ডুপ্লিকেট আইফোন চেনার উপায়
স্মার্টফোন এর বাজারে অ্যান্ড্রয়েড এর পাশাপাশি আইফোনের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এই জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নকল আইফোন তৈরি এবং বাজারজাতকরণের সাথে জড়িত থাকে। আপনি যদি নতুন বা পুরাতন আইফোন কেনার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে আজকে আর্টিকেলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আর্টিকেলে আমরা ডুপ্লিকেট আইফোন চেনার উপায় নিয়ে আলোচনা করব। আশা করছি সবগুলো ধাপ সঠিকভাবে চেক করলে আই ফোনটি আসল কিনা তা সহজেই বুঝতে পারবেন।
আসল আইফোন চেনার উপায়
আমরা সর্বমোট 7 টি উপায় নিয়ে আলোচনা করব। এই সবগুলো স্টেপ সঠিকভাবে যাছাই করলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার ক্রয় কৃত আইফোনটি আসল নাকি নকল
১। সিরিয়াল নাম্বার চেক করুন
আসলে ও নকল আইফোনের মধ্যে পার্থক্য করার সবচেয়ে সহজ ও বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে সিরিয়াল নাম্বার ভ্যালিড কি না তা চেক করা। আপনার ক্রয়কৃত আইফোন যদি ডুপ্লিকেট হয় তাহলে সিরিয়াল নাম্বার চেক করার মাধ্যমে তা খুব সহজেই বের করে ফেলতে পারবেন। কিভাবে সিরিয়াল নাম্বার চেক করবেন?
ধাপ ১ – প্রথমে আপনার মোবাইলের সেটিংস থেকে সিরিয়াল নাম্বারটি খুজে বের করুন। সিরিয়াল নাম্বার খুজে পেতে এই স্টেপ গুলো ফলো করতে পারেন Setting> General > About > Serial Number সিরিয়াল নাম্বারের উপর চাপ দিয়ে ধরলে কপি করার অপশন পেয়ে যাবেন। কপি করা হয়ে গেলে আপনার প্রথম ধাপ এর কাজ শেষ।
ধাপ ২ – এই পর্যায়ে কপি করা সিরিয়াল নাম্বার ভ্যালিড কি না তা চেক করার পালা। সিরিয়াল নাম্বার চেক করতে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন https://checkcoverage.apple.com/ এখানে দুটি বক্স পেয়ে যাবেন। প্রথম বক্সে আপনার কপিকৃত সিরিয়াল নাম্বারটি দিতে হবে এবং দ্বিতীয় বক্সে ক্যাপচা কোড দিতে হবে সিরিয়াল নাম্বার ও ক্যাপচা কোড দেয়া হয়ে গেলে Continue বাটনে ক্লিক করুন।
যদি আপনার ক্রয়কৃত আইফোনটি আসল হয়ে থাকে তাহলে ফোনের মডেল, ক্রয়ের তারিখ, সহ সকল বিস্তারিত তথ্য দেখতে পাবেন। আর যদি মোবাইলটি আসল না হয় সেক্ষেত্রে এই সকল তথ্য দেখতে পাবেন না।
আরো পড়ুন – মোবাইল ঠান্ডা রাখার সফটওয়্যার
২। 3U Tools (থ্রি ইউ ট্যুলস) ব্যবহার করুন
3U Tools আই ও এস (অ্যাপল এর সকল প্রোডাক্ট) এর কোয়ালিটি চেক করার জন্য সারা বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়। এই ট্যুলের সাহায্যে অ্যাপলের যেকোন পন্যের সকল তথ্য সঠিকভাবে বের করতে পারবেন। বিশেষ করে পুরাতন আইফোন ক্রয়ের সময় এই ট্যুল খুব বেশি কাজে আসে। নিচে আমরা এক নজরে দেখে নিবো এই ট্যুলের সাহায্যে কি কি করা যায়
