ডাঃ দেবী শেঠির সিরিয়াল নেওয়ার নিয়ম
ডাক্তার দেবী শেঠি বিশ্বের অন্যতম সেরা হৃদরোগ চিকিৎসকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বাঙ্গালুরু নারায়না ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সাইন্স হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতা। হসপিটালের বেশিরভাগ রোগী বাংলাদেশের হার্টের রোগী। তবে অনেকেই ডাক্তার দেবী শেঠির সাথে কিভাবে দেখা করতে হয় তার সঠিক নিয়ম-কানুন না জেনে যাওয়ার কারণে তার সাথে দেখা করতে অনেক সময় ও ঢাকা নষ্ট হয়।
আজকে আমরা ডাঃ দেবী শেঠির সিরিয়াল নেওয়ার নিয়ম এবং তার সাথে দেখা করার পূর্বে করণীয় কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন – ভারতে ডাক্তারি পড়ার খরচ ও ভর্তির যোগ্যতা ২০২৩
ডাঃ দেবী শেঠী কে?
ডাক্তার দেবি প্রসাদ শেঠী পৃথিবীর ১০ জন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের মধ্যে অন্যতম একজন। দেবিসেটি ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের দক্ষিণ কণার জেলায় কিডনিগুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। ১৯৯১ সালে ৯ দিন বয়সী শিশুর হৃৎপিণ্ড অপারেশন করে যা ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথম সফল শিশুর হৃৎপিণ্ড অস্ত্র পাচার। তিনি মাদার তেরেসার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি সার্জারি করেছেন। ১৯৮২ সালে দেবি সেটি কস্তরবা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি বিদ্যায় গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করে ইংল্যান্ড থেকে সার্জারি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। ভারতের প্রথম হৃদরোগ হাসপাতাল ছিল বি এম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টার কিন্তু ভারতীয় হার্টের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা এত বেশি ছিল যে একটি হাসপাতাল যথেষ্ট ছিল না।
তাই ডাক্তার দেবী শেঠি ও ডাক্তার রায় মিলে আরো তিনটি হৃদরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এটি ভারতের শ্রেষ্ঠ হাসপাতালের একটিতে পরিণত হয়। ১৯৯৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চার হাজার শিশুর সফল হার্ট সার্জারি সম্পন্ন করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্বের বৃহত্তম হৃদ হাসপাতাল নারায়না ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সাইন্সেসেস বেঙ্গালুরুতে বর্তমানে আছে।
এবং এটিতে আছে এক হাজার সজ্জা ১৫৭ জন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ পাঁচটি ক্যাথল্যাব ১৫ টি অপারেশন থিয়েটার এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫ জন ছোট বড় রোগের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়।
ডাঃ দেবী শেঠির সিরিয়াল নেওয়ার নিয়ম
- সাধারনত ডাক্তার দেবীসেটি সরাসরি কোন রোগী দেখেনা। তাই সেখানে গিয়েই সরাসরি ডাক্তার দেবি সেটিকে দেখানো সম্ভব হয় না। অনেকগুলো প্রসেস শেষে তাকে দেখানো সম্ভব হয়-
- নারায়ণা হাসপাতালের বেসমেন্ট এটা সিরিয়াল নেওয়ার জন্য আলাদা কাউন্টার রয়েছে। সকাল আটটার মধ্যে গেলে কাউন্টার একটি ফরম পূরণ করতে হয় যা আন্তর্জাতিক বা নতুন রোগীদের জন্য ৫০০ রুপি জমা দিয়ে ফাইল করতে হয়।
- ফাইলটি নিয়ে পাশে আরেকটি কাউন্টারে গেলে তারা ফাইলটি চেক করে কিছু টেস্ট করতে বলবে পরে।
- একজন কার্ডিয়লজিস্ট এর কাছে রেফার করবে।
- তিনি যদি মনে করেন ডাক্তার সেটির কাছে পাঠানোর প্রয়োজন আছে তবে তিনি রেফার করবেন।
- মূলত ডাক্তার দেবী সেঠি জটিল এবং শিশুদের হার্টের সমস্যা দেখে থাকেন। তবে সব ঠিক থাকলেও তাকে পাওয়া যাবে এক থেকে সাত দিন পরে
- অনেক জটিল অপারেশনে তিনি বাইরের রোগী দেখেন না।
- অবস্থা যতই জটিল অবস্থায় থাকুক না কেন তাকে দেখাতে হলে অবশ্যই সময় নিয়ে যেতে হবে
- কয়েকজন সেক্রেটারি মধ্যে দীপক খুবই ভালো তবে তিনি বাংলা জানেন না। তবে এছাড়া ও রিসিপশনে কয়েকজন সেক্রেটারি থাকে যারা বাংলা জানে তারা মোটামুটি সহযোগিতা করে থাকে।
- সবচেয়ে ভালো হয় সরাসরি ডাঃ দেবী শেঠীকে whatsapp করলে। তিনি নিজেই এর রিপ্লাই দিয়ে থাকেন। তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার হল- +৯১৯৯৮০১৯৯৮০১।
- এই নাম্বারে শুধু টেক্সট পাঠানো যাবে কোন কল করা যাবে না
- এছাড়াও ইমেইল করা যায় [email protected] এই ঠিকানায়।
- তবে বাংলাদেশের মিলু (ঢাকা ০১৯৪৩২২২২২২২২২) ও মৃণাল (চট্টগ্রাম ০১৭৩১৪০৯৩৫২) সাহায্য করতে পারবে।
বুকিং সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য
- নারায়না হেলথের চেয়ারম্যান ডাক্তার দেবীপ্রসাদ সেটি এপয়েন্টমেন্ট সংক্রান্ত আরো কোন কিছু প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে এই ঠিকানায় ইমেইল করতে হবে- [email protected] এই ঠিকানায় ইমেইল করা যেতে পারে।
- ভিডিও কন্সাল্টেশন অথবা ভিডিও কলের মাধ্যমে যদি এ বিষয়টি থেকে চিকিৎসা করাতে চান সে ক্ষেত্রে https://narayan.health/ocaapp/video-consult/doctors/speciality/cardiac science সাইটে লগইন করে স্ক্রল করি নিচে নামলেই দেখা যাবে ডাক্তার দেবীপ্রসাদ সেটির ভিডিও কন্সাল্টেসনের অপশন।
- ভিডিও কনফেডেশন অপশনে ক্লিক করার পর ফোন নম্বর চাওয়া হয় ফোনে নির্ধারিত ওটিপি লগ ইনবক্সে দিলেই নাম মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল দিয়ে লগইন করে আপডেট করা যায়। এরপর নির্ধারিত নির্দেশ মেনেই চিকিৎসকের ভিডিও কন্সেন্ট্রেশন এর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সম্ভব।
- এছাড়াও নারায়না হেলথের official ওয়েবসাইটে গিয়ে দেবীপ্রসাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর জন্য ইনকয়ারি নাউ বলে একটি অপশন পাওয়া যাবে সেখানে নিজের নাম, ইমেইল মোবাইল নাম্বার কোন শহরের বাসিন্দা এবং কোন হাসপাতালে দেখাতে চায় এ যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাবমিট অপশনে ক্লিক করলেই এপয়েন্টমেন্টে সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
ল্যাব টেস্ট বিস্তারিত
