নবজাতকের নাভিতে তেল ব্যবহারের উপকারিতা
নবজাতকের নাভি খুবই সেনসিটিভ একটি অঙ্গ। জন্মের পর তিন সপ্তাহ পর্যন্ত নাভিতে ক্লিপ লাগানো থাকে তবে এ সময় নাভিতে তেল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। আজকে আমরা নবজাতকের নাভিতে তেল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি এটি সবার অনেক ভালো লাগবে।
শিশুর নাভিতে তেলের বিভিন্ন উপকারিতা
নাভি পরিষ্কার করতে সাহায্য করে – সাধারণত নবজাতকের নাভি পড়ার পরবর্তী সময়ে নাভিতে প্রচুর পরিমাণ ময়লা জমে এ ময়লা পরিষ্কারের জন্য একটি কটন বাড তেলে ডুবিয়ে সেটা নাভি পরিষ্কার করতে হবে। তেল মরা চামড়া এবং ময়লাকে খুব সহজে উঠে আসতে সাহায্য করে। এ ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইনফেকশন ভালো করতে সহায়তা করে – যেহেতু নবজাতকের নাভি খুব দ্রুত ময়লা হয়ে যায়। তাই নবজাতকের নাভি প্রতিদিন পরিষ্কার করা হয়ে ওঠে না। তাই নাভিতে জমে থাকা ময়লা থেকে ইনফেকশনের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া নাভি অনেক বেশি সময় ধরে আর্দ্র থাকলেও নাভিতে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে।টি ট্রি ওয়েল ব্যবহার করলে সহজে নাভির ইনফেকশন ভালো হয়ে যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টিব্যাকটেরিয়াল ফাঙ্গাল উপাদান।
পেটে ব্যথা ভালো করে – নবজাতকের নাভিতে প্রতিদিন তেল দেওয়ার পাশাপাশি পেটে তেল মালিশ করলে বাচ্চাদের হজমের সমস্যা, ডায়রিয়া, ফুডপয়জনিং এর মত সমস্যা গুলো দূর করতে খুব কাজে দেয়। পেটে ব্যথা কমানোর জন্য আদা অথবা পুদিনা পাতার এসেন্সিয়াল অয়েল খুব ভালো কাজ করে। নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্রতিদিন নাভিতে দিলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
নাভাল চক্রর ভারসাম্য ঠিক রাখা – নবজাতকের একটিভিটি ঠিক রাখতে চাইলে প্রতিদিন এই নাভাল চক্রটি ঠিক রাখতে হবে। কয়েক ফোটা এসেনশিয়াল অয়েল নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে নাভিতে দিতে হবে। নাভিতে দেওয়ার পাশাপাশি পুরো পেটে ধীরে ধীরে মাসাজ করলে এই নাভাল চক্রের ভারসাম্য সঠিক থাকে।
আরো পড়ুন – নবজাতক শিশুর ওজন কম হলে করনীয়
নাভিতে তেল দিলে কি হয়
নাভি মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পার নাভির সুস্থতার মধ্য দিয়ে। কারণ শরীরের একাধিক শিরা নাভির সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাই নাভির যত্ন নিয়ে নারিকেল তেল সরিষার তেল বা যে কোন ধরনের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে সে সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
- মন শান্ত করে তোলা
- স্বাস্থ্য ভালো রাখে
- জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
- চোখের শুষ্কতা কমে
- প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে
- চুলের পুষ্টি মেলে
- হজম ক্ষমতা বাড়ায়
- ইনফেকশন থেকে দূরে রাখে
নবজাতকের নাভি শুকানোর উপায়
শীতের সময় নবজাতকের নাভির যত্ন নিতে হয়। কারণ শীতে নাভির ঘা শুকাতে বেশি সময় লেগে যায়। জন্মের পরপরই চিকিৎসকরা নবজাতকের নাভিতে ক্লিপের মতো প্লাস্টিক বা মেটালের কর্ড ক্যাম্প বা টেপ লাগিয়ে দেন। এতে নাভিতে রক্ত প্রবাহ দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় এবং নাভিতে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
- নবজাতকের নাভিতে অযথা হাত লাগানো উচিত হয় নয়
- নাভিতে কাপড় দিয়ে না ঢেকে খোলা রাখতে হবে
- খেয়াল রাখতে হবে নাভি যেন পরিষ্কার এবং শুকনা থাকে
- নাভি ঝরে না যাওয়া পর্যন্ত শিশুকে সরাসরি গায়ে পানি ঢেলে গোসল করানো উচিত নয়
- জন্মের পর প্রথম তিন সপ্তাহ স্পঞ্জ এর সাহায্যে শিশুর শরীর আস্তে আস্তে মুছে মুছে পরিষ্কার করা উচিত
- ডায়াপার পড়ানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন নাভিতে কোন অবস্থায় ঢেকে না রাখে
- নাভিতে সবসময় আলো বাতাস লাগতে দিতে হবে
- শিশুকে অবশ্যই এসময়ে রোদের মধ্যে কিছুক্ষণ করে প্রতিদিন দিতে হবে
নবজাতকের নাভিতে ইনফেকশন হলে করণীয়
সাধারণত জন্মের পর পরই নাভির যত্ন নিলে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে নাভিতে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তবে ইনফেকশন হলে অবশ্যই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে এ রোগ ভালো হয়ে যায়।
- নাভির জায়গায় বেটারিন দিয়ে আস্তে আস্তে পরিষ্কার করতে হবে
- এক্ষেত্রে ইসপিরিট ব্যবহার না করাই উত্তম
- সেইসঙ্গে ডাক্তারে পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক পাউডার ব্যবহার করতে হবে
- প্রয়োজনে এন্টিবায়োটিক বা ইনজেকশন চিকিৎসকের পরামর্শ মত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে
- নাভির ঘাতে ঘাসের রস হলুদ বা ঘরোয়া কোন ধরনের টোটকা ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না
নবজাতকের নাভির ফুলে যাওয়ার কারণ
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নবজাতকের নাভি ফুলে উঠেছে এবং কাঁদলে আরো বেশি ফুলে যায় সাধারণত শিশুর নাভির চারপাশের মাংস পেশির দুর্বলতার কারণে এমনটা হয়। একে নাভির হার্নিয়া বলে কান্নাকাটি করলে বা কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্য কোন রোগের কারণে পেটের ভিতরে চাপ বেড়ে গেলে নাভি আরো ফুলে ওঠে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যে এটি ভালো হয়ে যায়।
নবজাতকের নাভি পড়ে যাওয়ার পর করণীয়
সাধারণত জন্মের পর থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই নাভি শুকিয়ে ঝরে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে ঝরে পড়লে শিশুর দেহে খুবই সামান্য খতর সৃষ্টি করে। যা অল্প সময়ের মাঝেই ভালো হয়ে যায়। এসময় শিশুর নাভিতে হালকা নারিকেল তেল অথবা সরিষার তেল লাগিয়ে প্রতিদিন কিছুক্ষণ রোদে শুয়ে রাখলে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। নাভি শুকানোর পর অবশ্যই নাভি পরিষ্কার করতে হবে।
বাসায় ডেলিভারি ক্ষেত্রে যা জরুরী
সাধারণত পূর্বে গর্ভবতী মায়েদের বেশিরভাগ ডেলিভারি বাড়িতে করা হতো। তবে বর্তমান সময়ে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাসায় ডেলিভারি করানোর হার কমে এসেছে। হসপিটালে ডেলিভারি করানোর মাধ্যমে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- প্রত্যেক প্রসবে ডেলিভারি কিট ব্যবহার করা
- প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রির হাত দুটো যেন সাবান ও পরিষ্কার পানিতে ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন থাকে
- জরায় মুখ ও একইভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
- শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
- নারী কাটার প্লেট সুতা গজ যেন জীবাণু মুক্ত থাকে
- প্রসবের পর ধাত্রীর হাত দুটো ভালোভাবে সাবানতে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে নাড়ী কাটতে হবে
- নাড়ি কাটার পর তাতে কোন ড্রেসিং ব্যান্ডেজ বেন্টিসিটি কিছু লাগানোর প্রয়োজন নেই
- নাড়ী শুকনো পরিষ্কার ও খোলা রাখতে হবে
- নবজাতককে শিশুকে জীবাণুমুক্ত জামা কাপড় পরানো প্রয়োজন
- তবে অবশ্যই হাসপাতালে নরমাল ভ্যাজাইনাল ডেলিভারি করা সবচেয়ে নিরাপদ
মন্তব্য
আজকে আমরা নবজাতকের নাভিতে তেল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেছি। আশা করছি নতুন মায়েদের জন্য এটি অনেক উপকারে আসবে। নবজাতকের নাভিতে তেল দেওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –