গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন, মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন

গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন

গর্ভকালীন ভাতা বা মাতৃকালীন ভাতা বলতে বুঝায় একজন মেয়ে যখন গর্ভধারণ করে তখন সরকার থেকে তাকে কিছু অনুদান দেওয়া হয়। মূলত এই অনুদান এই হচ্ছে গর্ভকালীন ভাতা। গর্ভকালীন ভাতা চাইলে যে কেউ পাবে না এটা একান্তই যারা দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। অর্থাৎ একদম গরিব গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই ভাতা সরকার থেকে দিয়ে থাকে।

ইতঃপূর্বে গর্ভবতী ভাতা বলা হলেও বর্তমানে এই কর্মসূচির নাম দেয়া হয়েছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন কিছু নিয়ম সংশোধন করে ভাতার জন্য আবেদন নেয়া হচ্ছে। নিচে আমরা গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আরো পড়ন – গর্ভাবস্থায় কোমর ব্যথা হলে করণীয়

গর্ভবতী ভাতা আবেদন কোথায় করবেন?

গর্ভবতী ভাতার আবেদন মূলত ৩ ভাবে করা যায়।

  1. ইউনিয়ন পরিষধের ডিজিটাল পোর্টালে
  2. তথ্য আপার মাধ্যমে সরাসরি আবেদন
  3. অনলাইনে আবেদন

আপনার সুবিধা অনুযায়ী উপরের ৩ মাধ্যমের যেকোন একটি ফলো করে আবেদন করতে পারবেন।

গর্ভবতী ভাতার আবেদন প্রতিমাসেই করা যায়। প্রতি মাসের ১-২০ তারিখের মধ্যে যেকোন সময় আবেদন করতে পারবেন।

গর্ভবতী ভাতা আবেদন করতে কত টাকা লাগে

১। ইউনিয়ন পরিষধের ডিজিটাল পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করতে ৪০ টাকা আবেদন ফি দিতে হবে। তবে সে ব্যক্তি আবেদন করে দিবেন তিনি হয়তো কিছু (১০০/২০০) টাকা অতিরিক্ত নিতে পারেন।

২। তথ্য আপার মাধ্যমে সরাসরি আবেদন করতে কোন টাকা লাগবে না। অর্থাৎ সরকার অনুমোদিন তথ্য আপার মাধ্যমে সরাসরি ফরম পুরন করে জমা দিতে পারবেন কোন খরচ ছাড়া। এক্ষেত্রেও কেউ কেউ হয়তো ১০০/ ২০০ টাকা চেয়ে নিতে পারে তবে সরকারিভাবে এটি সম্পূর্ন ফ্রি।

৩। অনলাইনে আবেদন করতে কোন খরচ হবে না। তবে যে ব্যক্তি আবেদন করে দিবেন তিনি ১০০/ ২০০ টাকা নিতে পারেন।

আরো পড়ুন – গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়

গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদনের যোগ্যতা

  1. শুধুমাত্র ৪-৬ মাসের গর্ভবতী মায়ের আবেদন করতে পারবেন।
  2. মাসের প্রথম ১ – ২০ তারিখের মধ্যে উপরে যে ৩ টি নিয়ম বলা হয়েছে সেভাবে আবেদন করতে পারবেন।
  3. গর্ভবতী মায়ের বয়স ২০-৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  4. ১ম বার অথবা ২য় বার গর্ভবতী মায়েরা এই ভাতা পাবেন।
  5. ইতঃপূর্বে দুই সন্তানের বেশি থাকলে এই ভাতা পাবেন না।

যাদের  অলরেডি বাচ্চা হয়ে গেছে তারা এই আবেদন করতে পারবে না। শুধুমাত্র ৪ -৬ মাসের গর্ভবতী ও ২০ -৩৫ বছর বয়সী গর্ভবতী নারীরা এই আবেদন করতে পারবে।

গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন কি কি লাগে?

