শরীরের পোড়া ক্ষত শুকানোর ক্রিম নাম

পোড়া ক্ষত শুকানোর ক্রিম

দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকি। অসাবধানতার কারণে বিভিন্ন সময় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ পুড়ে যেতে পারে। আজকে আমরা শরীরের পোড়া ক্ষত শুকানোর মলম নাম ও পুড়ে যাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আর্টিকেল শেয়ার করব। তথ্যগুলো জানা থাকলে বিভিন্ন ধরনের বড় সমস্যা থেকে দূরে থাকা যাবে।

আজকে আমরা পোড়া ক্ষত শুকানোর ক্রিম এর নাম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে।

শরীর পুড়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা

রান্নাঘর থেকে শুরু করে যেকোন জায়গায় মানুষের পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং শরীর পুড়ে গেলে পোড়া ক্ষত শুকানোর ক্রিম এর নাম ও প্রাথমিক চিকিৎসা কি তা জানা প্রত্যেকের অনেক প্রয়োজন।

  • পুড়ে গেলে প্রথমেই পোড়া স্থানে ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে
  • ভেজা তোয়ালে পেঁচিয়ে রাখতে হবে
  • টুথপেস্ট লাগাতে হবে
  • ফোসকা পড়ে গেলে চামড়া ওঠানো যাবে না
  • পোড়া জায়গায় অল্প হলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে বার্নাল ক্রিম লাগাতে হবে
  • বেশি পুড়ে গেলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢেকে হসপিটালে নিতে হবে

পুড়ে যাওয়ার ধরন ও চিকিৎসা

পুড়ে যাওয়ার সাধারণত তিনটি স্তর রয়েছে। শরীরের পুড়ে যাওয়া জায়গাটি কোন স্তরে রয়েছে তা বুঝতে পারলে সঠিকভাবে চিকিৎসা করা সহজ হয়ে যায়।

প্রথম স্তরঃ প্রথম স্তরের পুড়ে যাওয়া কে সাধারণত মনে করা হয় না এতে পুড়ে যাওয়া জায়গা হালকা লাল ভাব হয়ে থাকে। এতে ত্বকের বাইরের স্তর প্রভাবিত হয়। হালকা ব্যথা হতে পারে,ফূলে যেতে পারে।

চিকিৎসা- প্রথম স্তরের পুড়ে যাওয়া জায়গা সাধারণত ঘরেই চিকিৎসা করা যায়।

  • 10 মিনিটের মত উড়ে যাওয়া জায়গাটিকে ঠান্ডা পানির মধ্যে ভিজিয়ে রাখতে হবে
  • শীতল জেল বা নাইট ওয়েন্টমেন্ট লাগাতে হবে
  • পেইনকিলার নিতে হবে
  • এন্টিবায়োটিক গজ দিয়ে পড়া জায়গাটাকে সুরক্ষিত রাখতে হবে

দ্বিতীয় স্তরঃ দ্বিতীয় স্তরের পোড়া সাধারণত ত্বকের ভিতরে চলে যায়। ত্বকের ওপরে পড়তে পারে এবং উপরের চামড়া সাদা হয়ে যেতে পারে।

চিকিৎসা- এই স্তরে পরার ধরন গুলো খুব গুরুতর না হলে প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে যায়।

  • ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মতো ঠাণ্ডা পানির মধ্যে চুবিয়ে রাখতে হবে
  • পুড়ে যাওয়া জায়গাটিকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং ঢেকে রাখতে হবে
  • ফোঁসকাগুলোকে চামড়া উঠানো যাবে না
  • ফোসকার জন্য এন্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করতে হবে
  • তুলো দিয়ে টাইট করে বাধা যাবে না

তৃতীয় স্তরঃ তৃতীয় স্তরের পুড়ে যাওয়ার ধরনকে সবচেয়ে ভয়াবহ মনে করা হয়। কেননা এই ধরনের পুড়ে গেলে ত্বকের সব স্তরের অনেক ক্ষতি হইয়। এমনকি হড়েও পোড়া দাগ লাগতে পারে। এই স্তরে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়ে।

চিকিৎসা- এই স্তরের পুড়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তি যেখানেই থাকুক জরুরী চিকিৎসার ব্যবস্থা খুঁজতে হবে।

  • বাসায় কোন ধরনের চিকিৎসা থেকে বিরত থাকতে হবে
  • যত দ্রুত সম্ভব হসপিটালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
  • জরুরী ভিত্তিতে ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করাতে হবে
  • চিকিৎসকের দেওয়া এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে
  • ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে ব্যাথার ঔষধ সেবন করতে হবে
  • প্রয়োজনে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে

পোড়া ক্ষত শুকানোর ক্রিম এর নাম

বাজারে পোড়া ক্ষত শুকানোর বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন ব্রান্ডের ঔষধ পাওয়া যায়। সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন ঔষধ বা মলম ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পোড়া ক্ষত শুকানোর মলম এর নাম জানা অবশ্যই প্রয়োজন।

  • বার্না ক্রিম
  • বেনটোল -Bentol cream
  • Burnsil cream
  • Sibalyn cream সিবালিন ক্রিম
  • G- Silver sulphadiazine
  • Burnaid cream
  • Burnless cream
  • Dazine cream
  • Dermazin cream
  • Dersa cream
  • Eburn cream
  • Flamzin cream
  • Medizen cream
  • Neozine cream
  • Silcream
  • Silvazin cream
  • Silvarax
  • Silzin cream

ঔষধগুলোর মধ্যে বার্না, বার্নসিল,বেন্টল বেশি ব্যবহৃত।

পোড়া ক্ষত শুকানোর ঘরোয়া উপায়

পুড়ে গেলে পোড়া ক্ষত শুকানোর ক্রিম এর পাশাপাশি ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা দেয়া উচিত। পোড়া ক্ষত সারানোর ঘরোয়া অনেক উপায় রয়েছে। ঘরোয়া উপায় জানা থাকলে নিজের এবং অন্যের সহযোগিতা করা যায়।

পানি- পুড়ে গেলে সবার আগে আক্রান্ত স্থানে 15 থেকে 20 মিনিট পানি ঢাললে পুড়ে যাওয়া ক্ষত মারাত্মক আকার ধারণ করে না। পানি ঢালার পর স্যাভলন এবং ডেটল দিয়ে প্রতিদিন পরিষ্কার করলে পোড়া ক্ষত সহজে শুকিয়ে যায়।

বরফের সেঁক- একটি পাতলা পরিষ্কার  কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে ক্ষত স্থানে লাগালে কিছুক্ষণ পরপর সেক দিলে তাড়াতাড়ি পোড়ার ক্ষত শুকিয়ে যায়। তবে বেশিক্ষণ লাগানো উচিত নয়। তাহলে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।

অ্যান্টিবায়োটিক মলম- বাসায় সব সময় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পুড়ে যাওয়ার অ্যান্টিবায়োটিক মলম বা ক্রিম রাখা উচিত। এতে পুড়ে যাওয়ার পথ বারবার অ্যান্টিবায়োটিক মলম লাগালে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এবং পুড়ে যাওয়া ব্যক্তির কষ্ট কম হইয়।

নারিকেল তেল- অনেক আগ থেকেই নারিকেল তেল পোড়া ক্ষত সারানোর জন্য অনেক প্রসিদ্ধ পূর্বে যখন পোড়া ক্ষত সারানোর জন্য কোন ঔষধ সহজে পাওয়া যেত না তখন নারিকেল তেল ব্যবহারের মাধ্যমে পোড়া ক্ষত তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেত।

এলোভেরা- অ্যালোভেরা কে বার্ন প্লান্ট বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে অ্যালোভেরা প্রথম এবং দ্বিতীয় স্তরের পুড়ে যাওয়া কে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এবং সংক্রমণ কমাতে এবং রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে।পুড়ে গেলে তাজা অ্যালোভেরার রস ব্যবহার করলে স্বস্তি মিলবে।

মধু- মধুতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে। ছোটখাটো পোড়ার সমস্যার সমাধান করে মধু। এতে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান পোড়ার চিকিৎসায় বিশেষ কার্যকরী। পোড়া জায়গায় মধু ব্যবহার করা যেতে পারে।

পুড়ে গিয়ে ফোসকা পড়লে করণীয়

অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পুড়ে গেলে ফোসকা পড়তে পারে। অনেকেই সে পুরস্কার চামড়া তুলে ফেলে এতে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

  • ফোসকা পড়লে ক্ষতস্থানে হাত দেওয়া যাবেনা
  • ক্ষত শুকানোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে
  • ফোসকা গেলে ফেলা যাবে না
  • টুথপেস্ট বা লবণ পানির সাথে সাথে লাগালে ফোস্কা বড় হয় না
  • পুড়ে যাওয়ার অয়েন্টমেন্ট লাগাতে হবে

পোড়া জায়গায় যা ব্যবহার করা উচিত নয়

  1. পুড়ে গেলে আক্রান্ত স্থানে না জেনে কোন কিছু ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে ইনফেকশনের পাশাপাশি শরীরের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে যেকোনো ধরনের রোগ হতে পারে।
  2. আক্রান্ত স্থানে মাখন ব্যবহার করা। অনেকেই আক্রান্ত স্থানে মাখন ব্যবহার করে থাকেন। পুড়ে যাওয়ার জন্য মাখনের কোন প্রতিক্রিয়া প্রমাণ পাওয়া যায়নি বরং মাখন তাপ ধরে রাখে যার ফলে ইনফেকশন হতে পারে।
  3. অতিরিক্ত পুড়ে গেলে কখনো জলপাইয়ের তেল নারিকেল তেল বা সরিষার তেল জাতীয় কোন তেল ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেক ক্ষেত্রে তেল ব্যবহার করা উপকারী হলেও শরীরের চামড়া বেশি পুড়ে গেলে তেল এর তাপ ধরে রাখার ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়।
  4. অনেকেই আক্রান্ত স্থানে ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। তবে ডিমের সাদা অংশ পুড়ে যাওয়ার স্থানে লাগানো উচিত নয় কেননা এতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা পুড়ে যাওয়া যায় তাকে আরো বেশি ক্ষত তে পরিণত করে।
  5. পরিস্থানের কখনোই বেশি বরফ ঠান্ডা জাতীয় কিছু ব্যবহার করা উচিত নয়। বেশি ঠান্ডা জাতীয় জিনিস ব্যবহারের ফলে স্যাঁতসেতে হয়ে যায় ফলে ওরা জায়গা পচে যেতে পারেিসি

পোড়া স্থানে ইনফেকশন হলে করণীয়

সাধারণত প্রথম দুই স্তরের ধরন অনুযায়ী পুড়ে গেলে ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। তবে পুড়ে যাওয়া জায়গায় ইনফেকশন বা ঘা হয়ে গেলে অবশ্যই অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বাসায় ডাক্তারের পরামর্শ দিতে কোন চিকিৎসা বা মলম ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

শরীরের কোন অংশ পুড়ে গেলে ঘরোয়াভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা করলেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করলে সহজেই ভালো হয়ে যায়।

  • মুখ হাত, পেট সহ শরীরের সেনসিটিভ অঙ্গ পুড়ে গেলে
  • পুড়ে যাওয়া জায়গা তিন ইঞ্চির বেশি হলে
  • পুড়ে যাওয়া জায়গা পচে গেলে
  • পুড়ে যাওয়া জায়গায় ইনফেকশন হয়ে গেলে
  • ক্ষতস্থান থেকে দুর্গন্ধ বের হলে
  • ক্ষতস্থান সারাতে বেশি সময় লাগলে
  • ক্ষতস্থান সাদা হয়ে গেলে
  • শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে

পোড়া ক্ষত শুকানোর দোয়া

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ এবং ক্রিম ব্যবহারের পাশাপাশি পোড়া ক্ষত শুকানোর জন্য বারবার দোয়া পড়ে ফু দিলে যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি মিলবে এবং তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।

“আজ লাবিল বাছা রব্বান্না ছি ইশফি আনতাশ শাফি শাফি লিল্লা আফতা”

শরীরের পোড়া ক্ষত শুকানোর মলম নাম

মন্তব্য

আজকে আমরা পোড়া ক্ষত শুকানোর ক্রিমম নাম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েএক্টি আর্টিকেল শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজে লাগবে। এ সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য বা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুতই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply