৬ দফা গুলো কি কি, ছয় দফা মনে রাখার কৌশল

ছয় দফা মনে রাখার কৌশল

বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা হলো ছয় দফা আন্দোলন। ১৯৬৬ সালের ৫৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্য শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই ছয় দফা দাবি পেশ করেন।

বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষার জন্য অথবা জানার জন্য অনেকে ছয় দফা দাবি ও ছয় দফা মনে রাখার কৌশল সম্পর্কে গুগলে সার্চ করে থাকেন। তাদের জন্য আজকে আমরা ৬ দফা গুলো কি কি এবং ছয় দফা মনে রাখার কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।

আরো পড়ুন – সকল গুরুত্বপূর্ন পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ২০২৩

ছয় দফা দাবি কি?

৬ দফা দাবি হলো বাঙালি জাতির জন্য ঐতিহাসিক একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্য শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ছয় দফা দাবি পেশ করেন। ইতিহাসে এই ছয় দফা কে ৬ দফা আন্দোলন বলা হয়।

বাংলাদেশের জন্য এ আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনাকার্টা বা বাংলা জাতির মুক্তির সনদও বলা হয়ে থাকে। প্রতিবছর ৭ই জুন বাংলাদেশে ছয় দফা দিবস পালন করা হয়।

আরো পড়ুন – কম খরচে ঢাকার আশেপাশে রিসোর্ট তালিকা

৬ দফার ইতিহাস

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্ব শেষ হবার পর পাকিস্তান নামে একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব পাকিস্তান যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ নাম ধারণ করে তার সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রপ্তানি হত পূর্ব পাকিস্তান থেকে। তবে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্থনীতির সুবিধা অনুপাতিক হারে কম ছিল। পাকিস্তান আঞ্চলিক ভিত্তিতে ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হওয়ায় গুরুতর পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে হয়।

এর ফলে অর্থনীতিবিদ বুদ্ধিজীবী এবং পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা বৈষম্য সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে এবং এই ঐতিহাসিক ছয় দফা প্রদান করে। ছয় দফা আন্দোলনের নেতৃত্ব ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান যিনি পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা। এটি এমন একটি রাজনৈতিক দল যা ১৯৪৯ সালে বাঙালি অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

আন্দোলন পাকিস্তান সরকারের প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল। এ আন্দোলন কে সরকার পাকিস্তানের ঐক্যের বীরোধীতার জন্য বিক্ষোভকারীদের উপর বিভিন্নভাবে হামলা করা হয়। অনেক লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছিল। ছয় দফা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাস একটি টারনিং পয়েন্টে। বাঙালি জনগণকে তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং অবশেষে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার জন্য বাঙালি জাতিকে অনুপ্রেরিত করেছিল।

আন্দোলনটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি স্থাপন করা এবং মানবাধিকার অসামাজিক ন্যায় বিচারের প্রতি অঙ্গীকারের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

আরো পড়ুন – পুরান ঢাকায় ঘোরার জায়গা ও বিখ্যাত খাবার

ছয় দফা দাবি সমূহ

ছয় দফার দাবি নিচে তুলে ধরা হলো। ছয় দফার দাবিগুলো জানলেই ছয় দফা দাবি মনে রাখার কৌশল জানা যাবে।

১। শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

২। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

৩। মুদ্রা বা অর্থ সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

৪। রাজস্ব কর বা শুল্ক সম্বন্ধেও ক্ষমতা

৫। বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

৬। আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

৬ দফার দাবি গুলোর ব্যাখ্যা

সায়ত্তশাসন- ৬ দফা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বৃহত্তর সায়ত্তশাসনের দাবি করেছিল। যা তখন পাকিস্তানের একটি বিরাট অংশ ছিল। আন্দোলনটি দুটি স্বায়ত্তশাস্ত রাজ্য একটি পূর্বে পশ্চিমে একটি ফেডারেল সরকার গঠনের আহ্বান জানায়।

ফেডারেলিজম- আন্দোলনটি একটি উপযুক্ত রাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা আহ্বান জানায় যা পাকিস্তানের প্রদেশগুলোকে সায়ত্তশাসন প্রদান করবে এবং আন্দোলনের যুক্তি ছিল যে পশ্চিম পাকিস্তান একটি কেন্দ্রীভূত সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের চাহিদা আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করছে।

ভাষা- ছয় দফা দাবি আন্দোলনের উর্দুর সমান বাংলাকে পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। আন্দোলনে যুক্তি ছিল যে বাংলা পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার দ্বারা কথ্য ভাষা। তাই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী দ্বারা দমন করা হচ্ছে।

রাজস্ব- ৬ দফা আন্দোলনের দাবি ছিল যে কর এবং রাজস্ব সহ প্রদেশগুলো নিজস্ব সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। আন্দোলনে যুক্তি ছিল যে পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার অন্যায় ভাবে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ শোষণ ও ক্ষমতা দখল করছে।

বৈদেশিক সম্পর্ক- ছয় দফা আন্দোলনের দাবি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব বৈদেশিক নীতি পরিচালনার অধিকার থাকা উচিত। কেননা পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার একটি পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করছে যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থে নয়।

প্রতিরক্ষা- ৬ দফা আন্দোলন মূল উদ্দেশ্য ছিল যে পূর্ব পাকিস্তানের সীমানা রক্ষার জন্য নিজস্ব সামরিক বাহিনী থাকা উচিত এবং আন্দোলনের যুক্তি ছিল যে পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চাহিদাকে উপেক্ষা করছে।

আরো পড়ুন – কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ ও অপারেশন খরচ ২০২৩

ছয় দফা মনে রাখার কৌশল

ছয় দফা মনে রাখার কৌশল জানলে খুব সহজে সবসময় ৬ দফা মনে রাখা সম্ভব।  নিচে ছয় দফা মনে রাখার কৌশল উল্লেখ করা হল-

কৌশল মন্ত্র- শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বলে মুদ্রা রাজস্ব বৈদেশিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের প্রয়োজন।

কৌশলের ব্যাখ্যা-

শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য = শাসনতন্ত্রে কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বলে = কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

মুদ্রা = মুদ্রা বা অর্থ সম্বন্ধেও ক্ষমতা

রাজস্ব = রাজস্ব কর বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

বৈদেশিক বাণিজ্য = বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের = আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

ছয় দফা আন্দোলনের উদ্দেশ্য

  • পাকিস্তান সংবিধান ফেডারেল হওয়া উচিত এবং প্রদেশগুলো সাহিত্য শাসনের বৃহত্তর ডিগ্রি থাকা উচিত।
  • দেশের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়ক দায়ভার শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারেরই থাকা উচিত।
  • প্রতিটি প্রদেশের তার কর্ধার্য আদায় এর অধিকার থাকতে হবে।
  • ফেডারেল সরকারের তাদের সম্মতি ছাড়া প্রদেশের উপর কোন কর আরবের ক্ষমতা থাকা উচিত নয়।
  • পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব মুদ্রা থাকা উচিত।
  • পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রহীত রাজস্ব পূর্ব পাকিস্তানের থাকতে হবে।

ছয় দফা সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর

১। ছয় দফা দাবি কে উত্থাপন করেন?

উত্তর- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান করেন।

২। ছয় দফা দাবি প্রথম কোথায় উত্থাপিত হয়?

উত্তর- ছয় দফা দাবি প্রথম পাকিস্তানের লাহোরি অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে উত্থাপিত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

৩। ছয় দফা দাবি প্রথম কবে পালিত হয়?

উত্তর- প্রতিবছর ৭ ই জুন বাংলাদেশে ৬ দফা দিবস পালিত হয়।

৪। ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তি কি ছিল?

উত্তর- ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তি ছিল ১৯৪০ সালে।

৫। ৬ দফার প্রথম দফাটি কি সম্পর্কিত ছিল?

উত্তর- ছয় দফার প্রথম দফা ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কিত।

৬। পূর্ব বাংলার মুক্তির সনদ বলা হয় কোনটিকে?

উত্তর- পূর্ব বাংলার মুক্তি সনদ বলা হয় ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি বা কর্মসূচিকে।

৭। ছয় দফা আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে?

উত্তর- ছয় দফা আন্দোলনের প্রথম শহীদ হলো শহীদ মনু মিয়া।

৮। ছয় দফা উপলক্ষে লিখিত পুস্তিকার নাম কি?

উত্তর- ছয় দফা উপলক্ষে লিখিত পুস্তিকার নাম হচ্ছে আমাদের বাচার দাবি ৬ দফা কর্মসূচি।

৯। কোন দফা কে ম্যাগনাকার্টা বলা হয়?

উত্তর- ৬ দফা কে বলা হয় ।

১০। ৬ দফা আন্দোলন কত সালে হয়?

উত্তর- ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৬ সালে সংঘটিত হয়।

ছয় দফা মনে রাখার কৌশল

মন্তব্য

আজকে আমরা ছয় দফা দাবি গুলো কি কি এবং ছয় দফা মনে রাখার কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

প্রতিদিন বিভিন্ন আপডেট নিউজ পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।

আরো পড়ুন – 

Easy Teching

ইজি টেকিং - একটি বাংলা ব্লগিং প্লাটফর্ম। এখানে বাংলা ভাষায় শিক্ষা ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন জানা-অজানা তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাংলা ভাষায় সবার মাঝে সঠিক তথ্য পৌছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।

Leave a Reply