ঝরঝরে জর্দা সেমাই রেসিপি
খুসির মুহূর্ত হোক বা কোন আনন্দ আয়োজন, মিষ্ট সেমাই আমরা সবাই পছন্দ করি। বিশেষ করে ঈদে ধনী গরিব সবার বাড়িতেই আয়োজন করা হয় বাহারি রকম মজার খাবার। আর ঈদে আমাদের সেমাই না খেলে হয় না। যেহেতু ঈদের দিন গৃহিনীরা বিভিন্নরকম খাবারের আইটেম রান্না করতে চান, তাই আমরা আজকে সেমাই এর ভিন্ন একটি রেসিপি নিয়ে আলোচনা করবো। অনেকেই দুধ দিয়ে রান্না করা মিষ্টি সেমাই পছন্দ করে না অথবা অনেক সময় ছোট বাচ্চারা দুধের সেমাই খেতে চায় না সেক্ষেত্রে সেমাই দিয়ে ই ভিন্ন কোন আইটেম রান্না করতে চাইলে আজকের ব্লগ আপনাদের জন্য উপকারি হবে আশা করি। চলুন তাহলে শুরু করি ঝরঝরে জর্দা সেমাই রেসিপি।
ঝরঝরে জর্দা সেমাই রেসিপি
আমাদের আজকের রেসিপি মূলত ৫০০ গ্রাম সেমাই এর জন্য বর্ননা করা হচ্ছে। আপনি চাইলে আপনার ফ্যামিলি মেম্বার ও খাবারের চাহিদার উপর নির্ভর করে এই পরিমান কমাতে বা বাড়াতে পারেন।
ঝরঝরে জর্দা সেমাই উপকরনঃ
- সেমাই ৫০০ গ্রাম
- চিনি ১ কাপ (ভালো ফলাফলের জন্য আখের লাল চিনি ব্যবহার করুন )
- নারকেল কোরানো দেড় কাপ
- কিশমিশ ৩ চা চামচ
- বাদাম ৩ চা চামচ
- বাদাম এবং কিশমিশ আপনার রুচির উপর নির্ভর করে কমাতে বা বাড়াতে পারেন।
- ঘি পরিমানমত ( যদি বাসায় থাকে। অন্যথায় প্রয়োজন নেই)
- এলচ একটি বা দুটি
- তেজপাতা ১ টি
- লবন পরিমানমত
- দারচিনি ১ টি (পরিমানমত)
আরো পড়ুন: ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম | মহিলাদের ঈদের নামাজের বিধান।
প্রস্তুতপ্রনালী: ঝরঝরে জর্দা সেমাই রেসিপি
প্রথমে একটি পরিষ্কার পাত্রে ২/৩ চা চামচ ঘি ঢালুন। ঘি গরম হয়ে গেলে এর মধ্যে দুটি এলাচ এর বিচি, দারচিনি পরিমানমত নিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিতে হবে। পাত্রের মিক্সার ভালোভাবে গরম হয়ে গেলে এর মধ্যে সেমাই ঢেলে দিতে হবে। সেমাই দেয়ার পূর্বে অবশ্যই সেমাই ভেঙে দিতে হবে। এবার ভালো করে নাড়ুন। এভাবে ৫ মিনিট পার হয়ে গেলে এর মধ্যে ১ কাপ পরিমান চিনি ও দেড় কাপ পরিমান নারকেল কোরানো ঢেলে দিন। এভাবে আরো কিছু সময় অপেক্ষে করুণ। এরপর রুচি অনুযায়ী কিশমিশ ও বাসাম দিন। এরপর ১০ মিনিট অপেক্ষা করুণ। এভাবে খুব সহজে বাসায় বানাতে পারেন ঝরঝরে জর্দা সেমাই রেসিপি।
সেমাই নির্বাচন
ঝরঝরে জর্দা সেমাই বানানোর জন্য সেমাই নির্বাচন খুবই গুরুত্ত্বপূর্ন একটা ব্যাপার। বাজারে বেশ করেক ধরনের সেমাই পাওয়া যায়। তাই আপনাকে আগে জানতে হবে ঝরঝরে জর্দা সেমাই এর জন্য কোন সেমাই টা সবচেয়ে ভালো হবে। বাংলাদেশের বাজারে সাধারনত ৩ ধরনের সেমাই পাওয়া যায়।
- প্যাকেট লাচ্চা সেমাই (যেটাকে আমরা বনফুল লাচ্চা সেমাই নামে চিনি)
- খোলা লাচ্চা সেমাই
- কুলসন সেমাই (যেটা দেখতে লাল রঙের ও অনেকে এই সেমাইকে শাহী সেমাই নামে ও ডাকে)
আপনি যদি সুস্বাদু ঝরঝরে জর্দা সেমাই বানাতে চান তাহলে আপনাকে কুলসন সেমাই টা ই কেনা উচিৎ। তবে অন্যান্য সেমাই দিয়েও খুব সহজেই ঝরঝরে জর্দা সেমাই বানাতে পারবেন তবে ভালো কুলসন সেমাই এই রেসিপির জন্য পার্ফেক্ট।
