চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম
আমাদের শরীরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে চোখ। দিনের বেশিরভাগ সময়ে এই চোখের উপর প্রেসার পড়ে। তাই চোখ পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরী। বিশেষ করে বর্তমানে আমরা সবাই মোবাইল ল্যাপটপের উপর বেশি সময় দেয়ার কারনে চোখের আলাদাভাবে যত্ন নেয়া আরো গুরুত্বপূর্ন হয়ে পড়েছে।
আজকে আমরা চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম সহ চোখের যত্নে কি কি করা উচিত সে সম্পর্কে একটি আর্টিকেল শেয়ার করব।
কিভাবে চোখ পরিষ্কার রাখা যায়
চোখ খুবই সংবেদনশীল একটা অঙ্গ। এই চোখ পরিষ্কার রাখা যতটা সহজ ঠিক ততটাই কঠিন কাজ। সঠিকভাবে চোখ পরিষ্কার করতে না পারলে অনেক ধরনের চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম জানার পূর্বে কিভাবে চোখ পরিষ্কার রাখা যায় তা জানা জরুরি।
ব্যায়াম- প্রতিদিন শরীরের ব্যায়ামের পাশাপাশি চোখেরও ব্যায়াম করা অত্যন্ত জরুরী। চোখে ব্যায়াম করলে চোখ সুস্থ থাকে এবং দৃষ্টিশক্তি প্রখর হয়। প্রতিদিন ঘড়ির কাটার মত চোখের মনি ১২ বার, এবং অ্যান্টি ঘড়ির কাটার মতো চোখের মনি ১২ বার ঘুরাতে হবে।
পানির ঝাপটা- চোখকে সুস্থ রাখতে পানির কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন সকালে উঠে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং বাইরে থেকে এসে ঠান্ডা পরিষ্কার পানির ঝাপটা দিতে হবে। এতে চোখের ভেতরের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়।
খাবারের চার্ট- শরীর সুস্থ রাখার জন্য যেমন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরী তেমনি চোখের ভিটামিন অত্যন্ত জরুরী। প্রতিদিন খাবারের মেনুতে প্রচুর পরিমাণে রঙিন শাকসবজি এবং ফলমূল রাখতে হবে।
ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার- ভিটামিন এ চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই চোখের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন কমবেশি হলেও ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
আই প্যাড- তুলোর নরম বল ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট চোখে দিয়ে রাখলে সারাদিনে চোখে জমে থাকা ধুলোবালি বের হয়ে আসে। সাথে কতক্ষণ লাগিয়ে রাখা যেতে পারে এতে চোখ পরিষ্কারের পাশাপাশি চোখে নিজের কালিও দূর হবে।
চোখের ড্রপ- বাজারে চোখ পরিষ্কার করার বিভিন্ন আই ড্রপ পাওয়া যায়। তাই চোখ পরিষ্কারের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের যে কোন ড্রপ ব্যবহার করা উচিত।
অন্ধকার- সাধারণত অন্ধকারের টিভি দেখা ফোন ব্যবহার করা ল্যাপটপ ব্যবহার করা চোখের জন্য অনেক ক্ষতিকর। তাই অন্ধকারে কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
সানগ্লাস ব্যবহার করা- বাইরে বের হলে বা রোদ থেকে নিজের চোখকে সুরক্ষা দিতে সব সময় সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া রাস্তায় অনেক ধুলাবালি উড়তে থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না। এসব ময়লা চোখে প্রবেশ করে চোখের ক্ষতি করে তাই সানগ্লাস ব্যবহার করলে ধুলাবালি থেকে চোখ সুরক্ষিত থাকে।
ইলেকট্রিক ডিভাইস কম ব্যবহার করা- আধুনিক যুগে বেশিরভাগ কাজই ইলেকট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে আমরা করে থাকি তাই চোখের যত্নে মাঝে মাঝে ইলেকট্রিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকা উচিত। ফোন বা টিভি অতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়।
ঘুম- চোখকে সুস্থ রাখতে চোখের বিশ্রান্ত জরুরি। একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। দিনে অন্তত একবার 15 থেকে 20 মিনিটের ছোট ন্যাপ নেওয়া উচিত।
চোখ পরীক্ষা- চোখের যত্নে কিছুদিন পর পর চোখের বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করা উচিত। এতে করে চোখে কোন সমস্যা থাকলে প্রাথমিক পর্যায়ে তা চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়।
নারিকেল তেল- নারিকেল তেল চোখের জ্বালা পোড়া কমায় তাই। তুলার বল বানিয়ে তাতে হালকা কিছু নারিকেল তেল নিয়ে চোখ পরিষ্কার করলে চোখের ভেতরের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়।
অ্যালোভেরা জেল- অ্যালোভেরা জেল ও চোখ পরিষ্কার করতে অনেক কার্যকরী একটি উপাদান। চোখের পাতায় এলোভেরা জেল লাগিয়ে ১০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
আরো পড়ুন – চোখের এলার্জির ড্রপের নাম – চোখের এলার্জি দূর করার উপায়
চোখ পরিষ্কার না থাকলে কি কি রোগ হতে পারে
বাজারে বর্তমানে বিভিন্ন চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম রয়েছে। চোখ পরিষ্কারের জন্য সেসব ড্রপ নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা চোখ পরিষ্কার না করলে চোখের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে।
- চোখ দিয়ে পানি পড়া
- চোখ উঠা
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া
- চোখে ছানি পড়া
- চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া
- কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়া
- চোখ হলুদ হয়ে জন্ডিস হওয়া
চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম
বাজারে বিভিন্ন ধরনের চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ রয়েছে। তবে চোখের যত্নে কিছু ভালো চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম হলো-
- Cloram drop – ক্লোরাম ড্রপ
- Azopt eye drop
- Refresh tear eye drop
বিশেষ করে ওপেন- অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা আক্রান্ত রোগীদের জন্য Azopt eye drop খুব ই কার্যকরী।
আমাদের দেহের সবচেয়ে সেনসেটিভ অঙ্গ হচ্ছে চোখ। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতিত কোন ড্রপ বা ঔষধ ব্যবহার আমরা কখনোই সাজেস্ট করি না।
কিভাবে চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হয়
সাধারণত অনেকেই যত্রতত্রভাবে চোখের ড্রপ ব্যবহার ক করে থাকেন। কিন্তু চোখের ব্যবহার করার কিছু সঠিক নিয়ম রয়েছে। যা জানা থাকলে চোখের অনেক সমস্যা এড়িয়ে চলা যায়-
- চোখের ড্রপ ব্যবহারের পূর্বে হাত পরিষ্কার করা
- চোখের ড্রপ এর মুখ খোলার পর এক মাসের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়
- যেদিন চোখের ড্রপ ব্যবহার করা হয় সেদিন বোতলের গায়ে তারিখ লিখে রাখা উচিত এতে মেয়াদ বোঝা যায়
- চোখের ড্রপ ব্যবহারের পূর্বে ড্রপের মেয়াদ চেক করে নেয়া উচিত
- ড্রপ ব্যবহারের পূর্বে ঝাকিয়ে নেওয়া উচিত
- রোজাদার ব্যক্তি এবং প্রেগনেন্সিতে কেউ চোখের ড্রপ ব্যবহার করলে ব্যবহার করার পর চোখের কোনা চেপে ধরলে নাকে ড্রপ চলে আসে না।
- ড্রপ দেওয়ার পর অন্তত ১০ সেকেন্ড চোখ বন্ধ রাখা উচিত
- চোখের এক কোণে ড্রপ দিতে হবে
- একসাথে অনেক ফোঁটা ড্রপ দেওয়া যাবে না। এক ফোটা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আরেক ফোটা দিতে হবে না হলে চোখ দিয়ে বের হয়ে যাবে।
- চিকিৎসক একাধিক ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দিলে একটি ব্যবহারের 20 মিনিট পর অন্যটি ব্যবহার করা উচিত।
- একসাথে দুইটির বা তার বেশি ড্রপ ব্যবহার করা চোখের জন্য ক্ষতিকর
- একই সাথে ড্রপ এবং অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করতে হলে আগে ড্রপ এবং পরে অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করতে হয়
- আই ড্রপ ব্যবহারের পর কিছুটা থাকলে তা ফেলে দেওয়া উচিত পরবর্তীতে ব্যবহারের করলে চোখের ক্ষতি হতে পারে
- কোন ড্রপ ব্যবহারের পর চোখের কোন সমস্যা হলে তা বন্ধ রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত
- চোখের এলার্জি থাকলে ড্রপ ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ ব্যবহারে সর্তকতা
চোখের ড্রপ ব্যবহারে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। কেননা সঠিক নিয়মে চোখের ড্রপ ব্যবহার না করলে চোখে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। চোখে ড্রপ ব্যবহারে যেসব ভুলগুলো করা উচিত নয় তা হল-
- চোখ লাল হলে নিজে নিজে চোখের ড্রপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে
- কখনোই সরাসরি চোখের মনিতে চোখের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে না
- ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ড্রপ চোখের জন্য ব্যবহার করা যাবে না
- চোখের বোতলের মুখ চোখের ভিতরে লাগানো যাবে না
- কন্টাক লেন্স ব্যবহার করার সময় কোন ড্রপ বা মলম ব্যবহার করা উচিত নয়
- ড্রপ ব্যবহারের সময় চোখে খোঁচা লাগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত
কখন চশমা ব্যবহার করতে হয়
খেয়ে ঝাপসা দেখলে বা কাছের অথবা দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। ডাক্তার চোখ পরীক্ষা করে চোখের উপযোগী পাওয়ার এর চশমা ব্যবহার করতে নির্দেশনা দিতে পারেন। চশমা দেওয়ার পর সবসময় তা ব্যবহার করা উচিত।
- কিছু ঝাপসা দেখলে
- মাথার পেছনের অংশ ব্যথা করলে
- কতক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলে
- পড়ার সময় বা ফোন ল্যাপটপ টিভি ব্যবহারের সময় চোখ দিয়ে পানি পড়লে
- দূরের বা কাছের জিনিস দেখতে সমস্যা হলে
- মাথা ব্যথা করলে
কোন কোন খাবার চোখের জ্যোতি বাড়ায়
ভিটামিন এ চোখের জ্যোতি বাড়ায়। ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। একটু সতর্ক থাকলে এবং ভিটামিনযুক্ত খাবার খেলে চোখের অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার
- মিষ্টি কুমড়া, গাজর, সবুজ শাকসবজি
- রঙিন ফল
- ছোট মাছ বা মলা ঢেলা মাছ
- আয়োডিনযুক্ত লবণ
- সামুদ্রিক মাছ
- কলিজা
চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম – ডাক্তারের পরামর্শ
চোখের ড্রপ বা চোখের কোন সমস্যার জন্য বাসায় বসে না থেকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম জানা থাকলেও ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ড্রপ ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেক সময় বিভিন্ন রোগের কারণেও চোখের সমস্যা হতে পারে।
বিশেষ করে যাদের এলার্জি আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া চোখের ড্রপ বা ঔষধ ব্যবহার করবেন না। এতে অবস্থা আরো মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে।
আরো পড়ুন – চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম
চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম
আজকে আমরা চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম ও চোখ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম আর্টিকেলটি দৈনন্দিন জীবনে এটি সবার অনেক কাজে লাগবে। চোখ পরিষ্কার করার ড্রপ নাম আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন মতামত থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- বাচ্চাদের চোখে পিচুটি হলে করণীয় – চোখে কেতুর হলে করণীয়
- চোখের এলার্জির ড্রপের নাম – চোখের এলার্জি দূর করার উপায়
- ভারতে চোখের ছানি অপারেশন খরচ ও যাতায়াতের নিয়ম