মি। কুয়েত সিটি সর্ব বৃহত শহর ও রাজধানী।
কুয়েত বিভিন্ন ধরনের ভিসা বিস্তারিত
কুয়েত প্রবাসীদের জন্য বিভিন্নধরনের ভিসা দিয়ে থাকে। যেমন শ্রমীকদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, ছাত্রদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা, এছাড়া পর্যটকদের জন্য টুরিস্ট ভিসা, মেডিকেল মেডিকেল ভিসা। বিভিন্ন ধরনের ভিসার আবেদনের নিয়ম ও খরচ বিভিন্ন ধরনের ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ ভিন্ন। আমরা আজকের পোষ্টে সব ধরনের ভিসা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
কুয়েত স্টুডেন্ট ভিসা
কুয়েতে যারা পড়তে যেতে চান তারা আমাদের কাছে কুয়েত যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে প্রায় ই জিজ্ঞেস করে থাকে। কারন মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মত কুয়েত ও প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক ছাত্রকে স্কলারশীপ দিয়ে থাকে বাংলাদেশ ও এর ব্যতিক্রম নয়। কুয়েত স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদনের নিয়ম ও খরচ সহ বিস্তারিত নিচে দেয়া হলো
কুয়েত স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস
- আপনার বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। বিশেষ করে আপনি যদি বর্তমানে পাসপোর্ট করতে চান তাহলে আমরা সাজেশন দিবো অনলাইনে স্মার্ট পাসপোর্ট করে নিন। এছাড়াও আপয়ার পাসপোর্টে কমপক্ষে দুইটা খালি থাকতে হবে।
- স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন ফর্ম: সঠিকভাবে পুরনকৃত স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন ফর্ম। ফর্ম আবেদনের ক্ষেত্রে যেনো কোন রকম ভুল না হয়। কারন ফর্মে ভুল থাকলে ভিসা এপ্রুভ না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- কভার লেটার: আবেদনকারীর ভ্রমনের উদ্দেশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশীপের বিস্তারিত, আপনার খরচ কে এবং কিভাবে বহন করবে সেসব বিস্তারতি উল্ল্যখ করে একটি কাভার লেটার লিখতে হবে যা ভিসা প্রদানের পূর্বে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ যাছাই করে দেখবেন।
- আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবেন সেখানে আপনার নাম আসলেই আছে কি না বা আপনি যে স্কলারশীপ নিয়ে পড়তে যাবেন তা আসলেই আপনাকে দেয়া হয়েছে কি না তা যাছাই এর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস শো করতে হবে।
- আপনার সদ্য তোলার ৩ কপি রঙিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগবে।
- টিউশন ফি প্রদানের রসিদ: বাইরের দেশে পড়তে গেলে সাধারনত প্রথম সেমিস্টার ফি দেশে থাকতেই প্রদান করতে হয়। টিউশন ফি প্রদানের রসিদ দেখাতে হবে এটা প্রমান করার জন্য যে আপনি সঠিকভাবে ও সঠিক পরিমান টাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রদান করেছে।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা: আবেদনের সময় মেডিকেল রিপোর্টের ফটোকপি শো করতে হবে এটা প্রমানের জন্য যে আপনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। মেডিকেল রিপোর্ট নেয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এই রিপোর্ট অবশ্যই কোন স্বিকৃত মেডিকেল থেকে হতে হবে।
- জন্ম নিবদ্ধন ও ভোটাই আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রদান করতে হবে।
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ লাগবে।
- IELTS/ TOFEL পরীক্ষা দেয়া থাকলে তা প্রমানের সনদ দেখাতে হবে।
কুয়েত স্টুডেন্ট ভিসা খরচ
এতক্ষন আমরা কুয়েত স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্ট করেছি। এখন জেনে নেয়া যাক কুয়েত স্টুডেন্ট ভিসা
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর প্রমাণীকরণ এর জন্য ভিসা ফি $175 (মার্কিন নাগরিক দের জন্য) সঙ্গে $25। নগদ, মানি অর্ডার বা কোম্পানির চেকের মাধ্যমে ফি প্রদান করতে হবে। পেমেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত চেক গ্রহণ করা হয় না.
কুয়েত কাজের ভিসা/ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা বিস্তারিত
বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে শ্রমিকরা কাজ করতে যায় কুয়েত তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি দেশ। এখন আমরা কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে বিস্তারিত জানানোর চেষ্ট্রা করবো। কুয়েত কাজের ভিসা আবেদনের নিয়ম ও খরচ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিন।
- আপনার বৈধ পাসপোর্ট লাগবে শো করাতে হবে। তবে পারপোর্ট করার ক্ষেত্রে বর্তমানে অনলাইনে করা স্মার্ট পাসপোর্ট করার চেষ্টা করবেন।
- আপনার জাতীয়তা প্রমান করার জন্য স্মার্ট এন আই ডি কার্ড, ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর সাথে সদ্য তোলা দুই কপি ছবি।
- পূর্বের কাজের কোন অভিজ্ঞতা থাকলে সেটা দেখানোর মত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। অর্থাৎ আপনি যদি ইতঃপূর্বে কোথাও কাজ করে থাকেন তাহলে তার প্রমান স্বরূপ কাগজ দেখাতে হবে।
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমান করার জন্য কাগজপত্র ও সবশেষ পাশ করা মার্কশীট ও সার্টিফিকেট।
এছাড়াও সময়ের সাথে ও ভিসার ধরনের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় কাগজ আরো লাগতে পারে। তাই ভিসা আবেদনের নিশ্চিত হয়ে নেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট ভিসা খরচ বিস্তারিত
যারা আমাদের কাছে বাংলাদেশ থেকে কুয়েত যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করা হয় কাজের ভিসা প্রোসেসিং এর খরচ নিয়ে। সাধারনভাবে কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতে খরচ হবে $22। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে চাইলে সেক্ষেত্রে আপনার খরচ একটু বেশি পড়বে। সেক্ষেত্রে প্রায় $80 এর মত খরচ পড়বে।
বাংলাদেশ থেকে সহজে কুয়েত যাওয়ার উপায়
উপরে আমরা কুয়েতের বেশ কিয়েক ধরনের ভিসা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। অনেকে আমাদের কাছে জানতে চান বাংলাদেশ থেকে কুয়েত যাওয়ার নিয়ম কি বা বাংলাদেশ থেকে সহজে কুয়েত যাওয়ার উপায় কি। এখন আমরা সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
বাংলাদেশ থেকে কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যাওয়া টা সবচেয়ে সহজ। আপনি জানলে অবাক হবেন যে, কুয়েতের মূল জনসংখ্যার ৪০% ই বাইরের দেশের। আর এই ৪০% এর বেশিরভাগ ই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের শ্রমিক বা বিভিন্ন পদে চাকরি করে এমন। তাই আপনি যদি সহজে কুয়েত যাওয়ার উপায় জানতে চান তাহলে আমাদের সাজেশন থাকবে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
কুয়েতে কোন কাজের চাহিদা বেশি
যারা বাংলাদেশ থেকে কুয়েত যাওয়ার নিয়ম জানতে চেয়েছেন তাদের কমন একটা প্রশ্ন থাকে কুয়েত কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সত্যি বলতে অন্যান্য দেশের মত কুয়েতে ও সব কাজের ই চাহিদা ভালো মোটামুটি ভালো। তবে কিছু নির্দিষ্ট কাজ আছে যেগুলোর চাহিদা বেশি সাথে বেতন ও খুব ভালো। তাই আপনি যদি কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যেতে চান তাহলে আমাদের পরামর্শ থাকবে আপনি নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন যাতে সেদেশে গিয়ে আপনি নিজের দক্ষতা দেখাতে পারেন।
আমরা এখন বেশি বেতনের কিছু প্রোফেশনের নাম উল্লেখ করবো আপনি চাইলে এর মধ্য থেকে যেকোন একটি পছন্দ করে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন।
- এসির কাজ
- ইলেকট্রিশিয়ান এর কাজ
- পাইপ ফিটিং এর কাজ
- কন্সট্রাকশন এর কাজ
- ড্রাইভিং
- হোটেল ম্যানেজম্যান্ট এর কাজ
- সাটারিং কার্পেটিং
- ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন সেক্টর
উপরের কাজগুলো ছাড়াও বিভিন্ন রকম কাজ আছে যেমন রেস্টুরেন্টে রান্না, ক্লিনার, পার্সোনাল এসিস্টেন্ট তবে উপরের যেকোন একটি টেকনিকাল স্কিল থাকলে আপনার কাজ পাওয়া নিয়ে কোন সমস্যা হবে তাছাড়া আপনার বেতন তুলনামূলক অনেক বেশি হবে। কুয়েতে যেহেতু বিলাশভুল হোটেল ও সুপারশপ অনেক বেশি তাই আপনি কুয়েত ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় গেলে সম্ভাবনা আছে আপনি হোটেল কিংবা সুপারশপে চাকরি পাবেন।
কুয়েতে কাজের বেতন কত
শুধু কুয়েত নয় যেকোন দেশের ই কাজের বেতন নির্ভর করে আপনি কি ধরনের কাজ করছেন তার উপর। তবে কুয়েতে বাংলাদেশীরা সাধারনত যে ধরনের কাজ করে তার বেতনের উপর নির্দিষ্ট একটা আইডিয়া দেয়ার চেষ্টা করবো।
- হোটেল বয় বা হোটেল রুম সার্ভিস ম্যান হসেবে কাজ করলে আপনার প্রাথমিক বেতন শুরু হবে ২৪ হাজার টাকা থেকে। থাকা,খাওয়া ও ইন্টারনেট বিল কোম্পানির। তবে সময়ের সাথে আপনার পদ ও বেতনের পরিমান বাড়বে। এক্ষেত্রে আপনি ৩ বছর পর ৪ মাসের ছুটি পাবেন।
- পাইপ ফিটিং, এসি সার্ভিসিং, ইলেকট্রিশিয়ান এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে আপনার বেতন শুরু হবে ২০ হাজার টাকা থেকে। এখানেও আপনার থাকা খাওয়া ও যাতায়াত কোম্পানির।