- ব্যাটারি হেলথ চেক করা যায় – অর্থাৎ আপনার ব্যাটারির বর্তমান হেলথ কত পার্সেন্ট তা দেখতে পারবেন। এছাড়াও ব্যাটারি শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কতবার চার্জ দেয়া হয়েছে সেটাও জানতে পারবেন এই ট্যুলের মাধ্যমে।
- মোবাইলটি মেনুফেকচার এর তারিখ সঠিকভাবে জানতে পারবেন
- কোন পার্টস ইতোপূর্বে খোলা হয়েছে কিনা তা জানা যাবে
- এছাড়াও মোবাইলের যেকোনো পার্টসে কোন সমস্যা ধরা পড়লে তার সাথে সাথে দেখিয়ে দেবে এই টুল
সর্বোপরি নতুন আইফোন ক্রয়ের ক্ষেত্রে জানতে পারবেন ভেতরের কোন পার্টস ইতোপূর্বে খোলা হয়েছে কিনা অর্থাৎ রিফারবিশড কিনা। পুরাতন আইফোন ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন পার্টস চেঞ্জ করা হয়েছে কিনা ঠিক কতদিন পুরাতন মোবাইল তা সহজেই যাচাই করতে পারবেন এই টুলের মাধ্যমে।
3utools ডাউনলোড করতে চাইলে http://www.3u.com/ এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
৩। অ্যাপল অ্যাপ স্টোর চেক করুন
ডুপ্লিকেট আইফোন চেনার উপায় গুলোর মধ্যে তিন নাম্বার যে উপায়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হচ্ছে অ্যাপল অ্যাপ স্টর। আপনার ক্রয় কৃত আইফোনের অ্যাপ স্টরে লগইন করুন। অরিজিনাল আইফোন হলে অ্যাপেল অ্যাপস্টোর সরাসরি কাজ করবে আর যদি দুপ্লিকেট বা নকল আইফোন হয় সেই ক্ষেত্রে থার্ডপাটি কোন অ্যাপ স্টোরে নিয়ে যাবে।
কেননা অরিজিনাল আইফোন ছাড়া অর্থাৎ অ্যাপল আইডি ছাড়া অ্যাপ স্টোর কাজ করেনা।
৪। ডিজাই চেক করুন
আসল এবং নকল ফোন চেনার আরেকটি বড় মাধ্যম হচ্ছে ডিজাইন। অরিজিনাল আইফোন এর ডিজাইন অবশ্যই প্রেমিয়াম কোয়ালিটি হবে যে আপনি হাতে নিলে বুঝতে পারবেন। ডুপ্লিকেট ভালো কথাই ফুলগুলোর ডিজাইন হবে খুবই লো কোয়ালিটি এবং বাজে ধরনের। তাই একটু ভালোভাবে নিরীক্ষা করলেই খুব সহজেই আসল এবং নকল আইফোন এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন। ডিজাইন চেক করার যে বিষয়গুলো দেখতে হবে তা হল –
- ডিসপ্লে ভেজেল – অরিজিনাল আইফোন এলিভেন তুলনামূলক চিকন হয় অর্থাৎ ডিসপ্লের চারপাশে কাল খালি অংশ। কিন্তু সেই তুলনায় ডুপ্লিকেট ফাইলগুলো অনেক মোটা হবে যে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন করতে পারবেন।
- অ্যাপল লোগো – সাধারণত আইফোন এর পেছনে থাকে তা অত্যন্ত প্রেমিয়াম কোয়ালিটি মেটেরিয়াল দ্বারা তৈরি। সে তুলনায় ডুবলিকেট পেছনের লোগোটি নরমাল ম্যাটেরিয়াল এবং খসখসে ধরনের হয়ে থাকে।
- সাউন্ড বক্স কোয়ালিটি – অরিজিনাল আই ফোনের সাউন্ড কোয়ালিটি অনেক ক্লিয়ার হবে সে তুলনায় ডুপ্লিকেট আই ফোনের সাউন্ড কোয়ালিটি নরমাল হবে।
৫। চার্জার ও বক্স চেক করুন
অরিজিনাল আইফোন এবং ডুবলিকেট আইফোনের মধ্যে পার্থক্য করার আরেকটি উপায় হচ্ছে চার্জার এবং মোবাইলের সাথে দেয়া বক্স। চার্জার এবং বক্সে কোন কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা নিচে আলোচনা করছি
বক্স চেক করুন –
- প্রথমত বক্সের কোয়ালিটি চেক করতে হবে। অরিজিনাল আইফোন এর বক্স প্রিমিয়াম কোয়ালিটি এবং ভারী হবে সে তুলনায় ডুপ্লিকেট আইফোনের বক্স হালকা এবং নরমাল মেটেরিয়াল দ্বারা তৈরি করা যা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।
- বক্সের গায়ে থাকা আইএমইআই , সিরিয়াল নাম্বার এবং মোবাইলে সিরিয়াল নাম্বার মিলিয়ে দেখুন। বক্স এবং মোবাইলের সিরিয়াল নাম্বার মিলে গেলে ধরে নিতে হবে এটি আসলে কিন্তু সিরিয়াল নাম্বার না মিললে বুঝতে পারবেন এটি চুরি করার পর অথবা ডুপ্লিকেট।
চার্জার চেক করুন –
- অরিজিনাল আইফোন এর চার্জার ফ্লেক্সিবল এবং প্রিমিয়াম কোয়ালিটি হবে। অরিজিনাল চার্জার তুলনামূলক ভারি এবং চার্জার এর তার গুলো অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল হবে অর্থাৎ আপনি যেভাবে ইচ্ছা বাঁকাতে পারবেন। সে তুলনায় ডুবলিকেট আই ফোনের চার্জার অনেক হালকা হবে এবং তার গুলো শক্ত হবে যা সহজেই পার্থক্য করতে পারবেন।
- যদি সম্ভব হয় চার্জার দিয়ে আইফোনটি চার্জ দিয়ে দেখবেন। ডুবলিকেট আইফোন হলে চার্জ দেয়ার সময় চার্জার এবং মোবাইল অনেক বেশি গরম হবে।
৬। ফেসলক এবং সিরি চেক করুন
আইফোন ক্রয়ের পূর্বে ফেইস লকএবং সিরি ভালোভাবে কাজ করছে কিনা তা চেক করুন। অরিজিনাল আইফোন হলে ফেইসবুক এবং সিরি খুব ভালোভাবেই কাজ করার কথা। কিন্তু ডুবলিকেট আইফোন হলে তা সঠিকভাবে কাজ করবে না। সহজ একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেও দ্রুত যাচাই করতে পারবেন আইফোনটি ডুপ্লিকেট কিনা।
৭। সেটিংস চেক করুন
উপরে আমরা যে কয়টি পদ্ধতি বলেছি তার প্রত্যেকটি ভালোভাবে চেক করলে এতক্ষণে নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার কথা আইফোনটি অরিজিনাল কিনা। তবে ভালোভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শেষবারের মতো মোবাইলে সেটিংস টি আরেকবার ভালোভাবে চেক করে নিন। সেটিংস অপশনে কোন কোন জিনিস গুলো ভালো ভাবে চেক করতে হবে তা নিচে উল্লেখ করা হলো –
- ফোনের আই ও এস ভার্সন চেক করুন। এবং দেখে নিন সর্বশেষ আপডেট ভার্সন আছে কিনা। ডুপ্লিকেট ফোনে আপডেট ঠিকভাবে আসবেনা।
- এবাউট সেকশন থেকে ফোনের রেম এবং স্টুডেন্ট ভালোভাবে চেক করে নিন।
- ব্যাটারি হেলথ ভালোভাবে চেক করুন
- অ্যাপল আইডি কাজ করছে কিনা চেক করুন
- সিকিউরিটি সিস্টেম কাজ করছে কিনা চেক করুন
- স্তরেজ ক্যাপাচিটি ও র্যাম ম্যানেজমেন্ট ঠিক আছে কিনা চেক করুন
আরো পড়ুন – মোবাইল ঠান্ডা রাখার সফটওয়্যার