দুবাই ভিজিট ভিসা কবে খুলবে
হ্যালো বন্ধুরা। দুবাইকে বলা হয় আধুনিকতা ও বিলাসিতার রাজধানী। বিশ্বের সব সফল ও ধনী ব্যবসায়ী ও ধনকুবেররা অবকাশ যাপনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত বা আরো স্পেশালি বললে দুবাই ভিজিট ভিসা নিয়ে অবকাশ যাপনে যায়। পূর্বে বাংলাদেশ থেকে মূলত শ্রমিকরা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে কাজ করতে যেতো তবে এখন বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর অনেক বাংলাদেশী বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ভিজিট ভিসা নিয়ে দুবাই ঘুরতে যায়। কিন্তু করনোর পর থেকে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মত দুবাই ও ভিজিট ভিসার উপর বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছে।
এই শর্তসমূহের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবসা করে নিচ্ছে যারা জানে না দুবাই ভিজিট ভিসা কবে খুলবে তাদের কাছে থেকে। আজকের ব্লগে আমরা দুবাই ভিজিট ভিসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো। দুবাই ভিজিট ভিসা কি, কিভাবে আবেদন করতে হয়ে, দুবাই ভিজিট ভিসা কবে খুলবে, দুবাই ভিজিট ভিসা কত টাকা এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর থাকবে আজকের ব্লগে। তাই ব্লগটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ থাকলো।
দুবাই ভিজিট ভিসা কি?
দুবাই হচ্ছে ইউনাইটেড আরন আমিরাতের রাজধানী এবং পৃথীবির সবচেয়ে উন্নত শহর গুলোর মধ্যে একটি। দুবাই মূলত প্রবাসীদের বেশ কয়েক ধরনের ভিসা দিয়ে দুবাই যাওয়ার জন্য। ইতপূর্বে বানহালদেশ, পাকিস্তান, ইন্ডিয়ার মত দেশ গুলোকে দুবাই ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দিতো শ্রমিক নেয়ার জন্য। কিন্তু দুবাইকে ইন্টারন্যাশনাল টুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে দুবাই ভিজিট ভিসা দেয়া শুরু করা।
এখন পৃথীবির যেকোন দেশ থেকে আরব আমিরাত ভিজিটের জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাসের জন্য ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ৩ মাসের ভিসায় দুবাই যত ইচ্ছা ঘুরতে পারবেন তবে শর্ত হচ্ছে এই সময়ে কোন রকম কাজ করতে পারবেন না। অর্থাৎ ভিজিট ভিসায় গিয়ে কোন প্রকার জব বা কাজ করতে পারবেন না। করোনার পর থেকে দুবাই ভিসিট ভিসা পাওয়া একটু কঠিন হয়ে গেছে। তাই যারা দুবাই ভিজিট ভিসা কবে খুলবে জানতে চেয়েছেন তাদের জন্য আজকের ব্লগটি খুব উপকারি হবে আশা করি।
দুবাই ভিজিট ভিসা আবেদনের নিয়ম
দুবাই ভিজিট ভিসা আবেদনের বেশ কয়েকটি উপায় আছে। এই পর্যায়ে আমরা ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে আবেদনের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করবো। তবে ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ঐ এজেন্সি কতটা ট্রাস্টেট। কারন বর্তমানে অনেক ফ্রড এজেন্সি বের হয়েছে যারা ভিসা করে দেয়ার নামে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। তাই এসেন্সি সিলেকশনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। নিচে আমরা এজেন্সির মাধ্যমে দুবাই ভিসিট ভিসা আবেদনের নিয়ম আলোচনা করার চেষ্টা করচি।
- সর্বপ্রথম ভিসা আবেদন ফর্মটি সঠিকভাবে পূরন করতে হবে।
- দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ল্যাব প্রিন্ট ছবি জমা দিতে হবে। ছবির সাইজ অবশ্যই ৪৫ মি. মি. X ৩৫ মি. মি. হতে হবে। এবং ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে। কোনক্রমেই নীল বা অন্য কোন কালার ব্যকগ্রাউন্ড গ্রহনযোগ্য হবে না।
- আবেদনের সময়ে থেকে পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে। এবং একইসাথে কমপক্ষে দুই পৃষ্ঠা খালি থাকতে হবে।
- আপনার পেশার পরিচয় প্রমানের জন্য যে পেশায় আছেন তার কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে।
- আপনি যদি কোন কোম্পানির আন্ডারে কাজ করেন সেক্ষেত্রে এই শর্তে একটি ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে যে আপনি যদি কোন কারনে শর্ত ভঙ্গ করেন তাহলে এই দ্বায়ভার কোম্পানি বহন করবে।
- আবেদনের সময় বিমানের রিটান টিকেটের কপি জমা দিতে হবে এটা প্রমানের জন্য আপনি ঠিক করদিন দুবাই অবস্থান করবেন।
- বিমানের রিটান টিকিট দেখানোর পাশাপাশি যে হোটেলে অবস্থান করবেন সে হোটেলের রিসারবেশন ম্যাসেজ প্রুফ দেখাতে হবে। যাতে তারা কনফার্ম হতে পারে আপনি দুবাই এসে কোন হোটেলে অবস্থান করবেন।
- ভ্রমনকারীর এন আই ডি কার্ড ও ভিজিটিং কার্ডের স্কেন কপি।
- যোগাযোগের জন্য দুটি বাংলাদেশী ফোন নাম্বার। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় নাম্বারটি আপনার বাবা মায়ের ও দিতে পারেন।
দুবাই ভিজিট ভিসা প্রোসেসিং
যারা আমাদের কাছে প্রশ্ন করেন দুবাই ভিজিট ভিসা কবে খুলবে তাদের বড় একটি অংশ দুবাই থাকেন এবং তদের আত্মীয় স্বজনের জন্য দুবাই ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করতে চান। উপরে আমরা দেখেছি আপনি বাংলাদেশ থেকে কিভাবে দুবাই ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করবেন। কিন্তু যদি এমন হয় যে আপনি নিজেই দুবাই আছেন এবং আপনি চাচ্ছেন আপনার কোন একজন আত্মীয়কে দুবাই ভিজিট ভিসার মাধ্যমে দুবাই নিয়ে আসতে। সেক্ষেত্রে আপনি এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। ভিসা এজেন্সির মাধ্যমে আবেদনের চেয়ে এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে আবেদন করা তুলনামূলক সহজ। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক কিভাবে এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে দুবাই ভিজিট ভিসা প্রোসেসিং করতে হয়।
আয়ারলাইন্সের মাধ্যমে দুবাই ভিজিট ভিসা আবেদন
এয়ারলাইন্স এর মাধ্যমে দুবাই ভিজিট ভিসা আবেদন করতে হলে আপনাকে ওই একই এয়ারলাইন্স থেকে টিকিট ক্রয় করতে হবে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স আছে যারা বাংলাদেশীদের দুবাই ভিজিট ভিসা পেতে সাহায্য করে। যেমন
- ইতিহাদ এয়ারওয়েজ
- এমিরাতস এয়ারওয়েজ
- ফ্লাই দুবাই
- এয়ার এরাবিয়া
আমরা মূলত ইতিয়াদ এয়ারওয়েজ ও এমিরাতস এয়ারওয়েজ নিয়ে আলোচনা করবো।
ইতিহাদ এয়ারওয়েজ ভিজিট ভিসা সার্ভিস
ইতিহাদ এয়ারওয়েজ দুবাই এর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত এয়ারওয়েজ। বাংলাদেশীদের জন্য তারা ভিজিট ভিসার ব্যবস্থা রেখেছেন। যারা দুবাই ভিজিট ভিসা কবে খুলবে জানতে চান তাদের জন্য আমাদের সাজেশন হচ্ছে এজেন্সির ঝামেলায় না গিয়ে আপনি সরাসরি এয়ারওয়েজ এর মাধ্যমে ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।
ইতিহাদ এয়ারওয়েজে ভিসার আবেদন করার পরবর্তী ৩ থেকে ৪ কর্ম দিবসের মধ্যে ভিসা প্রোসেসিং হয়ে যায় এবং আবেদনের সময় দেয়া ভিসা ফি অফেরতযোগ্য। সবধরনের ভিজিট ভিসার মেয়াদ ৩০ দিন এবং প্রতিবার মেয়াদ বাড়াতে আপনার খরচ হবে ৯৫০ দিরহাম। চলুন দেখে আসি ইতিহাদ এয়ারওয়েজ এর ভিজিট ভিসা আবেদনের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আবেদনের নিয়ম
- ভিজিট ভিসা আবেদন ফর্ম নির্ভুলভাবে পূরন করে জমা দিতে হবে।
- পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে।
- আবেদনের সময় পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।
- আপনি যদি নতুন করে পাসপোর্ট করেন সেক্ষেত্রে আমরা সাজেস্ট করবো স্মার্ট পাসফোর্ট করতে যেটা বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে করা যায়। কারন এখন সব যায়গায় স্মার্ট পাসপোর্ট বা ই পাসপোর্ট এর ভ্যালু সবচেয়ে বেশি।
- পাসপোর্ট এর স্কেন কপি একটা।
- পরিবারের সদস্যের সম্পর্ক প্রমানের জন্য যথেষ্ট ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। যেমন বিবাহের সনদ পত্র
এমিরাতস এয়ারওয়েজ ভিসা সার্ভিস
ইতিহাদের মত এমিরাতস এয়ারওয়েজ ও দুবাইয়ের নামকরা এয়ার সার্ভিস কোম্পানি। বাংলাদেশ থেকে ভিজিট ভিসা আবেদনের নিয়ম দুইটি এয়ারওয়েজ কোম্পানিতে প্রায় একই। উভয়ক্ষেত্রেই আপনাকে ওই নির্দিষ্ট এয়ারওয়েজ থেকে ভ্রমনের টিকিট ও ফিরতি টিকিট বুক করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আবেদনের নিয়ম
- ভিজিট ভিসা আবেদন ফর্ম নির্ভুলভাবে পূরন করে জমা দিতে হবে।
- পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে।
- আবেদনের সময় পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে।
- আপনি যদি নতুন করে পাসপোর্ট করেন সেক্ষেত্রে আমরা সাজেস্ট করবো স্মার্ট পাসফোর্ট করতে যেটা বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে করা যায়। কারন এখন সব যায়গায় স্মার্ট পাসপোর্ট বা ই পাসপোর্ট এর ভ্যালু সবচেয়ে বেশি।
- পাসপোর্ট এর স্কেন কপি একটা।
- পরিবারের সদস্যের সম্পর্ক প্রমানের জন্য যথেষ্ট ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। যেমন বিবাহের সনদ পত্র
- ভ্রমনের ফিরতি টিকিট ও হোটেল রিজারভেশনের ডকুমেন্টস।
দুবাই ভিজিট ভিসা কবে খুলবে
যেমনটা আমরা উপরে বলেছি শুধুমাত্র করোনা কালীন সময়ে দুবাই ভিজিট ভিসা বন্ধ ছিলো। তবে ২০২১ সালের শুরুর দিকেই পূর্বের ন্যায় আবার দুবাই ভিজিট ভিসা খুলে দিয়েছি। তাই যারা আমাদের কাছে প্রশ্ন করছেন দুবাই ভিজিট ভিসা কবে খুলবে তাদের আমরা আশ্বস্ত করতে পারি যে সঠিক নিয়মে দুবাই ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করলে অবশ্যই ভিসা পাবেন। তবে ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে আপনি যদি এজেন্সির মাধ্যমে করেন সেক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন হতে হবে। কারন বর্তমানে অনেকেই ভিসা দেয়ার কথা বকে গ্রাহকের কাছে থেকে কিছু অগ্রিম টাকা খেয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।
তাই আমরা রিকোয়েস্ট করবো আমাদের উল্লেখিত নিয়ম ফলো করে যদি দুবাই ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করেন তাহলে আশা করছি আর কোন সমস্যা হবে না। এছাড়া যদি সম্ভব হয় তাহলে চেষ্টা করুন এয়ারওয়েজ কোম্পানির মাধ্যমে ভিসার আবেদনগুলো করতে।
দুবাই ভিজিট ভিসা কত টাকা
দুবাই মূলত বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক হিসেবে জনশক্তি নিয়ে থাকে। তবে ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমানে বাংলাদেশী ভিজিট ভিসায় দুবাই যায়। দুবাই ভিজিট ভিসা আবেদনের সময় আপনার প্রাথমিকভাবে খরচ হবে ২০ হাজার টাকা। এবং ভিজিট ভিসায় ঘুরে আসতে আপনার আনুমানিক খরচ পড়বে আড়াই লক্ষ টাকা। তবে বর্তমানে মুদ্রাস্ফিতির কারনে দিন দিন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই আপনি যখন এই ব্লগটি পড়ছেন তখন খরচ আরো বেশি হতে পারে। তাই আবেদনের পূর্বে তখনকার খরচটি ভালোভাবে দেখেনিন। ধন্যবাদ।
ভিজিট ভিসার জরিমানা
আমাদের মধ্যেই অনেকেই আছেন যারা ভিজিট ভিসায় দুবাই গিয়ে সেখানে পার্মানেন্ট কাজ করে থেকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। যদিও এটা পূর্বে কিছুটা সম্ভব হতো কিন্তু বর্তমানে ভিজিট ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে দুবাই থাকা পূর্বের যেকোন সময়ের তুলনায় অনেক কঠিন। কেউ যদি ভিজিট ভিসার মেয়াদ শেষে দুবাই অবস্থান করে তাহলে প্রথমদিন ৩০০ দিরহাম ও পরের প্রতিদিনের জন্য ১০০ দিরহাম হারে জরিমানা দিতে হবে। তাই ভুলেও ভিজিট ভিসায় গিয়ে পার্মানেন্ট হওয়ার চিন্তা করবেন না দয়া করে।
এই ব্লগের মাধ্যমের আমরা চেষ্টা করেছি দুবাই ভিজিট ভিসা কি, কিভাবে আবেদন করতে হবে, দুবাই ভিজিট ভিসা কবে খুলবে, দুবাই ভিজিট ভিসা কত টাকা এই সব ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করতে। আশা করছি এই ব্লগটি আপনাদের পছন্দ হয়েছে। যদি ব্লগটি আপনার কাজে আসে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেনা না।