ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন
আসসালামু আলাইকুম। বর্তমানে আমাদের দেশে তরুনরা চাকরির পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছেন। উদ্যোক্তা হতে গেলে প্রথম দিকে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হয় তা হলো ফান্ডিং এর সমস্যা। শুরুর দিকে যথেষ্ট ফান্ডিং এর অভাবে অনেক উদ্যোক্তা তাদের কাক্ষিত সফলতার মুখ দেখতে পায় না। দেশের সাধারন অনেক ব্যাংক উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের লোনের ব্যবস্থা রেখেছে কিন্তু বেশিরভাগ লোন নিতে গেলে অতিরিক্ত সুদ প্রদান করতে হয়।
আমাদের দেশের ইসলামিক মাইন্ডের অনেক তরুন সুদে লোন নিয়ে ব্যবসা করতে চান না। তাদের জন্য আজকে আমাদের এই বিশেষ আয়োজন। আজকে আমরা ইসলামি ব্যাংক উদ্যোক্ত লোন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন কি, কিভাবে এই লোন নিবেন এবং কারা এই লোন নিতে পারবেন এই সব কিছু বিস্তারিত জানাবো আজকের আলোচনায়।
ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন কি?
ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন হচ্ছে মূলত যেকোন খুদ্র পরিসরে শুরু হওয়া ব্যবসা বা উদ্যোগকে সাহায্য করার জন্য সহজ শর্তে ও ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী দেয়া এক বিশেষ ধরনের লোন। আপনি যদি ক্ষুদ্র পরিসরে কোন ব্যবসা বা উদ্যোগ নিয়ে থাকেন আর আপনার ফান্ডের প্রয়োজন হয় তাহলে যথার্থ কাগজপত্র দেখানোর মাধ্যমে আপনি খুব সহজে সুদ মুক্ত লোন পেতে পারেন। লোন নেয়ার সম্পূর্ন প্রোসেস নিচে আস্তে আস্তে আমরা আলোচনা করবো।
আরো পড়ুন: প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন নিয়ম 2022
ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন কিভাবে নিবো
ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া কিছু সাধারন শর্ত দেয়া থাকে লোন দেয়ার জন্য। আপনি ওইসব শর্ত পূরন করলে খুব সহজেই লোন নিতে পারবেন।
লোন পাওয়ার শর্ত
- আপনার ব্যবসা অবশ্যই বৈধ হতে হবে
- হাস মুরগির খামার ও মাচ চাষের মত ছোট ছোট উদ্যোগের ক্ষেত্রে লোন পাওয়া সহজ
- লোন নেয়ার সময় জামানত হিসেবে আপনাকে আপনার যায়গা অথবা সিকিউরিটি হিসেবে কিছু রাখতে হবে।
- এছাড়া আপনার ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স থাকলে সেটা জমা দিতে হবে।
- আপনার এন আই ডি অথবা পাসপোর্ট থাকতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোনের ইন্টারেস্ট
এতক্ষন আমরা ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন নিয়ে কিছুটা জেনেছি। এখন পশ্ন হচ্ছে এই লোন নিলে একজন উদ্যোক্তাকে কতটাকা পর্যন্ত ইন্টারেস্ট দিতে হবে। প্রথমেই বলে নেই ইসলামী ব্যাংক সরাসরি সুদ নেয় না তারা আপনার কাছ থেকে কিছুটা লাভ নিবে আপনার লোনের ধরন ও কাজের উপর নির্ভর করে। তাই এক্ষেত্রে ইন্টারেস্টের পরিমান সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। তবে সাধারন হিসাবে আপনার মোট টাকার ২% থেকে ৭% ইন্টারেস্ট দেয়া লাগতে পারে। তবে আমরা যেমনটা ইতঃপূর্বে বলেছি ইসলামী ব্যাংকের লাভের পরিমান নির্দিষ্ট নয় কারন লাভের পরিমান নির্দিষ্ট হলে সেটা সুদে পরিনত হয়। তাই আপনি লোন নেয়া সময় ইন্টারেস্টের সিস্টেম ও পরিমান সংশ্লিষ্ট শাখার কাছে জেনে নিতে হবে।
ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন কিভাবে আবেদন করবেন?
এতক্ষন আমরা উদ্যোক্তা লোন নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছি। এখন আমরা জানবো কেউ এই লোন নিতে চাইলে কিভাবে লোনের জন্য আবেদন করবে এবং এই লোন হাতে পেতে কত দিন সময় লাগতে পারে।
সাধারনত লোন নিতে হলে কোন একটি নির্দিষ্ট শাখা থেকে নিতে হয় এবং লোন আবেদনের সময় আপনার একজন নমিনি লাগবে। প্রথমে আপনার ব্যবসার সঠিক তথ্য প্রমান করার যথেষ্ট কাগজপত্র নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের নিকটস্থ শাখায় যাবেন। ওই শাখার ম্যানেজার আপনার কাগজপত্র যাছাই করে সব ঠিক মনে করলে সরাসরি অডিটে যাবে। অডিটে যাওয়ার পর যদি আপনার কাগজে উল্লেখ করা তথ্যের সাথে সব মিলে যায় তখন আপনাকে আপনার ব্যবসার ধরন ও টাকা ফেরত দেয়ার সামর্থের উপর নির্ভর করে একটা নির্দিষ্ট এমাউন্ট লোন দিবে।
আরো পড়ুন: অনলাইনে গামকা মেডিকেল রিপোর্ট চেক | gamca medical report check online bangladesh
ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন কত টাকা দেয়
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যদি আপনার সব কাজপত্র ঠিক থাকে তাহলে আপনাকে এই লোনের আওতায় কতটাকা দিবে। সত্যি বলতে লোনের পরিমান সম্পূর্ন নির্ভর করে আপনার ব্যবসার ধরন ও আপনার সিকিউরিটির উপর। তবে সাধারনভাবে ক্ষুদ্র পর্যায়ে আপনাকে ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে পারে। যা সাধারনত ২ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও আপনার ব্যবসার ধরন যদি বড় হয় তাহলে এই লোনের পরিমান বাড়তে পারে। অর্থাৎ আপনি আরো বেশি লোন পাবেন অতিরিক্ত পরিশোধের সময় সহ।
ইসলামী ব্যাংক কিভাবে সুদ ছাড়া লোন দেয়?
যেমনটা আমরা উপরে অনেকবার বলেছি ইসলামী ব্যাংক লোন দেয়ার ক্ষেত্রে সুদ নেয় না। তাহলে অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে ইসলামী ব্যাংক লাভ করে কিভাবে? এখন আমরা ছোট করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো ইসলামী ব্যাংক সুদ ছাড়া লোন কিভাবে দেয় এবং তারা কিভাবে লাভ করে।
আসলে আপনি যখন বাড়ি করার জন্য বা আপনার খামারের জন্য অথবা আপনার ব্যবসার জন্য ইসলামী ব্যাংকের কাছে লোন নিতে যাবেন, ব্যাংক সরাসরি আপনাকে টাকা দিবে না। অর্থাৎ ব্যাংক টাকা দেয়ার পরিবর্তে আপনাকে ওই জিনিস কিনে দিবে যার জন্য আপনি লোন নিতে চাচ্ছে। সহজভাবে বললে, ধরে নেয়া যাক, আপনি একটা বাড়ি কেনার জন্য লোন নিতে চাচ্ছেন। নরমাল ব্যাংক হলে সরাসরি আপনাকে টাকা দিয়ে দিতো আর আপনি বাড়ি কিনে নিতেন এবং মাস শেষে সুদ সহ কিছু কিছু টাকা করে ফেরত দিতেন।
কিন্তু ইসলামী ব্যাংক আপনাকে সরাসরি টাকা দেয়ার পরিবর্তে কাচামাল কিনে দিবে যা তারা বাজার মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে আপনার কাছে বিক্রি করবে। এভাবে বিনা সুদে তারা আপনার কাছ থেকে লাভ করবে। তাই আপনি যদি ব্যাংক থেকে সুদ ছাড়া লোন নিতে চান তাহলে ইসলামী ব্যাংক উদ্যোক্তা লোন আপনার জন্য পার্ফেক্ট চয়েস হতে পারে।