চায়না থেকে পণ্য আমদানি করার নিয়ম
চায়না বর্তমানে পন্য রপ্তানিতে বিশ্বের এক নাম্বার পজিশনে আছে এবং বিশ্বের অনেক দেশে শুধু চায়না প্রোডাক্ট বিক্রি করে কোটিপতি হয়েছেন এমন লোকের সংখ্যা ও অনেক। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো ব্যক্তি পর্যায়ে চায়না থেকে প্রোডাক্ট আমদানি করে ব্যবসা করা ওইভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।
বাংলাদেশেও অনেক বড় বড় নাম করা প্রতিষ্ঠান আছে যারা শুধুমাত্র চায়না প্রোডাক্ট আমদানি করে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে ব্যবসা করছে। কিন্তু বাংলাদেশে কম পূজিতে ব্যক্তি পর্যায়ে এখনো চায়না প্রোডাক্ট ওইভাবে আমদানি করতে পারছে সঠিক তথ্য ও সহযোগিতার অভাবে। আজকে আমরা চায়না থেকে পণ্য আমদানি করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং দেখাবো কিভাবে খুব আল্প পূজিতে বাংলাদেশ থেকে চায়না প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস শুরু করতে পারেন।
চীন থেকে পন্য আমদানী করার নিয়ম
চীন থেকে পন্য আমদানি করার প্রধানত দুইটা মাধ্যম আছে।
- পাসপোর্ট ভিসা করে সরাসরি চায়না গিয়ে পন্য নিয়ে আসা।
- অনলাইনে পন্য দেখে পণ্য ক্রয় করা।
আমরা আজকের পোষ্টে দুই মাধ্যম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
সরাসরি চায়না গিয়ে পণ্য ক্রয় করা
আপনি চাইলে পাসপোর্ট ভিসা করার মাধ্যমে সরাসরি চায়না গিয়ে দেখেশুনে পন্য ক্রয় করতে পারেন। বাংলাদেশে থেকে সাধারনত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চীনের সিনজিনে গিয়ে পন্য ক্রয় করে থাকে। চীনের অন্যান্য শহরের তুলনায় সিনজিনে কমদামে অনেক ভালো পন্য পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা পন্য ক্রয় করতে এই শহরে বেশি আসেন। সরাসরি যেতে চাইলে আপনার ভিসা ও ভাড়া বাবত খরচ পড়বে প্রায় এক লক্ষ টাকা।
সাধারনত ব্যবসায়ীরা প্রথমবার গিয়ে নিজেরা পন্য দেখে ক্রয় করে আনেন এবং পরবর্তীতে নিজে না গিয়ে পন্য আনার মত ব্যবস্থা করে আসেন। আপনার যদি বাজেট সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি প্রথমবার সরাসরি গিয়ে পণ্য দেখে ক্রয় করতে পারেন।
আরো পড়ুন: প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন নিয়ম 2022
অনলাইন থেকে পণ্য ক্রয় করার পদ্ধতি
উপরে আমরা দেখেছি কিভাবে সরাসরি চায়না গিয়ে নিজে দেখে বিভিন্ন ধরনের পন্য ক্রয় করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি নতুন ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য সরাসরি চায়না যাওয়া সম্ভব না ও হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে আলিবাবা ডট কম (alibaba. com) ওয়েবসাইট থেকে পণ্য ক্রয় করতে হবে। alibaba. com হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোলসেল বা পাইকারি পন্য বিক্রির ওয়েবসাইট। আমরা আজকের পোষ্টে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধাপে ধাপে সম্পূর্ন প্রক্রিয়া বলার চেষ্টা করবো।
আলিবাবা ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলুন
আলিবাবা ডট কম (alibaba. com) ওয়েবসাইট থেকে পন্য ক্রয় করতে হলে প্রথমে একাউন্ট খুলতে হবে। তাদের ওয়েবসাইটে মূলত দুই রকম একাউন্ট করা যায়। সেলার একাউন্ট ও বায়ার একাউন্ট। সেলার একাউন্ট হচ্ছে যারা হোলসেলে পন্য বিক্রি করবে আর বায়ার হচ্ছে যারা পন্য কিনবেন যেমন আপনি। তবে একই একাউন্ট একসাথে বায়ার ও সেলার একাউন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
আপনার ইমেইল ও ভ্যালিড ইনফরমেশন দিয়ে একাউন্ট খোলা সম্পন্ন হলে আপনার ইমেইলে একটা ভেরিফিকেশন লিংক পাঠাবে। ওই লিংকে ক্লিক করে প্রথমবার একাউন্ট ভেরিফাই করতে হবে। একাউন্ট ভেরিফাই হওয়ার পর আপনি পন্য কেনার জন্য প্রস্তুত।
আলিবাবা ডট কম (alibaba. com) ওয়েবসাইটে একাউন্ট না করেও পন্য কেনা যায় তবে সেক্ষেত্রে আপনি কোন পন্য ক্রন ইয় করলে সে হিস্টরো ওয়েবসাইটে জমা থাকবে না। অথবা আপনি যদি কোন সমস্যায় পড়েন আর সাপোর্টে নক দেন তাখন তারা আপনাকে একাউন্ট খুলতে বলতে পারে। তাই শুরুতেই একাউন্ট খুলে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ওয়েবসাইট থেকে পণ্য বাছাই করুন
ওয়বসাইটে একাউন্ট খোলা ও ইমেইল ভেরিফিকেশন করা হয়ে গেলে এখন আপনার কাজ হবে পণ্য বাছাই করা। আপনি যে ধরনের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে চান তা ওয়েবসাইটের সার্চ বারে সার্চ করুন। পণ্য খোজার ব্যাপারে অবশ্যই নামটি ইংরেজিতে দিতে হবে। আপনি যদি ঘড়ি কিনতে চান তাহলে watch লিখে সার্চ করবেন। তাহলে বিভিন্ন ধরনের সেলারের নাম সামনে আসবে। আলিবাবা থেকে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে পণ্যের চেয়ে সেলার সিলেকশন বেশি গুরুত্ত্বপূর্ন। অর্থাৎ আপনি যার কাছে থেকে পণ্য টি ক্রয় করছেন ওই সেলার সম্পর্কে ভালোভাবে দেখে শুনে তারপর পণ্য সিলেক্ট করতে হবে। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক সেলার সিলেকশনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: অনলাইনে গামকা মেডিকেল রিপোর্ট চেক | gamca medical report check online bangladesh
সেলার সিলেকশনে সতর্কতা
আলিবাবা ডট কম (alibaba. com) ওয়েবসাইট থেকে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য সিলেক্ট করার সময় সেলার সম্পর্কে দেখে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ন। কারন আপনি যেহেতু ব্যবসা করবেন তাই আপনি কার কাছ থেকে পণ্য টি ক্রয় করছেন তা দেখা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন। আলিবাবা ডট কম (alibaba. com) এ সেলারদের নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটাগরি আছে যার মাধ্যমে সেলারের কোয়ালিটি সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।
সেলার সিলেকশনের ক্ষেত্রে প্রথমে চেষ্টা করবেন গোল্ড সাপ্লায়ার সেলার সিলেক্ট করতে। গোল্ড সাপ্লায়ার সেলার হচ্ছে আলিবাবা ডট কম (alibaba. com) এর এক বিশেষ ফিচার। গোল্ড সাপ্লায়ার সেলার হতে হলে একজন সেলার কে বছরে ১২৫০ ডলার ফি ফিতে হয় আলিবাবাকে। এর বিনিময়ে আলিবাবা থেকে একটা টিম সরাসরি ওই সেলারের অফিস পরিদর্শন করে এবং সব ঠিক আছে কি না ভেরিফাই করে। তাই আপনি যার কাছে থেকে পণ্য ক্রয় করবেন তা যদি গোল্ড সাপ্লায়ার সেলার হয় তাহলে সবচেয়ে ভালো হয়।
পণ্যের দাম দেখে নিন
এরপর দেখে নিবেন পণ্যের দাম কি FOB নাকি CFR। FOB মানে হচ্ছে সেলার আপনার দেশের পোর্ট পর্যন্ত পণ্য পৌছে দিবে কিন্তু ট্রান্সপোর্ট চার্জ আপনাকে ই দিতে হবে। আর পণ্যের গায়ে যদি CFR লিখা থাকে এর মানে হচ্ছে সেলার ট্রান্সপোর্ট ফি সহ পন্য আপনার কাছে পৌছে দিবে। তাই পণ্য সিকেশনের ব্যাপারে সেলার সিলেকশনের পর সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ন হচ্ছে পণ্যের দাম দেখে নেয়া।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার পণ্যের দাম কম দেয়া থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে যে দাম দেয়া থাকে অরিজিনাল দাম তার কিছুটা কম বেশি হয়। তাই পণ্যের দাম দেখে খুশি না সরাসরি সেলারকে ম্যাসেজ দিয়ে দাম কনফার্ম হয়ে নিবেন। আর এটাও জিজ্ঞেস করে নিবেন বাংলাদেশে পাঠানো সহ মোট কত খরচ পড়বে।
পণ্যের অরিজিন দেখে নিন
পণ্যের অরিজিন বলতে বোঝায় পণ্যটি কোথায় উতপন্ন হয়েছে। ধরে নেয়া যাক পণ্যের উতপত্তিস্থল জাপান কিন্তু সেলার হচ্ছে কোরিয়ান তাহলে বুঝবেন সেলার মিডল ম্যান হসেবে কাজ করছে। এক্ষেত্রে পণ্যের অরিজিনাল দামের চেয়ে কিছুটা বেশি পড়বে। কারন সে মাঝে থেকে কিছুটা লাভ করবে। তাই সেলার সিলেকশন ও পণ্যের দাম দেখার পর গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে পণ্যের অরিজিন দেখা নেয়া।
আরো পড়ুন: সৌদি আরবের কোম্পানি ভিসা 2022 (নতুন আপডেট)
স্যাম্পল আমদানি করুন
এতক্ষনে আপনি সেলার ও পণ্য সম্পর্কে ভালোভাবে যাছাই বাছাই করে নেয়ার পর এখন সময় এসেছে পণ্যের স্যাম্পল চেক করে নেয়া। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিল হয়ে গেলে সেলার ফ্রি তে ই স্যাম্পক পাঠায়। তবে পণ্য যদি দামি হয় তাহলে প্রথম স্যাম্পল টি ক্রয় করা লাগতে পারে।
চায়না থেকে আমদানি খরচ কত
সাধারনত আলিবাবা ডট কম (alibaba. com) থেকে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে সেলারদের ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে হয়। তবে আপনি চাইলে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও পেমেন্ট করতে পারেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্টের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার কার্ডটি ডুয়েল কারেন্সি সাপোর্টেড হতে হবে। সাধারনত সেলাররা DHL, FEDEX, TNT তে করে কুরিয়ারের মাধ্যমে আপনার কাছে পণ্যটি পাঠাবে আর আপনি শিপিং চার্জ দিয়ে পণ্যটি সংগ্রহ করবন।
DHL, FEDEX, TNT কুরিয়ারের ক্ষেত্রে সাধারনত ১ থেকে ১০০০ গ্রামের ক্ষেত্রে ২০০০ টাকা কুরিয়ার চার্জ লাগে আর ১০০০ গ্রামের উপরে হলে ৩০০০ হাজার টাকা খরচ হবে। তাই আপনার আমদানি খরচ কিছুটা নির্ভর করছে আপনার পণ্যের ধরনের উপর।
চায়না থেকে পণ্য আসতে কতদিন লাগে
DHL, FEDEX, TNT কুরিয়ারের ক্ষেত্রে সাধারনত ৭ লাগে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো বেশি ও লাগতে পারে। আসলে এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রোডাক্ট আসার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম কানুন মেনে তারপর আসতে হয়। একারনে সময় একটু বেশি লাগে। তবে আপনি যদি দ্রুত পণ্য হাতে পেতে চান তাহলে আমাদের সাজেশন থাকবে DHL এ কুরিয়ার নেয়া। এক্ষেত্রে আপনি ৫ দিনেও পন্যটি হাতে পেতে পারেন।
চায়না থেকে মোবাইল আমদানি
চায়না থেকে যেসব পণ্য সবচেয়ে বেশি আমদানি করা হয় তা হলো মোবাইল ও মোবাইল এক্সেসরিজ। চায়না থেকে মোবাইল আমদানির ক্ষেত্রে আপনাকে একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারন মোবাইল আমদানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পরিমানে দূর্নীতি হয়ে থাকে। তাই মোবাইল ক্রয়ের সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
শেষ কথা
আমরা চায়না থেকে পণ্য আমদানি করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে ভালো প্রোডাক্ট এর পাশা পাশ অনেক খারাপ প্রোডাক্ট ও বাজারে চলে এসেছে। তাই পণ্য ক্রয়ের পুর্বে ভালোভাবে দেখে নেয়ার জন্য বলা হচ্ছে। ধন্যবাদ