ইন্ডিয়া থেকে মোবাইল আনার উপায়
বর্তমান সময়ে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। আধুনিক যুগের এই সময়ে দেশ থেকে বিদেশে কোন জিনিস পাঠানো অথবা বিদেশ থেকে কোন জিনিস দেশে নিয়ে আসা খুবই সহজ হয়ে গিয়েছে। তবে বিদেশ থেকে ফোন আনার জন্য কিছু নিয়ম পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। ভারতের বর্তমানে সকল মোবাইল কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে।
রিয়েলমি, শাওমি, আইটেন, স্যামসাং নোকিয়া সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো বর্তমান তাদের শাখা উপ শাখা ভারতে চালু করেছে। তাই কম দামে ভারত থেকে যে কোন কোম্পানির নতুন মডেলের ফোন কেনা যায় বলে অনেকেই ভারত থেকে বাংলাদেশে মোবাইল আনতে চায়। আজকে আমরা ইন্ডিয়া থেকে মোবাইল আনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – ছাত্রদের জন্য অনলাইন চাকরি, ছাত্রদের জন্য অনলাইনে আয়
ইন্ডিয়া থেকে মোবাইল আনার সহজ উপায়
ধাপ ১- ইন্ডিয়া থেকে মোবাইল আনতে প্রথমেই অবশ্যই আপনার একটি ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক হিসাব, একটি অফিস, যে কোন একটি চেম্বার অফ কমার্স এর সদস্য পদ ইআরসি থাকতে হবে।
ধাপ ২- মোবাইল কেনার পূর্বে অবশ্যই বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে পণ্যের মূল্য ঠিক করবেন। একে পিআই বা প্রফর্মার ইনভয়েস বলে। যেখানে পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ, প্রতি ইউনিটের দাম, কোন ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করবেন, কতদিনের মধ্যে পণ্য আনবেন ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ থাকবে।
ধাপ ৩- আপনার নির্ধারিত ব্যাংকে গিয়ে একটি এনসিএ অর্থাৎ লেটার অফ ক্রেডিট অথোরাইজেশন ফরম পূরণ করে এল সি ও ইন্সুরেন্স ও লোডিং cost বিক্রেতাকে প্রেরণ করবেন।
ধাপ ৪- এরপর মোবাইল প্রেরণ করার জন্য বিক্রেতাকে অনুরোধ করতে হবে। এছাড়াও আপনি বিমানে জাহাজে অথবা স্থলবন্দর দিয়ে পন্য প্রেরণ করার জন্য বিক্রেতাকে মেইল করতে পারেন। অথবা কুরিয়ার এর ঠিকানা পাঠাতে পারেন।
ধাপ ৫- ইন্ডিয়া থেকে বর্তমানে বাংলাদেশে যে কোন পণ্য আনার জন্য পোস্ট অফিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কুরিয়ার সার্ভিস খুব ভালো মানের সেবা দিয়ে থাকে। চাইলে ফুল পেমেন্ট করার পরবর্তী সময়ে দুইটির কম মোবাইল হলে কুরিয়ারের মাধ্যমে আনা যেতে পারে।
ধাপ ৬- পণ্য লোডিং হয়ে বন্দরে আসলে জাহাজ কোম্পানি আপনাকে বিল অফ লোডিং বা বি এল এর কপি দিবে। অথবা এয়ারপোর্ট থেকেও এই কপি পাওয়া যায়।
ধাপ ৭- আপনার পণ্য কুরিয়ারে অথবা বন্দরে আসলে একজন সি এন্ড এফ এর সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়ার অফ এটর্নি দিয়ে কাস্টমস হতে পণ্য ছাড় করানোর জন্য বি এল এন ভয়েজ প্যাকিং লিস্ট, ডিটেইল প্যাকিং লিস্ট ইত্যাদি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রত্যয়িত করে সি এন্ড এফকে হস্তান্তর করতে হবে।
ধাপ ৮- সি এন্ড এফ আপনার পক্ষ হতে পণ্যটি্র স্টেটমেন্ট, সকল প্রকার কর পরিশোধ, বন্ধরে চার্জ পরিশোধ, জাহাজের বিল মিটানো ইত্যাদি করে আপনার ঠিকানায় পণ্য পাঠানোর জন্য লোডিং করবেন।
ধাপ ৯- যেহেতু আপনার পণ্য মোবাইল সেহেতু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন অর্থাৎ বিটিআরসি হতে অনুমতি নিতে হবে। আপনার পণ্যের এইচ এস কোড হেডিং হল আট পাঁচ এক সাত আর কর দিতে হবে ৫৫ পার্সেন্ট। মানে যদি আপনার ফোনের দাম, জাহাজের ভাড়্ আয়কর, সবমিলিয়ে ইত্যাদি মিলিয়ে দশ হাজার টাকা হয় তাহলে ৫৫০০ টাকা কর দিতে হবে।
ধাপ ১০- ইন্ডিয়া থেকে আনার পর মোবাইল হাতে পাওয়ার পরপরই মোবাইল রেজিস্ট্রেশন করে ফেলা সবচেয়ে বুদ্ধিমানার কাজ। কেননা অনেক সময় নকল ফোন দিয়ে থাকে। সে জন্য মোবাইল হাতে পাওয়ার পর রেলস্টেশনকৃত আই এম ই আই নাম্বার মিলিয়ে নিতে হবে।
আরো পড়ুন – কমদামে ভালো আয়রন মেশিন। সস্তায় কাপড় ইস্ত্রি মেশিন কিনুন । স্টিম আয়রন মেশিন
ইন্ডিয়া থেকে আনা ফোন রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
- প্রথমে ই এনইআইআর সিটিজেন এই ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম মোবাইল নাম্বার পাসওয়ার্ড দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে
- এরপর আপনার একাউন্টে লগইন করতে হবে
- অ্যাকাউন্টের ড্যাশবোর্ড এ দুটি অপশন দেখা যাবে একটি আইএমইআই যাচাই করার জন্য আরেকটি হচ্ছে বিশেষ নিবন্ধন
- বিশেষ নিবন্ধন সেকশনে গিয়ে আই এম ই আই নাম্বার সংযুক্তি ডকুমেন্টস সংযুক্ত ধরন সাবমিট করতে হবে
- ইআইএমইআই এর বিপরীতে প্রয়োজন একাধিক ডকুমেন্ট সাবমিট করা যাবে
- যদি ট্যাক্স প্রদান করে থাকেন তাহলে দুই ফোনের অধিক হলে প্রত্যেকটার জন্য ট্যাক্স প্রদান করতে হয় সেই রশিদ যুক্ত করবেন
- তারপর আবার ক্রয় রশি যুক্ত করতে হবে
- আর যদি এক থেকে দুইটি ফোনে না থাকেন তাহলে উক্ত ফোনের ক্রয়রশিদ সংযুক্ত করলেই ফোন রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে যাবে
ভারত থেকে আনা অতিরিক্ত হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের জন্য যা যা প্রয়োজন
- ভারতে নিজে আসার সময় সঙ্গে নিয়ে আসা সর্বোচ্চ দুইটি ফোনে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট নম্বর ও পাসপোর্টে ইমিগ্রেশন দেওয়া আগমনের সিল সংবলিত পাতার স্ক্যান বা ছবি লাগবে।
- বিদেশ থেকে শুল্ক পরিষদ সাপেক্ষে আনা সর্বোচ্চ ছয়টি হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট নম্বর পাসপোর্ট ইমিগ্রেশনের দেওয়া সিল সংবলিত পাতার স্ক্যান বা ছবি ও কাস্টম শুল্ক পরিষদ সংক্রান্ত প্রমাণপত্রের স্ক্যান বা ছবি লাগবে।
- বিদেশ থেকে কুরিয়ারে মাধ্যমে আনা ফোন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কমার্শিয়াল ইনভয়েস স্ক্যান বা ছবি, প্রাপকের জাতীয় পরিচয়পত্রের স্ক্যান বা ছবি এবং কাস্টমস শুলকো পরিষদ সংক্রান্ত প্রমাণপত্রের স্ক্যান বা ছবি জমা দিতে হবে।
ভারত বা বিদেশ থেকে যেসব পণ্য আনতে শুল্ক দিতে হবে না
- দুটি মোবাইল বা সেলুলার ফোন সেট
- ক্যাসেট প্লেয়ার টুইন ওয়ান
- ডিস্ক ম্যান বা ওয়াকম্যান
- বহনযোগ্য অডিও সিডি প্লেয়ার
- একটি ইউপিএস
- লেপটপ কম্পিউটার
- কম্পিউটার স্ক্যানার
- কম্পিউটার প্রিন্টার
- ফ্যাক্স মেশিন
- ভিডিও ক্যামেরা
- স্টিল ক্যামেরা বা ডিজিটাল ক্যামেরা
- সাধারণ বা পোস্ট বাটন টেলিফোন সেট
- সাধারণ বা ইলেকট্রনিক ওভেন
- বার্নারসহ রাইস কুকার
- প্রেসার কুকার ও গ্যাস ওয়েল
- টোস্টার
- স্যান্ডউইচ মেকার
- ব্লেন্ডার
- ফুড প্রসেসর
- জুসার
- কফি মেকার
- সাধারণ ও বৈদ্যুতিক টাইপ রাইটার
- বৈদ্যুতিক ও ম্যানুয়াল গৃহস্থালী সেলাই মেশিন
- টেবিল পেডেস্টল ফ্যান
- গৃহস্থালি সিলিং ফ্যান
- ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য স্পোর্টস সরঞ্জাম
- ২১৬ ষোল আকার এক কার্টুন সিগারেট
- ২১ ইঞ্চি পর্যন্ত এলসিডি টিএফটি ও এলইডি টিভি এবং
- ২৯ ইঞ্চি পর্যন্ত রঙ্গিন বা সাদাকালো টেলিভিশন
- ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের স্বর্ণ বা রূপ্য অলংকার
নোটস
ব্যগেজ রুলস অনুযায়ী একজন যাত্রী নিজের ব্যতীত সর্বমোট দুটি ফোন শুল্কমুক্ত হিসেবে আনতে পারবেন। এছাড়াও শুল্ক করা পরিশোধ করে মোবাইল আনতে পারবেন সর্বোচ্চ আটটি। সে ক্ষেত্রে তাকে ফোনের মূল্যের উপর ৫৫ দশমিক ৬০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। আটটির বেশি মোবাইল আনলে কাস্টমস টা আটক করবে।
মোবাইল আটক করা হলে তাদেরকে সফটওয়্যার বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স রেগুলেটরি কমিশন brtc এর দফতরে ছাড়পত্র নিয়ে ফেরত পেতে পারেন। এখানে জরিমানার অংক সুনির্দিষ্ট ভাবে না থাকলেও এটি মোবাইল ফোনের ক্রয় মূল্যের সর্বোচ্চ ১০ গুন পর্যন্ত হতে পারে।
সতর্কতা
যেহেতু ফোন কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংক এর মাধ্যমে বা বিভিন্ন মাধ্যমে নগদ অর্থ লেনদেন করা হয়। তাই বিশ্বস্ত ক্রেতার কাছ থেকে ফোন কেনার পরামর্শ থাকবে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এভাবে অর্থ লেনদেন করে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার শিকার হতে হয়। এছাড়াও অনেকে কম দামে নকল ফোন বিক্রি করে থাকে। তাই ফোন কেনার পূর্বে বিস্তারিত তথ্য এবং বিক্রেতার প্রমাণাদি নিয়ে ফোন কেনা উত্তম।
মন্তব্য
আজকে আমরা ইন্ডিয়া থেকে মোবাইল আনার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি ইন্ডিয়া থেকে মোবাইল আনার জন্য যা যা প্রয়োজন তা এই আর্টিকেল থেকে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনাদের ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- মোবাইল নাম্বার দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড ২০২৩
- অনলাইনে ভিডিও দেখে আয় করার অ্যাপ
- অনলাইনে আয় করার নিশ্চিত উপায়, কি ভাবে অনলাইনে আয় করা যায়