কপালে ছোট ব্রণ দূর করার উপায়
ত্বকের বিভিন্ন রোগের মধ্যে ব্রণ অন্যতম। বয়সের কারনে কিংবা ত্বকের অযত্নের কারনে অনেকেই মুখে ব্রণ দেখা যায়। বিশেষ করে কপালে ছোট বড় ব্রণ উঠে যার ফলে কপাল দেখতে খুবই খারাপ লাগে। অথচ সামান্য কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করলেই খুব সহজে কপালে ছোট ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আজকে আমরা কপালে ছোট ব্রণ দূর করার উপায় সহ ছোট ব্রণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
কপালে ব্রণ কেন হয়
মুখে ছোট ব্রণ হওয়ার অনেকগুলো কারণ থাকে। বয়সঃন্ধীকালীন সমস্যার কারনে অথবা শরীরের অযত্নের কারনে কপালে বা মুখে ব্রণ হয়ে থাকে। বাজারে অনেক ধরনের ক্রিম পাওয়া গেলেও শুরুতে আমরা কখনোই ক্রিম ব্যবহার সাজেস্ট করবো না। শুরুতে সবার উচিত কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করা।
মুখ অপরিষ্কার থাকলে – মুখ অপরিষ্কার থাকলে মুখের বিভিন্ন স্থানে ময়লা জমে ব্রণ হয়ে থাকে। সাধারণত মুখের কপাল এবং থুতনিতে ব্রণ হতে দেখা যায়।ছোট ব্রণ দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে মুখ পরিষ্কার রাখা। প্রয়োজনে ভালো মানের ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
কপালে তেল জমলে – যাদের অয়েলি স্কিন বা তৈলাক্ত ত্বক তাদের কপালে তেল জমে থাকে। যার ফলে কপালে ছোট ঘামাচির মত ব্রণ দেখা যায়। কপালে ছোট ব্রণ গুলো লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে ঘন ঘন মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
ব্যবহৃত প্রসাধনীর অংশবিশেষ জমে থাকলে – অনেকেই মুখে চর্চার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী, মেকাপ ব্যবহার করেন। এতে করে লোমকূপ বন্ধ হয়ে কপালে ও মুখের বিভিন্ন স্থানে ছোট ব্রণ দেখা যায়। মেকাপ বা প্রসাধনী ব্যবহারের পর অবশ্যই তা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে যেন তা মুখে জমে না থাকে।
অসাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কারনে – সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য বলতে চর্বিযুক্ত খাবার, অতিরক্ত ভারতের মসলা যুক্ত খাবার কে বোঝানো হয়েছে। সুষম খাবার ত্বকের জন্য উপকারী। তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার এর ফলে কপাল সহ মুখে বিভিন্ন স্থানে ছোট ব্রণ দেখা যায়।
কপালে ছোট ব্রণ নিরাময়ের উপায়
কপালে ছোট ব্রণ সহজে যেতে চায়না। ফলে কপালে থাকে ছোট পূরণ না হয় বাইরে থেকে মুক্তির জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এসব সহজ সহজ উপায় সম্পর্কে সচেতন থাকলেই কপালে আর ছোট ব্রণ দেখা যায় না।
সব সময় মুখ পরিষ্কার রাখা – পুরো শরীর সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা উচিত। সাধারনত মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখলে কপালে ছোট ব্রণ হয় না। তাই ত্বকের যত্নে সবসময় পরিষ্কার থাকা উচিত।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা – মশ্চারাইজার ত্বক কে কোমল ও সুন্দর রাখে। তাই সবসময় শীতে গরমে ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। তবে তৈলাক্ত মশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত নয়। গরমের সময় সোলার চার্জার ব্যবহার করলে ছোট ব্রণ হতে পারে।
ত্বকের ধরন বুঝে পরিচর্যা করা – প্রত্যেক মানুষের ত্বকের ধরণ আলাদা। কারো কারো তৈলাক্ত ত্বক হয় আবার কারো কারো শুষ্ক ত্বক। তাই ত্বকের যত্ন করার পূর্বে প্রথমে স্কিন কোন ধরনের তা বুঝে ত্বকের পরিচর্যা করতে হবে। তাহলে ছোট ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
নিয়মিত ঘুমানো – একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় ঘুম কম হলেও কপালে ছোট ব্রণ উঠে। ছোট ব্রণ উঠলে তা সহজে নিরাময় করা যায় না তাই প্রথমেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
সঠিক পরিমাণে পানি পান করা – প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করলে মুখে ছোট ব্রণ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এছাড়াও সঠিক পরিমাণে পানি পান করলে বিভিন্ন ধরনের কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
মুখের ঘাম জমতে না দেওয়া – যারা গরমের সময় প্রচন্ড ঘেমে যান তাদের জন্য অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা মুখে ঘাম জমলে মুখের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায় যার ফলে মুখের বিভিন্ন স্থানে ছোট ব্রণ উঠতে পারে।
রাতে ঘুমানোর পূর্বে ত্বকের যত্ন নেওয়া – রাতে ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই ভালো করে ফেসওয়াশ বা সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে মশ্চারাইজার লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। তাহলে সুস্থ সুন্দর থাকবে যার ফলে ছোট ব্রণ উঠবে না।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা – যখনই কপালে ছোট ব্রণ দেখা যাবে তখনই খাবার মেনু চেঞ্জ করতে হবে। বুঝতে হবে প্রতিদিন খাবারের অতিরিক্ত তেল মসলাজাতীয় খাবার রয়েছে। মসলাজাতীয় খাবার শরীরের ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে।
ঠিকভাবে মেকআপ না উঠানো – নিজেকে সাজাতে কে না পছন্দ করে। তাই মেকআপ অনেক সময় ঠিকভাবে মুখ থেকে ক্লিন করা হয় না। যার ফলে মেকাপের অনেক ক্ষতিকর উপাদান মুখে লেগে থাকে। যার ফলে কপালে ছোট ব্রণ হয়ে থাকে।
সেনসিটিভ স্কিন – অনেকেরই সেনসিটিভ স্কিন বা স্পর্শ কাতর ত্বক থাকে। যাদের ত্বকের যত্ন ঠিকভাবে না নিলে অথবা তকে মানায় না এমন কিছু প্রোডাক্ট ইউজ করলে কপালে ছোট ব্রণ উঠতে দেখা যায়। তাই যাদের সেনসিটিভ স্কিনের স্কিনের সাথে মানানসই জিনিস ব্যবহার করতে পারেন।
হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার – আমরা বিভিন্ন ধরনের হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে থাকি। যার কিছু অংশ ব্যবহারের সময় কপালে লাগে। স্কিনের উপর তার প্রভাব পড়ে কপালে ছোট ব্রণ উঠার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।তাই হেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহারের সময় কপাল থেকে দূরে রাখা উচিত।
পিরিওডের আগে – মহিলাদের পিরিওড এর পূর্বে ত্বক অনেক সেনসিটিভ হয়ে থাকে। ডিহাইড্রেশন এর ফলে কপালে ছোট ব্রণ দেখা যায়। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে সেসময়ে ত্বকের জন্য অনেক উপকার হয়।
কোন কোন রোগের কারণে ব্রণ হয়
প্রতিদিনের বিভিন্ন কারন কপালে ছোট ব্রণ হতে পারেে। কিন্তু বিভিন্ন রোগের কারণেও কপালে ছোট ব্রণ দেখা যায়। দীর্ঘদিন কোনো ওষুধ সেবন করলে তার প্রভাব তকের উপর পড়ে। দীর্ঘদিন এই কপালের এই ছোট ব্রণের সমস্যা থাকলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মানসিক চাপ – দৈনন্দিন জীবনে কাজের প্রেসারে যাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। অথবা শরীরের কোনো মানসিক চাপের ফলে কপালে ছোট ব্রণ উঠবে লক্ষ্য করা যায়। কপালে ছোট ব্রণ দূর করার উপায় হল মানসিক চাপ থেকে নিজেকে সবসময় দূরে রাখা।
হরমোনের সমস্যা – সাধারণত শরীরের হরমোন সমস্যার ফলে মুখে বা কপালে ছোট ব্রণ উঠতে লক্ষ্য করা যায়। হরমোনের সঠিক চিকিৎসা করলে মুখের ত্বকে ব্রণ হতে দেখা যায় না। হরমোনের সমস্যার ফলে শরীরে আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
এলার্জি – এলার্জির ফলে অনেক সময় কপালে ছোট ব্রণ হতে দেখা যায়। যদিও এলার্জির চিরস্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। তবুও অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখলে বায়োলজি মুক্ত খাবার খেলে কপালে ছোট ব্রণ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
কপালে ছোট ব্রণ দূর করার ঘরোয়া উপায়
টুথপেস্ট- কপালে ছোট ব্রণ দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে ঘরোয়া উপায় বেশি কার্যকরী। ঘরোয়া টোটকা গুলোতে ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি কম হয়। কপালের ছোট ব্রণ কমাতে টুথপেস্ট ব্যবহার করলে সহজেই ছোট ব্রণ চলে যায়। রাতে ঘুমানোর সময় ব্রণের উপর টুথপেস্ট লাগানো যেতে পারে।
মুলতানি মাটি – মুলতানি মাটি রূপচর্চার জন্য অনেক উপকারী। যারা নিয়মিত চর্চা করেন তাদের বাসায় মুলতানি মাটি সব সময় থাকে। কপালে ছোট ব্রণ এর উপায় গুলোর মধ্যে মুলতানি মাটি অন্যতম। নিয়মিত মুলতানি মাটির প্যাক লাগালে কপালে ছোট ব্রণ চলে যায়।
মধু – মধু রূপচর্চার জন্য প্রসিদ্ধ। মধু লেবুর রস মিশ্রিত প্যাক প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর পূর্বে ব্যবহার করলে কপালে ছোট ব্রণ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে।
শসার রস ও চালের গুড়া – কপালে ছোট ব্রণ দূর করার জন্য শসার রস ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার লাগালে চলে যায়। এছাড়াও একটু এক টুকরা শসা কপালে ছোট ব্রণ গুলো তে মাসাজ করলে খুব সহজেই কপালের ছোট ব্রণ চলে যায়।
হলুদ চন্দনের গুঁড়া – হলুদ রূপচর্চার জন্য অনেক কার্যকর। কাঁচা হলুদ বেটে তার সাথে চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলেই খুব সহজেই চিরতরে চলে যায়।
গোলাপজল ও লেবুর রস – গোলাপজল ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করার জন্য অনেক কার্যকরী। প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর গোলাপ জল ব্যবহার করলে ব্রণ কম হয়। কপালে ছোট ব্রণ দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। গোলাপজল ও লেবুর রস মিশিয়ে মুখে মাসাজ করলে কপালের ছোট ব্রণ দূর হয়ে যায়।
ছোট ব্রণ দূর করার ক্রিম
কপালের ছোট ব্রণ দূর করার জন্য বাজারে অনেক ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। স্কিনের উপর ডিপেন্ড করে এসব ক্রিম ব্যবহার করা যায়। বাজারে বিভিন্ন নকল ওষুধ পাওয়া যায় সুতরাং কেনার পূর্বে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
- একনিজেল
- অ্যাকলিন ক্রিম
- এডাবেন ডুও জেল
- ফ্রেশলুক জেল ক্রিম
- নোমার্ক জেল
- ফোনা প্লাস
- এডাজেল প্লাস
- পিম্পলেক্স ক্রিম
- এডজার জেল
- Fona cream
ব্রণ দূর করার হোমিও ঔষধ
হোমিও ঔষধ একটু দেরিতে কাজ করে। এলোপ্যাথিক ঔষধ তাড়াতাড়ি কাজ করলেও এর সাইড ইফেক্ট রয়েছে। কিন্তু হোমিও ঔষধ বাড়িতে কাজ করলেও কোনো সাইড ইফেক্ট নেই। হাতে সময় থাকলে এলোপ্যাথি ব্যবহার না করে হোমিও ঔষধ ব্যবহার করা যায়।
লম্বা সময় নিয়ে চিকিৎসা করতে চাইলে নিকটস্থ হোমিও কেন্দ্র থেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সংগ্রহ করা যেতে পারে।
ব্রণ দূর করার ফেসওয়াশ
যেহেতু পরিষ্কার মুখ ব্রণ দূর করার প্রথম শর্ত। একটি ভালো ফেসওয়াশ হতে পারে আপনার কপালের ছোট ব্রণ দূর করার অন্যতম উপায়। বিভিন্ন কোম্পানির ফেসওয়াশ বাজারে পাওয়া যায় তাদের মধ্যে কিছু ফেসওয়াশ বেশি মানুষ ব্যবহার করে। যেমন –
- স্যালিক এসিট
- টি ট্রি
- হিমালয়া নিম ফেসওয়াশ
- বোরো প্লাস ফেসওয়াশ
ব্রণ সম্পর্কে ডাক্তারের পরামর্শ
সাধারণত কপালে ছোট ব্রণ বা মুখের ব্রণ হলে ডাক্তাররা না জেনে বুঝে ঔষধ গ্রহন করতে নিষেধ করেন। কপালে ছোট ছোট ব্রণ দেখা দিলে শুরুতেই ভারি ঔষধ না নিয়ে ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করতে পারে। এরপর ও যদি ব্রণ না কমে তাহলে ডাক্তারের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
স্কিনের ধরণ অনুযায়ী এবং ব্রণের ধরন অনুযায়ী স্কিন ডাক্তার ওষুধ সাজেস্ট করেন। ব্রণ হলে তা হাত দিয়ে খোঁচাখুঁচি করা যাবেনা তাহলে ইনফেকশন হওয়ার ভয় থাকে। অনেক সময় ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে।
কি কি খেলে ব্রণ দূর হয়
অনেকগুলো খাবার খেলে ব্রণ এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কপালে ছোট ব্রণ দূর করার উপায় কিছু খাবার গ্রহণ করার মাধ্যমেই সমাধান করা যেতে পারে। যেমন –
- পানি তেল-মসলাযুক্ত খাবার
- শসা
- গাজর
- টমেটো
- সবুজ শাক সবজি
মন্তব্য
আজকে আমরা কপালে ছোট ব্রণ দূর করার উপায় এবিং কিছু ঘরোয়া সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন মতামত বা পরামর্শ থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন আমরা অতি দ্রুতই আপনাদের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- গর্ভবতী ভাতা অনলাইন আবেদন, মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন
- মেয়েদের ঘরে বসে রোজগার, নারীদের বিনা পুজিতে অনলাইন ব্যবসা আইডিয়া
- মেয়েদের মুখের লোম দূর করার ক্রিম – মুখের লোম তোলা কি হারাম