চীনে মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা
চীন শুধুমাত্র এশিয়া নয় বরং বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশগুলোর মধ্যে একটি। সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক ছাড়াও শিক্ষার্থীর থেকেও বিশ্বের বড় বড় দেশের সাথে প্রতিযোগিতা দেয়ার মত অবস্থা রয়েছে চীনের। অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের ছাত্র ছাত্রীরা চীনের মেডিকেল পড়ার জন্য যায়।
যারা প্রথমবারের মতো চিনে মেডিকেল পড়ার জন্য পরিকল্পনা করছেন তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি উপকারে আসবে। আজকে আমরা চীনে মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
চীনে মেডিকেল পড়ার খরচ কেমন?
চীনে মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা আলোচনা করার পূর্বে খরচ নিয়ে পরিষ্কার একটি ধারণা থাকা দরকার। কোন মেডিকেলে পড়তে যাচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করে খরচ কিছুটা কম বেশি হতে পারে তবে সাধারণত টিউশন ফ্রি, টেল ফ্রি ও থাকা খাওয়া মিলিয়ে পাঁচ বছরে ন্যূনতম ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
তবে এইসব মেডিকেল কলেজগুলোতে বাংলাদেশের বেসরকারি মেডিকেলের মতো কোনো হিডেন চার্জ নেই। এবং প্রতিবছর একবার টিউশন ফি পে করতে হয়। তাই ফ্যামিলির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না।
চীনে মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা
নতুন নিয়ম অনুযায়ী চীনে মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা বাংলাদেশের মেডিকেলের মতোই। অর্থাৎ এস এস সি ও এইচ এস সি মিলে সর্বমোট ন্যূনতম নয় পয়েন্ট থাকতে হবে। সাধারণত চীনে এমবিবিএস শেষ করার পর চাইলে দেশে এসে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ থাকে।
রেজাল্ট ৯ পয়েন্টের কম হলে স্কলারশিপ নিয়ে চীনে যাওয়া উচিত নয়। কেননা সে ক্ষেত্রে পড়াশোনা শেষ করে দেশে এসে ইন্টার্নশিপ করতে সমস্যা হতে পারে।
চীনে মেডিকেল স্কলারশিপ পাওয়ার নিয়ম
চীনে বাংলাদেশ থেকে যে সকল শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে যায় তাদের বেশিরভাগই ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে পড়তে যায়। সে তুলনায় মেডিকেলে ছাত্রদের কম স্কলারশিপ দেয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং যোগাযোগ রাখতে হবে।
সাধারণত বিভিন্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে সার্কুলার দিয়ে থাকেন তখন আবেদন করতে হয়। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত চিনা এম্বাসিতে গিয়ে স্কলারশিপের ব্যাপারে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এম্বাসি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে।
আরো পড়ুন – মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ 2023
চায়নায় মেডিকেল পড়াশোনার মান কেমন
যেমনটা আমরা ইতিপূর্বে বলেছি সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক এর পাশাপাশি পড়াশোনার দিকেও চায়না দক্ষিণ এশিয়ায় সেরা এবং বিশ্বের বেশ কয়েকটি সেরা মেডিকেল কলেজ চায়নায় অবস্থিত। সাধারণত বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষক রাখা হয়। বেশিরভাগ মেডিকেল কলেজে প্রতি বিষয়ের জন্য আলাদা ল্যাব, অনেক বই সমৃদ্ধশিত লাইব্রেরী ও প্র্যাকটিসের জন্য বিভিন্ন নাম করা হাসপাতাল রয়েছে।
এর বাইরে বাইরে থেকে আসা যে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের রেজাল্ট ভালো হয় তাদের বিভিন্নভাবে জব অফার করা হয়ে থাকে। তাই সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করলে চীনে বিদেশী ছাত্রদের যথেষ্ট ভালো সুযোগ রয়েছে।
চীনে কতটি মেডিকেল কলেজ রয়েছে
বর্তমানে চীনের এক হাজারেরও বেশি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী বিশ্বের ১ হাজার অত্যাধুনিক মেডিকেল কলেজের তালিকা করা হয় যার মধ্যে এশিয়ার দেশ চীনে রয়েছে সর্বোচ্চ ৯২ টি। অর্থাৎ শুধুমাত্র বিশ্ব মানেন মেডিকেল কলেজ রয়েছে ৯২ টি।
তবে চীনে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটি হচ্ছে ভাষাগত সমস্যা। যেহেতু চায়নায় সকল ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাজ চাইনিজ ভাষায় করা হয় তাই বিদেশী ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ করে বাংলাদেশিরা সেখানে গিয়ে সুবিধা করতে পারে না। মাত্র অল্প কয়েকটি মেডিকেল কলেজ রয়েছে যারা ইংলিশে পারদান করে।
তাই আপনার যদি চীনে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে চাইনিজ ভাষা রপ্ত করতে হবে।
চীনে মেডিকেল কেন পড়তে যাওয়া উচিত
- চীনের মেডিকেল ইনস্টিটিউট গুলো এনসিআই এবং ডাব্লিউএইচও অনুমোদিত। যেকোনো স্বীকৃত ইনস্টিটিউট থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে ক্যারিয়ার একটি দুর্দান্ত ক্যারিয়ার যুক্ত করা যায়।
- এক্ষেত্রে নিজের দেশের পাশাপাশি ও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও অনুশীলন করতে পারা যায়
- ইউরোপীয় আমেরিকান এমনকি ভারতীয় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ গুলোর চাইতে চীনের মেডিকেল ইনস্টিটিউটের ফি অনেক পার্থক্য রয়েছে। এক্ষেত্রে চীনের এমবিবিএস কোর্সের মোট ব্যয় অনেক সাশ্রয় হয়।
- এদেশে এমবিবিএস প্রোগ্রামের সামগ্রিক ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম এবং এজন্যই শিক্ষার্থীরা চিনে এমবিবিএস করতে বেশিরভাগ যায়
- দেশটিতে অনেক আধুনিক বিল্ডিং রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। বাজেটের মধ্যে প্রচুর পরিচ্ছন্ন এবং হোস্টেল রয়েছে। চীনে এমবিবিএস অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের খাদ্য পরিবহন এবং আশ্রয় কেন্দ্রের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের চিন্তা করতে হয় না কারণ এ দেশে সবকিছুই যুক্তিসঙ্গত মূল্যে পাওয়া জায়।
- চীনের মেডিকেল কলেজে কোন ভর্তি পরীক্ষা নেই এবং তালিকাভুক্তি দুইটি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর গুলির উপর নির্ভর করে। শিক্ষার্থীর অবশ্যই ক্লাস টু স্তরে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে বিজ্ঞান থাকতে হবে এবং মোট সমষ্টিতে ৭৫% বা তার বেশি হতে হবে।
বাংলাদেশী ছাত্রদের জন্য চীনে পড়ার সুবিধা
- সাধারণত মেডিকেল কলেজ গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় না
- আই ই এল টি এস করার প্রয়োজন নেই
- বাংলাদেশ ও চীনের পাঠ্যক্রম প্রায় একই। তাই বাংলাদেশের ছাত্ররা সেখানে গিয়ে দ্রুত এডজাস্ট হতে পারেন
- চীনের ৫২ টি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বি এম ডি সি) অনুমোদিত
- চীনের প্রায় সকল মেডিকেল কলেজ who অনুমোদিত
- চায়না থেকে এমবিবিএস করে এসে বাংলাদেশের বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়
- একাডেমিক ভ্যাকেশনের দেশে আসার সুযোগ রয়েছে
- ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে পোস্টাল সুবিধার ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা যথেষ্ট ভালো
- বাংলাদেশের প্রাইভেট মেডিকেলের তুলনায় খরচ কম
চীনে মেডিকেল পড়ার অসুবিধা
যেমনটা ইতোপূর্বে বলেছিলাম চায়নায় পড়তে যাওয়ার সবচেয়ে বড় অসুবিধা গুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে ভাষাগত সমস্যা। যেহেতু চিনে ইংরেজি ভাষায় কম ইউজ করা হয় তাই বাংলাদেশ থেকে পড়তে গেলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ভাষাগত সমস্যা। তবে আন্তর্জাতিক মানের মেডিকেল কলেজগুলোতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টিচার ও ট্রান্সলেটরের ব্যবস্থা থাকে।
এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের সাধারণত পাঁচ জনের ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বিদেশী শিক্ষার্থীদের গ্রুপের জন্য আলাদা ট্রান্সলেটরের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়।
সাবধানতা
বিএমডিসির রেজিস্টার বলেন, বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী মিনিস্ট্রি অফ এডুকেশন অব দ্য পিপল রিপাবলিক অফ চায়না ওয়েবসাইটে টেস্টের মেডিকেল ইউনিভার্সিটি তালিকা দেয়া আছে ওই তালিকার বাইরে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস বা বিবিএস পাস করলে সেই সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে না।
কেননা চীনে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার ফলে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আদেশ বাতিল করা হয়। তাই বাংলাদেশে অনেক শিক্ষার্থী না জেনে বাতিল বা স্থগিতকৃত মেডিকেলের পড়াশোনা চালিয়ে যান এ ধরনের শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট কোন মূল্যায়ন করা হয় না।
মন্তব্য
আজকে আমরা চীনে মেডিকেলে পড়ার যোগ্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। চীনে স্কলারশিপ নিয়ে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন আমাদের জিজ্ঞেস করতে চাইলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। এছাড়া স্কলারশিপ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। আমরা নিয়মিত স্কলারশিপ ও শিক্ষা বিষয়ক পোস্ট করে থাকি। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন –
- চীনে মেডিকেলে পড়ার খরচ
- মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার নতুন তারিখ 2023
- আর্মড ফোর্সস মেডিকেল কলেজ ভর্তি যোগ্যতা ও পড়ার খরচ