বাংলাদেশে এনজিওগ্রাম খরচ কত
পূর্বে বাংলাদেশ অনেক কঠিন রোগেরই চিকিৎসা করার সুযোগ হতো না। বর্তমানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ চিকিৎসার ধরন আধুনিক ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। বাংলাদেশে এনজিওগ্রাম সহ বিভিন্ন টেস্টের খরচ একেক হাসপাতালে একেক রকম।
আজকে আমরা বাংলাদেশ এনজিওগ্রাম খরচ কত সহ এই সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করব। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।
এনজিওগ্রাম কি?
সহজ ভাষায় এনজিওগ্রাম হচ্ছে রক্তনালীর এক্সরে। বিশেষ করে হার্টের ক্ষেত্রে এই এনজিওগ্রাম শব্দটি অনেক ব্যবহার করা হয়ে থাকে অর্থাৎ হার্টের রক্ত নালীর এর ভেতরের অবস্থা দেখতে যে এক্সরে ইমেজিং করা হয় তাকে এনজিওগ্রাম বলে। ধমনী বা শিরার ভেতরের অবস্থা বা রক্ত প্রবাহ চলাচল করছে কিনা দেখার জন্যই সাধারণত এনজিওগ্রাম করা হয়।
শুধুমাত্র হার্টের ক্ষেত্রে এনজিওগ্রাম ব্যবহার করা হয় না শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ভেতরের অবস্থা জানার জন্য এনজিওগ্রাম করা হয়। এনজিওগ্রাম দুই ধরনের হতে পারে তাইকোনোস্টিক এবং থেরাপিওটিক।
এনজিওগ্রাম কেন করা হয়?
হার্টের রোগীদের ক্ষেত্রে ঠিক কি ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই ডাক্তাররা এনজিওগ্রাম করতে বলে থাকেন। যেমন- হার্ট অ্যাটাক রোগীদের ইন্টারনাল কোন পরিবর্তন ঘটেছে কিনা তা যাচাই করতে এনজিওগ্রাম করা হয়। অথবা হার্টের যেকোনো ধরনের অস্বাভাবিকতা খুঁজে বের করতে ডাক্তার রোগীদের এনজিওগ্রাম করে থাকেন। রক্ত নালীতে ব্লক হয়েছে তা জানা এবং রক্ত প্রবাহ কতটা ডিটেক্ট করার জন্য এনজিওগ্রাম করা প্রয়োজন হয়।
যেসব রোগ নির্ণয়ের জন্য এনজিওগ্রাম করা হয়
Atherosclerosis – স্ট্রোকিং বা হার্ট অ্যাটাক এর জন্য
Peripheral arterial disease- পায়ের মাংসপেশিতে রক্ত প্রবাহের গতি দেখার জন্য
Angina- হার্টের বেশি বা ধমনীতে রক্ত প্রবাহের বাধা নির্ণয়ের জন্য
A brain aneurysm- প্রেমের রক্তনালীতে স্মৃতি নির্ণয়ের জন্য
Blood clots or a pulmonary embolism – ফুসফুসে ব্লগ
Renal artery stenosis- কিডনিতে ব্লক
কখন এনজিওগ্রাম করতে হয়?
- যদি রোগের করোনারি আটারি ডিসিসের লক্ষণ থাকে। যেমন- বুকে ব্যথা যেটাকে এনজেনা বলে থাকে
- বাহু চোয়াল বা বুকে যদি এমন ব্যথা থাকে যার কোন কারণ খুঁজে না পাওয়া যায় অর্থাৎ
- অন্যান্য টেস্ট করার পরও ডাক্তার যদি বুঝতে না পারে কি কারনে উপরের অর্গান গুলোতে ব্যথা হচ্ছে
- যদি কারো জন্মগতভাবে হার্টের সমস্যা বা ত্রুটি থাকে যেটাকে মেডিকেল ভাষায় কনজিনাল হার্ডডিসিস বলে
- যদি নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় অক্সিজেনের স্বল্পতা অনুভব করে
- বুকে যদি কোন বড় ধরনের আঘাত পেয়ে থাকে অথবা এক্সিডেন্টের কারণে হতে পারে কিংবা আর মারামারির জন্য
- হার্ট অ্যাটাক কিংবা হার্ট ফেল করার মত লক্ষণ দেখা দিলে
- হার্টের বাল্বে কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে
- যে কোন বড় ধরনের সার্জারি ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে তাই এর পূর্বে এনজিওগ্রাম করতে হয়
এনজিওগ্রামে পূর্বে করণীয়
- যদি কোন রোগের জন্য ওষুধ খেয়ে থাকেন তবে অবশ্যই এনজিওগ্রাম করার পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে
- নিজ থেকে ঔষধ বন্ধ করা যাবে না, আবার নতুন কোন ঔষধ সেবন করার পূর্বেও ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন
- আগের রাতে এস্পেরিন বা ই এসপেরিন জাতীয় কোন ঔষধ খাবেন না
- এনজিওগ্রাম করার ৭২ ঘন্টা আগে এটাবল বা ওয়ারিং জাতীয় কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না
- পাঁচ দিন আগে থেকে ক্লাফিক্স এবং এ জাতীয় কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না
- যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে রেপি টেক্টিং কিংবা শর্ট অ্যাক্টিং কোন ইনসুলিন নিতে হলে যেদিন এনজিওগ্রাম করবেন সেদিন ইনসুলিন নেওয়া যাবে না
- যদি লং একটি ইনসুলিন নিয়ে থাকে তবে সেটি কন্টিনিউ করা যেতে পারে
- রোগী যদি এন পি এইচ কিংবা না নিয়ে থাকে তবে হাফ ডোজ নিতে হবে
- যদি ৭০/৩০ ইন্সুলিন নিয়ে থাকেন তাহলে ব্লাড সুগার ২০০ এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে নিতে পারেন
- যদি ব্লাড সুগার ২০০ নিচে হয় তবে সকালে ইন্সুলিন নেওয়া যাবে না
- প্রায় সকল রোগীর ক্ষেত্রেই মধ্যরাতে পর থেকে ভারী খাবার বন্ধ করে দেয়া হয়। সাধারণ হালকা বা স্নাক্স খেতে নিষেধ করেন ডাক্তাররা যেদিন এনজিওগ্রাম করা হবে সেদিন সকালের নাস্তা শুধুমাত্র পাতলা লিকুইড জাতীয় কোন কিছু খাওয়া যেতে পারে। যেমন- চা কফি বা এ জাতীয় খাবার।
- রোগের ক্ষেত্রে প্যালেস দিয়া ব্যবহার করা হবে তাদের ক্ষেত্রে সকল ধরনের খাবার গ্রহণ নিষেধ
এনজিওগ্রাম করার ঝুঁকি
- হেমাটো বা তকের নিচের রক্ত জমা হওয়া
- এরিতমিয়া বা অনিয়মিত হার্টবিট
- এলার্জি
- হার্ট এটাক ইন বা স্ট্রোক
- যাদের অনেক আগ থেকেই ফুসফুস কিংবা কিডনির সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এনজিওগ্রাম করার পর মৃত্যুর সামান্য সম্ভাবনা থাকে। এটি হাজারে একজনের ক্ষেত্রে হতে দেখা যায়
- কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে এক্সিডেন্ট এর কারণে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে
- কিংবা রেডিয়েশন এক্সরের কারণে পাংচার সাইডে রক্তক্ষরণ হতে পারে
- বয়স ৭০ এর বেশি হলে
বাংলাদেশের বিভিন্ন হসপিটালে এনজিওগ্রাম খরচ কত
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
গত ১৫ বছরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদরোগ বিভাগ ১০ হাজার হৃদয়ের এনজিওগ্রাম করেছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে বর্তমানে এনজিওগ্রাম করানো সরকারি খরচ মাত্র ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা। এর বাইরে ওষুধ খরচ বাবদ সাড়ে তিন হাজার টাকা লাগে। সবমিলিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা থেকে ৬ হাজার এর মধ্যে হাসপাতালে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে এনজিওগ্রাম করানো যায়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এনজিওগ্রাম খরচ কত
এনজিওগ্রাম করা, হার্টের যেকোনো সার্জারি বা চিকিৎসার জন্য ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশে অনেক পরিচিত। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে এনজিওগ্রাম করতে ১২ হাজার টাকার মতো লাগতে পারে। এখানে ওষুধের খরচ এবং টেস্ট সব মিলিয়ে .১২ হাজার খরচ হয়। খরচের পরিমাণ একটু বেশি হলেও হার্ট ফাউন্ডেশন হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য খুবই ভালো সেবা প্রদান করে।
বেসরকারি হাসপাতালে এনজিওগ্রাম খরচ
বাংলাদেশের বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা খরচ আকাশচুম্বি। এখানে চিকিৎসার মান ভালো হলেও খরচের পরিমাণটা অনেক বেশি হয়ে থাকে। মহানগরের বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে এনজিওগ্রাম করতে ১৫ থেকে ২0 হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে। রোগীরা এখন এনজিওগ্রাম করাতে বিদেশ যান না বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে উন্নত মানের যন্ত্র দিয়ে এনজিওগ্রাম করে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন এনজিওগ্রাম খরচ কত
বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে যেখানে খরচের কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এমনকি ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও এর খরচ কম বেশি হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন ধরনের এনজিওগ্রাম করতে বিভিন্ন ধরনের যে খরচটি হয় তার একটি ধারণা নিচে দেয়া হলো-
- Coronary angiogram -সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা
- Coronary Angio Scoring- ১৬ হাজার টাকা
- Cerebral Angiogram- ১১৫০০ টাকা
- Carotid Angiogram- ১১৫০০ টাকা
- Renal Angiogram- নয় হাজার টাকা
- Congenital Angiogram- ১৩ হাজার টাকা
- peripheral Angiogram- পনের হাজার টাকা
- peripheral Angiogram + Congenital Angiogram- ২৫ হাজার টাকা
এনজিওগ্রাম করার পর করণীয়
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
- শরীরের যে অঙ্গে এনজিওগ্রাম করা হয় সে অঙ্গ নড়াচড়া কম করা
- ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী সবগুলো ঔষধ নিয়মিত সেবন করা
- রোগী বেশি দুর্বল হলে হাসপাতালে এই অবস্থান করা
- এনজিওগ্রাম করার পর কোন সমস্যা দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে আলোচনা করা
এনজিওগ্রামের পর কখন ডাক্তার দেখানো উচিত
- বাহুবা কুঁচকিতে যদি ব্লিডিং হয়
- পেইনকিলার দেওয়ার পরেও যদি ক্যাথাটার সাইডে ব্যথা না কমে
- রোগীর ত্বক যদি লাল বা গরম হয়ে যায়
- ত্বকের উপর ইনফেকশন এর সম্ভাবনা দেখা যায়
- প্রসিডিউরের সময় যে বা পা ব্যবহার করা হয়েছে যদি তাতে টেম্পারেচার কম বা বেশি অনুভব করা হয়
মন্তব্য
আজকে আমরা বাংলাদেশ এনজিওগ্রাম খরচ কত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং এনজিওগ্রাম কি, কেন করা হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- ভারতে ক্যান্সারের ফ্রি চিকিৎসা
- ভারতে চিকিৎসা খরচ কেমন ২০২৩
- ভারতে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা খরচ ও ঠিকানা ২০২৩