মেয়েদের ঘরোয়া ব্যবসা আইডিয়া
একসময় মেয়েদের বোঝা মনে করা হতো কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে যেকেউ চাইলে বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করতে পারে। ছেলে মানুষ যেমন চাইলেই নিজের ইচ্ছামত যেকোন ধরনের ব্যবসা করতে পারে মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিছুটা ভিন্ন। বিশেষ করে বাংলাদেশের কন্ডিশনে মেয়েরা চাইলেই বাসার বাইরে গিয়ে নিজের মত কোন কিছু করতে পারে না।
তাই আজকে আমরা মেয়েদের ঘরোয়া ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করবো যা খুব অল্প পুজিতে এবং বাসায় বসে করতে পারবেন। অর্থাৎ আমরা এই আর্টিকেল লিখার সময় দুটি বিষয় বিশেষভাবে নজর দিয়েছি তা হলো,
- কম পূজিতে শুরু করা যায় এমন ব্যবসা
- ঘরে বসেই করা যায় এমন ব্যবসা আইডিয়া
আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসবে।
মেয়েদের অনলাইন ব্যবসা আইডিয়া
এই পর্যায়ে ঘরে বসে করা যায় এমন কিছু ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
১। অনলাইনে জামার ব্যবসা
আপনি যদি একজন মেয়ে হন তাহলে এখন পর্যন্ত কখনো না কখনো নিজে অনলাইন থেকে জামা অবশ্যই ক্রয় করেছেন অথবা জামার লাইভ ভিডিও অবশ্যই ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে দেখেছেন। বর্তমানে মেয়েরা অনলাইন থেকে প্রচুর পরিমান জামা ক্রয় করে এর মূল একটি কারন হচ্ছে সরাসরি দোকানে গিয়ে মন মত কালার বা কাপড় পাওয়া অনেক সময় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
২০২৩ সালে এসে কেউ যদি অনলাইনে কোন বিজনেস করতে চায় তাহলে তার জন্য জামার ব্যবসা সবচেয়ে ভাল একটি অপশন হবে বলে আমরা মনে করি। আর এই ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে আপনার তেমন কোন পুজি লাগবে না। কোন একটি দোকানের সাথে চুক্তিতে কাজ করলে খুব সহজেই অনলাইনে কাপড় ব্যবসা শুরু করা সম্ভব।
কিভাবে শুরু থেকে অনলাইনে কাপড় ব্যবসা শুরু করবেন তা জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
২। ঘরে তৈরি খাবার বিক্রি
মেয়ে মাত্রই খাবার রান্না করতে পছন্দ করে এটা আমরা সবাই জানি। আপনি চাইলে এই রান্নার প্যাশনকে নিজের আয়ের বড় একটি মাধ্যমে পরিনত করতে পারেন। কি কি রান্না করতে পারেন?
- কেক
- আচার
- বিস্কুট
- মাংশ, বিরিয়ানি ইত্যাদি
অর্থাৎ আপনি যে রান্নাই ভালো পারেন সেটা দিয়েই শুরু করুন। আর এই ব্যবসায় আপনার কোন ইনভেস্টমেন্ট ই লাগবে না শুরুতে। অর্ডার আসার পর ই রান্না করবেন সুতরাং লস হওয়ার কোন ভয় নেই।
কিভবে বিক্রি করবেন?
খাবার রান্না তো করলেই এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই খাবার বিক্রি করবেন কিভাবে? এড় উত্তর খুব সহজ বর্তমানে এমন অনেক মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেখানে খুব সহজেই আপনার খাবার কাস্টমারদের কাছে পৌছাতে পারবেন। যেমন
- ফুডপান্ডা
- সহজ ফুড
- পাঠাও ফুড
ফেসবুকে কিভাবে খাবার বিক্রি করবেন?
ধাপ ১ – ফেসবুকে খাবার বিক্রি করতে চাইলে প্রথমে নিজের একটি ফেসবুক পেইজ খুলতে হবে। শুরুতে কেউ হয়তো নক দিবে না কিন্তু আপনি যদি নিয়মিত বিভিন্ন আইটেমের পোষ্ট দিতে থাকেন তাহলে আশা করা যায় দ্রুত ই মানুষের নজরে আসবে।
ধাপ ২ – এই পর্যায়ে বিভিন্ন খাবার সংক্রান্ত গ্রুপ (যেমন Food lover, Dhaka Foodies ) আপনার খাবারের ছবি তুলে পোষ্ট করেন তাহলে সেখান থেকে সরাসরি অনেক অর্ডার পাবেন।
৩। ডাটা এন্ট্রির কাজ
ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা আয় করা যায় এখন আর তা কারো অজানা নয়। বর্তমানে বিভিন্ন অনালাইন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করে ভালো এমাউন্ট আয় করা সম্ভব। সাধারনত ফ্রিল্যান্সিং বললেই আমরা ওয়েব ডিজাইন কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কথা মাথায় আসলেও এই স্কিলগুলো শিখা তুলনামূলক কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।
সেক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সময় ও কম কষ্ট করে যদি কাজ শিখতে চান ডাটা এন্ট্রি আপনার জন্য ভালো একটা অপশন হতে পারে। অনলাইন থেকে খুব সহজেই শিখে ফেলতে পারেন ডাটা এন্ট্রির কাজ। এছাড়া ইউটিউবে এক গাধা টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন ডাটা এন্ট্রির উপরে। ভালোভাবে শিখতে চাইলে ২/৩ মাস সময় দিলেই এনাফ।
কোথায় কাজ করবেন?
ধরে নিচ্ছি ২/৩ মাস সময় দিয়ে আপনি ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখে নিয়েছেন এই পর্যায়ে কাজ করার পালা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কাজ কোথায় করবেন?
বাংলাদেশেই অনেক কোম্পানি আছে যারা ডাটা এন্ট্রি স্পেশালিস্টদের হারার করে। এছাড়া অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মধ্যে
- ফ্রিল্যান্সার
- আপওয়ার্ক
- ফাইভার
- গুরু
- পিপল পার আওয়ার
এইসব অন্যতম। আপনি চাইলে নিজের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে এর যেকোন একটিতে একাউন্ট খুলে কাজ শুরু করতে পারেন।
৪। ইউটিউব চ্যানেল
ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায় এখন আর তা অজানা নয়। আপনার যদি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর দক্ষতা থাকে তাহলে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারেন। যদিও এই প্রোসেস টা কিছুটা লম্বা তবে একবার চ্যানেল দাঁড়িয়ে গেলে তখন নিয়মিত ইনকাম আসতে থাকবে।
আপনার হাতে যদি সময় থাকে আর লম্বা সময়ের পরিকল্পনা নিয়ে কিছু করতে চান সেক্ষেত্রে ইউটিউব চ্যানেল ভালো একটি অপশন হতে পারে।
কিসের ভিডিও দিবেন?
- খাবার রান্নার ভিডিও
- বাচ্চাদের পড়াশুনার ভিডিও
- ফানি ভিডিও
- কোন স্কিল থাকলে টিউটোরিয়াল ভিডিও
- মেহেদি লাগানোর ভিডিও
৫। কন্টেন্ট রাইটিং
অনেকেই হয়তো জানেন না বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে আয় করা যায়। যেমন আপনি এখন যে লিখাটি পড়ছেন এটিও কোন একজন রাইটার লিখেছে। ঠিক একইভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যত আর্টিকেল দেখতে পান সব ই কোন না কোন রাইটার লিখে থাকে।
আপনি চাইলে শুরু থেকে শিখে নিজেই যেকোন একটি ওয়েবসাইটের সাথে চুক্তি করে কাজ করতে পারেন। কিভাবে কন্টেন্ট রাইটিং শিখবেন তা বিস্তারিত জানতে এবং আমাদের ওয়েবসাইটে আর্টিকেল লিখে আয় করতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করে বিস্তারিত জেনে নিন।
৬। ব্লগিং করে আয় করুন
উপরে আমরা বলেছিলাম আর্টিকেল লিখে আয় করা সম্ভব। অর্থাৎ আপনি যদি কাজ শিখে অন্য কারো ওয়েবসাইটে চুক্তির মাধ্যমে আর্টিকেল লিখেন তাহলে নির্দিষ্ট একটি এমাউন্ট আয় হবে। আর যদি আপনি চান তাহলে নিজেই একটি ওয়েবসাইট নিয়ে আর্টিকেল লিখা শুরু করতে পারেন।
উদাহরন স্বরুপ ধরা যাক easyteching.com এই ওয়েবসাইট টি আপনার। আপনি এখানে নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ের উপর আর্টিকেল দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে পাঠকরা যখন কন্টেন্ট পড়বে তখন গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে তাদের মোবাইলে এড শো করবে আর এই এড এর মাধ্যমে আপনি টাকা পাবেন ।
৭। ক্রাফটিং বিজনেস
আপনার যদি ক্রাফটিং এর সখ থাকে তাহলে শুরু করে দিতে পারেন ক্রাফটিং এর বিজনেস। ঘরে বসে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ক্রাফটেড জিনিস সেল করতে পারবেন খুব সহজে। তবে এটিও একটি লম্বা প্রোসেস কারন ফেসবুকে পরিচিতি বাড়াতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
তবে আপনার প্রোডাক্ট এর কোয়ালিট যদি ভালো হয় সেক্ষেত্রে অনলাইন মাল্টিভেন্ডর ইকমার্স ওয়েবসাইট যেমন দারাজ ব্যবহার করতে পারেন। দারাজে সেলার হিসেবে একাউন্ট খুলে নিজের প্রোডাক্ট এর এড দিতে পারেন।
অফলাইন বিজনেস আইডিয়া
উপরে আমরা যেকয়টি বিজনেস আইডিয়া বলেছি তার প্রত্যকটি অনলাইনের মাধ্যমে বিজনেস ছিলো। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা অনলাইন এর ঝামেলায় যেতে চান না তাদের জন্য এই পর্যায়ে আমারা অফলাইন বিজনেস আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করবো। অর্থাত ঘরে বসেই কাজ করবেন কিন্তু এক্ষেত্রে অনলাইনে না করে অফলাইনে কাজ করতে হবে।
১। হাতে মেহেদি লাগানোর কাজ
আপনি যদি ভালো মেহেদি লাগাতে পারেন তাহলে বাসায় মেহেদি লাগানোর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। বর্তমানে বিয়ে, জন্মদিন কিংবা ঈদ উপলক্ষে মেয়েরা হাতে মেহেদি লাগায়। আপনার যদি মনে হয় আপনি ভালো মেহেদি লাগাতে পারেন তাহলে নিজের বাসায় ই ছোট করে যায়গা বের করে নিন এবং মেহেদি লাগানোর মাধ্যমে আয় করুন।
২। টিউশন করানো
আপনি যদি স্টুডেন্ট হোন তাহলে ছাত্রাবস্থায় টাকা আয় করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম টি ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ টিউশন করানোর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। শুরুতে নিজের পাশের বাসার ছোট বাচ্চাদের ফ্রি তে পড়ানোর মধ্য দিয়ে শুরু করুন। এরপর আস্তে আস্তে মানুষের মুখেমুখে পরিচিতি বাড়লে নতুন নতুন ছাত্রছাত্রি পাবেন।
৩। সেলাই এর কাজ
সেলাই এই কাজ করে আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে যদি সেলাই এর কাজ না ও জানেন সমস্যা নেই। বর্তমানে অনেক সরকারি বেসরিকারি সংস্থা আছে যারা কাজ শেখায় এবং কাজ শেষে সেলাই মেশিন ও প্রদান করে। এক্ষেত্রে আপনি একটু খোজ খবর নিলেই আপনার আশে পাশে এমন অনেক সংস্থার খোজ পেয়ে যাবেন।
৪। মেকাপ আর্টীস্ট
মেহেদি লাগানোর মত আপনার যদি মেকাপ করানোর স্কিল থাকে তাহলে বাসায় ছোট খাটো একটি পার্লার টাইপ দিতে পারেন। এক্ষেত্রে শুরু তে হয়তো প্রোফেশনাল পার্লারের মত হবে না কিন্তু সময়ের সাথে আস্তে আস্তে আলাদা রুম নিয়ে প্রোফেশনালভাবে শুরু করতে পারবেন।
মন্তব্য
আমরা চেষ্টা করেছি সম্ভাব্য মেয়েদের ঘরোয়া ব্যবসা আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করতে। এরপর ও কিছু জিনিস বাদ পড়ে যেতে পারে যা আমরা পরবর্তীতে অবশ্যই কাভার করে দিবো। আপনার কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আমরা দ্রুত উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ
আরো পড়ুন – অনলাইনে জামার ব্যবসা শুরু করবেন যেভাবে, ঘরে বসে কাপড়ের ব্যবসা