পিরিয়ড দেরিতে হলে করনীয়
পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব একজন সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়ষ্ক নারীর শরীরের সাধারন একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই শারীরিক বিভিন্ন জটিলতার কারনে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি ব্যহত হয় যা একজন নারীর জন্য খুবই বড় সমস্যা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই অনিয়মিত ঋতুস্রাব কিছু জটিল রোগের সৃষ্টি করে। তাই একজন নারী হিসেবে আপনাকে প্রথম থেকে ই সচেতন থাকতে হবে। আজকে আমরা জানবো অনিয়মিত ঋতুস্রাব নিয়ে এবং পিরিয়ড দেরিতে হলে করনীয় সম্পতর্কে ও বিস্তারিত জানবো। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে আমাদের মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
‘পিরিয়ড দেরিতে হচ্ছে’ কখন বুঝবেন?
পিরিয়ড দেরিতে হলে করনীয় সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে জানতে হবে কখন আপনি বুঝবেন আপনার লেট পিরিয়ড বা দেরিতে মাসিক হচ্ছে। সাধারনত ১৩ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের ২৮ দিন পর পর পিরিয়ড হয়ে থাকে। আর এটা নরমাল প্রক্রিয়া। আবার ৭ দিন আগে বা পরে অর্থাৎ ২১ দিন অথবা ৩৫ দিন ব্যবধানে ও যদি নিয়মিত মাসিক হয় তাহলে ও নরমাল হিসেবে গন্য হবে।
তবে আপনার যদি ২১ দিনের কম বা ৩৫ দিনের বেশি সময় নিয়ে নিয়ে মাসিক হয় এবং তা ৩ দিনের কম বা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয় তাহলে তা অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড দেরিতে হচ্ছে বলে ধরে নেয়া হবে। তবে ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে মাসিক হলেই যে তা দেরিতে হচ্ছে বিষয়টা এমন নয়। মাঝে মাঝে সময় একটু কম বেশি হওয়া স্বাভাবিক তবে তা যদি লম্বা সময়ের জন্য হয় তাহলে অবশ্যই আশংকা জনক এবং আপনাকে এর কারন ও প্রতিকার খুজে বের করতে হবে।
আরো পড়ুন: গর্ভবতী হওয়ার কতদিন পর বমি হয়।
দেরিতে পিরিয়ড কেনো হয়?
আমাদের আজকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিলো পিরিয়ড দেরিতে হলে করনীয় নিয়ে। কিন্তু কারনীয় জানার আগে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে কি কি সম্ভাব্য কারনে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। তাহলে আপনি নিজেই নিজেই সম্ভাব্য কারন খুজে বের করতে পারবেন।চলুন তাহলে দেরিতে পিরিয়ড হওয়ার সম্ভাব্য কারন গুলো যেনে নেয়া যাক এবং তারপর আমরা জানবো এর থেকে প্রতিকার পাওয়ার উপায়।
গর্ভাবস্থা: একজন নারী যখন গর্ভবতী হয় তার শুধু শারীরিক বা মানসিক নয় হরমোনাল কিছু চেঞ্জ ও দেখা দেয়। হরমোনাল চেঞ্জ হচ্ছে শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রিত স্বাভাবিক পক্রিয়া কোন বিশেষ কারনে পরিবর্তন হওয়া। তাই গর্ভাবথায় একজন নারীর অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ও পাওয়ারফুল ঔষধ সেবনের কারনে ও স্বাভাবিক পিরিয়ডের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
ওজন বৃদ্ধি: বর্তমানে এটা গবেষনার প্রমানিত স্থুলতা ও নারীদের স্বাভাবিক পিরিয়ডের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারনত নারীদের বাচ্চা গ্রহনের পর শরীরে কিছুটা মেদ জমে। ওজন নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে এই স্থুলতা পরবর্তীতে বড় সমস্যা সৃষ্টি কর। তাই ওজন নিয়ন্ত্রন রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।
হঠাত ওজন কমিয়ে ফেলা: বর্তমানে আমাদের দেশে জোর করে স্বাস্থ কমানোর একটা অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা চলছে। সুন্দর দেখানোর জন্য অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর উপায়ে জোর করে অনেক নারী স্বাস্থ্য কমানোর চেষ্টা করেন। জোর করে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে স্বাস্থ্য কমাতে গেলে অনেক সময় শরিরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আর স্বাভাবিক পিরিয়ড কি বিঘ্নিত করে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ: মানসিক প্রশান্তি যেকোন মানুষের জীবনক্রিয়া চালানোর জন্য খুবই প্রয়োজন। অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে নারীদের হরমোনাল স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। অর্থাৎ স্বাভাবিক পিরিয়ড সহ সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই মানসিকভাবে নিজেকে টেনশন ফ্রি রাখতে হবে।
বয়সের কারনে: সাধারনত ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সে মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয় এবং ৫৫ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। কিন্তু অনেক সময় কিশোর বয়সে অর্থাৎ মাসিক শুরু হওয়ার পর পর ই অনিয়মিত পিরিয়ড দেখা দিতে পারে এক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই। বয়সের সাথে সাথে এটা ঠিক হয়ে যাবে।
জন্মনিয়ন্ত্রনের বড়ি সেবনের ফলে: বর্ত্মানে বিশ্বে জন্ম নিয়ন্ত্রনের হিড়িক পড়েছে। নানা রকম ব্যবস্থা আবিষ্কার হয়েছে যা শরিরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে ব্জন্ম নিয়ন্ত্রন করে। জন্মনিয়ন্ত্রনের বড়ি কিংবা যেকোন ঔষধ লম্বা সময়ের জন্য সেবনের ফলে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।
এছাড়াও কিছু কমন সমস্যা নিচে দেয়া হলো:
- থাইরয়েডের প্রব্লেম থাকলে।
- যেসব মায়েরা বাচ্চাদের দুধ পান করান।
- জরাইয়ূতে টিউমার থাকলে।
- অতিনিদ্রা ও অনিদ্রার সমস্যা থাকলে।
- অপুষ্টিজনিত সমস্যা থাকলে।
- পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত ও অসহ্য ব্যথা হলে।
আরো পড়ুন: ব্রেস্ট টিউমার কী, ব্রেস্ট টিউমারের লক্ষণ, চেনার উপায় ও করনীয়
পিরিয়ড দেরিতে হলে করনীয়
এতক্ষন আমরা জানলাম পিরিয়ড কি, স্বাভাবিক পিরিয়ড কি পিরিয়ড দেরিতে কেনো হয়। এখন আমরা জানবো পিরিয়ড দেরিতে হলে করনীয় কি?
পিরিয়ড দেরিতে হলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে মূলত আপনার সমস্যা কি অর্থাৎ ঠিক কি কারনে আপনার সমস্যা হচ্ছে। উপরে আমরা পিরিয়ড দেরিতে হওয়ার কিছু কারন ব্যাখ্যা করেছিলাম। যদি প্রাথমিক অবস্থায় আপনি নিজে খুজে বের করতে পারেন ঠিক কি কারনে আপনার অনিয়মিত পিরিয়ড হচ্ছে তাহলে নিজে ই সেহিসেবে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তবে বেশিরভাগ সময় নিজে নিজে সমস্যা খুজে বের করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই একজন ভালো স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।
আরো পড়ুন: অনলাইনে গামকা মেডিকেল রিপোর্ট চেক
শেষ কথা: পিরিয়ড দেরিতে হলে করনীয়
আমাদের দেশে সমাজ ব্যবস্থা কিছুটা কঠিন হওয়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা তাদের এই সমস্যা অভিজ্ঞ কারো সাথে শেয়ার করতে লজ্জা পায় যা পরবর্তীতে বড় সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই এইধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে লজ্জা বাদ দিয়ে অবশ্যই অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা ডাক্তারের কাছে পরামর্শের জন্য যেতে হবে। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত এখানে শেষ করছি। ধন্যবাদ