নাকের এলার্জি দূর করার উপায়
বাংলাদেশি শতকরা ২৫ শতাংশমানুষের কোনো-না-কোনো অ্যালার্জির সমস্যা আছে।এলার্জি এমন এক বিশেষ ধরনের রোগ যার তেমন কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই। তবে আপনি যদি জানেন পরিবেশের কোন উপাদানে আপনার অ্যালার্জি সেই হিসেবে এলার্জি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। একেক মানুষের এলার্জি সমস্যা একেক রকম হয়ে থাকে। কারো কারো এলার্জি হয় স্কিনে, কারো এলার্জি নাকে, আবার কারো এলার্জি হয় চোখে। শরীরের যে অংশেই এলার্জি হোক না কেন এর চিকিৎসা পদ্ধতি প্রায় একই।
আজকে আমরা নাকের এলার্জি দূর করার উপায় ও ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ নাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। দেখাবো কিভাবে আপনি নিজেই এলার্জির সমস্যা খুঁজে বের করতে পারবেন এবং নিজেই এর প্রতিকার খুজে বের করবেন। আশা করছি যারা এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ব্লগটি উপকারি হবে।
এলার্জি কি?
নাকের এলার্জি দূর করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানার আগে প্রথমে জানতে হবে এলার্জি কি এবং কেন হয়। আমাদের শরীরে প্রতিদিন ধুলাবালির সাথে অথবা খাবারের সাথে অনেক ক্ষতিকর ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। শরীরের যে কোনো ক্ষতিকর বস্তু প্রবেশ করলে শরীর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু আপনার শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যদি এমন হয় যে শরীর ক্ষতিকর নয় এমন বস্তুকেও ক্ষতিকর মনে করে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করে তখন তাকে আমরা এলার্জি বলে।
আরেকটু বিশ্লেষণ করে বললে, বাইরে থেকে ধুলোবালি শরীরের কন্ঠটা খুবই নরমাল একটা বিষয়। শরিফের বিরুদ্ধে কোনো রিয়্যাকশন করে না। কিন্তু আপনার যদি সমস্যা থাকে তাহলে শরীর সামান্য ধুলোবালির কি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি মনে করে এবং এর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা শুরু করে। তখনি আপনার শরীর গরম হয়ে যায় অর্থাৎ জ্বর আসে, নাকে পানি বের হয়, চোখ লাল হয়ে যায় এবং চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।
এলার্জি আর কিছুই না বরং শরীরের সেনসিটিভিটি বেশি হওয়া। এমন বস্তুর প্রতি শরীর প্রক্রিয়া দেখানো যা বাস্তবে শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।
ঠান্ডা এলার্জির লক্ষণ
যেমনটা আমরা উপরে বলেছি শরীরের একেক ধরণের এলার্জির লক্ষণ একেক রকম হয়ে থাকে। যেমন স্কিন এলার্জি ধরন যেমন হবে নাকে বা চোখের এলার্জির লক্ষণ তার চেয়ে ভিন্ন হবে। চলুন তাহলে ঠান্ডা এলার্জির লক্ষণ নাকের এলার্জির লক্ষণ গুলো দেখে নেয়া যাক।
- কিছুদিন পরপরই সর্দি লাগা
- অনবরত হাঁচি আসে এবং নাক দিয়ে পানি পড়া
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া চোখ দিয়ে পানি পড়া
- কারো কারো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাথা ব্যথা করা
- চোখ এবং নাক চুলকানো
যদিও আমরা নাকের এলার্জি দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করবো বলেছিলাম তারপরও আমরা বারবার চোখের হাসি কথা বলছি কারণ চোখ এবং না খুবই ইন্টারকানেক্ট। অর্থাৎ নাকের এলার্জি আলোচনা করতে গেলে চোখ নিয়ে আলোচনা করতেই হবে।
নাকের এলার্জি কেন হয়
যেমনটা আমরা বলেছি এলার্জি কেন হয় কারণ জানায় বল আর কিছুটা কষ্টকর। কেননা ভিন্ন মানুষের শরীরে এলার্জি ধরন ভিন্ন হয়। ধারণা করা হয় এলার্জি পূর্বপুরুষ থেকে রক্তের মাধ্যমে শরীরে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ আপনার বাবার বা দাদার এলার্জি সমস্যা থাকে সেই ক্ষেত্রে আপনার ও এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা কিছু সম্ভাব্য কারণ বলতে পারি যার কারণে আপনার নাকের অ্যালার্জি হতে পারে। আশা করছি এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চললে নাকের এলার্জির সমস্যা কিছুটা কমবে। নিচে নাকের এলার্জি দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ডাস্ট এলার্জি আছে কিনা চেক করুন- ডাস্ট এলার্জি মানে হচ্ছে ধুলোবালিতে যাদের এলার্জি। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তার বেশির ভাগেরই এটি হচ্ছে কমন সমস্যা আছে নাক দিয়ে সামান্য ধুলোবালি ঢুকলেই হাঁচি কাশি শুরু হয়ে যায়। তাই আপনারা যদি নাকের এলার্জির সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে হতে পারে আপনারও ডাস্ট এলার্জি আছে। ডাস্ট এলার্জি থেকে বাঁচতে সবসময় ভালোবাসা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন এবং বাইরে গেলে মাস্ক পড়ার চেষ্টা করুন।
পানিতে এলার্জি আছে কিনা যাচাই করুন – যাদের ঘন ঘন সর্দি হয় এবং আদিবাসী আছে তাদের কয়েকটি অংশে নেই পানিতে এলার্জি থাকে। অর্থাভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে যেসব পানি ব্যবহার করছেন সেই পানি কতটা পরিষ্কার না হলে আপনার অ্যালার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই কিছুদিনের জন্য পানি পরিবর্তন করে চেষ্টা করুন ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে কিনা।
বিছানা ও জামা কাপড় পরিষ্কার রাখুন – নাকের এলার্জির বড় শত্রু হয়েছে অপরিষ্কার থাকে। আপনি যে বিছানায় ঘুমাচ্ছেন পাখি জামা কাপড় পড়ে বাইরে গেছেন তা নিয়মিত পরিষ্কার না করলে সামান্য ধুলোবালি নাক দিয়ে ঢুকলে এলার্জি সমস্যা শুরু হয়ে যাবে। তাই জামাকাপড় এবং বিছানা চাদর নিয়মিত পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন।
অতিরিক্ত গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পরিবেশে যাবে না – আপনার যদি নাকের এলার্জি জনিত সমস্যা থাকে সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গরম পরিবেশন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পরিবেশে আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। তাই একটানা রোদে কাজ করা বা অনেক সময় ধরে এসির নিচে বসে থাকা আপনার জন্য ঠিক হবে না।
ঠান্ডা এলার্জির ঘরোয়া চিকিৎসা
আমাদের একটি কমন সমস্যা হচ্ছে অ্যালার্জি দেখা দিলে আমরা মোনাস, মন্টিন, হিস্টাসিন, কিংবা প্রোসেটের মত মুখস্থ কিছু ঔষধ খেতে শুরু করি। আপনাকে মনে রাখতে হবে এই ওষুধগুলো সাময়িকভাবে আপনার অ্যালার্জি দূর করে। যেহেতু এদের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই তাই শুধুমাত্র ঔষধ খেয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। নিজে আমরা নাকের এলার্জি দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করছি। এইগুলো ট্রাই করলে আশা করছি ভাল ফলাফল পাবেন।
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করা – ভিটামিন এ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী এবং বড় একটি উপাদান। সবুজ শাকসবজি এবং কাঁচা ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যাদের শরীরে এলার্জি জনিত সমস্যা আছে তাদের জন্য এই মহা ঔষধ এর মত কাজ করবে। বিশেষ করে কাঁচা পেয়ারা এবং লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে তাই নিয়মিত লেবুর এবং পেয়ারা খাওয়ার চেষ্টা করুন।
নিয়মিত খাবারের সাথে ঘি খান – নিয়ম করে খাবারের সাথে ঘি খেয়ে দেখতে পারেন এতে করে অনেকেরই অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই আপনার শরীরে কি এমন কাজ করে তারা একদিন খেয়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
কালোজিরা কে দেখতে পারেন – কালোজিরাকে বলা হয় মৃত্যু ব্যতিত সকল রোগের ঔষধ। এমন অনেক লোকই আছেন যারা নিয়মিত কালোজিরা কে এলার্জি সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। নিয়মিত ঘুমানোর আগে কালোজিরা খেয়ে দেখতে পারেন আপনার জন্য এটি কাজ করে কিনা।
মধু – মধুর উপকারিতা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। গ্রামে এখনো ঠান্ডা জ্বর কিংবা শরীর ব্যথার জন্য অনেকেই মধু খেয়ে থাকেন। এছাড়াও মধুর হাজারটা উপকারিতা রয়েছে। যাদের অ্যালার্জি জনিত সমস্যার বেশি কষ্ট দেয় তাদেরকে ডাক্তার নিয়মিত মধু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ডাস্ট এলার্জি কেন হয়
উপরে আমরা নাকের এলার্জি দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দেখেছি যাদের নাকের এলার্জি সমস্যা আছে তার বেশির ভাগেরই ডাস্ট এলার্জি হয়ে থাকে। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন মানুষের শরীরের বিভিন্ন কারণে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যাদের নাকের এলার্জি সমস্যা আছে তাদের বেশিরভাগের ই ডাস্টের কারনে এলার্জি হয়ে থাকে। তাই আমরা ডাস্ট এলার্জি নিয়ে আলাদা ভাবে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ডাস্ট এলার্জি লক্ষণ
কখন বুঝবেন আপনার ডাস্ট এলার্জি হয়েছে। দাঁতের মাড়ি সাধারণত নাকি ধরে ঘরে ঢুকার কারণে হাঁচি কাশি এবং চোখ লাল হয়ে যাওয়াকে বলে। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে কখন আপনার অ্যালার্জি সমস্যাটা বেশি হচ্ছে। যদি এমন হয় বাইরে যাওয়ার ফলে সর্দি কাশি হচ্ছে অথবা কোন ধুলোবালি জায়গায় যাওয়ার ফলে এলার্জি সমস্যা হচ্ছে। তাহলে ধরে নিবেন আপনার অ্যালার্জি মূল কারণ হচ্ছে ডাস্ট।
আরো পড়ুন – গ্যাস্ট্রিকের ঘরোয়া চিকিৎসা – গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার লক্ষণ ও চিরতরে কমানোর উপায়
ডাস্ট এলার্জি চিকিৎসা
নাকের এলার্জি দূর করার উপায় আলোচনা করতে গিয়ে আমরা বলেছি এলার্জির স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। তবে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় মেনে চললে ধারণা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন। নিজাম রাজধানী থেকে বেঁচে থাকার কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করছি।
- সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন
- মোবাইল ধুলোবালিযুক্ত জায়গায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন
- বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করুন
- বিছানা ও জামাকাপড় নিয়মিত পরিষ্কার করুন
- গোসলের পানিতে আয়রন দেখলে পানি দিয়ে গোসল করুন
ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ নাম
বাংলাদেশের সাধারণত সর্দি কাশি বা এলার্জি সমস্যা হলে আমরা কমন কয়টি ঔষধ খেয়ে নেই। তবে এভাবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া মোটেই উচিত নয়। আপনার যদি এলার্জি সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করুন তখন ডাক্তার আপনার অবস্থান নিয়েছে চিকিৎসা দেবেন। তারপরেও আমরা কয়েকটি কমন ঔষধের নাম দেয়ার চেষ্টা করছি সেগুলো সাধারনত এলার্জি রোগীরা সেবন করে থাকে। তবে আমাদের সাজেশন থাকবে শুরুতে ঔষধ না খেয়ে নাকের এলার্জি দূর করার উপায় গুলো মেনে চলতে।
- মন্টিলুকাস্ট -১০ গ্রুপ ( মোনাস, মনটিন, মনটেলা )
- হিস্টাসিন ট্যাবলেট
- প্রোসেট
- এভাস্প্রে ( নাকের স্প্রে )
- জেলটাস ( নাকের স্প্রে )
নাকের এলার্জি দূর করার উপায়
উপরে আমরা নাকের এলার্জি দূর করার উপায় ও ঠান্ডা এলার্জির ঔষধ নাম নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনার বন্ধু বা প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করতে পারেন যার এলার্জির সমস্যা আছে। আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্লগ লিখে থাকি। ভালো লাগলে ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোষ্টগুলো পড়ুন। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন –
- গ্যাস্ট্রিকের ঘরোয়া চিকিৎসা – গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার লক্ষণ ও চিরতরে কমানোর উপায়
- গ্যাস্ট্রিকের ঘরোয়া চিকিৎসা – গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার লক্ষণ ও চিরতরে কমানোর উপায়