গ্রামে বসে কি ব্যবসা করা যায়? গ্রামের ব্যবসা আইডিয়া

গ্রামে বসে কি ব্যবসা করা যায়

একসময় গ্রামের মানুষরা পিছিয়ে ছিল। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে গ্রাম এবং শহরের পার্থক্য ক্রমশই কমে আসছে। বর্তমানে গ্রামে বসে চাইলেই সব ধরনের ব্যবসা করা যায় এবং যে কেউ চাইলেই গ্রামে বসে নিজের ব্যবসা চালু করতে পারবেন। তবে ব্যবসা করতে চাইলে আপনার দুটি জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।

  1. মূলধন
  2. কাস্টমার বা কনজিউমার

অর্থাৎ আপনার মূলধন কত এবং আপনার কাস্টমার কারা। এইসব কিছু বিবেচনায় একটা ব্যবসা আইডিয়া সাজাতে হয়। যারা গ্রামে নিজের ব্যবসা শুরু করতে চান তাদের জন্য আজকে আমরা ১০ টি ইউনিক বিজনেস আইডিয়া শেয়ার করবো যেগুলো তুলনামূলক কম খরচের শুরু করতে পারবেন এবং এক্ষেত্রে আমরা কাস্টমার হিসেবে গ্রামের মানুষদের ই বিবেচনা করবো।

আরো পড়ুন – কম খরচে হালাল ব্যবসার আইডিয়া ২০২৩

গ্রামের ব্যবসা আইডিয়া

এই পর্যায়ে অল্প পুজিতে গ্রামে শুরু করা যায় এমন ১০ টা বিজনেস আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করছি সঠিক পরিকল্পনা সহ যেকোন একটি বিজনেস শুরু করলে ভালো করা যাবে।

১। জামার ব্যবসা

গ্রামে বসে কি ব্যবসা করা যায় এই তালিকায় প্রথম স্থানে আছে জামার ব্যবসায়। এটি এমন একটি ব্যবসা যা সঠিকভাবে শুরু করতে পারলে লসের কোন সম্ভাবনা নেই কেননা কাপড় পচে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে বড় দোকান নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে মূলধন বেশি লাগতে পারে সেক্ষেত্রে মূলধন কম থাকলে আপনি অনলাইনে শুরু করতে পারেন।

অনলাইনে বর্তমানে জামার ব্যবসা করা খুবই সহজ এবং অল্প পুজিতে সহজেই এই ব্যবসা শুরু করা যায়। অনলাইনে কিভাবে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করবেন তা বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

২। মাছ চাষ

গ্রামের মাছ চাষ করে খুব সহজেই স্বাভলম্বি হওয়া সম্ভব। মাছ চাষ করে অনেকি তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন যা পত্রিকা খুললেই দেখা যায়। আপনার যদি পুকুর বা জমি থাকে যেখানে মাছ চাষ করা সম্ভব তাহলে অল্প পুজিতেই শুরু করে দিতে পারেন। আর যদি আপনার নিজস্ব জমি না থাকে তাহলে জমি লিজ নিতে পারেন। অর্থাৎ ৪/৫ বছরের জন্য জমি ধার নিতে পারেন যা দিয়ে মাছ চাষ করে জমির দাম পরিশোধ করতে পারবেন।

আরো পড়ুন – শেয়ার ব্যবসা কি – শেয়ার ব্যবসা কি হালাল?

৩। গবাদি পশু পালন

এই তালিকায় ৩ নাম্বারে আমরা গবাদি পশু পালন কে রেখেছি। গবাদি পশু বলতে আমরা হাস, মুরগি, গরু,বা ছাগলের মত গবাদি পশু গুলোকে বুঝাচ্ছি যা আপনি খুব সহজেই বানিজ্যিকভাবে পালন করতে পারেন। বর্তমানে অনেক কোম্পানি আছে যারা পশু পালনের লোন দিয়ে থাকে আপনি সেখান থেকে নিজের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী লোন নিয়ে শুরু করে দিতে পারেন।

এছাড়াও সরকারি ভাবে ও তরুন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন লোন দেয়া হয়। আপনি যদি পর্যাপ্ত যায়গা দেখাতে পারেন তাহলে সরকারিভাবে ও লোন নিয়ে বানিজ্যিকভাবে পশু পালন শুরু করে দিতে পারেন।

৪। ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা

শহরে এখন অনেকেই বিকাশ বা নগদের মত অনলাইন ব্যংকিং সিস্টেম ব্যবহার করে মোবাইল রিচার্জ করে কিন্তু গ্রামে এখনো মানুষ পুরোপুরি দোকানে গিয়ে ই ফ্লেক্সিলোড করতে অভ্যস্থ। আর এটি এমন একটি ব্যবসা যা মাত্র ৬০০০ টাকা আর ছোট একটি দোকান থাকলেই শুরু করা যায়।

আমরা একটি আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছি কিভাবে শুরু থেকে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা শুরু করতে হবে। বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারনে।

৫। টিউশন সেন্টার

আপনার যদি গনিত, বিজ্ঞান কিংবা ইংরেজি পড়ানোর মত দক্ষতা থাকে তাহলে টিউশন সেন্টার খুলতে পারেন। শুরুতে নিজের বাসা থেকে শুরু করে পরবর্তীতে স্টুডেন্ট সংখ্যা বাড়লে আলাদা টিউশন সেন্টার নিতে পারেন। গ্রামে এখনো ভালো টিচারের যথেষ্ট অভাব রয়েছে তাই আপনি যদি ভালো পড়াতে পারেন খুব আল্প সময়েই স্টুডেন্ট সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করি।

আর টিউশন সেন্টার শুরু করতে পাওনার খুব বেশি খরচ করতে হবে না। শুরুতে বাসা থেকে শুরু করলে কোন খরচ ই নেই আর এরপর টিউশন সেন্টার নিলে শুধু রুম ভাড়া ম্যানেজ করতে পারলেই হচ্ছে।

৬। রড সিমেন্টের ব্যবসা

রড সিমেন্টের ব্যবসা গ্রামে বেশ জনপ্রিয় এবং এটি এমন একটি ব্যবসা যা লম্বা সময়ের জন্য করা যায়। তবে এই ব্যবসা করতে হলে আপনার যথেষ্ট পরিমান মূলধনের প্রয়োজন হবে। তবে আপনি যদি বিভিন্ন সিমেন্ট কোম্পানির ডিলারশীপ নিতে পারেন সেক্ষেত্রে বিক্রির পর টাকা দেয়ার সিস্টেম আছে। তবে উপরের অন্যান্য ব্যবসার তুলনায় এই ব্যবসায় কিছু টা বেশি মূলধন লাগেবে।

আপনার যদি ব্যবসা শুরু করার মত যথেষ্ট মূলধন থাকে তাহলে এই ব্যবসা আপনার জন্য ভালো একটি অপশন হতে পারে। কারন দিন দিন মানুষ পাকা বাড়ির দিকে বেশি পরিমান ঝুকছে।

৭। ঔষধের ব্যবসা

ঔষধ ব্যবসা ২ প্রকার হতে পারে। সরাসরি মেডিসিনের দোকান দেয়া অথবা ঔষধ কোম্পানির ডিলারশীপ নেয়া। আপনি নিজের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী যেটা ভালো লাগে করতে পারেন।

ঔষধের দোকান – আপনি যদি গ্রামে ঔষধের দোকান দিতে চান সেক্ষেত্রে বর্তমানে ৬ মাসের একটি কোর্স করে সার্টিফিকেট নিতে হয় আর সাথে দোকান দেয়ার সময় এক কালীন কিছু মূলধন লাগবে। আপনার যদি হাতে সময় থাকে এবং ব্যবসা শুরু করার মত যথেষ্ট অর্থ থাকে তাহলে ঔষধের ব্যবসা কনসিডার করতে পারেন।

ঔষধ সাপ্লাই – আপনার যদি মূলধন না থাকে কিন্তু আপনি ঔষধ কেন্দ্রিক কোন ব্যবসা করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি ঔষধ দোকানগুলোতে মেডিসিন সাপ্লাই বিজনেস করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার বাজেট কম লাগবে এবং যথেষ্ট ভালো মুনাফা করার সুযোগ থাকবে।