ডাঃ দেবী শেঠী দেখানোর পূর্বে যদি কোন ডাক্তার কোন টেস্ট দিয়ে থাকে তবে তার কিছু পরীক্ষা বাংলাদেশের ভালো হাসপাতাল বা ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে করিয়ে নিলে সেখানে আর করতে হয় না। যেমন-
- কমপ্লিট বার ব্লাড টেস্ট বা সিবিসি
- কেএফটি রেনডম ইসিজি
- লিপিড প্রোফাইল
- গ্লুকোজ টেস্ট এন্ড আফটার টু আওয়ার্স
- এক্সরে চেস্ট
- ইকো কালার
- ড্রপলার
- এনজিও গ্রাম
আরো পড়ুন – বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা খরচ ২০২৩
প্রয়োজনীয় বিষয়
- এছাড়াও কিছু প্রয়োজনে বিষয় জানা প্রয়োজন এবং কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে বেশি ভালো হয়। যেমন-
- রোগীকে যদি এনজিও গ্রাম বা রিং অপারেশন করতে বলা হয় তাহলে অবশ্যই মেডিকেল ভিসা লাগবে তা না হলে বিপদে পড়ে যেতে হবে
- পাসপোর্ট ও ভিসা এর কয়েকটি ফটোকপী সাথে রাখতে হবে কারণ বিভিন্ন জায়গায় এগুলো দরকার হতে পারে
- অবশ্যই ইউ এস ডলার এ পেমেন্ট করতে হবে। তাই দেশ থেকে ডলার নিয়ে যাওয়া ভালো কারণ ওখানে রেট ভালো না
- এনজিওগ্রাম এ ৩০০ ডলার রিং বা অপারেশনে ৪০০ ডলার জমা রাখে পরে যা লাগবে তা রেখে বাকি টাকা ফেরত দেয়
- টাকা জমা দিতে হলে ইন্টার্নেশনাল ভেরিফিকেশন লাগে তাই পাসপোর্ট ভিসার কপি ফটোকপির সাথে হোটেলের কপি লাগবে
- ইন্টারন্যাশনাল ডেসকে মিস রূপসী নামের একজন কলকাতার বাঙালি আছেন তিনি গাইড করে থাকেন
- নরমাল পরীক্ষার জন্য টুরিস্ট ভিসা ঠিক আছে
ডাঃ দেবী শেঠী চিকিৎসা খরচ
সাধারণত চিকিৎসা খরচ ডিপেন্ড করে রোগীর অসুখের উপর। এখানে ডাক্তার দেবী শেঠি সহ বিভিন্ন কার্ডিয়ার ডাক্তারদের দেখাতে গেলে ১২০০ থেকে ২০০০ রুপি পর্যন্ত প্রয়োজন হয়। এছাড়াও তারা কিছু টেস্ট দিয়ে থাকে যেখানে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা লাগতে পারে এবং এনজিওগ্রাম করতে প্রয়োজন হয় প্রায় ২২৫ ডলার প্রায় বাংলাদেশি টাকার ২৮ হাজার টাকার মত।
ডলারের হিসেব করে খরচ কম বেশি হতে পারে এবং টেস্টের উপর ডিপেন্ড করেও টাকা কম বেশি লাগতে পারে। সাধারণত ডিপেন্ড করে হার্টের ব্লকের উপর একটা হার্টের রিং পড়াতে সাধারণত দুই লাখ দশ হাজার থেকে শুরু করে আরো বেশিও লাগতে পারে।
হার্ট সুস্থ রাখতে ডাঃ দেবী শেঠী্র পরামর্শ
- খাবারে আমিষের পরিমাণ বাড়াতে হবে
- শর্করা এবং চর্বি জাত খাবার কম খেতে হবে
- একটানা বেশি সময় বসে থাকা যাবে না
- সপ্তাহ অন্তত পাঁচ দিন আধা ঘন্টা করে হাঁটতে হবে
- ধূমপান ত্যাগ করতে হবে
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
- রক্তচাপ এবং সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
- শাক জাতীয় নয় এমন খাবার খাওয়ারই হার্টের জন্য উপকারী নয়। যেমন- মাছ
- ত্রিশ এর বেশি বয়সের সকলের উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
- জগিং করার চেয়ে হাটা ভালো। জগিং করলে মানুষ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় এবং জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে
- জীবনের সবকিছু নিখুঁত হবে এমন ভাবার কোন কারণ নেই তাই জীবনে প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে
- অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস মানুষকে জাঙ্ক ফুডের দিকে উৎসাহিত করে। আর তখনই হজমের জন্য ব্যবহৃত এনজাইমগুলো দ্বিধায় পড়ে যায় তাই নিয়ন্ত্রিত খাদ্য অভ্যাস হাঁটাহাঁটি এবং আখরোট খেতে হবে।
- যন্ত্রের জন্য ভাল খাবার ফল এবং সবজি
- সবচেয়ে খারাপ খাবার হল তৈলাক্ত খাবার। ভাজাপোড়া খাবার।
- যে কোন তেলই বিধন যন্ত্রের জন্য খারাপ
- নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সুগার এবং কোলেস্টোরলের স্বাভাবিক মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে
- এছাড়া অনিয়মিত রক্তচাপ মাপাও জরুরী
- হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীকে প্রথমে শুয়ে দিতে হবে। এরপর জিব্বার নিচে একটি এক্সপিরিন ট্যাবলেট রাখতে হবে। যদি পাওয়া যায় তবে স্ত্রীরনের পাশাপাশি একটি সরবিট্রেড ট্যাবলেটও রাখতে হবে। এরপর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা প্রথম এক ঘন্টার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে থাকে।
মেডিকেল ভিসার জন্য করণীয়
- পাসপোর্ট এর মেয়াদ মিনিমাম ছয় মাস থাকতে হবে
- ভারতে হাসপাতাল থেকে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে
- বাংলাদেশি ডাক্তারের রেফারেন্স নিতে হবে
- আপনি কি করেন তার প্রমাণাদি লাগবে যেমন ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স লাগবে
- সর্বোচ্চ তিনজন রোগীর সাথে অ্যাটেনডেন্স হিসেবে যেতে পারবেন
- ভারতীয় দূতাবাসের ভিসা ফি প্রতিপাসপোর্ট ৮০০ টাকা
ভিসা পরবর্তী করণীয়
বাস ট্রেন এয়ার এ তিন ভাবে ভারতে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি কলকাতা যেতে পারেন। তার মধ্যে গ্রীন লাইন পরিবহন সোহাগ পরিবহন দেশ পরিবহন শ্যামলী পরিবহনে সার্ভিস খুবই ভালো। তারা নামিয়ে দিবে কলকাতা এর মারকিউস স্ট্রিটে। আর ট্রেনে যেতে হলে ভিসা পাওয়ার পর আপনাকে টিকিট নিতে হবে। টিকেট সংগ্রহ করতে হবে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে।
টিকিটের দাম ১৩০০ টাকা থেকে শুরু। আর ট্রেনযাত্রা করলে কলকাতা স্টেশনে নামিয়ে দিবে যেটা চিতপুর স্টেশন নামে পরিচিত। আর ফ্লাইট সরাসরি ব্যাঙ্গালোরে চলে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভাড়া হবে ৮ হাজার টাকার উপরে।
মন্তব্য
আজকে আমরা ডাঃ দেবী শেঠির সিরিয়াল নেওয়ার নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ভারত যে কোন চিকিৎসার জন্যই খুবই ভালো সেবা দিয়ে থাকে। তাই কিভাবে চিকিৎসার জন্য যাওয়া যায় তাদের বিস্তারে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন।
ডাঃ দেবী শেঠির সিরিয়াল নেওয়ার নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতবাদ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতিশীঘ্রই রিপ্লে দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- ভারতে ডাক্তারি পড়ার খরচ ও ভর্তির যোগ্যতা ২০২৩
- ভারতে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা খরচ ও ঠিকানা ২০২৩
- ভারতে চোখের ছানি অপারেশন খরচ ও যাতায়াতের নিয়ম