আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি?
সময় বিবর্তনে মানুষ কত কিছু আবিষ্কার করেছে।তার সাথে এইসব আবিষ্কার সবাইকে অবাক করেছে।তেমনি এক অবাক করা আবিষ্কার আরটিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স(এআই) অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।এটি পৃথিবীতে নতুন একটা বিবর্তন এনেছে। বর্তমানে মেডিকেল সহ অনেক সেক্টরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে।
এআই ব্যবহার চারদিকে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রকার ইলেকট্রনিক ডিভাইসে।গুগল এসিসট্যান্ট,নিজে নিজে চলন্ত গাড়ি,তাছাড়া বিভিন্ন গেমেও এআই এর ব্যবহার রয়েছে।এআই কে যা কমান্ড করা হয় সে তা করে যেমনঃ আপনি বললেন আলেক্সা আমি একটা মেসেজ পাঠাতে চায় কিংবা একটা গান শুনতে চায় তাহলে আপনাকে জিজ্ঞাস করবে কাকে মেসেজ পাঠাতে চান বা কোন শিল্পীর কোন গান শুনতে চান।
এআই কে বলা যায় মানুষের মতো কিন্ত এটার মস্তিষ্ক নিউরন দিয়ে গঠিত নয়।এটা মস্তিষ্ক মাক্রোচিপ দ্বারা তৈরি।এই তিন থেকে চার এ আই চাহিদা বেড়েছে সাথে সাথে ব্যবহার কিন্ত এর সূচনা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার
বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিভিন্ন জটিল এডভান্স ফিল্ডে ব্যভার হচ্ছে। নিচে আমরা কয়েকটা স্পেশাল ফিল্ডের নাম উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
- মেডিকেল সাইন্সে
- ব্যাংকিং ও বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে
- গেমিং সেক্টরে
- স্পেস ও নভোযান ইন্ডাস্ট্রিতে
- ডিজিটাল সার্ভিস ও ওয়েব সার্ভিস এর ক্ষেত্রে
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কাকে বলে
আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স হলো কম্পিউটার সাইন্স এর তৈরি এমন একটা মেশিন যেটা মানুষের মতো কাজ করতে পারে এবং কথা বলাসহ বিভিন্ন আচারন করে পারে।আরর্টিফিসিয়াল অর্থ কৃত্রিম অর্থাৎ মানুষের তৈরি এবং ইন্টিলিজেন্স অর্থ বুদ্ধিমত্তা অর্থাৎ চিন্তা করার ক্ষমতা।সঠিকভাবে বললে এআই এর অর্থ দাড়ায় “মানুষের তৈরি চিন্তা করার ক্ষমতা”।এটা সাধারন প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। বর্তমানে প্রোগ্রামিং সহ অনেক সেক্টরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার বেড়েই চলছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জনক কে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এর ধারনা দিয়েছিলেন এল্যান টুরিং তিনি ছিলেন একজন গনিতবিদ এবং গ্রে অল্টার তিনি ছিলেন একজন নিউরোলজিস্ট।তখন জর্মান নাৎসি বাহিনী তারা গোপন তথ্য প্রেরন করতো এনিগমাস কোডের মাধ্যম্যে।কিন্ত এটা ব্রিটিশরা এই কোড ক্রাক করতে পারছিল না কিন্ত পারলেন এল্যান টুরিং।
এনিগমা কোড কি?
এনিগমা হলো এমন একটি যন্ত্র যার মাধ্যম্যে বার্তাকে কোডে রুপান্তর করা যেত।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গোলাবারুদ এর সাথে প্রযুক্তি বিকাশের অন্যতম উদাহরন হলো এনিগমা কোড।তখনকার সময় নাৎসি বাহিনীর সাথে হিটলার যোগাযোগের জন্য এনিগমা কোডের ব্যবহার করতেন।প্রথমত রেডিও এর মাধ্যম্যে বার্তা প্রেরন করা হতো কিন্ত এতে শত্রুপক্ষ ট্যান্সমিশন হ্যাক করতে জানতে পারতো তাই এনিমা আবিষ্কার করা হয়।এই বার্তায় খুবই গুরুত্বপূর্ন তথ্য থাকতো।
এবার একটা এনিগমা কোড লিখি এবং সেখাটে ক্রাক করে দেখা যাক।আমার এনিগমা কোড”HPPHMF” এটা।এবার এটাকে ক্রাক করি “GOOGLE”।ক্রাক করার নিয়ম এনিগমার কোড এর অক্ষর এর আগের শব্দের ব্যবহার।এটা আবিষ্কার করেছিল জার্মান বিজ্ঞানি অর্থার সেবিয়াস।
এল্যান টুরিং
এল্যান টিউরিং একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং ক্রিপ্টোলজিস্ট।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এনিগমা কোড ডিকোড মেশিন বোম্বে আবিষ্কার করে বিশাল অবদান রেখেছিল।তিনি মনে করতেন গনিতে সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব এলগিরিদম এর মাধ্যমে।তিনি এই ধারনা থেকে একটা মেশিন আবিষ্কার করেন।এই মেশিনের নাম “ইউনিভার্সাল টুরিং”।তিনি পটাশিয়াম সাইনাইড খেয়ে আত্নহত্যা করেন।
টুরিং টেস্ট
১৯৪৮ সাল থেকে বিজ্ঞানী এ্যালান টুরিং “টুরিং টেস্ট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা” নিয়ে কাজ করতেছিলেন।১৯৫০ সালে তিনি তার লিখা একটা বইতে বলেছিলেন”কোনো যন্ত্র যদি মানুষের মতো কাজ করতে পারে অথবা কাছাকাছি মিল রেখে কাজ করতে পারে তাহলে তাকে বুদ্ধিমান যন্ত্র বলা যায়”।টুরিং টেস্ট মূলত মানুষ ও যন্ত্রের অনুলিপিকরন পরীক্ষা।উদাহরন হিসেবে বলতে পারি “গুগল এসিসট্যান্ট” এর কথা। এখানে আপনি গুগলকে প্রশ্ন করলে আপনাকে সঠিক উত্তর অথবা কাছাকাছি উত্তর দিবে অর্থাৎ এর ভিতর কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা আছে।
এআই এর ব্যবহার
আমারা অনেক কাজে বা অনেক কিছু ব্যবহার করি যাতে এআই এর ব্যবহার রয়েছে।কিন্তু অবাক করা বিষয় খুব কম মানুষই বিষয় সম্পর্কে জানে।
Social Media : বর্তমানে আমরা অবসর সময়ের বেশির ভাগ সময় ফেসবুক,টুইটার,ইনস্টাগ্রম সহ বিভিন্ন সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে থাকি।এখনে আপনি কারো নাম লিখে সার্চ করলে পেয়ে যাচ্ছেন।তাছাড়া আপনি কোনো বিষয়ে পোষ্টে লাইক করলে সেই ধরনে পোষ্ট আরো সাজেশন করেছে সব এআই দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
যোগাযোগ ক্ষেত্র : বর্তমান সবচেয়ে এআই এর আবাক করা আবিষ্কার হলো এআই প্রযুক্তি দ্বারা চালিত গাড়ি।এই আবিষ্কার করে আমেরিকার “টেসলা” কম্পানি।এই গাড়িগুলো মানুষের মতো কিভাবে ব্রেক করতে হয় কিভাবে গাড়ির স্পিড বাড়াতে ইত্যাদি পারে।আমেরিকায় সড়কে প্রায় ৫০ হাজারের মতো এআই গাড়ি চলছে।এছাড়া ইকমার্স ক্ষেত্রে এর অবদান রাখছে এআই। ক্রেতার বাড়িতে পন্য পৌছানোর জন্য এআই সমৃদ্ধ ড্রোন ব্যবহার করছে এমাজন ও ওয়েলমার্ট।
সাস্থ্যসেবা : বর্তমানে এআই সাস্থ্যসেবা খাতে ও অবদান রাখছে।এটি এ খাতকে উন্নত করছে বিভিন্ন এআই প্রযুক্তি।এর মাধ্যমে যেকোনো রোগ মেশিনের মাধ্যমে সনাক্ত করা যাচ্ছে।এছাড়া বিভিন্ন ডাটা সহজে এনালাইসিস করা যাচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে সাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার বেড়েই চলছে।
কৃষিক্ষেত্রে: এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে মাটির উবরর্তা সম্পর্কে জানা যায়।কোথায় কেমন ফলন হবে এটা এনালাইসিস করে জানা যায়।এছাড়া এআই বোট মাধ্যমে ফলন দ্রুত হারভেস্ট করা যায়। সময়ের সাথে সাথে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার বেড়েই চলছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর খারাপ দিক
এতক্ষন আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার গুলো বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সবজিনিসের ই ভালো দিকের পাশাপাশি কিছু খারাপ দিক ও থাকে। এখন আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
মানুষের চাকরি কমে যাওয়া: দিন দিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার সব সেক্টরেই বাড়ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের যায়গা দখন করে নিচ্ছে। যেমন একসময় বড় বড় ফ্যাক্টরি ম্যানেজ করার জন্য অনেক মানুষ চাকরি করতো। কিন্তু এখন বিভিন্ন রোবটের সাহায্যে খুব সহজে ও কম খরচে সব ম্যানেজ করা যাচ্ছে। তাই মানুষের চাকরি কমে যাচ্ছে।
পোস্টটি পড়ার জন্য
ধন্যবাদ