১ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয়

১ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয়

সাধারণত শিশুর জন্মের পরবর্তী সময়ে ঘন ঘন সর্দিকাশি হতে দেখা যায়। গর্ভে সন্তান জন্মের পরবর্তী সময়ে বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। ১ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয় সম্পর্কে জানা থাকলে খুব সহজেই এক থেকে ছয় মাসের বাচ্চাদের কাশি নিরাময় করা যায়। আজকে আমরা ১ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয় সম্পর্কে জানাবো।

কি কারনে কাশি হয়

বিভিন্ন কারণেই নবজাতক বা শিশুদের কাশি হতে পারে তবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে-

  • ফ্লু বা ঠান্ডা লাগা
  • গলায় জমে থাকা স্লেশমা জোমে থাকা
  • এবং গলা ও শ্বাসনালী ফুলে যাওয়ার ফলে অস্বস্তির কারণে এই কাশি শিশুদের হয়ে থাকে
  • ধুলাবালি এবং এলার্জির কারণে কাশি হয়
  • হাঁপানি বা শ্বাসযন্ত্রের কোন রোগ থাকলে এটি শুষ্ক কাশির কারণ হতে পারে
  • ঠান্ডা জ্বর এর কারনে
  • ভাইরাল সংক্রমনের কারণে কাশি দেখা দেয়
  • নাকে বেশি স্লেশমা থাকে তখন স্লেশমা গলাতে যায় যা কাশি ঘটাতে পারে

বাচ্চাদের কাশির ধরন

সাধারণত কাশির বিভিন্ন ধরন হয়ে থাকে দিনের সময় যত বাড়তে থাকে কাশি তত বেশি বাড়তে থাকে। প্রকারভেদগুলো জানলে বুঝা যায় কোনটি সাধারণ কাশি এবং কোনটি অন্য কোন রোগের কারণে কাশি। শিশুরা ঠান্ডা জনিত যে কয়েকটি সমস্যায় ভোগে কাশি তার অন্যতম। ক্রুপ কাশি, শুকনা কাশি, হুপিং কাশি সহ আরো কয়েক রকমের কাশি রয়েছে।

ক্রুপ কাশি- এই কাশিতে শিশুদের শ্বাসনালী ফুলে যায় শ্বাসতন্ত্র ফুলে যাওয়ার কারণে বাচ্চাদের কাশির সময় গলা দিয়ে এক ধরনের আওয়াজ বের হয়।

শুকনা কাশি- এটি সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমনের কারণে হয়ে থাকে। এ ধরনের কাশি ঘুমের সময় বা উষ্ণ তাপমাত্রায় শিশুদের উপর খুবই খারাপ প্রভাব ফেলে।

সিক্ত কাশি- সাধারণত শ্লেষ্মা বুকে জমে যাওয়ার কারণে এই কাশি হয়ে থাকে। বেশিরভাগ বাচ্চাদের কাশি শুরু হবার 6 থেকে 7 দিন পরবর্তী সময়ে এ ধরনের কাশি হতে দেখা যায়।

হুপিং কাশি- হুপিং কাশি শিশুর হলে বারবার শিশুর কাশি হতেই থাকে। অনেক সময় শিশুর কাশি শুরু হলে একেবারে পাঁচ থেকে ১৫ টি কিংবা আরো বেশি কাশি হতে পারে। মূলত রাতের দিকে এ ধরনের কাশি বেড়ে যায়। এই কাশি হলে শ্বাস নেওয়ার সময় ঘরঘর শব্দ হয়।

১-৬ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয়

সাধারণত জন্মের পর থেকে প্রথম ছয় মাস শিশুদের সর্দি কাশি খুব বেশি হয়ে থাকে। কেননা এই সময়ে শিশু বাইরের আলো বাতাসের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। তবে এ সময় শিশুদের সর্দি কাশি হলেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই কিছু সাধারণ টিপস জানা থাকলে নবজাতকদের সঠিকভাবে খেয়াল রাখা সম্ভব হয়।

বুকের দুধ পান করানো- সর্দি কাশি হলে যে কোন বাচ্চাই বুকের দুধ পান করা বন্ধ করে দেয়। এতে সঠিকভাবে কাশির জন্য স্তন্যপান করা সম্ভব হয় না। তবে বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করে যেতে হবে। সাধারণ সর্দি কাশির জন্য অন্য কোন ওষুধের দরকার নেই বুকের দুধই সব সমস্যার সমাধান করে দেয়।

জোয়ান ও রসুনের বাষ্প- রসুন একটি শক্তিশালী ঔষধ এবং এর প্রচুর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন রয়েছে।  মধ্যেও অনেক ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সক্ষমতা আছে। চুলার উপর এক মিনিটের জন্য দুই থেকে তিন কোয়া রসুন ও এক চিমটি জোয়ান ভেজে নিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে ঝাঁঝালো গন্ধ বের হওয়া শুরু করবে। ঠান্ডা হওয়ার পর বাচ্চার নাকের সামনে ধরলে এর গন্ধ বাচ্চা সর্দি এবং কাশি সারিয়ে তুলবে সহজেই।

বাচ্চার মাথা উঁচু করে রাখা- সাধারণত নবজাতকরা ১ থেকে ৬ মাসে কোন অসুবিধা হলে প্রকাশ করতে পারে না। তাই সর্দি বা কাশিতে নাক বন্ধ হলে বাচ্চারা ঠিকভাবে ঘুমাতে পারে না। কাশির সময় বালিশের নিচে উঁচু কাপড়ের সাহায্যে উঁচু করে দিলে সর্দি কাশিতে বাচ্চাদের ঘুমাতে অসুবিধা হয় না।

তেল মালিশ- সরষের তেল বা নারিকেল তেল হালকা গরম করে মাসাজ করলে বাচ্চা কাশি থেকে আরাম পাবে। বাচ্চার বুকে পিঠে হাতের তালু এবং পায়ের তালুতে হালকা তেল মালিশ প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে করে দিলে বাচ্চদের কাশি খুব সহজে কমে যায়।

হালকা গরম পানিতে গোসল করানো- হালকা গরম পানিতে গোসল করানোর ফলে বাচ্চাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়। একটি গামলাতে হালকা গরম জল ঢেলে বাচ্চাকে সেখানে গোসল করানো বা গামছা দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে এতে বুকের কফ এবং কাশি দুটোই সেরে যাবে।

গরম কাপড়ের সেক- সাধারণত নবজাতকের এক থেকে ছয় মাস পর্যন্ত কাশি হলে গরম কাপড়ে শ্যাঙ্ক অত্যন্ত উপকারী একটি পদ্ধতি। পাতিল গরম করে তার ওপর ওটা তোয়ালে বা কাপড় হালকা গরম করে কিছুক্ষণ ধরে নবজাতকের বুকের উপর কিছুক্ষণ পর পর দিতে হবে। এতে করে শিশুর কাশি কমবে এবং বুকে জমে থাকা কফ বের হয়ে যাবে। তবে বুকের উপর তোয়ালে দেওয়ার আগে অবশ্যই হাতে গরম চেক করে নিয়ে নিতে হবে।

সর্বপরি কোনভাবেই আতংকিত হওয়া যাবে না। প্রথম অবস্থায় বাসায় রেখে ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট করুন। অবস্থার উন্নতি না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

নবজাতকের কাশির ঔষধ

সাধারণত ১ থেকে ৬ মাস বয়সী নবজাতকদের কাশি হলে কোন প্রকার ওষুধ খাওয়ানো উচিত নয়। কারণ সাধারণ সর্দি কাশি ঘরোয়া ভাবে চিকিৎসা করলে সেরে যায়। তবে বাজারে বিভিন্ন ধরনের বাচচাদের কাশির ঔষধ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে এমব্রোক্স অন্যতম। এটি সর্দি কাশি সারাতে খুবই ভালো উপকার করে। এর বর্তমান বাজার মূল্য ৩৯ টাকা।

ইউক্যালিপটাস তেল- যদি শিশুর বয়স দুই বছরে কম হয়ে থাকে তাহলে তার বালিশের উপর কয়েক ফোটা ইউক্যালিপটাস তেলের ড্রপ ঢেলে দিতে হবে। এতে শিশুর সর্দি-জনিত সমস্যা থাকলে নাক খুলে যাবে এবং শিশুর কাশির উপদ্রব কিছুটা হলেও কমে যাবে।

আরো পড়ুন – শিশুর নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

শিশুর কাশি সারানোর ঘরোয়া উপায়

সাধারণত এক বছরে বেশি বাচ্চাদের এই ঘরোয়া উপায়ে কাশি সারানো সম্ভব। এক বছরের নিচের বাচ্চাদের এই ঘরোয়াভাবে ট্রিটমেন্ট করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে এক থেকে ছয় মাসের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কোন কিছুই খাওয়ানো উচিত নয়।

লেবু এবং মধু- লেবু এবং মধু বাচ্চাদের কাশি সারানোর জন্য অনেক উপকারী একটি টোটকা। লেবু পানিতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানো যেতে পারে। মধু শ্বাসযন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে বুক থেকে কফ দূর করে এবং গলা পরিষ্কার রাখে।

আদা এবং মধু- মধু কে  সর্ব রোগের ঔষধ বলা হয়। সর্দি কাশিতে মধুর খুবই কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার এক দুর্দান্ত ঘরোয়া উপায় হল আদা। বাচ্চাকে এক টুকরো আদার সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে তবে এক বছরের কম বয়সে বাচ্চাদের মধু দেওয়া উচিত নয়।

হলুদ ও মধু- গলা পরিষ্কার রাখতে বা খুশখুসে কাশে থেকে মুক্তি পেতে মধু খুবই সাহায্য করে। এক বছরের বেশি বাচ্চাদেরে হলুদের সাথে মধু মিশিয়ে দিনে দুইবার খাওয়ালে কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

দুধ এবং হলুদ- হলুদে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল রয়েছে বাচ্চার কাশি সারাতে হলুদ দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। গরম দুধ খেলে ফুসফুসে কাশি খুব সহজেই সেরে যায়। এক গ্লাস গরম দুধে আধা চা চামচ হলুদ মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ানো যেতে পারে এতে বাচ্চার কাশি থেকে স্বস্তি মিলবে।

সরিষার তেল ও রসুন- সরিষার তেল গরম করে এর মধ্যে সামান্য রসুন থেঁতো করে মিশিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ পর ওই তেল দিয়ে শিশুর গলা বুক পেট হাতের তালু এবং পায়ের পাতায় মালিশ করতে হবে এতে ঠান্ডা কাশি দ্রুত সেরে যাবে।

মিশ্রি- কাশি থেকে মুক্তি পেতে বাচ্চাকে মিশ্রি দেওয়া যেতে পারে। চিকিৎসকরা বলেছেন মিস্ত্রি গলার আদ্তার বজায় রাখে যার ফলে গলায় কাশির জ্বালা কম হয়।

গরম পানি ও লবণ- বাচ্চাদের অতিরিক্ত কাশি হলে সবচেয়ে ঘরোয়া সহজ উপায় হল গরম পানি ও লবন। গরম পানি খাওয়ানো কেননা বাচ্চার কাশির সময় ঠান্ডা পানি বাচ্চার কাশির উপদ্রব বেশি বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রতিদিন কয়েক চামচ করে গরম পানির সাথে লবণ মিশিয়ে খাওয়ালে দ্রুত কাশি সেরে যাবে।

বাচ্চাদের কাশির সিরাপ

বাজারে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের কাশির সিরাপ ও ট্যাবলেট রয়েছে। তবে পরামর্শ ছাড়া কোণ ঔষধ বাচ্চাকে সেবন করানো উচিত নয়। তবে এমন খুবই সাধারণ ট্যাবলেট বা সিরাপ আছে যা সহজে বাচ্চাদেরকে কাশি থেকে মুক্তি দিতে পারে।

জিঙ্ক লজেন্স- খুসখুসে কাশি হলে শিশুকে জিঙ্ক লজেন্স দেওয়া যেতে পারে। এটি প্রতি ২ থেকে ৩ ঘন্টায় একবার দেওয়া যায়। এই জিংক লজেন্স খেলে শিশুর কাশি কমে আসবে।

বাচ্চাদের কিছু কাশির সিরাপ এর নাম- ocaf,coff,Brodil,Tuspel,Tofen,fexo

নবজাতকের মায়ের করনীয়

নবজাতকের সর্দি কাশি হলে অবশ্যই নতুন মায়েদের করণীয় কিছু বিষয় রয়েছে। কেননা নবজাতকের মায়েদের উপর বাচ্চার অনেক কিছুই নির্ভর করে।

  • নবজাতকের মাকে এ সময় গরম খাবার খেতে হবে।
  • সব সময় হাত পরিষ্কার রাখতে হবে
  • ঘর ধুলাবালি যুক্ত রাখা যাবে না
  • শিশুর ব্যবহারে সব জিনিসপত্র গরম পানি এবং স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে
  • এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

ডাক্তারের পরামর্শ

সাধারণত শিশুদের সর্দি কাশি লেগেই থাকে। তাই এই সর্দি কাশি থেকে বাঁচতে শিশুকে অবশ্যই বাড়তি যত্ন নিতে হবে। কিছু উপসর্গ রয়েছে যেগুলো দেখলে অবশ্যই শিশুকে ডাক্তারে নিকট নিয়ে যেতে হবে। সেগুলো হল-

  • সারারাত একটানা কাশি থাকা
  • কাশির সঙ্গে জ্বর থাকা
  • কাশির সাথে স্লেশ বের হওয়া
  • শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হলে
  • কাশি দশ দিনের বেশি স্থায়ী হলে

মন্তব্য

আজকে আমরা ১ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে একটা আর্টিকেল শেয়ার করেছি। আশা করছি দৈনন্দিন জীবনে এটি সবার অনেক কাজে লাগবে। ১ মাসের শিশুর কাশি হলে করণীয় সম্পর্কে সম্পর্কে আপনাদের কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি দ্রুত রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply