মুখের লোম দূর করার ক্রিম
হ্যালো বন্ধুরা। শারীরিক জটিলতা এবং হরমোনের সমস্যার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের শরীরে অনেক বেশি লোম দেখা দেয়। কারো কারো ক্ষেত্রে এই লোম হাতে বা পায়ে দেখা যায় অধিক পরিমাণে দেখা যায় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে মুখে লোম দেখা দেয়। শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় মুখের লোম চোখে পড়ে বেশি এবং মাঝে মাঝে মেয়েদের জন্য এটা খুবই বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করে। বর্তমানে পার্লারে বিভিন্ন মেশিনের মাধ্যমে মুখের লোম তোলা হয় কিন্তু কিছুদিন পরে তা আবার আগের মত হয়ে যায়।
তাই আমরা আজকে মুখের লোম দূর করার ক্রিম নিয়ে আলোচনা করব যা আপনার ভেতর থেকে কাজ করে এবং লম্বা সময় ব্যবহারে স্থায়ীভাবে মুখের লোম দূর করে। যেসব মেয়েদের মুখে ছেলেদের মতো লোম ওঠার সমস্যা আছে তাদের জন্য আজকের ভক্তি খুবই কার্যকর হবে আশা করি। আজকে আমরা মেয়েদের মুখের লোম কেন হয়, মুখের লোম দূর করার ক্রিম, মুখের লোম দূর করার ঘরোয়া উপায় ও মুখের লোম তোলা কি হারাম কিনা বিস্তারিত জানব।
মেয়েদের মুখের লোম কেন হয়
মেয়েদের মুখের লোম দূর করার ক্রিম নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের জানতে হবে মুখের লোম ওঠার কারণ কি। মেয়েদের মুখের লোম উঠার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে তবে প্রধানত টেস্টোস্টেরন নামে এক বিশেষ ধরনের হরমোন মুখের লোম ওঠার জন্য দায়ী। টেস্টোস্টেরন এমন এক বিশেষ ধরনের হরমোন যায় পুরুষালি ভাব প্রকাশের জন্য দায়ী এবং এই হরমোনটি পুরুষ এবং নারী উভয়ের শরীরে থাকে। নারীদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন খুবই সামান্য থাকে। শারীরিক জটিলতা ও জিনগত কারণে অনেক সময় নারীদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের আধিক্য দেখা যায়।
যেসব মেয়েদের শরীরে স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে টেস্টোস্টেরন হরমোন বেশি থাকে তাদের মুখে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে লোম গজানোর সহ বিভিন্ন পুরুষালী লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে ভয়ের কিছু নেই বর্তমানে এর অনেক ভালো ট্রিট্মেন্ট রয়েছে যা নিচে আলোচনা করুন।
মেয়েদের মুখের লোম দূর করার চিকিৎসা
মেয়েদের মুখের লোম দূর করার দুই রকম চিকিৎসা হয়ে থাক স্থায়ী এবং অস্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি।
লোম দূর করার অস্থায়ী চিকিৎসাপদ্ধতি
অস্থায়ী চিকিৎসাপদ্ধতির মধ্যে লেজার পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। লেজার লেজার চিকিৎসা পদ্ধতি এমন এক বিশেষ ধরনের প্রসেস যার সাহায্যে খুবই পাওয়ারফুল লেজার লাইটের মাধ্যমে লোমকূপগুলো তুলে ফেলা হয়। তবে লেজার পদ্ধতিতে মুখের লোম দূর করলে কিছুদিন পরে তা আবার ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং অনেকে দাবি করেছেন পাওয়ারফুল লেজার রশ্মি ব্যবহার করার কারণে ত্বকের বিভিন্ন ক্ষতি হয়।
এছাড়াও পার্লারে গিয়ে অনেকে মুখের লোম তুলে ফেলেন। এটিও বেশ কার্যকরী এবং বহুল ব্যবহৃত অস্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে যাদের মুখে লোম বেশি তাদের জন্য এ পদ্ধতিটি বেশ কঠিন হয়ে যায় এবং কিছুদিন পরপরই করতে হয়। তাছাড়া নিয়মিত পার্লারে গিয়ে লোম তোলা বেশ ব্য্য সাপেক্ষ।
এছাড়াও মুখের লোম দূর করার ক্রিম ও ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে কোন সাইডএফেক্ট ছাড়াই মুখের লোম দূর করা যায়। বর্তমানে মুখের লোম দূর করার ক্রিম অনেক অন্যতম কার্যকরী বাজারে এসেছে যা লম্বা সময় ব্যবহার করে স্থায়ীভাবে মুখের লোম দূর করা সম্ভব।
লোম দূর করার স্থায়ী চিকিৎসা
উপরে আমরা যে পদ্ধতি গুলো নিয়ে আলোচনা করেছে সেগুলো হচ্ছে অস্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসা পদ্ধতি উন্নয়নের ফলে এমন অনেক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে যার সাহায্যে স্থায়ীভাবে মেয়েদের মুখের লোম দূর করা সম্ভব। যেমনটা বলেছো এই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে মুখের লোম ওঠে তাই কোনভাবে যদি নারীদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমানো যায় তাহলে আপনা আপনি ওঠা বন্ধ হয়ে যাবে।
বর্তমানে এমন অনেক টিকা এবং এন্টি হরমোলান ট্যাবলেট বের হয়েছে যা সেবনের ফলে মেয়েদের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমানো যায় এবং মুখের লোম স্থায়ীভাবে দূর করা যায়।
মেয়েদের মুখের লোম তোলার ক্রিম
সাধারণত মেয়েদের বয়স ও শরীরের হরমোনের পরিমাণ এর উপর নির্ভর করে ডাক্তার মুখের লোম দূর করার ক্রিম সাজেস্ট করে থাকেন। তবে যদি এই মুহূর্তে ডাক্তারের পরামর্শ সম্ভব না হয় তাহলে আমরা দুইটি ক্রিমের নাম বলছি তা ব্যবহার করতে পারেন। এই দুইটি ক্রিম কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই যে কেউ ব্যবহার করতে পারে। মুখের লোম দূর করার ক্রিম দুটি হল
- ভ্যানিফ্লো ক্রিম
- উওনিকা ক্রিম
উপরের দুটি ক্রিম এর যেকোনো একটি ব্যবহার করতে হবে। দিনে দুইবার লোম যুক্ত স্থান পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ক্রিমটি ভালোভাবে লাগিয়ে নিন এবং দুই ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রথম এক সপ্তাহ টানা ব্যবহার করুন এবং আপনার শরীরে ক্রিমটি কাজ করছে কিনা তা যাচাই করুন। যদি মনে হয় কাজ করছে তাহলে নম্বর সময় ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু যদি মনে হয় কাজ করছে না সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ক্রিম চেঞ্জ করতে পারেন।
সাবধানতা – বর্তমানে বাজারে এমন অনেক মুখের লোম দূর করার ক্রিম পাওয়া যায় যাতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে এবং মুখের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। ক্রিম কেনার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং আপনার স্কিনের জন্য কোনটি ভাল হবে তা বুঝে শুনে ক্রিম ব্যবহার করুন।
মুখের লোম দূর করার অপারেশন
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের লেজার ট্রিটমেন্ট লেজার অপারেশন নামে এক বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি আছে যার সাহায্যে মুখের লোম স্থায়ীভাবে দূর করা যায় বলে চিকিৎসকরা দাবি করেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় লেজার অপারেশনের পরে সাময়িক সময়ের জন্য মুখের লোম দূর করা গেলেও তা পুনরায় আবার উঠে। লেজার অপারেশন হচ্ছে এমন এক বিশেষ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি যার সাহায্যে খুবই পাওয়ারফুল লেজার রশ্মির মাধ্যমে মুখের লোম কোনগুলো তুলে ফেলা হয়। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে পাওয়ারফুল লেজার রশ্মি দিয়ে মুখ ব্যবহার করলে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই সাবধান থাকবেন।
যেমনটা আমরা উপরে বলেছি মুখের লোম ওঠা হর্মনাল একটি ব্যাপার তাই যতদিন পর্যন্ত হরমোনের ভারসাম্য ঠিক হবে ততদিন এই সমস্যা স্থায়ীভাবে ঠিক করা সম্ভব হবে না। তাই আমাদের সাজেশন থাকবে শুরুতেই লেজার চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী টেস্টোস্টেরন হরমোন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। কেননা হরমোনের ভারসাম্য তৈরি করতে পারলেই এই সমস্যা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে।
স্থায়ীভাবে মুখের লোম দূর করার উপায়
যেমন আমরা উপরে বলেছি বর্তমানে স্থায়ীভাবে মুখের লোম দূর করার উপায় রয়েছে। আমাদের সাজেশন থাকবে সরাসরি একজন স্কিন স্পেশালিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করুন। সে ক্ষেত্রে ডাক্তার এবং আপনার শরীরের ধরন অনুযায়ী সবচেয়ে বেস্ট সাজেশন টা দেবেন। সাধারনত বাংলাদেশের স্থায়ী ভাবে মুখের লোম দূর করার উপায় হিসেবে লেজার চিকিৎসা পদ্ধতি এবং এন্টি টেস্টোস্টেরন হরমোন এই দুটি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন।
- লেজার চিকিৎসা পদ্ধতি
- এন্টি টেস্টোস্টেরন হরমোন
মুখের লোম তোলা কি হারাম?
অনেকেই জানতে চেয়েছেন মুখের লোম তোলা হারাম কিনা। এর উত্তর হচ্ছে মুখের লোম তোলা হারাম নয়। ইসলামে শুধুমাত্র নারীদের ভ্রু প্লাক বা চোখের উপরে পশম তোলা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং নবীজির শিশুকাল নারীদের অভিশাপ দিয়েছেন যারা ভ্রু প্লাক করে। তবে কোন নারীর সাথে মুখে করা দাড়ির মত প্রথম দেখা দেয় তাহলে তা তুলতে পারবেন এবং কিছু কিছু ওলামা মুখের লোম তোলা কি ওয়াজিব বলেছেন।
অর্থাৎ সহজ ভাষায় উত্তর হল কোন নারীর বুকে যদি দম থাকে তাহলে তিনি তার তুলতে পারবেন এক্ষেত্রে নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। শুধুমাত্র ভ্রু প্লাক করতে পারবেন না। ভ্রু প্লাক ছাড়া মুখের অন্যান্য ল তুলতে পারবেন।
তবে মুখের লোম তোলার ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা ব্লেড ব্যবহার নিষেধ করে করেছেন। কেননা প্লেট ব্যবহারে লোমকূপ মোটা হয় এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। তাই লম্বা সময় ধরে ব্লাইন্ড ব্যবহারে পুরুষের মতো মোটা দাড়ি উঠার সম্ভাবনা থেকে যায়। এজন্য ব্লেড ব্যবহার না করে মেয়েদের মুখের লোম দূর করার ক্রিম ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুন – চুল পড়া বন্ধের কার্যকরী পদ্ধতি। চুল পড়া কমানো শতভাগ কার্যকরী উপায়।
লোম তোলার মেশিন
সাধারনত মেয়েরা পার্লারে গিয়ে মুখের লোম তোলেন কিংবা মুখের লোম দূর করার ক্রিম ব্যবহার করেন। কিন্তু অনেকের পক্ষেই নিয়মিত পার্লারে যাওয়া সম্ভব হয় না। আপনার যদি নিয়মিত পার্লারে যাওয়া বা নিয়মিত মুখের লোম দূর করার ক্রিম ব্যবহার করা সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে আপনি মুখের লোম তোলার মেশিন কিনে আনতে পারে। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে কিনতে পাওয়া যায়। সাধারণত ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লোম তোলার মেশিন কিনতে পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন – ফর্সা হওয়ার ডাক্তারি ক্রিম । স্থায়ীভাবে ফর্সা হওয়ার নাইট ক্রিম
মেয়েদের মুখের লোম দূর করার ক্রিম
উপরে আমরা মেয়েদের মুখের লোম কেন হয়, মুখের লোম দূর করার ক্রিম, মুখের লোম দূর করার ঘরোয়া উপায় ও মুখের লোম তোলা কি হারাম কিনা এইসব ব্যাপারে আপনাদের একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি মেহেদের মুখের লোম নিয়ে সকল উত্তর পেয়ে গেছেন। কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে করতে পারেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। ভালো লাগলে ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোষ্টগুলো পড়তে পারেন। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন –
- পুরুষের চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার ক্রিম – ডার্ক সার্কেল দূর করার উপায়
- পুরুষের মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করার উপায় | তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো ডে ক্রিম
- ডাস্ট এলার্জি কেন হয় ও ডাস্ট এলার্জি চিকিৎসা বিস্তারিত