১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশে বিভিন্ন দেশে প্রচলিত ঈদের নামাজ পড়া হয় ওয়াজিব নিয়তে এবং ছয় তাকবীরে কিন্তু এর পুরোটাই ভুল। সহিহ হাদিস অনুযায়ী ঈদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং তা ১২ তাকবীর। নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম নামাজ শিক্ষা দেন রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম স্বেচ্ছায় কিছুই বলেন না বরং যা কিছু বলেন তার সমস্ত হচ্ছে আল্লাহর ওহী।
ঈদের নামাজ ও আল্লাহর ওহী ছাড়া আর কিছুই নয়।১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম অনেকেই জানতে চান। আজকে আমরা ১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি ১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – ঈদ আপডেট মেহেদি ডিজাইন ২০২৩
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার হাদিস
ছয়টি হাদিস গ্রন্থের মধ্যে বুখারী মুসলিম ও নাসাঈতে ঈদের তাকবীর সম্পর্কে কোন হাদিস পাওয়া যায়নি। তবে বাকি তিনটি গ্রন্থে অর্থাৎ আবু দাউদ ইবনে মাজাহ ও নিজামীতে ১৫ টি হাদিস বর্ণিত রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম প্রথম রাকাতে ৭ ও দ্বিতীয় রাকাতে ৫ এই বারো তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়েছেন।
১২তাকবীর সংক্রান্ত এই ১৩ টি হাদিসের মধ্যে তিনটি হাদিস হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু কর্তিক বর্ণিত এবং দুইটি হাদিস হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু কর্তৃক বর্ণিত।
আরো পড়ুন – রমজানের ইসলামিক স্ট্যাটাস 2023
ঈদের নামাজ পড়ার পূর্ব শর্ত
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম আমরা নিচে আলোচনা করেছি। তবে ঈদের নামাজ পড়ার পূর্বশর্ত কি তা নিচে উল্লেখ করা হল-
১। ঈদের নামাজের জন্য জামাত সবচেয়ে বড় শর্ত
২। উন্মুক্ত স্থান মসজিদ ছাড় নিযুক্ত জায়গা বা বাসা বাড়ি যেখানেই হোক না কেন অবশ্যই জামাতের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে
৩। শুধু আজান ও ইকামত ছাড়া জুমার নামাজের জন্য যেসব শর্ত প্রয়োজন ঈদের জন্য নামাজের জন্য সেসব শর্ত প্রয়োজন
৪। জামাত ছাড়া যেমন ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে না তেমনি বাসাবাড়িতে ঈদের নামাজ আদায় করতে হলেও অবশ্যই জামাতের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।
৫। ঈদের নামাজের আজান ও ইকামত নেই।
৬। তবে জুমার নামাজের মতই উচ্চ আওয়াজে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়।
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজের নিয়ত
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম জানার আগে ঈদের নামাজের নিয়ত সম্পর্কে জানতে হবে। নিয়ত হল-
“ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সঙ্গে এই ইমামের পিছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি আল্লাহু আকবার”
তবে সাধারণত নামাজের কোন নিয়ত নেই। নামাজের নিয়ত মনে মনে রেখে নামাজে হাত বাধতে হয়।
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম নিচে সহজ ভাবে বিস্তারিত তুলে ধরা হল-
১ম রাকাআত
১। ইমামের সঙ্গে তাকবীরে তাহরীমা আল্লাহু আকবার বলে উভয় হাত বাঁধা।
২। তাকবীরে তাহরিমার পর ছানা পড়া
৩। এরপর অতিরিক্ত সাত তাকবীর দেওয়া
৪। তাকবীর একটি থেকে আরেকটার মধ্যে তিন তাসবিহ পরিমাণ সমান বিরত থাকা
৫। এরপর প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া তৃতীয় তাকবীর সহ সাত তাকবীর দিয়ে উভয় হাত তাকবীরে তাহরীমার মত বেঁধে নিতে হয়।
৬। আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়া
৭। সূরা ফাতিহা পড়া
৮। সুরা ফাতিয়ার পর সূরা মিলানো
৯। এরপর নিয়মিত নামাজের মত রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।
দ্বিতীয় রাকাত
১। বিসমিল্লা পড়া
২। সুরা ফাতেহা পড়া
৩। সুরা ফাতিহার পর সূরা মিলানো
৪। সূরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৫ তাকবীর দেওয়া
৫। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবীরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া
৬। এভাবে ৫ তাকবীর দিয়ে উভয় হাত তাকবীরে তাহরিমার মত বেঁধে নিতে হয়
৭। এরপর উপর তাকবীর দিয়ে রুকুতে যাওয়া
৮। সেজদা আদায় করা
৯। বৈঠকে বসা হতাশাহুদ দুয়ায়ে মাসুরা পড়ে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা
১০। নামাজ সালাম ফেরানোর পর তাকবির পড়া
১১। নামাজের পর ইমাম সাহেবের দুইটি খুতবা দেওয়া
ইদের নামাজের অতিরিক্ত তাকবীর
অতিরিক্ত তাকবীরের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাযহাব সহ অনেকেই প্রথম রাকাতেই তাকবীরে তাহরীমা সহ সাত তাকবীর আর দ্বিতীয় রাকাতে ৫ তাকবীর দিয়ে থাকেন। যদি কেউ অতিরিক্ত হয়ে তাকবীর দেয় কিংবা অতিরিক্ত এগারো তাকবীর দেয় তাতে নামাজের অসুবিধা হবে না বরং তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে।
ঈদের জামাত সম্পর্কিত মাসআলা
১। সম্ভব হলে একই এলাকার সবাই একই স্থানে একত্রে ঈদের নামাজ পড়া উত্তম তবে যে কোন জায়গায় পড়াও জায়েজ।
২। ইদের নামাজ পড়তে না পারলে কিংবা নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে তার কাজা করতে হবে না।
৩। যেহেতু ঈদের নামাজের জন্য জামাত শর্ত। তবে বেশ কিছু লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে তারা অন্য একজনকে ঈমাম বানিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন।
৪। শাওয়াল মাসের ১ তারিখ দ্বিপ্রহরের পূর্বে শরীয়ত সম্মত কোন কারণে ঈদের নামাজ পড়তে না পারলে শাওয়ালের দুই তারিখে পড়ার অনুমতি আছে।
৫। কেউ ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পেলে সালামের পর যখনই ওই ব্যক্তি ছুটে যাওয়ার রাকাতের অর্থাৎ প্রথম রাকাতের জন্য দাঁড়াবে তখন প্রথমে সানা তারপর আউজুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা ফাতেহা পড়ার পর রুকুর পূর্বে তাকবির বলবে। সুরা ফাতেহার আগে নয়।
৬। যদি কোন লোক ইমাম সাহেব কে তাকবীর শেষ হওয়ার পরে পায় সে তাকবীরে তাহরীমা বেধে প্রথমে ওয়াজিব তিন তাকবীর বলে নিবে আর রুকুতে পেলে যদি দৃঢ় বিশ্বাস হয় যে তাকবীর বলে ইমাম কে রুখতে পারবে তাহলে তাহারিমা বেঁধে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলে নেবে।
৭। তারপর রুকুতে যাবে আর দাঁড়িয়ে থাকবে পড়তে পড়তে ইমাম সাহেবকে রুকুতে না যাবার সম্ভাবনা থাকলে তাহারিমা বেঁধে রুকুতে চলে যাবে এবং রুকুর তাজবিহ না বলে প্রথমে তাকবীর বলে নেবে। রুকুতে তাকবীর বলার সময় হাত উঠাবে এবং সময় পেলে রুকুর তাসবি পড়বে না পেলে পড়বে না।
আর থাকবে শেষ করার পূর্বেই যদি সেজদাহ থেকে মাথা তুলে ফেলেন তাহলে মুক্তাদিও তুলে ফেলবে তাকবীর বাকি থাকলে তা ক্ষমার যোগ্য।
ঈদের নামাজের সুন্নত সমূহ
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম এর পাশাপাশি ঈদের নামাজের সুন্নত সমূহ সবারই জানা উচিত। যেহেতু আমরা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উম্মত তার সুন্নত পালন করা আমাদের জন্য কর্তব্য-
- জিলহজ মাসের ১০ দিন তাকবীর দেওয়া
- ঈদের দিন মুসল্লিদের জন্য তাড়াতাড়ি যাওয়া সুন্নত
- ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে গমন করা অন্য রাস্তা দিয়ে আসা
- সুন্দর পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা
- মহিলারা তাদের ঘরে সৌন্দর্য প্রকাশ করা
- ঈদুল আযহার সালাত আগে পড়া
- ঈদুল ফিতরের সালাত দেরি করে পড়া সুন্নত
- ঈদুল ফিতরের সালাতের আগে বিজোড় সংখ্যা খেজুর খাওয়া
- আর ঈদুল আযহার সালাতের আগে কিছু না খেয়ে কোরবানির গোশত দিয়ে খাওয়া সুন্নত
ঈদের সময় করণীয়
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম কি তা জানার পাশাপাশি ঈদের সময় কোন কোন কাজ করা উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা উচিত। নিচে উল্লেখ করা হল-
- ঈদের সময় মুসলমানদের মাঝে পরস্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করা মুস্তাহাব
- ঈদে আনন্দিত হওয়া এবং আনন্দ প্রকাশ করা মুস্তাহাব
- আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব ও মুসলিম ভাই দের শুভেচ্ছা বিনিময় করা ও মুস্তাহাব
- ঈদ একটি সুযোগ যার আত্মীয়তার সম্পর্ক জোড়া লাগে এবং যাদের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে তাদেরকে মিলিয়ে দেয়ার সর্বোত্তম সময়
- ঈদে কবর জিয়ারত করা শরীয়ত সম্মত নয়
- ঈদের পরিবারের জন্য সদস্যদের জন্য ভালো খাবার ও কাপড় চোপড় বৈধ বিনোদনে ব্যবস্থা করা জায়েজ
ঈদের নামাজের খুতবা
ঈদের নামাজে ইমাম দ্বারা খুতবা পড়া সুন্নত এবং মুসল্লীদের খুতবা শুনা ওয়াজিব। জুমার নামাজের মত প্রথমে বিষয়ভিত্তিক খুতবা এবং পরে দ্বিতীয় খুতবা পাঠ করতে হয়। খুতবা এর মাধ্যমে নামাজের সমাপ্তি হয় এবং সাধারণত খুতবার পরে দোয়া করা হয়।
ঈদের নামাজ পড়ার সঠিক সময়
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এখন আমরা ঈদের নামাজ পড়া সঠিক সময় সম্পর্কে জানব। সূর্য উদিত হয়ে এক বর্ষা অর্থাৎ অর্ধহাদ পরিমান অজু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত ঈদের নামাজের সময় থাকে।
তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত যেন নামাজের আগেই বেশি বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে যায়।
ঈদের নামাজ নিয়ে জিজ্ঞাসা
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা জেনেছি এখন আমরা ইদের নামাজ নিয়ে কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর নিয়ে আলোচনা করব-
১। ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব না ফরজ?
উত্তর- ঈদের নামাজ ওয়াজিব।
২। ঈদুল ফিতরের নামাজ কত রাকাত?
উত্তর- ঈদুল ফিতরের নামাজ দুই রাকাত।
৩। ঈদের নামাজ কি ফরজ?
উত্তর- ইদের নামাজ ওয়াজিব হিসেবে মুমিনদের উপর দেয়া হয়েছে।
৪। নারীদের ইদের নামাজ ফরজ?
উত্তর- নারীদের ইদের নামাজ ফরজ নয়।
৫। ঈদের নামাজে অতিরিক্ত তাকবীর কয়টা দিতে হয়?
উত্তর- ইদের নামাজ অতিরিক্ত তাকবীর কমপক্ষে ছয়টি তবে মতান্তরে ১২ টি দেওয়া যায়।
৬। ঈদুল ফিতরের নামাজ সুন্নত নামাজ এর সত্যতা কি?
উত্তর- ঈদের নামাজ সুন্নত নাকি ওয়াজিবের নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতবাদ আছে। তবে বিশুদ্ধ হচ্ছে ঈদের নামাজ ওয়াজিব। ঈদের নামাজ সুন্নত না।
৭। ঈদের নামাজ আগে রোজা রাখা কি বাধ্যতামূলক কিনা?
উত্তর- প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ যাদের উপর রোজা ফরজ তাদের অবশ্যই রমজানে রোজা রাখতে হবে। কারণ রোজা হচ্ছে ফরজ ইবাদতের রমজান মাসের রোজা ফরজ আর ঈদের নামাজ ওয়াজিব একটি একটি সাথে অন্যটি সম্পর্কিত না।
মন্তব্য
আজকে আমরা ১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি ১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন।
এবং ১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোন মন্তব্য অথবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরো পড়ুন –
- ঈদ আপডেট মেহেদি ডিজাইন ২০২৩
- ঈদ নিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস ২০২৩, ঈদুল ফিতর শুভেচ্ছা উক্তি
- ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম – মহিলাদের ঈদের নামাজের বিধান ২০২৩