আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা
আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের মধ্যে অনেকেই জানতে চেয়েছেন আয়ারল্যান্ড উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশ কেমন হবে বা উচ্চ শিক্ষার জন্য আয়ারল্যান্ড যাওয়ার সঠিক নিয়ম কি। এইসব ব্যাপারে বিস্তারি জানবো আজকের ব্লগে। আজকে আমরা মূলল আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কথা বলবো এবং কিভাবে বাংলাদেশ থেকে সহজে আয়ারল্যান্ড যাওয়া যায় তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হবে ইনশা আল্লাহ। চলুন তাহলে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
কেনো আয়ারল্যান্ড পড়তে যাবেন?
অনেকেই প্রথমে জিজ্ঞেস করতে পারেন ইউরোপর সেঞ্জেনভুক্ত দেশে না গিয়ে বা আমেরিকা অস্ট্রেলিয়ার মত উন্নত দেশে না গিয়ে আয়ারল্যান্ড কেনো যাবেন? আয়ারল্যান্ড বর্তমানে অর্থনৈ্তিকভাবে খুবই উন্নত দেশ আর মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে পৃথীবির ৬ষ্ঠ এবং পাসপোর্ট এর দিক থেকে পৃথীবির ৩য় উন্নত দেশ। এছাড়া অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ এবং টিউশন ফি তুলনামূলক কম।
আপনি চাইলে নিজের পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্না রকম পার্ট টাইম জব করার সুযোগ পাবেন। বর্তমানে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটা বিশ্ববিদ্যাল্য আয়ায়ল্যান্ড এ অবস্থিত। এইসব কিছু বিবেচনা করলে আপনি খুব সহজেই বুঝে যাবেন কেনো বাংলাদেশের ছাত্রদের কাছে আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।
যে ডিগ্রিগুলো নিতে পারবেন
আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসাআওতায় মূলত ৪ ধরনের ডিগ্রি দেয়া হয়ে থাকে।
- ব্যাচেলর ডিগ্রি
- হায়ার ডিগ্রি
- মাস্টার ডিগ্রি
- ডক্টরাল ডিগ্রি বা পিএইচডি
এছাড়াও বিশেষ বিশেষ প্রোফেশনাল ডিগ্রি দেয়া হয়ে থাকে তবে সেটা বিশেষ নিয়মে। আপনি সাধারনভাবে আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা র জন্য আবেদন করলে মূলত উপরের ৪ ধরনের ডিগ্রি যেকোন একটির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
সেমিস্টার সিস্টেম
আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা পড়তে গেলে মূলত আপনি দুই রকম সেমিস্টার সিস্টেম দেখতে পাবেন।
- ফল সেমিস্টার (Fall semester) – সময়কাল হচ্ছে আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত।
- স্প্রিং সেমিস্টার (Spring semester) – সময়কাল হচ্ছে জানুয়ারি থেকে মে।
আয়ারল্যান্ডে পড়াশুনা শেষ করতে কতদিন লাগে
এতক্ষন আমরা আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা র বিভিন্ন ডিগ্রি ও সেমিস্টার নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমরা জানবো আয়ারল্যান্ড এ পড়াশুনা শেষ করতে আপনার কতদিন লাগতে পারে। আসলে কতদিন লাগবে এটা সম্পূর্ন নির্ভর করছে আপনি কোণ ডিগ্রি নিতে যাচ্ছেন এছাড়া বিশ্ববিদ্যালইয়ের উপর ও কিছুটা নির্ভর করে আপনার কতদিন লাগতে পারে।
সাধারনত ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য বাংলাদেশের মত ই সাড়ে তিন বছর থেকে চার বছর সময় লাগে। তবে মেডিকেল বা ভেটেনারির ক্ষেত্রে সাড়ে পাঁচ বছর থেকে ছয় বছর সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে ডক্টরাল বা পিএইচডির ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে। পিএইচডির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে সময় বলা কিছুটা কঠিন কারন এটা নির্ভর করে আপনি কতটা ভালোভাবে সময় দিচ্ছে তার উপর।
আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা খরচ
যেকোন দেশে পড়তে গেলে ছাত্ররা সবার আগে যে ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তিত হয় তা হলো টিউশন ফি। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা পড়তে গেলে টিউশন ফি কেমন আসতে পারে। যদিও টিউশন ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরন ও স্কলারশীপের ধরনের উপর নির্ভর করে কিছুটা কম বেশি হতে পারে তবে সাধারনত আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা চার বছর মেয়াদি ব্যাচেলর ডিগ্রির ক্ষেত্রে খরচ পড়বে বছরে ১২শ থেকে ১৬ শ ইউরো। এবং মাস্টার ডিগ্রির ক্ষেত্রে বছরে ৮শ থেকে ১৪ শ ইউরো।
ইতঃপূর্বে আমরা যেমনটা বলেছি আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা খরচ তুলনামূলক অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। তাছাড়া আপনি চাইলে পড়াশুনার পাশাপাশি বেশ ভালো বেতনে পার্ট টাইম জব করতে পারেন। সব দিক বিবেচনা করলে টিউশন ফি কারো আয়ারল্যান্ড যাওয়ার পথে বাধা হবে না আশা করি।
আরো পড়ুন: লিথুনিয়া স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের নিয়ম, খরচ
আয়ারল্যান্ডে ভর্তির যোগ্যতা
- ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্য আপনারকে বাংলাদেশ থেকে অবশ্যই HSC পাশ করতে হবে।
- আইএলটিএস এ নূন্যতম স্কোর ৫ হতে হবে। তবে সাধারনত নূন্যতম ৬ না হলে স্কলারশীপ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
- অথবা TOEFL-এর CBT-তে ২১৩ বা IBTতে ৭৯ থেকে ৮০ পয়েন্ট হতে হবে।
অন্যদিকে মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য সিস্টেম টা একটু ভিন্ন। আপনাকে কমপক্ষে ১৬ বছরের শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে হবে। IELTS-এ ৬.৫ পয়েন্ট পেতে হবে অথবা TOEFL-এর CBT-তে ২১৫ থেকে ২৩৭ বা IBT-তে ৮০ থেকে ৯৩ পয়েন্ট আসতে হবে।
কিভাবে আবেদন করবেন?
আয়ারল্যান্ড এর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিদেশি শিক্ষার্থীরা সাধারনত ভর্তি হতে পারে বছরে একবার। আবেদন করতে হয় বছরের শুরুতে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে। আবার কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বছরে দুবারও ভর্তির সুযোগ দেয় তবে সেটি খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করার পর অনলাইনেই ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যায়।
আবেদন ফি বাবদ ৫০ থেকে ১০০ ইউরো পাঠাতে হয়। আবেদন করার পর কর্তৃপক্ষ যোগ্য শিক্ষার্থীদের ঠিকানায় অফার লেটার প্রেরণ করে। অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশে যেহেতু আয়াল্যান্ডের এম্বাসি নেই তাই ভারতের নইয়া দিলি্লর আইরিশ দূতাবাসের ঠিকানাইয় পাঠাতে হবে। আপনি চাইলে ফোনেও মাধ্যমেও জেনে নিতে পারেন ভিসা আবেদন ও প্রক্রিয়াসংক্রান্ত তথ্য +৯১-১১ ৪৬২৬৭১৪
আরো পড়ুন: ইতালি ভিসার দাম কত? ইতালি ভিসা আবেদন 2022
আয়ারল্যান্ডে বৃত্তির সুযোগ
বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ড এর দূতাবাস না থাকায় অনেক ছাত্র ই আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আগ্রহ দেখান না। তবে দূতাবাস না থাকলেও বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের জন্য আয়ারল্যান্ড যাওয়া কোন বাধা হবে না। কারন অনেক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে যারা স্কলারশিপ দিয়ে থাকে।
আয়ারল্যান্ডে বৃত্তির সুযোগ নিয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন।
পড়াশুনার পাশাপাশি চাকরি
আয়ারল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পড়তে গেলে পড়াশুনার পাশাপাশি আপনি পার্ট টাইম জব করে খুব ভালো মানের টাকা ইনকাম করতে পারবেন। সাধারনত প্রতিমাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো দিয়ে থাকা খাওয়ার খরচ খুব সহজেই হয়ে যায়। আর আপনি চাইলে এই খরচ নিজেই জব করে তুলে নিতে পারবেন।
ছাত্রদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে তবে সাধারনত ছাত্ররা রেস্টুরেন্ট কিংবা শপিংমলে বেশি কাজ করে। এক্ষেত্রে ঘন্টায় ১৪ থেকে ১৫ ইউরো করে আয় করা সম্ভব যা মোটেই কম নয়।
আয়ারল্যান্ড স্টুডেন্ট ভিসা: শেষ কথা
যেমনটা আমরা ইতঃপূর্বে বলেছিলাম আয়ারল্যান্ড উন্নত দেশ হলেও তুলনামূলক খরচ অনেক কম ও বিদেশি ছাত্রদের জন্য খুবই সুন্দর একটি দেশ। তাই আপনি যদি উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যেতে চান তাহলে আমরা মনে করি অবশ্যই আপনাকে আয়ারল্যান্ড এর কথা মাথায় রাখা উচিত।
আর আমাদের এই ব্লগটি যদি আপনাদের কিছুটাও হেল্প করে তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। অথবা যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে যেতে আগ্রহি তাদের সাথে ও শেয়ার করতে পারেন। আশা করি তাদের উপকার হবে। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন: সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা 2022 (নতুন আপডেট)