ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম ও বিদ্যুত খরচ

ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম

বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ গ্রামের অনেক জায়গায় গ্যাসলাইনে সমস্যা চলছে। যার ফলে দৈনন্দিন জীবনে এর নৈতিক প্রভাব পড়ছে। গ্যাসের চুলা সহ অনেক মানুষ ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করছে। ইলেকট্রিক চুলা এখনো তেমন জনপ্রিয় না হওয়ায় অনেকেই এ সম্পর্কের দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন।

আজকে আমরা ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম সহ বিস্তারিত তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ার পর ইলেকট্রিক চুলা সম্পর্কে আপনি অনেক ধারণা লাভ করবেন।

ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম ও উপায়

ইলেকট্রিক চুলা গুলো সাধারণ চুলার মত হয় না। যার ফলে ব্যবহারকারীরা ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারের পর ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম অনেকেই জানেন না। ঘরে থাকা কিছু সাধারণ জিনিস দিয়েই ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করা যায়।

বেকিং সোডা- ইলেকট্রিক চুলায় রান্নার পর গরম পানির সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে তা চুলার উপর ছিটিয়ে রাখতে পারেন। ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখার পর ঘষার যেকোনো জিনিস দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। রান্না করার পর অনেক সময় তেল-মসলা পড়ে পুড়ে যায়। যার ফলে গ্লাসের দাগ পড়ে যায়।ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

তারকাটা (মাজুনি)- সাধারণ ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার উপায় এরমধ্যে তারকাটা বা মাজুনি দিয়ে পরিষ্কার করা সবচেয়ে সহজ। প্রায় সবার বাসায় হাড়ি পাতিল পরিষ্কার করার জন্য তার কাটা থাকে। অনেকে তাকে মাজুনি বলে। রান্না শেষে প্রতিদিন এই তারকাটা দিয়ে হালকা করে ঘষলে চুলা নতুনের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।

ওয়াশিং পাউডার- ইলেকট্রিক চুলায় বেশি কিছু রান্না না হলে তেমন একটা দাগ পড়ে না। তাই মাঝে মাঝে অল্প ওয়াশিং পাউডার নরম একটি জালি ব্যবহার করে ধীরে ধীরে মুছলেই ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার হয়ে যায়।ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম জানলে ব্যবহার করা সহজ।

টুথপেস্ট- রান্নাবান্নার বিভিন্ন ট্রিক্স গুলোতে টুথপেস্ট অনেক দরকারি। অনেক সময় মরিচা পড়ে গেলে বা উপরে কোন পোড়া দাগ হলে টুথপেস্ট দিয়ে একটি পুরাতন ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করা যায়। টুথপেস্ট  কাচির মরিচা দূর করতেও অনেক সহায়তা করে।

কোন কোম্পানির ইলেকট্রিক চুলা ভালো

বাজারে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন কোম্পানির ইলেকট্রিক চুলা পাওয়া যায়। অনেকেই চুলগুলোকে ইন্ডাকশন ওভেন ও বলে।  বিভিন্ন কোম্পানি গুলোর মধ্যে ভিশন, ভিগো,মিয়াকো,কিয়াম। এদের মধ্যে ভিগো এবং মিয়াকো উন্নত মানের। এগুলো ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়ে থাকে। এবং চুলায় গ্যাস না থাকলেও টেনশন হয় না।

ভালো কোম্পানির ইলেকট্রিক চুলা হলেও তা ব্যবহারের পর ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম মেনে পরিষ্কার রাখলে অনেক দিন ব্যবহার করা যায়। তবে আপনার বাজেট কিছুটা কম হলে ভিশন এর চুলাগুলো দেখতে পারেন।

ইলেকট্রিক চুলা নষ্ট হওয়ার কারণ

সঠিকভাবে চুলা ব্যবহার করতে বা ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম না জানলে ইলেকট্রিক চুলা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। ইলেকট্রিক যে কোন ডিভাইস ব্যবহারের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। যেকোনো ইলেকট্রিক ডিভাইস ব্যবহারের পূর্বে তা ভালোভাবে জানা প্রইয়োজন। অনেকগুলো কারণ ইলেকট্রিক চুলা নষ্ট হতে পারে।

  •  কম পাওয়ারে ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করলে
  • চুলা অন অবস্থায় ইলেকট্রিক চুলায় পানি ঢাললে
  • নির্দিষ্ট ওজনের বাইরে ভারী পাতিল ব্যবহার করলে
  • অপ্রয়োজনে বারবার চুলা অন অফ করলে
  • অপরিষ্কার হাতে বা হাতে টাচ ইউজ করলে

ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারের নিয়ম

সাধারণত দোকান থেকে বা শো-রুম থেকে ইলেকট্রিক চুলা কেনার পর তারাই নির্দেশনা দিয়ে দেয় কিভাবে ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করতে হয়। তবে আরো সহজ ভাবে ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারের নিয়ম উল্লেখ করছি। ইলেকট্রিক চুলাতে বিভিন্ন রান্নার জন্য বিভিন্ন তা নির্ধারণ করা আছে।

অর্থাৎ যে কোনো কারী বা তরকারির জন্য ফ্রাই অপশন অন করতে হবে। যেকোনো কিছু ফ্রাই করার জন্য বারবিকিউ অপশন অন করতে হবে। এছাড়া ইলেকট্রিক চুলায় বারবিকিউ জন্য আলাদা টেম্পারেচার উল্লেখ করা আছে। তাছাড়া আলাদা করে চুলার টেম্পারেচার বাড়ানো কমানোর জন্য বাটন রয়েছে।

আরো একটি অপশন আছে ছোট কড়াই বা বড় কড়াই এর জন্য কতটুকু তাপমাত্রা প্রয়োজন। ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার কোন কঠিন কাজ নয়। কয়েক দিন ব্যবহার করলে চুলা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা হয়ে যাবে।

ইলেকট্রিক চুলার ধরন

বাজারে পূর্বে শুধুমাত্র এক ধরনের ইলেকট্রিক চুলা পাওয়া যেত। যা ইন্ডাকশন ওভেন নামে পরিচিত। অর্থাৎ যেখানে অ্যালুমিনিয়াম এগুলো ছাড়া অন্য কোন প্যান বা  কড়াই ব্যবহার করা যেত না। কিন্তু বর্তমানে বাজারে দুই ধরনের ইলেকট্রিক চুলা পাওয়া যায়। একটি

  1. ইন্ডাকশন ওভেন
  2. ইনফারেড চুলা

ইনডাকশন চুলা বিশেষ ধরনের পাতিল ব্যবহার করা যায় যা চুলা ক্রয়ের সময় সাথে দিয়ে দিবে এবং আপনি চাইলে পরবর্তীতে চাইলে অতিরিক্ত ক্রয় করতে পারবেন।

ইনফ্রারেড চুলা বাজারে নতুন এসেছে। এই চুলায় সব ধরনের করায় ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ আমরা বাসা বাড়িতে যত ধরনের পাতিল ব্যবহার করি সব গুলো ব্যবহার করতে পারবেন।

ইলেকট্রিক চুলার দাম

ইলেকট্রিক চুলার দাম চুলার কোন কোম্পানির উপর নির্ভর করে। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা কিছু কোম্পানি ইলেকট্রিক চুলা দাম জানাবো। বাজারের সব জিনিসের প্রতিদিন দাম বাড়ছে। সে হিসেবে দাম কিছুটা কম বেশি হতে পারে।

মিয়াকো –  মিয়াকো এর ইটিসি-ইডি৩ এর দাম ৩৫০০ টাকা। মিয়াকো এর ইলেকট্রিক চুলা গুলো বেশিরভাগেরই প্রায় ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা। এছাড়া

ভিগো – ভিগো এর চুলা গুলো ৪০০০থেকে ৫০০০ টাকা এর মধ্যে পাওয়া যায়।ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম মেনে ইউজ করলে যেকোনো দামের চুলাই দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।

ভিশন – ভিশন আর এফ এল এর একটি সাব ব্র্যান্ড। বর্তমানে ভিশনের বেশ কয়েকটি মডেল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এবং মডেল ভেদে দাম ৩০০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।

ইলেকট্রিক চুলার বিদ্যুৎ খরচ

ইলেকট্রিক চুলা গুলো যেহেতু কারেন্টের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। অনেকেই এর বিদ্যুৎ খরচ জানেন না বলে ব্যবহার করতে পারছেন না। ইলেকট্রিক চুলার বিদ্যুৎ খরচ ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। তবে ইলেকট্রিক চুলা প্রতি ঘণ্টায় ১ ওয়াট করে বিদ্যুৎ খরচ হয়।

তবে যারা ফুল টেম্পারেচারে অনেক রান্নাবান্না করে বা প্রতিদিন ব্যবহার করেন। তাদের বিদ্যুৎ খরচ বেশি হতে পারে। তবে নর্মাল ব্যবহার করলে ২০০থেকে ২৫০ টাকা বিল আসতে পারে।

ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা

সাধারণত ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারের অনেকগুলো সুবিধা অনেকগুলো অসুবিধা রয়েছে। ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারের সুবিধাগুলো হলো শীতকালে যখনই গ্যাসের সমস্যা করে তখন ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করা যায়। তবে ইলেকট্রিক চুলা গুলো নর্মাল চুলার মত ২ চুলার হয়না।

ইলেকট্রিক চুলার অসুবিধা হলো যেহেতু এটি কারেন্টে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং বিদ্যুৎ না থাকলে এটি ব্যবহার করা যায় না। এছাড়া ইলেকট্রিক চুলা বেশ ভালো পরিমানে বিদ্যুত ব্যয় হয় তাই কারেন্ট বিল অনেক বেশি আসতে পারে।

সতর্কতাঃ

যেহেতু চুলা ব্যবহারের পর অনেক সময় পর্যন্ত গরম থাকে। তাই নিজে ব্যবহারের সময়, এবং ব্যবহারের পরে অনেক সতর্ক থাকতে হবে। যাতে করে হাত পুড়ে না যায়। বাসায় ছোট বাচ্চা থাকলে ইলেকট্রিক চুলা নিচের কোন স্থানে না রাখাই উত্তম। এবং ইলেকট্রিক চুলা চালানোর পূর্বে বিদ্যুৎ লাইন ঠিক করে নেওয়া উচিত।

ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম

মন্তব্য

আজকে আমরা আপনাদের সাথে ইলেকট্রিক চুলা পরিষ্কার করার নিয়ম এবং ইলেকট্রিক চুলা সম্পর্কে বিভিন্ন অজানা তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগবে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোনো পরামর্শ বা মতামত থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply