১ ভরিতে কত গ্রাম
গহনা নারীর সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। আর সেটা যদি হয় স্বর্ণের গহনা তাহলে তো কথাই নেই। গহনা কিনতে অনেকেই ১ ভরিতে কত গ্রাম বা স্বর্ণের হিসাব সম্পর্কে জানেন না। আমরা তাদের জন্যই ১ ভরিতে কত গ্রাম বা স্বর্ণের বিভিন্ন দেশীয় বা আন্তর্জাতিক হিসাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।
আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লাগবে।
এক ভরিতে কত গ্রাম হয়?
এক ভরিতে সাধারণত আনার হিসেব করলে ১৬ আনা হয়। রত্তির হিসেব করলে ৯৬ রত্তি এবং গ্রাম হিসেব করলে ১ গ্রাম= ১১.৬৬ গ্রাম হয়ে থাকে। আমাদের দেশে বেশিরভাগ এক ভরিতে ষোল আনা হিসেবে মানুষ বেশি ব্যবহার করে।
আবার এক ভরিতে ০.৪১১৪৩ আউন্স হয় হয়ে থাকে যা আন্তর্জাতিক গোল্ডের পরিমাপ। দেশের বাইরে থেকে কিনতে গেলে এভাবেই গোল্ড কিনতে হয়।
গোল্ডেন হিসাব কিভাবে করবেন?
অনেকেই গোল্ড কিভাবে কিনতে হয় সেই হিসাব জানেনা। সহজেই আমরা গোল্ডের হিসাব বুঝিয়ে দিচ্ছি-
এক ভরি = ১১.৬৬৪ গ্রাম
ষোল আনা = এক ভরি
এক ভরি = ৯৬ রত্তি
এক ভরি = ৯৬০ পয়েন্ট
একা আনা = ৬ রত্তি
একরতি = ১০ পয়েন্ট
৮ আনা = ৫.৮৩২ গ্রাম
১৪ আনা = ১০.২০৬ গ্রাম
স্বর্ণের আন্তর্জাতিক হিসাব
দেশে যেমন স্বর্ণের হিসেব আনা বা ভরি হিসাব করা হয় তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে গোল্ডের পরিমাপ হল-
১ আউন্স সমান= ২.৪৩০৫ ভরি
১ আউন্স সমান= ২৮.৩৪৯৫ গ্রাম
এক ভরি সমান= 0.৪১১৪৩ আউন্স
এক ভরি সমান= ১১.৬৬ গ্রাম
ক্যারেট অনুযায়ী স্বর্ণের পিউরিটি
আমরা অনেকেই গোল্ডের গহনা ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু কোন ক্যারেটের গোল্ড কতটা খাঁটি বা কোন ক্যারাটের সাথে কতটা খাত মিশানো হয় সে সম্পর্কে আমরা জানি না। নিচে ক্যারেট অনুযায়ী গোল্ডের পিউরিটি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-
২৪ ক্যারেট সমান= ৯৯.৯৯% পিওর
২২ ক্যারেট= ৯১.৬০% পিওর
২১ ক্যারেট= ৮৭.৫০ পার্সেন্ট পিওর
১৮ ক্যারেট= ৭৫.০০ ০০% পিওর
১৪ ক্যারেট= ৫৮.৫% পিওর
দশ ক্যারেট= ৪১.৭% পিওর
সনাতন গোল্ড= পিউরিটির কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই
কোন কোন দেশে স্বর্ণের দাম কম
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সোনার দাম বিভিন্ন হয়। মূলত যেখানে সোনার খনি রয়েছে অথবা সোনা আমদানি খরচ কম সেসব দেশগুলোতে সোনার দাম তুলনামূলক হারে কম। বর্তমানে সোনার দামের হার বিবেচনা করলে হংকং এবং ভারতের কেরালাতে সোনার দাম কম। তবে হংকং ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সস্তায় স্বর্ণ কিনা যায়।
নিচে কোন কোন দেশের গোল্ডের দাম কম তা উল্লেখ করা হল-
- আরব আমিরাত
- সৌদি আরব
- ওমান
- কুয়েত
- ভারতের দক্ষিণ প্রদেশ সমূহ
- কাতার
রেগুলার ব্যবহারের জন্য কোন ধরনের স্বর্ণ ভালো
সাধারণত বাজারে বিভিন্ন সোনার ক্যারেটের জিনিস পাওয়া যায়। অথবা অনেকে বিভিন্ন ক্যারেট দিয়ে জিনিস তৈরি করেন। তবে কোন ধরনের স্বর্ণ রেগুলার ব্যবহারের জন্য ভালো তা অনেকেই জানেন না। সাধারণত ২২ ক্যারেট ও ২৪ ক্যারেট গোল্ড এ গালার পরিমাণ কম থাকে।
যার ফলে ভেঙ্গে যায় বা ক্ষয় হয়ে যায়। এবং বাঁকা হয়ে যায় বেশি। সেক্ষেত্রে একুশ ক্যারেট এবং ১৮ ক্যারেট সোনা রেগুলার ব্যবহারের জন্য ভালো। ১ ভরিতে কত গ্রাম হয় তা তো আমরা জানলাম কোন ধরনের স্বর্ন সবসময় ব্যবহারের জন্য ভালো।
খাঁটি স্বর্ণ বা ভালো স্বর্ণ চেনার উপায়
মূলত স্বর্ণ খাঁটি না কি লোহা মেশানো থাকে তা বিভিন্ন মাধ্যমে পরীক্ষা করলেই বুঝতে পারা যায়। বর্তমানে ঘরোয়া ভাবেই ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় জানা যায়। ভালো স্বর্ন চেনার উপায় জানতে হবে-
চুম্বক- ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে চুম্বক অন্যতম। লোহা মেশানো স্বর্ণে যদি সলিড গোল্ড মিশিয়ে লোহার মেশানো হয় তাহলে চুম্বক ধরলেই সেটা টেনে নেবে মেশানো আছে কিনা তার চুম্বক ব্যবহার করে অবশ্যই পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত
সাদা চিনেমাটির প্লেট- একটি সাদা সিনেমাটি প্লেটের সাহায্যেই খাঁটি স্বর্ণ বা ভালো স্বর্ণ যাচাই করতে সহজ হয়। স্বর্ণের গয়না চিনেমাটির প্লেটে ঘষে দেখতে হবে। যদি থালার উপর কালো দাগ পড়ে তাহলে বুঝতে হবে এই স্বর্ণের জিনিস নকল। আর যদি হালকা সোনালী রং পড়ে তাহলে বুঝতে হবে সেটি আসল গোল্ড।
রাসায়নিক ও এসিড- বাজারে এমন অনেক ধরনের রাসায়নিক এবং এসিড রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে স্বর্ণের গুণগত মান যাচাই করা সম্ভব। স্বর্ণ ভালো নাকি খারাপ এবং সলিড কিনা তার রাসায়নিক ও এসিডের মাধ্যমে পরীক্ষা করা যায়। রাসায়নিক বা এসিড সলিড স্বর্ণের স্পর্শে এলে কোনরকম বিক্রিয়া ঘটেনা।
দুই গ্লাস পানি- একটি গভীর পাত্রের মধ্যে দুই গ্লাস পানি মেপে নিতে হবে। তার এই পানির মধ্যে বাজার থেকে কিনে আনা সোনার গয়না গুলো ফেলে রাখতে হবে। যদি দেখা যায় গয়নাগুলো ভাসছে তাহলে বুঝতে হবে সেটি নকল। খাঁটি গয়না ভারী হয় যা কিনা পানির উপরে ভাসে না।
দাঁত দিয়ে পরীক্ষা- ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে একটি সহজ এবং অন্যতম হল দাঁত দিয়ে পরীক্ষা করা। বাজার থেকে কিনে আনা যে কোন গোল্ডের গয়নাতে হালকা কামড় দিয়ে ধরে রাখতে হবে। যদি তা আসল বা খাঁটি সোনার গহনা হয় তাহলে স্বর্ণের গহনার উপর কামড়ানোর হালকা দাগ পড়বে। কেননা খাঁটি স্বর্ণ সবসময় নরম হয়।
ঘাম- শরীরের ঘামের সংস্পর্শে এলে আসল গোল্ড কখনো ঘামের গন্ধ ধরে না। যদি গহনা থেকে ঘামের গন্ধ আসে তাহলে বুঝতে হবে স্বর্ণের গহনাতে অন্য কোন ধাতু বা খাত মেশানো আছে।
ভিনেগার- ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম উপায় হল ভিনেগার দিয়ে স্বর্ণের জিনিস পরীক্ষা করা। বাজার থেকে কিনে আনা সোনার গহনার উপরে কয়েক ফোঁটা ভিনেগার দিতে হবে।গহনায় ভেজাল থাকলে রং পরিবর্তন হবে। তবে খাঁটি গোল্ড হলে সেটা রং কখনোই পরিবর্তন হবে না।
নাইট্রিক অ্যাসিডের ব্যবহার- সাধারণত নাইট্রিক এসিড সোনার সঙ্গে কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না। কিন্তু এটি অন্য ধাতুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে। ড্রপারের সাহায্যে কয়েক ফোটা নাইট্রিক এসিড গোল্ড এর উপর ফেললে যদি রং পরিবর্তন না হয় তাহলে বুঝতে হবে কেনা স্বর্ণটি খাটি। কিন্তু যদি ধাতুর রং বদলে সবুজ আস্তর পড়ে, তবে বুঝতে হবে এটি খাঁটি গোল্ড নয় এর সঙ্গে তামা বা ব্রোঞ্জ মেশানো আছে।
হলমার্ক দেখে কেনা- স্বর্ণ চেনার বর্তমানে সবচেয়ে আধুনিক এবং সহজ উপায় হল হলমার্ক দেখে কিনা। ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। গয়না কেনার সময় থাকা হলমার্ক চিহ্ন অবশ্যই দেখে নিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গয়নার ভেতর দিকে হলমার্কের চিহ্নগুলো দেওয়া থাকে। ক্যারেট অনুযায়ী ২২, ২৪,১৮ নাম্বার গুলি লেখা থাকে। এক্ষেত্রে .২২ এবং ২৪ ক্যারেটের স্বর্ণ সবচেয়ে ভালো।
কষ্টিপাথর- সাধারণত স্বর্ণের দোকানদাররা স্বর্ণের জিনিসের সত্যতা যাচাই করার জন্য এই পাথর ব্যবহার করে থাকে। এই কুষ্টিপাথরে স্বর্ণের জিনিস ঘষে পরীক্ষা করেন আসল নাকি নকল। কিন্তু এই কষ্টিপাথর সবার কাছে না থাকায় ঘরোয়া উপায়ে স্বর্ণ আসল নাকি নকল বা ভালো স্বর্ণ চেনার উপায় বের করা যায়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গোল্ডের দাম ভিন্ন হবার কারন
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় গোল্ডের দাম সাধারণত বিভিন্ন হয়ে থাকে। একেক এলাকায় মানুষের গোল্ডের ব্যবহারের চাহিদা একেক রকম। কোন কোন এলাকায় সনাতন গোল্ডকেও ক্যারেটের গোল্ড হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়। এতে কমদামি গোল্ড কে অনেক দামে বিক্রি করা হয়।
তবে অনেক ক্ষেত্রে ছোট দোকানগুলো কম লাভে গোল্ড বিক্রি করে থাকে।
হলমার্ক করা স্বর্ণ চেনার উপায়
হলমার্ক করা স্বর্ণ চেনার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়ে থাকে। হলমার্কিং হলো সঠিক নির্ধারণ এবং মূল্যবান ধাতু নিবন্ধন। বহুমূল্যে ধাতু আনুপাতিক বিষয়বস্তুর অধিকারী রেকর্ডিং অর্থাৎ এ হলমার্কের গহনাতে কতটুকু স্বর্ণ কতটুকু ধাতু মেশানো আছে তা বিস্তারিত মেশিনের মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়ে থাকে।
স্বর্ণের জিনিস এর বিশুদ্ধতার জন্যই মূলত হলমার্ক করা হয়ে থাকে। এটি ভিতরে কত ক্যারেটের গোল্ড তা খোদাই করা থাকে এবং হলমার্কের চিহ্ন দেওয়া থাকে। ১ ভরিতে কত গ্রাম স্বর্ন থাকে সেটা নির্ভর করে হল্মার্ক করা গোল্ড কিনেছেন কিনা তার উপর।
কোন কোন জিনিস স্বর্ণের জন্য ক্ষতিকর
গোল্ডের জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেকেই এর ক্ষতিকারক দিকগুলো জানেনা। গোল্ডের গহনা ব্যবহারের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে গহনাতে কোন পারদ বা থার্মোমিটার ভাঙ্গা না লাগে। কেননা সোনার গহনাতে পারোদ লাগলে সোণা তামাতে রূপান্তরিত হয় এবং ভেঙে যায়।
এছাড়াও বর্তমানে পারফিউমের সাথে বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড মিশানো হয়ে যা তামাতে রূপান্তরিত করে। তাই গোল্ডের গহনা ব্যবহার করলে এসব বিষয় থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
স্বর্ণ কেনার সময় সাবধানতা
দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জুয়েলারির দোকানে বিভিন্ন রেঞ্জের গোল্ড বিক্রি হয়। অনেকেই সলিড গোল্ড দিতে চায়না। তাই গোল্ড কিনার সময় অবশই গোল্ড সার্টিফিকেট সাথে নিতে হবে। এতে করে লোক ঠকানো সহজ হয়না। তবে অলিগলিতে খাত মেশানো গোল্ড কেনার চাইতে ভালো দোকান থেকে গোল্ডের জিনিস কেনা উচিত।
এতে হলমার্ক করা সার্টিফিকেট পাওয়া যায়। ১ ভরিতে কত গ্রাম স্বর্ন পাওয়া যায় তা সঠিক তথ্য তারা বলবে।
১ ভরিতে কত গ্রাম
আজকে আমরা ১ ভরিতে কত গ্রাম হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।