৮। ছোট রেস্টুরেন্ট

গ্রামে ছোট রেস্টুরেন্ট দিতে খুব বেশি খরচ হবে না। রড সিমেন্টের মত ব্যবসায় প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন পড়ে কিন্তু এই ব্যবসায় মূলধন কম হলেও সমস্যা নেই অল্প পূজিতে ই ছোট রেস্টুরেন্ট এর ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। ছোট রেস্টুরেন্ট বলতে আমরা বুঝাচ্ছি গ্রামের যে দোকানগুলোতে চা, নাশতা সহ হালকা জিনিস পাওয়া যায়।

৯। মাটি ও গাছ বিক্রির ব্যবসা

আপনি যদি গ্রামে থাকেন তাহলে খুব ভালো করেই জানার কথা গ্রামের মানুষ প্রায় ই গাছ এবং মাটি বিক্রি করে। আপনি চাইলে ডিলার হিসেবে গাছ তুলনামূলক কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। একইভাবে মাটি ও কমদামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে পারেন। এই ব্যবসার বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে আপনার কোন মূলধন ই লাগবে না।

গাছ কিনার পর যখন বেশি দামে বিক্রি করবেন, হাতে টাকা পাওয়ার পর গাছের মালিককে টাকা পরিশোধ করবেন। একইভাবে মাটির ক্ষেত্রেও বিক্রি করার পর জমির মালিককে টাকা পরিশোধ করবেন। আপনি শুধু মিডল ম্যান হিসবে লাভ টা রেখে দিবেন।

১০। মুদি দোকান

গ্রামে মুদি দোকানের ব্যবসা অনেক পুরাতন এবং এটি এমন একটি ব্যবসা যেখানে আপনার লাভ হবেই। শুরুতে সব পন্য তোলার মত টাকা না থাকলে আদা, ময়দা, তেলের মত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দিয়ে ছোট করে দোকান শুরু করুন। সময়ের সাথে কাস্টমার বাড়তে থাকবে আর আপনিও দোকান বড় করতে থাকবেন।

গ্রামে কম খরচে বিজনেস আইডিয়া

উপরে আমরা সর্বোমোট ১০ টি বিজনেস আইডিয়া কিভাবে শুরু করবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। তবে উপরের ১০ টা বিজনেস এর মধ্যে কিছু বিজনেস ছিলো যেগুলো শুরু করতে আপনার মূলধনের প্রয়োজন পড়বে। এই পর্যায়ে আমরা আরো কিছু বিজনেস আইডিয়া শেয়ার করবো যা শুরু করতে খুব বেশি টাকা লাগবে না।

  1. সবজির ব্যবসা
  2. ডিমের ব্যবসা
  3. চায়ের দোকান
  4. স্টেশনারী দোকান
  5. আটোরিকশা কিনে ভাড়া দেয়া
  6. ঘরে আচার, কেক এইসব বানিয়ে বিক্রি করা

গ্রামে বসে কি ব্যবসা করা যায়

মন্তব্য

উপরে আমরা চেষ্টা করেছি গ্রামে শুরু করা যায় এই রকম কয়েকটি বিজনেস আইডিয়া শেয়ার করতে। আশা করছি ব্লগটি আপনাদের কিছুটা হলেও উপকারে এসেছে। সর্বোপরি, যেকোন বিজনেস শুরু করার আগে আপনাকে নিজের ক্যাপাসিটি ও আপনার গ্রামের অবস্থা বিবেচনা করতে হবে।

নিজের কিন্ডিশনের উপর ভালোভাবে চিন্তা করে নিজের মত করে বিজনেস আইডিয়া ক্রিয়েট করার চেষ্টা করুন। আপনার কোন প্রশ্ন বা মতামত জানার থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্য উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ

আরো পড়ুন – ফ্লেক্সিলোড সিমের দাম কত – ফ্লেক্সিলোড ব্যবসা

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply