হাত পায়ের চামড়া ওঠার সমাধান
হাত এবং পায়ের চামড়া শরীরের অন্যান্য চামড়ার চেয়ে অনেক শুষ্ক হয়ে থাকে।তাই খুব ভালোভাবে যত্ন না নিলে হাত এবং পায়ের চামড়া উঠতে পারে।হাত পায়ের চামড়া ওঠা একটি কমন চর্মরোগ। বিশেষ করে শীতকালে এই সমস্যা টি বেশি লক্ষ করা যায়।
হাত পায়ের চামড়া ওঠার সমাধান অনেকেরই সঠিকভাবে জানা নেই তাই আজকে আমারা হাত পায়ের চামড়া ওঠার সমাধান এবং এর ঘরোয়া চিকিৎসা সহ বিভিন্ন দিক আলোচনা করব।
হাত পায়ের চামড়া ওঠার কারণ
হাত পায়ের চামড়া উঠার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। মনে করা হয় হাত পায়ে চামড়া উঠার প্রধান কারণ হচ্ছে বংশগত বা জিনগত কারন।বংশগত কারণ ছাড়াও যারা হাত পায়ের যত্ন সঠিক ভাবে নেয় না তাদেরই হাত পায়ের চামড়া উঠে।
শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের অভাবেও হাত পায়ের চামড়া উঠে।চামড়া উঠলে হাত এবং পায়ের সৌন্দর্য নষ্ট হয়।তবে অনেক ক্ষেত্রে এলার্জি রোগীদের জন্য আইজি এর মাত্রা অনেক বেশি থাকলে হাত-পায়ের চামড়া উঠতে লক্ষ্য করা যায়।
কখন হাত-পায়ের চামড়া বেশি ওঠে
সাধারণত শ্বেত শুরু হলে শরীরের চামড়া শুষ্ক হয়ে যায় ফলে হাত পায়ে চামড়া উঠে। গরমের সময় হাত পায়ের তালু ঘামালে চামড়া উঠতে পারে। শীত এবং গরমের এই সময়টা ছাড়া সারা বছর যদি কারো হাত পায় চামড়া উঠে থাকে তাহলে তা স্বাভাবিক নয় প্রতি শীঘ্রই একজন চিকিৎসক এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এটি ছোঁয়াছে রোগ কিনা
চামড়া উঠা রোগ সাধারণত হাত পায়ে হয় বলে অনেকেই এই রোগকে ছোঁয়াচে মনে করেন। কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হাত ও পায়ের চামড়া উঠা কোনো ছোঁয়াছে রোগ নয়। সাধারনত ত্বকের সঠিক পরিচর্যা করলে হাত পায়ের চামড়া ওঠার সমাধান হয়ে যায়।
হাত পায়ের চামড়া ওঠার ঘরোয়া উপায়
শীতকাল ছাড়া বছরের অন্যান্য মাসে হাতের চামড়া উঠলে এটি কোন স্বাভাবিক রোগ নয় তবে স্বাভাবিক অবস্থায় কিছু ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট এর মাধ্যমে হাত-পায়ে চামড়া উঠার সমাধান করা যায়। নিচের ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট গুলো ট্রাই করতে পারেন।
গরম পানি এবং শ্যাম্পু- হালকা গরম পানির সাথে শ্যাম্পু এবং লবণ মিশিয়ে হাত পায়ের পরিচর্যা করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। প্রতিবার গরম পানির মধ্যে অল্প পরিমাণ শ্যাম্পু এবং আধা চামচ লবণ দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাত-পা ঢুবিয়ে রাখলে পরবর্তীতে নরম ব্রাশ দিয়ে হাত-পা ঘষবেন। হাত পায়ের মরা চামড়া উঠে যাবে।
সয়াবিনের গুড়া– সয়াবিনের গুড়া হাত এবং পা চামড়া উঠে যাওয়া জন্য বন্ধের জন্য খুবই উপকারী।সয়াবিনের গুড়া বাজারে পাওয়া যায়।এটি লাগিয়ে ধুয়ে ফেললে আস্তে আস্তে হাত পায়ে চামড়া উঠাও বন্ধ হয়ে যায়। সয়াবিন হাত পায়ে চামড়া উঠা বন্ধের পাশাপাশি ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে।
গ্লিসারিন- হাত পায়ের চামড়া উঠা বন্ধে গ্লিসারিন ম্যাজিক এর মত কাজ করে। প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে হাত এবং পা ভালো করে পরিষ্কার করে ধোয়ার পর ঘুমানোর পূর্বে গ্লিসারিন লাগিয়ে ঘুমালে পায়ের ত্বক নরম থাকে ফলে চামড়া উঠে না।
তিলের তেল ও গোলাপজল- তিলের তেল এবং গোলাপ জল হাতের চামড়া উঠে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যদি ঘরে তিলের তেল না থাকে তাহলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। পায়ের চামড়ার জন্য মধু লেবুর রস বু গ্লিসারিন ও গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে লাগিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোজা পড়তে হবে।
সুষম খাবার- খাদ্য তালিকা তে প্রতিদিন সুষম খাবার রাখতে হবে। অনেকাংশে দেখা যায় পুষ্টিহীনতার কারণে হাত এবং পায়ের চামড়া উঠএ। সঠিক পুষ্টি যুক্ত খাবার খেলে হাত এবং পায়ের চামড়া ওঠা বন্ধ হবে।
জবা ফুলের পাপড়ি- অনেক আগে থেকেই জবা ফুলের পাপড়ি হাত পায়ে চামড়া উঠার জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। কেননা হাত-পায়ে চামড়া উঠলে জবা ফুলের পাপড়ি ফুলের পাপড়ি হাতে এবং পায়ে ঘষে লাগালে হাত এবং পায়ের চামড়া উঠার দূর হয়ে যায়।
হাত পায়ের চামড়া ওঠার ক্রিম
বাজারে হাত এবং পায়ে চামড়া উঠার বিভিন্ন ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। ঘরোয়া ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে হাতের চামড়া উঠা বন্ধ করা না গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রিমের মধ্যে ক্লোপেরক্স, টপিক্লো এস অন্যতম। এই ক্রিম গুলার দাম ৭০ থেকে ১১০ টাকা হয়ে থাকে রাস্তা ফার্মেসি থেকে এটি সংগ্রহ করা যাবে।
হাত পায়ের চামড়া ওঠার ঔষধ
সাধারণত হাত পায়ের চামড়া ওঠার সমাধান হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা হয়। তবে যদি কারো হাত-পায়ের চামড়া এলার্জির কারণে হয়ে থাকে বা ভিটামিন ভিটামিনের অভাবের কারণে হয়ে থাকে তাহলে ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী থাকে এলার্জির ঔষধ এলাট্রল ব্যবহার করতে বলা হয়ে থাকে।
আর যদি বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এর অভাবে হাত পায়ে চামড়া উঠে থাকে তাহলে বিভিন্ন ভিটামিন ট্যাবলেট বা সিরাপ দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন বিকোজিন।
হাত পায়ের চামড়া ওঠার ফলে কি হয়
হাত পায়ের চামড়া উঠার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন
- হাত-পা ফেটে রক্ত বের হওয়া
- হাতে বা পায়ের তালু ব্যাথা হয়ে যাওয়া
- হাত এবং পায়ের তালুর চামড়া পাতলা হয়ে যাওয়া
হাত পায়ের চামড়া ওঠার হোমিও ঔষধ
সব ধরনের হোমিও ঔষধি সব ধরনের চর্মরোগ সারাতে সক্ষম। তবু এদের মধ্যে, ক্যালি সাল ফ এবং সালফার হোমিওর চর্ম রোগের ঔষধ। সাধারণত এলোপ্যাথি অনেক দ্রুত কাজ করলেও এর কিছু সাইড ইফেক্ট রয়েছে। কিন্তু হোমিওপ্যাথি ঔষধ সেবনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে কাজ করলেও চর্মরোগ সহজেই সেরে যায়।
হাত ফাটার সমাধান
অনেক সময় হাতের চামড়া উঠার ফলে হাতের চামড়া অনেক পাতলা হয়ে যায়। যার ফলে হাতের তালু ফেটে যায়। এছাড়া বিভিন্ন কারণে ও হাত এবং পায়ের তালু হাঁটতে পারে। আর্সেনিক হলেও হাত পাইয়ের তালু ফাটতে লক্ষ্য করা যায়। তাই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আগে হাত ফাটার কারণ বা রোগ নির্ণয় করতে হবে।
তবে হাত সব সময় ভিজানো রাখা ,হাতের তালুতে ঘাম জমতে না দেওয়্ হাত পরিষ্কার রাখা এবং সব সময় গ্লিসারিন বা ভেসলিন ব্যবহার করলে হাত,ফাটা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হাত পায়ের চামড়া কুঁচকে যাওয়ার সমাধান
ওনেক সময় হাত এবং পায়ের চামড়া কুঁচকে যাওয়া যেতে দেখা যায়। মূলত বার্ধকে হাত পায়ের চামড়া কুঁচকে যেতে লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন ভিটামিনের অভাবে হাত এবং পায়ের চামড়া ফুচকে যেতে পারে হাত এবং পায়ের ত্বক শুষ্ক থাকলে চামড়া কুচকে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
তাই হাত এবং পায়ের চামড়া শুষ্ক রাখা যাবে না।অপরিষ্কার রাখা যাবে না।
কোন ভিটামিনের অভাবে হাতের চামড়া উঠে
ভিটামিন এ, ই সি ও বি, লৌহ, আমিষ, সুষম এর কারণে হাত এবং পায়ের চামড়া উঠতে পারে। চিকিৎসকরা ভিটামিন ডি এর অভাবেও হাত পায়ে চামড়া উঠতে পারে বলে মনে করেন। একেকজনের আলাদা আলাদা ভিটামিনের অভাবে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
সুতরাং হাত এবং পায়ের চামড়া উঠা স্থায়ী ও প্রাকৃতিকভাবে বন্ধ করতে হলে বেশি বেশি ভিটামিনযুক্ত সুষম খাবার খেতে হবে।
সাবধানতা
- হাত ভেজা না রাখা
- রাতে হাত এবং পায়ের তালু ভালোভাবে পরিষ্কার করে ঘুমানো
- হাত এবং পায়ের তালুতে সব সময় গ্লিসারিন ব্যবহার করা
- হাত এবং পায়ের ত্বক পরিষ্কার রাখা
- সবসময় সুতী কাপড় পরিধান করা
- কোন কেমিক্যাল জাতীয় উপাদান হাতে ব্যবহার না করা
মন্তব্য
আজকে আমরা হাত পায়ের চামড়া ওঠার সমাধান সম্পর্কে আর্টিকেল সাথে শেয়ার করেছি। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে। তবে এই আর্টিকেল সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট বক্স জানাতে পারেন আমরা অবশ্যই দ্রুত আপনাদের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –