হুন্ডি কি?
হুন্ডি হলো একটি নীতি বহির্ভূত এবং দেশের আইন দ্বারা নিষিদ্ধ একটি অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর পদ্ধতি। তাই অনেকে হুন্ডি কি কিভাবে করে বিস্তারিত জানতে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আজকে আমরা তাদের জন্যই হুন্ডি কি এবং কিভাবে করে এবং হুন্ডির সম্পর্কিত জানা অজানা বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে
আরো পড়ুন – স্বপ্নে মৃত মানুষের সাথে কথা বললে কি হয়? মৃত মানুষ টাকা দিলে কি হয়
হুন্ডি কি?
হুন্ডি হল এমন একটি নীতি বহির্ভূত এবং দেশের আইন দ্বারা নিষিদ্ধ অক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক অর্থ হস্তান্তর বা স্থানান্তর পদ্ধতি যা বিল অফ এক্সচেঞ্জ বা বিনিময় বিল নামেও পরিচিত। পূর্বে বাণিজ্যিক লেনদেন এবং ঋণদান প্রদানের ক্ষেত্রে এই ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হতো। এখনো হয় তবে তা অবৈধভাবে অবৈধ উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে।
হুন্ডি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ হুন্ড থেকে উদ্ভূত হয়েছে। যার অর্থ হলো- সংগ্রহ করা ।এটি বাণিজ্যিক আদান-প্রদান সংশ্লিষ্ট লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত লিখিত এবং শর্তহীন দলিল। যার মাধ্যমে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে নির্দেশিত পরিমাণ টাকা লেনদেন করা হয়।
এই হুন্ডি ব্যবস্থা মুঘল আমলে পরিচিত লাভ করলেও কিন্তু ব্রিটিশ আমলে এসে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এখনো প্রবাসী চাকরিজীবীরা একই উপায় ব্যবহার করছেন।
Merriam webster says that, “A negotiable instrument bill of exchange or promissory note of india used specially in the internal finance of trade”
অর্থাৎ, হুন্ডি একটি হস্তান্তরযোগ্য দলিল বিনিময় বিল বা প্রমিছরি নোটিশ নোট যা বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যবহার করা হয়।
Wikipedia তে বলা হয়েছে যে হুন্ডি একটি আর্থিক দলিল যা মধ্যযুগ ভারতে বাণিজ্য এবং ক্রেডিট লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা হতো। হুন্ডি জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ এর মাধ্যমে কম খরচ এবং প্রত্যন্ত এলাকায় টাকা পাঠানো সম্ভব হয়। অনেক ক্ষেত্রে তা ব্যাংকের চেয়েও দ্রুততম পৌঁছায়।
হুন্ডির প্রকারভেদ
হুন্ডির অনেক প্রকার রয়েছে। হন্ডি কি তা আমরা উপর আলোচনা করেছি। এখন আমরা জানবো হুন্ডির প্রকারসমূহ। নিচে বর্ননা করা হল-
১। সাহিয়োগ হুন্ডি
এটির মাধ্যমে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অন্য এক ব্যবসায়ীর প্রতি তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান করতে বলা হয়। গুজরাটি এবং হিন্দি ভাষায় শাহীোগ মানে হলো সহযোগিতা এটি হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক ভাষা।
২। দর্শনী হুন্ডি
এটি এমন এক ধরনের হুন্ডি যা দেখামাত্র দিতে হয়। এটি ধারক দ্বারা প্রাপ্তির পরে যুক্তিসঙ্গতা সময়ের মধ্যে পেমেন্টের জন্য উপস্থাপন করা আবশ্যক। সুতরাং এটি কিছুটা একটি চাহিদা বিলের অনুরূপ হয়।
৩। মুদ্দতি হুন্ডি
একটি নির্দিষ্ট মেয়াদে কোনটি একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ফেরত দিতে হয়। এটি একটি টাইম বিলের মত।
৪। নাম জোগ হুন্ডি
নাম যোগ হুন্ডি এমন একটি হুন্ডি যার নাম হুন্ডির উপর উল্লেখ করা থাকে। শুধুমাত্র তাকে পেমেন্ট করতে হয় এই ধরনের হুন্ডি অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে অনুমোদন করা যাবে না।
৫। ফরমান জোগ হুন্ডি
হুন্ডিতে নির্দেশিত ব্যক্তি বা জার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার জন্য এই ধরনের হুন্ডির অর্থ প্রদান করা যেতে পারে। এ ধরনের হুন্ডির অর্থ পেমেন্ট অর্ডার চেকের অনুরূপ এবং একই ধরনের হুন্ডি দিতে কোন ধরনের অনুমোদনের কোন প্রয়োজন নেই।
৬। ধানি হুন্ডি
ধানি হুন্ডির অর্থ হুন্ডি ধারক বা বহনকারীকে প্রদান করা হয়। তখন এটি ধানি যোগ হুন্ডি নামে পরিচিত হয়। এটি পেয়ারার দলিলের অনুরূপ।
৭। যখিম হুন্ডি
সাধারণভাবে একটি শর্তে শর্তাধীন যে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শর্তের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে কোনটির অর্থ পরিষদ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। এই ধরনের হুন্ডি বিনিময় যোগ্য নয়।
৮। জবাবি হুন্ডি
যদি হুন্ডির মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ স্থানান্তরিত হয় এবং সেটির জন্য অর্থ প্রদানকারী ব্যক্তি কর্তৃক প্রাপ্তি স্বীকার প্রদান করতে হয় তবে সে হুন্ডি জবাবে হুন্ডি নামে পরিচিত।
৯। খাকা হুন্ডি
এটি এমন এক ধরনের হুন্ডি যার মধ্যে পরিশোধ অর্থ করা হয়েছে সেটাই খাকা হুন্ডি নামে পরিচিত হয়।
১০। খতি হুন্ডি
যে হুন্ডি তে কোন ধরনের ত্রুটি আছে বা যে হুন্ডি জালিয়াতি করা হয়েছে সেটা খতি হুন্ডি নামে পরিচিত।
হুন্ডিতে কিভাবে টাকা পাঠায়
হুন্ডিতে যে টাকা পাঠাতে চান তিনি সচরাচর কোন হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছে আসেন এবং কোথায় কোন দেশে কত টাকা পাঠাতে হবে এবং কার কাছে পাঠাতে চান তার কিছু তথ্য দিয়ে সে ব্যবসায়ীকে তার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন। তারপর সে ব্যবসায়ী ওই দেশে উল্লেখিত স্থানের কাছাকাছি তার কোন কোন এজেন্ট আছে তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং বলে দেন কোন জায়গায় এবং কার কাছে কত টাকা পৌঁছে দিতে হবে।
তখন সেই এজেন্ট যার কাছে যার কাছে টাকা পৌঁছানো দরকার তার কাছে টাকা পৌঁছে দেন। এভাবেই মূলত হুন্ডিতে অবৈধভাবে টাকা লেনদেন হয়ে থাকে।
হুন্ডি কিভাবে করে
এখন আমরা জানবো হুন্ডি ব্যবসা কিভাবে করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ধরুন এই দেশে একজন শ্রমিক তার উপার্জিত টাকা একজন হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছে নিয়ে গেল। সেই ব্যবসায়ী দেশে তার কোন এজেন্ট কে কোথায় টাকা দিতে হবে বলে দিলে এজেন্ট সে অনুযায়ী টাকা পৌঁছে দেয়।
এই পৌঁছে দেয়ার সময় হয়তো কখনো কখনো প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকেও কম সময় লাগে। এখানে তারা যে কাজটি করে তা হল ডলার রেট প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা যা দিয়ে থাকে তার তুলনা একটু বেশি দেয়। অর্থাৎ ডলারের যদি ব্যাংকগুলো ৯৪ টাকা দেয় তাহলে তার ১০০ টাকা বা ১০৫ টাকা দেয়।
এখানে তারা খুব কমই লাভ হিসেব রাখে এবং যা রাখে তাই মূলত তাদের লাভ এভাবেই তারা ব্যবসা করে থাকে।
হুন্ডিতে টাকা পাঠানোর সুবিধা
বর্তমানে হুন্ডির আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। যার পেছনে কিছু সুবিধা রয়েছে। তা হল-
- কাস্টমার একটি তুলনামূলক ভালো এক্সচেঞ্জ রেট পায়
- তাদের কাছ থেকে এক্সট্রা কোন ফ্রি নেয়া হয় না
- এই লেনদেনের জন্য কাস্টমার কে এক্সট্রা কোন ফর্ম পূরণ করতে হয় না
- টাকা পাঠানোর জন্য কাস্টমারকে অফিসিয়াল সময়ের মধ্যে এজেন্ট এর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না
- হুন্ডি ব্যবসায়ীদের কোন নির্দিষ্ট সময় নেই
হুন্ডির অপকারিতা
হুন্ডির সুযোগ যেমন অনেক তেমনি বিভিন্ন সমস্যা ও রয়েছে । অনেক হুন্ডির অপকারিতা রয়েছে নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো –
- ব্যাংকের নিয়ম অনুসরণ করে না বলে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়
- দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটি মারাত্মক অপরাধের
- শুধু বাংলাদেশী নয় অনেক দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে
- আয়কর পাওয়া যায় না
- বৈধ উপার্জন অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত হয়
- বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কর্তৃক লেনদেন যাচাই হয়
- প্রবাসী গ্রাহক হিসেবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ হতে বঞ্চিত হয়
- অর্থ পাঠানো এবং অর্থপ্রাপ্তির ঝুঁকিপূর্ণ হয় বা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায় ফলে অর্থনীতির ক্ষতি হয়
- ব্যাংকিং সুবিধা বা বিনিয়োগ পাওয়া যায় না
- অবৈধ টাকার মালিকগণ প্রবাসীদের টাকা বিদেশে রেখে সম্পদ পাচার করে
হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো কি বৈধ নাকি অবৈধ?
আর্টিকেলটি পড়ে অনেক ক্ষেত্রেই আপনাদের মনে হতে পারে হুন্ডীর ব্যবসা ভালই বা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা ভালই। তারা কম লাভ করে কাস্টমারকে বেশি লাভ দিচ্ছে। কিন্তু হুন্ডির ব্যবসা পুরোটাই অবৈধ শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীতে অনেক দেশে এই হুন্ডি সিস্টেম অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
যেহেতু হুন্ডির সিস্টেম এর ক্ষেত্রে সরকার সরাসরি কোন লাভ হয় না এবং দেশের কোন লাভ হয় না বরং আরো ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায় তাই এই পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশের হুন্ডি বিজনেস এর অবস্থা
বর্তমানে আয়ের তথ্য মতে বাংলাদেশে যে রেমিটেন্স আসে তার প্রায় ৩০ শতাংশ আসে এই হুন্ডি সিস্টেমের মাধ্যমে। এটি কোন ছোটখাটো বিষয় নয় প্রবাসীদের মধ্যে এই মাধ্যমে টাকা পাঠানোর প্রবণতা অনেক বেশি। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের হুন্ডির ব্যবস্থা নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ সরকার হুন্ডির বিষয়ে খুবই কঠোরতা প্রদর্শন করছে।
আর বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে এহুন হুন্ডির দৌরাত্ম রুখতে কড়া করে আরোপ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুদিন আগে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স বিতরণের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের অনেক এজেন্টের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।
হুন্ডি আইন ও শাস্তি
যেহেতু মানি লন্ডারিং এর আওতায় টাকা পাচার সংক্রান্ত বিচার করা হয়। আর হুন্ডির কার্যক্রম মানিলন্ডারি গায়েব এর আওতায় পড়ে তাই এই আইনের আওতায় এর বিচার করা হয়। হুন্ডির শাস্তি হলো ব্যক্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম চার বছরের অণধিক ১২ বছর পর্যন্ত কারা দন্ড এবং অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড।
প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের ন্যূনতম দিগুণ অথবা ২০ লক্ষ টাকা যা অধিক হয় অর্থদণ্ড এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করা হয়।
ইসলামিক দৃষ্টিতে হুন্ডি ব্যবসা হালাল নাকি হারাম?
যেহেতু হুন্ডির মাধ্যমে বড় বড় চোরা চালান করা হয় যার প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়ে তাই এই কার্যক্রম বড় একটি স্বার্থের জন্য অকল্যাণকর। হুন্ডি নিয়ে আলেমগণের মতামত হল যেহেতু সিস্টেম রাষ্ট্রদ্বারা নিষিদ্ধ হয়ে সিস্টেম দ্বারা অবৈধ কাজকে প্রমাণ করা হয় সুতরাং এই সিস্টেম কখনো হালাল হতে পারে না।
ইসলামী সরাসরি হুন্ডি বৈধ না হলেও যদি সমাজের জন্য রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকারক হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই সেটি এড়িয়ে চলা উচিত।
হুন্ডি কি
আজকে আমরা হুন্ডি কি কিভাবে করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে।আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- ৫০০ টাকায় কক্সবাজার হোটেল, সস্তায় কক্সবাজার আবাসিক হোটেল
- আজকে বাংলাদেশে কুয়েত টাকার মান কত
- স্বপ্নে মৃত মানুষের সাথে কথা বললে কি হয়? মৃত মানুষ টাকা দিলে কি হয়