হাত ফাটার ক্রিম এর নাম
হাত ফাটা রোগ বর্তমানে মহিলাদের খুব বেশি দেখা যায়। একদম ছোটবেলায় যদি কারো হাতের তালু ফাটে তাহলে ধরে নিতে হবে এটি বংশগত রোগ। আর নিজ থেকে অর্জিত হাত ফাটা রোগ প্রাপ্তবয়স্কদের বেশি আক্রান্ত হয়ে দেখা যায়। এক্ষেত্রে নিজেদের অসচেতনতা এবং শরীরে বিভিন্ন সমস্যার ফলে হাত ফাটা রোগ লক্ষ্য করা যায়। আজকে আমরা হাত ফাটার ক্রিম এর নাম সহ বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন – কপালে ছোট ব্রণ দূর করার ক্রিম এর নাম
হাতের চামড়া ফাটার উপসর্গ
সাধারণত হাতের তালু চামড়া বেশি মোটা বা পাতলা হয়ে যাওয়ার ফলে হাত ফেটে থাকে। হাত কাটার পরে চুলকায় ব্যথা করে রক্ত পড়তে পারে।
- প্রথমে হাত খসখসে হয়ে যায়
- চামড়ার নিচে ছোট ছোট গোটা দেখা যায়
- চামড়া সাদা হয়ে উঠতে শুরু করে
- মরা চামড়া জমে ফাটতে শুরু করে
- চামড়া উঠে পাতলা হলে বেশি ফাটে
হাত ফাটার কারণ
বিভিন্ন কারণেই বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের হাত ফেটে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের হাত ফাটা রোগ লক্ষ্য করা যায় বেশি। নিচে হাত ফাটা রোগের কারণগুলো বর্ণনা করা হলো-
- বংশগত কারণ
- চামড়া মোটা হয়ে যাওয়া
- হাতের চামড়া খসখসে ও শক্ত হয়ে যাওয়া
- বিভিন্ন ধরনের জীবাণু সংক্রমণ
- এলার্জিজনিত কারণ
- ইনফেকশন
- সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব
- আর্সেনিক বিষক্রিয়া
- বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাস আক্রমণ
- দীর্ঘদিন কোন ঔষধের প্রভাব
- শরীরে ক্যান্সারের কোষ থাকলে
- শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হলে
হাত ফাটার ক্রিম নাম
বাজারে বিভিন্ন ধরনের হাত ফাটার ক্রিম পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যদিও কোন ক্রিম ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে বাজারে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হাতফাটার ক্রিমগুলো হলো-
- Heelmate
- রেটিনয়েড
- ভিটামিন ডি যুক্ত ক্রিম
- স্টরয়েড মলম
চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন স্কিনের অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করলে স্কিন ক্যান্সারও হতে পারে। তাই যেকোনো ক্রিম লাগানোর পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুন – স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম ২০২৩
হাত ফাটার হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
এলোপ্যাথি ওষুধের রিয়াকশন থাকলেও হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কোন ক্ষতিকারকের দিক নেই। তবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ধীরে কাজ করলেও এটিতে রিস্ক খুবই কম হয়ে থাকে। হাত ফাটার হোমিও ঔষধ হল-
- পেট্রোলিয়াম
- গ্রাফাইটিস
- এনাকার্ডিয়াম
- অক্সিডেন্টাল
হাত ফাটা সারাতে ঘরোয়া সমাধান
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া- হাতের চামড়া বা শরীরের যে কোন চামড়া ফাটলে সবচেয়ে বেশি কাজ করে ভিটামিন সি। তাই হাতের ফাটা দূর করতে বেশি বেশি লেবু, মাল্টা আমলকি সহ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত।
তুলসী পাতার রস- হাত ফেটে গেলে অনেক সময় জ্বালা করে তাই হাতের চামড়া উঠার সময় থেকে তুলসী পাতার রস হাতে দেওয়া যেতে পারে। এতে করে হাত ফাটা কমে যায় এবং হাতের চামড়া উঠাও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। কালো তুলসী পাতার রস হাতের চামড়ার জন্য অনেক উপকারী।
গরম পানি ও মধু- হালকা গরম পানিতে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে তাতে ১৫ মিনিট হাত ডুবিয়ে রাখুন। হাতের চামড়া নরম হলে স্ক্রাবারের সাহায্যে ভালো করে স্ক্রাব করে নিতে হবে।
গ্লাবস ব্যবহার করা- শীতের সময় হাতের চামড়া বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এজন্য অতিরিক্ত শীতের সময় হাতে মোজা বা গ্লাবস ব্যবহার করতে হবে। তাহলে খেতে স্কিনের তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারবে না এবং হাতের চামড়া সুরক্ষিত থাকবে।
অলিভ অয়েল মাসাজ- হাতের ফেটে যাওয়া থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত হাতে অলিভ অয়েল দিয়ে মাসাজ করতে পারেন। এটি মশ্চারাইজার হিসেবেও হাতের ত্বকের জন্য ভালো কাজ করে থাকে।
হাত ভেজা না রাখা- সব সময় হাত শুষ্ক রাখতে হবে। হাত বেশি ভেজা রাখলে হাতের ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়। গোসল বা অজুর পর অথবা পানির যেকোনো কাজের পর শুকনো তোয়ালে দিয়ে ভালো করে হাত মুছে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে হাতে যেন পানি লেগে না থাকে।
পাকা কলা পেস্ট- কলা চামড়া সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। পাকা কলা পেস্ট করেও হাতে লাগিয়ে রাখা যেতে পারে এটি হা্ত ফাটার জন্য খুবই কার্যকরী। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করলে হাতের ত্বক অনেক নরম এবং কমল হবে এবং হাতের ফাটা খুব সহজেই দূর হবে।
শাকসবজি খাওয়া- শীতে ত্বকের সুরক্ষায় বেশি বেশি সবুজ শাকসবজি এবং রস যুক্ত ফলমূল খেতে হবে। যার কারণে হাতের চামড়া সুস্থ থাকবে এবং হাতের চামড়া উঠবে না। হাতের চামড়া ঘন ঘন উঠলেই হাতফাটা রোগ লক্ষ্য করা যায়।
ক্রিম ব্যবহার করা- প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে হাতে ক্রিম মাখতে হবে। এতে করে হাত মোলায়েম হবে অনেকেই হাতে ক্রিম মাখার কাজটি ভুলে যায়। তবে হাত ভালো রাখার একটি উপায় হল নিয়মিত হাতে ক্রিম মাখা।
হাতের যত্নে করণীয়
১। থালাবাসন ধোয়ার সময় গ্লাভস পরা। সাবানের রাসায়নিক পদার্থ থালাবাসন ধোওয়ার সময় হাতের ত্বকের প্রাকৃতিক তেল কেড়ে নিয়ে হাতে ত্বক শুষ্ক করে ফেলে। তাই এ ধরনের কাজের সময় গ্লাভস পরলে রক্ষা পাওয়া যায়। হাতের চামড়া কম পাতলা হয় যার কারণে হাত ফাটে না।
২। রাসায়নিক উপাদানহীন প্রাকৃতিক স্ক্রাবার ত্বকের পরিচর্যায় স্ক্রাব বা ঘষা গুরুত্বপূর্ণ। এটা মৃত কোষ দূর করে ফলে তখন চামড়া নরম হয়। হাত এবং পায়ে ব্যবহার করতে পারেন তবে খেয়াল রাখতে হবে খুব বেশি জোরে ঘষাঘষি করা যাবে না।
৩। বাড়িতে পেডিকিউরো মিনিক্যুর করা। সাধারণ কিছু উপাদান দিয়ে ঘরে নিজেই পেডিকিউর করা যায়। স্ক্রাব করা প্যাক করা ব্যবহার করা এবং মশ্চারাইজার ক্রিম লাগানো হয়। এই ধাপ গুলো নিয়েই পেডিকিউর এবং মেনিকিউর করা হয়ে থাকে। আর একটু উপায় হল ফেসপ্যাক হাতে লাগিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য পেঁচিয়ে রাখা। তারপর ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া।
৪। নিয়মিত হাতে মশ্চারাইজার ব্যবহার করা। সাধারণত হাত ধোয়ার পরে প্রতিবার প্রতিবার মশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। মশ্চারাইজার হাতের ত্বকে নরম এবং সুরক্ষিত রাখে যার ফলে হাতের চামড়া সহজে ফাটেনা।
৫। হাত ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা। সাধারণত হাতফাটা রোগ ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে রান্নাবান্না বা ঘরের কাজকর্মের পরে ভালোভাবে পরিষ্কার করে হাত ধোয়া উচিত। এতে করে হাতের উপর ময়লা জমে হাতের ত্বক নষ্ট হয় না এবং হাত ফাটে না।
৬। রোদ থেকে দূরে থাকা। অতিরিক্ত রোদে গেলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের পাশাপাশি হাতেরও প্রচুর পরিমাণে ক্ষতি হয়। রোদের অতি বেগুনি রশনি কেবল মুখের ত্বকেরই ক্ষতি করে না হাতের তখন নষ্ট করতে পারে। তাই রোদে বেরোনোর সময় অবশ্যই হাতেও মাখতে হবে সানস্ক্রিন।
৭। অতিরিক্ত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার ফলেও হাতের ত্বক সহযোগিতা স্বাভাবিক আদ্রতা হারায়। তাই যতবারই ধোয়া হবে ততবারই হাতে মশ্চারাইজার লাগাতে হবে ফলে হাতের ত্বক সুস্থ থাকবে।
৮। গ্লিসারিন ব্যবহার করা। বিভিন্ন মৌসুমে শরীরের অন্যতকের মত হাতের চামড়ারও অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে সারাবছর গ্লিসারিন ব্যবহার করলে ত্বকের জন্য খুব ভালো কাজ করে। ত্বক ফেটে গেলে রূপক জায়গায় সপ্তাহে একবার লেবু মধু মিশিয়ে ্লাগানো যেতে পারে।
হাত ফাটা রোধে সাবধানতা সাবধানতা
অনেক সময় শরীরে বিভিন্ন রোগের কারণে হাত এবং পায়ের চামড়া ফেটে থাকে। তাই চামড়া বেশি ফেটে ভেতরের মাংস দেখা গেলে বা কষ্টদায়ক হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কেননা অনেক সময় ক্যান্সার আর্সেনিক সহ বিভিন্ন কারনে হাতের চামড়া ফেটে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সাধারণত মলমের প্রভাবে ভালো হয় না তাই এর জন্য এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হয়।
এই রোগটিকে একেবারে নির্মূল করা যায় না তবে সারা জীবন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। অল্প থাকতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে খুব তাড়াতাড়ি মোটামুটি ভালো হওয়া সম্ভব হয়।
মন্তব্য
আজকে আমরা হাত ফাটার ক্রিম এর নাম সম্পর্কে একটি আর্টিকেল শেয়ার করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেলে সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- শরীরের পোড়া ক্ষত শুকানোর ক্রিম নাম
- মেয়েদের তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো ডে ক্রিম কোনটি
- স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম ২০২৩