আরো পড়ুন: ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম | মহিলাদের ঈদের নামাজের বিধান।
সেমাই খাওয়ার উপকারিতা
যেহেতু ঈদের দিন ঝরঝরে জর্দা সেমাই রেসিপি ছাড়াও আরো বাহারি আইটেমের সেমাই রান্না করা হবে এই ফাকে চলুদ দেখে নেয়া যাক সেমাই খাওয়ার উপকারিতা কি বা আদৌ সেমাই আমাদের বডির কোন উপকার করে কি না।
কার্বোহাইড্রেটের উৎস: আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না সেমাই বানানো হয় পুরো ঘম বা whole grain নামের বিশেষ ধরনের এক ঘম থেকে যাতে প্রচুর পরিমান কার্বোহাইড্রেট থাকে। এছাড়া সেমাই রান্নার সময় সাথে কিশমিশ কিংবা বাদাম মিক্স করি যা সেমাই এর পুষ্টিগুন আরো বৃদ্ধি করে দেয়।
সেমাই ওজন কমাতে সাহায্য করে: আপনি হয়তো মনে মনে ভাবছেন সেমাই আবার কিভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে? আসলে সেমাইইয়ে থাকে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট ফাইভার যা মানুষের ক্ষুদা মন্দার একটা অন্যতম কারন। অর্থাৎ আপনি অল্প সেমাই খাওয়ার পর দেখবেন আপনার আর ক্ষুদা লাগছে না। এভাবে সেমাই আপনার ক্ষুদার উপর নিয়ন্ত্রন রাখে আর আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: যেমনটা আমরা উপরে উল্লেখ করেছি সেমাই এর মূল উপাদান হচ্ছে পুরো ঘম বা whole grain যার পুষ্টিগুন মানব দেহের জন্য খুবই কার্যকরী এবং এতে বিদ্যমান কার্বোহাইড্রেট আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
দ্রুত পুষ্টি যোগায়: সেমাই এর একটা মূল উপাদান হচ্ছে চিনি যাতে প্রচুর পরিমান কার্বোহাইড্রেট থাকে এবং কার্বোহাইড্রেট খুব দ্রুত ই মানব দেহে কার্যকর হতে পারে। এছাড়া যেহেতু সেমাই এর মূল উপাদান হচ্ছে গম বা কার্বোহাইড্রেত এর ফ্যাক্টরি হিসেবে পরিচিত। তাই বলা যায় সেমাই মানব দেহে খুব দ্রুত ই কার্যকরীভাবে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন: নামাজের নিষিদ্ধ সময় | যে ৩ সময়ে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ
অতিরিক্ত সেমাই খাওয়ার অপকারিতা
সব কিছুর ই কিছু ভালো ও খারাপ দিক আছে একইভাবে অতিরিক্ত সেমাই খাওয়ার ও কিছু খারাপ দিক আছে। প্রথমত বাজারে বর্তমানে প্রচুর পরিমানে খোলা সেমাই পাওয়া যায় যেগুলো খুবই নিম্ন মানের এবং শুকানোর জন্য ডাইয়ার ব্যবহার না করে খোলা আকাশের নিচে শুকানো হয় যা কতটা স্বাস্থ সম্মত।
একইসাথে যেহেতু সেমাই এর মূল উপাদান চিনি বা কার্বোহাইড্রেট যা অনেক ডায়বেটিস রোগীর জন্য বিষের সমান। তাই আপনার শরীরের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী খাওয়া উচিৎ। তাই আপনার যদি ডায়বেটিস এর সমস্যা থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সেমাই খাওয়ার পূর্বে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।