এই পর্যায়ে আমরা একনজরে দেখে নিবো গর্ভবতী ভাতা আবেদনের জন্য কি কি লাগবে। এই সবগুলো কাগজ না থাকলে ভাতা পাওয়ার জন্য সিলেক্ট করা হবে না। তাই শুরু থেকেই কাগজগুলো সংগ্রহ করে রাখুন।

  1. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID card)
  2. গর্ভবতী টিকা কার্ড ( গর্ভবতী নারীদের হলুদ যে টিকা কার্ড টি থাকে)
  3. গর্ভবতীর প্রমানস্বরূপ যেকোন কাগজপত্র (হসপিটাল/ ডাক্তারের যেকোন ধরনের স্লিপ)
  4. মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট) অথবা ব্যাংক একাউন্ট

মোবাইল ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে অবশ্যই আবেদনকারীর নিজের NID কার্ড দিয়ে রেজিট্রেশন করা সিমের নাম্বার দিতে হবে।

গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদনের নিয়ম

যেমনটা আমরা বলেছি আপনি চাইলে ৩ ভাবে গর্ভবতী ভাতা আবেদন করতে পারেন। ইউনিয়ন পরিষধে, তথ্য আপার মাধ্যমে এবং অনলাইনে। এই পর্যায়ে আমরা গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন নিয়ম বিস্তারিত আলোচনা করবো।

গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন

প্রথমেই এই লিংকে  প্রবেশ করতে হবে  http://103.48.16.6:8080/LM-MIS/applicant/onlineRegistration লিংকে প্রবেশের পর উপরের ছবির মত একটি ফরম দেখতে পাবেন যেখানে গর্ভবতী ভাতা আবেদন কারী ব্যক্তির কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে। প্রথমেই অর্থবছর হিসেবে ২০২২-২৩ নির্বাচন করতে হবে। অথবা আপনি এই আরটিকেল যখন পড়ছেন তখন যে অর্থবছর চলবে তা সিলেক্ট করতে হবে।

ইউনিয়ন পরিষদে গর্ভবতী ভাতা আবেদন করার নিয়ম

উপরে গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন নিয়ম কঠিন মনে হলে আপনি সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল পোর্টালে চলে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে কোন ঝামেলা করতে হবে না। সকল কাজ সেখান থেকেই করে দেয়া হবে।

ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল পোর্টালের মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করতে সরকার নির্ধারিত ফি হচ্ছে ৪০ টাকা। তবে বাস্তবে ১০০/ ২০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়। ২০০ টাকা লাগলেও এক্ষেত্রে আপনাকে কোন ঝামেলা করতে হবে না।

তথ্য আপার সাহায্যে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন

অনলাইনে এবং ইউনিয়ন পরিষদের পাশাপাশি যেকেউ চাইলে তথ্য আপার সাহায্যে খুব সহজে বাড়িতে বসেই মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে একটি ফরম পূরন করতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন –

  1. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID card)
  2. গর্ভবতী টিকা কার্ড ( গর্ভবতী নারীদের হলুদ যে টিকা কার্ড টি থাকে)
  3. গর্ভবতীর প্রমানস্বরূপ যেকোন কাগজপত্র (হসপিটাল/ ডাক্তারের যেকোন ধরনের স্লিপ)
  4. মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট) অথবা ব্যাংক একাউন্ট

প্রদান করতে হবে। এভাবে খুব সহজে ঘরে বসেই তথ্য আপার সাহায্যে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করে ফেলতে পারেন। গর্ভাবস্থায় অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারেন না। সেক্ষেত্রে তারা এই পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেন।

তথ্য আপার সাহায্যে মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করতে সরকার নির্ধারিত কোন ফি নেই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১০০/ ২০০ টাকা বকশিস দিতে হয়।

গর্ভবতী ভাতা আবেদন ফরম

গর্ভবতী ভাতা আবেদন মূলত দুইভাবে করা যায়।

  1. গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন
  2. ইউনিয়ন পরিষদ/ তথ্য আপার সাহায্যে

১) অনলাইনে গর্ভবতী ভাতা আবেদন ফরম পূরন করতে এখানে ক্লিক করুন। 

২) ইউনিয়ন পরিষদ/ তথ্য আপার কাছে আবেদন করতে নিজ হাতে যে ফরম টি পূরন করতে হয়ে তা ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। 

গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম

গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার কিছু নিয়ম আছে এ নিয়মগুলো হচ্ছে

  • গর্ভবতী মায়ের মেডিকেল রিপোর্ট অর্থাৎ যিনি ভাতার জন্য আবেদন করবেন তিনি গর্ভবতী কিনা তার একটি প্রমাণ স্বরূপ মেডিকেল রিপোর্ট।
  • গর্ভবতী মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্র।
  • মোবাইল ব্যাংকিং
  • গর্ভবতী মায়ের হলুদ টিকা কার্ড

এই প্রমাণগুলোর ভিত্তিতে একজন গর্ভবতী মা ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর অথবা পৌরসভা আবেদন করার মাধ্যমে ভাতা পেয়ে থাকে। তবে এখন অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে ভাতা সুবিধা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত গর্ভবতী মায়েদের কে খুব সহজে গর্ভবতী ভাতা প্রদান করছে।

Growth allowance কত টাকা 2023

অর্থের অভাবে যাতে একটি শিশুর মানসিক ও শারীরিক ভাবে বেড়ে উঠতে কোন সমস্যা না হয় সে জন্য সরকার গর্ভবতী মায়েদের জন্য Growth allowance ব্যবস্থা চালু রেখেছেন। একজন গর্ভবতী মা গর্ভবতী ভাতা প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে পেয়ে থাকেন।

তবে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে গর্ভবতী ভাতা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে সেটা উপজেলা পরিষদ থেকে জেনে নিতে পারবেন। অথবা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেও সরাসরি দেখে নিতে পারবেন।

মাতৃকালীন ভাতা প্রতিমাসে ৮০০ টাকা করে ৩ বছর টাকা দেয়া হয়। তবে এরজন্য প্রতিমাসে আলাদা আবেদন করতে হবে না। প্রথমবার আবেদন করলেই প্রতিমাসে মোবাইল নাম্বারে টাকা চলে আসবে।

মাতৃকালীন ভাতার আবেদন

মাতৃকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি শুরু করেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর যা প্রায় ৪২৬ টির মত উপজেলায় এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই ভাতা মূলত একজন মা প্রথম অথবা দ্বিতীয় সন্তানের যেকোনো একটি সন্তানের জন্য এই ভাতা সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

মাতৃকালীন ভাতার আবেদন অনলাইনের মাধ্যমে খুব সহজে করা যায়। উপরে উল্লেখিত গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম এর মত একি প্রক্রিয়ায় আপনি মাতৃকালীন ভাতা আবেদন ফরম পূরণ করে নিতে পারবেন। সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করে যদি আপনি ভাতা প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত হন তাহলে আপনাকে ভাতা প্রদান করা হবে।

মন্তব্য

আজকে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করেছি গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম গুলো সম্পর্কে। সেইসাথে গর্ভবতী ভাতা অনলাইনে আবেদন করার যোগ্যতা সম্পর্কে।তাছাড়াও গর্ভবতী ভাতা পাওয়ার নিয়ম ও গর্ভবতী ভাতা কত টাকা এবং মাতৃকালীন ভাতা আবেদন প্রক্রিয়া গুলো সম্পর্কে।

আজকের আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধু অথবা প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর্টিকেলটি সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা খুব দ্রুত আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

This Post Has 2 Comments

    1. Easy Teching

      আসসালামু আলাইকুম তাসলিমা। কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি?

Leave a Reply