স্বামীকে বশ করার দোয়া
দুনিয়াতে আল্লাহতালা সবচেয়ে বেশি রহমত যে সম্পর্কে দিয়ে থাকেন তাহল স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগই দেখা যায় স্বামী এবং স্ত্রীর মাঝে মহব্বত ভালোবাসা কম। তাই অনেকে স্বামীকে বশ করার দোয়া বা স্বামীর থেকে ভালোবাসা পাওয়ার কোন আমল আছে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান। আজকে আমরা তাদের জন্যই স্বামীকে বশ করার দোয়া সহ কি কি উপায়ের মাধ্যমে স্বামীর ভালোবাসা অর্জন করা যায় সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, দোয়া ও নিয়ত
স্বামীকে বশ করার আমল
স্বামীকে বশ করার দোয়া জানার আগে জানতে সবে বর্তমানে স্বামীদের মধ্যে অনেক স্বামী আছে যারা স্ত্রীকে কোন সময় দিতে চায় না। শুধুমাত্র নিজের প্রয়োজনেই স্ত্রীর কাছে যায় এবং পরবর্তীতে কোন ভালোবাসা প্রকাশ করে না। প্রেম ভালোবাসা তো দূরের কথা অনেক স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক প্রায় ছাড়াছাড়ির মতোই হয়ে থাকে। স্ত্রীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলে না, গল্প করে না, সুখ দুঃখ ভাগ করে না স্ত্রীর স্বামীর কাছ থেকে কি চায় বা স্ত্রী কোন আবদারের প্রতি স্বামীদের লক্ষ্য থাকে না।
এই প্রেম ভালোবাসা হীন স্বামীর কাছ থেকে ভালোবাসার জন্য অধিকার আদায় করতে স্বামীকে নিজের করে নিতে বহু নারী পীর ফকিরদের কাছে তাবিজ কবজ তদবিরের পেছনে টাকা পয়সা ব্যয় করে। কিছু সাধারন আমলের দ্বারা স্বামীকে বশ করার চেষ্টা করতে পারেন। স্বামীকে বশ করার আমল হল-
১। দুই রাকাত নফল নামাজ ও সালাতুল হাজত পড়বেন।
২। সালাতুল হাজতের প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা কাফিরুন ১১ বার পড়বেন
৩। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস এগারো বার পড়বেন
৪। সালাম ফিরানোর পথ দুরুদ শরীফ সাতবার পড়বেন
৫। পরে মোনাজাত করবেন
৬। এই মোনাজাতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আপনার চাওয়া-পাওয়ার বাসনা গুলো সুন্দর করে তুলে ধরবেন।
দোয়া কবুল হওয়ার জন্য যে ভালো সময় হাদীস শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে শেষ রাতে সুবহে সাদিক সূর্যোদয়ের সময় এবং বৃষ্টির সময় সেসব সময়ে বেশি বেশি স্বামীকে পাওয়ার জন্য দোয়া করবেন। শুধুমাত্র আমল বা তাবিজ দুয়া দ্বারা স্বামীর ভালোবাসা জয় করা যায় না। স্বামীর ভালোবাসা পেতে হলে স্বামীকে নিজের ভালোবাসা উজাড় করে দিতে হবে।
নিজেকে স্বামীর কাছে সেরা বন্ধু হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। স্বামীকে নিজের বসে আনার জন্য স্বামী খুশি হয় এমন কাজ করতে হবে এবং নিজেকে আদর্শ স্ত্রী এবং নারী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
আরো পড়ুন – ঘারোয়াভাবে হাত পা ফর্সা করার উপায়
স্বামীকে বশ করার দোয়া
কুরআন এবং হাদিসে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা বৃদ্ধির জন্য স্বামীকে বশ করার দোয়া অনেক দোয়া উল্লেখিত আছে। তার মধ্যে অন্যতম স্বামীকে বশ করার দোয়া হলো-
“ইন্নাল্লাহা ইউজমিউ মাইয়া শা”
এই দোয়াটি পাঠ করতে হবে। প্রথমে দুরুদে ইব্রাহিম তিনবার পাঠ করে নেবেন এবং আপনি চাইলে আপনার চোখ বন্ধ করে প্রতিদিন ১০বার করে পাঠ করতে পারেন। দিনের যেকোনো সময় ওযু করে এটি পাঠ করলে মহান আল্লাহ পাক আপনার মনের আশা পূরণ করে দেবে এবং সেই সাথে আপনার পরিবারের সুখ শান্তি বজায় রাখার জন্য আপনার এবং আপনার স্বামীর মাঝে ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দিবেন।
এসব আমাদের পাশাপাশি একজন আদর্শই ভূমিকা অবশ্যই পালন করবেন। তাহলে দেখা যাবে সেখানে খুব একটা অশান্তি বিরাজ করবে না।
স্বামীকে বশ করার উপায়
স্বামীকে বশ করার দোয়া জানার পাশাপাশি স্বামীকে বশ করার উপায় জানার প্রয়োজন। নিজে স্বামীকে বশ করার উপায় উপায় গুলো বর্ণনা করা হলো-
আত্মবিশ্বাসী হওয়া- নরম মনোভাবের স্ত্রী স্বামী হয়তো পছন্দ করেন কিন্তু এর জন্য দিনের শেষে প্রশংসাও পেতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত কিন্তু আপনারই ক্ষতি হবে স্বামীর হ্যা তে হ্যা, না তে না মিলাবেন না। মাঝে মাঝে নিজের যুক্তি দেখেও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন এতে স্বামী আপনাকে পছন্দ করবে।
স্বামীর অনুভূতির খেয়াল রাখা- কথায় আছে মেয়েরা নাকি মানুষের মন পড়তে পারে যদি তাই হয় তাহলে এই গুণটাকে কাজে লাগাতে হবে। সব সময় স্বামীর মনে কি আছে তা পড়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে সে কি চায় তার ভালো লাগা খারাপ লাগা আগেভাগে সব বুঝে নিতে হবে। তার কথার বিপক্ষে কথা বলে খুব বেশি চটানো যাবে না।
মাঝে মাঝে তার পছন্দের উপহার তাকে দেওয়া যেতে পারে। অফিস থেকে ফেরার আগে তার প্রিয় খাবারটা তৈরি করে ফেললে স্বামী আপনার প্রতি অনুভূতি বাড়বে।
স্বামী প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে- ছেলেরা সাধারণত মেয়েদের থেকে অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে থাকে। যৌন জীবনে আপনি যদি সন্তুষ্ট না হয়ে থাকেন তার জন্য নিজেকেই দায়ী করতে থাকেন হয়তো যা স্বামীকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলতে পারে। শুধুমাত্র শারীরিক নয় মানসিকভাবেও নিজের মনের মধ্যে কোন কথা চেপে না রেখে তার সাথে সব সময় খোলামেলা কথা বলতে হবে।
মাঝে মাঝে উৎসাহ দিতে হবে- মানুষ মাত্রই ভুল হয় তাই স্বামীরা ব্যতিক্রম নয়। হাজার সাবধান থাকা সত্ত্বেও স্বামী কোন বড় ভুল করে ফেললে যদি সে তার ভুল বুঝতে পারে তাকে ক্ষমা করে ভালোবাসা দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। এটা রাগের বশে কোন ঝামেলা করা যাবে না। অথবা আজেবাজে কথা বলা যাবে না বরং তাকে তার কাজে প্রতিদিন উৎসাহ দিতে হবে। পরে সময় মতো সব বলতে হবে।
পরামর্শ দিন- কাজের চাপে যেগুলো ভুলে যায় সেগুলো মনে করিয়ে দিন। যেমন ধরুন ফোনে তার মায়ের খোঁজ খবর নেওয়ার আগে বা তার কোন আত্মীয় অসুস্থ হলে তার খোঁজ খবর নেওয়া। কিংবা তার প্রয়োজনীয় কাজ তাকে মনে করিয়ে দেওয়া ছাড়ো অফিসের কাজে তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে অথবা সহযোগিতা করে সাহায্য করতে পারেন। যাতে করে স্বামী আপনার প্রতি আরো বেশি খুশি হবে।
ঘরের কাজে সহ্য করা- মাঝে মাঝে ঘরে কাজে স্বামীকে সাহায্য করার অভ্যেস করে তুলুন। শুধু অফিসের বাইরের কাজে নয় সপ্তাহে অন্তত একদিন তার উপর ঘরের কাজে আর কিছুটা ছেড়ে দিন। এমন দুপুরে কি খাবেন শেষ সিদ্ধান্ত আপনার স্বামীকে নিতে দিন। তেমনি ঘর পরিষ্কার গুঝানো ইত্যাদি কাজ দুজনে ভাগ করে করলে দুজনের ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।
বদ অভ্যাস ত্যাগ করা- স্বামীরা স্ত্রীদের অনেক খারাপ অভ্যেস পছন্দ করে না স্বামী দেশ পছন্দ করে না। যেভাবে চলাফেরা পছন্দ করেনা সে চলাফেরা নিজের পছন্দ হলেও স্বামীর ভালোবাসার জন্য তার ত্যাগ করুন। এতে করে দুজনের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে স্বামীকে তার কোন বদ অভ্যাস থাকলে সেগুলো ধরিয়ে দিন।
সম্মান করুন- নিজের লাইফ পার্টনারকে সম্মান দান না করলে তার থেকে সম্মান মোটেও পাওয়া যায় না। সে কেন ভালবাসছে না সেটা নিয়ে চিন্তা করে খিটখিট করা বুদ্ধি অনেক কাজ নয় স্বামীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিজেকে তার নিয়োগ দ্বিগুণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্বামীর সাথে কোন বিষয়ে ঝগড়া বা তর্ক বা অপমান করা যাবে না তাকে সব সময় সম্মান করুন দেখবেন সে আপনাকে ভালোবাসবে।
স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার সহজ উপায়
- নিজেকে সবসময় পরিপাটি রাখা
- স্বামী যেসব পছন্দ করে সেগুলো মেনে চলা
- তার পছন্দের খাবার বা তার পছন্দ অপছন্দের খেয়াল রাখতে হবে
- তাকে স্বামী হিসেবে সব সময় সম্মান করতে হবে
- তার সাথে ত্বক তর্ক বা ঝগড়া বা অশান্তি করা যাবে না
- স্বামী এবং তার পরিবারের সঠিকভাবে খেয়াল রাখতে হবে
- ভালবাসায় নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে
- ধৈর্য ধরে সংসারে করতে হবে
- পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের খেয়াল রাখতে হবে
- সংসারে সবগুলো অধিকার দুজনে মিলে ভাগাভাগি করে নিতে হবে
- কেউ যেকোন সিদ্ধান্ত নিবে তার সম্মান করতে হবে
- স্বামীকে অন্যের সাথে তুলনা করা যাবে না
- স্বামীকে কখনো অপমান বা ছোট করে কথা বলা যাবে না
পরামর্শ
অনেকের স্বামীকে নিজের করে বানানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার তাবিজের জন্য হুজুরদের কাছে যায়। ইসলামে তাবিজ ব্যবহার করা হারাম এবং এসব হুজুরদের কাছে তাবিজ দেওয়া শুরু করার সময় তাই নিজের চেষ্টায় স্বামীকে নিজের করে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। অন্য কারো কথা এবং অন্য কারো কাছে তাবিজের জন্য যাওয়া যাবে না।
মন্তব্য
আজকে আমরা হালালভাবে স্বামী বশ করার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ড ফর ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত বা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আমরাও অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রতিদিন নতুন নতুন সব তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- আবেগী বন্ধু বিদেশ যাওয়ার স্ট্যাটাস
- পৃথীবির দামি রক্তের গ্রুপ কোনটি? রক্তের গ্রুপ কয়টি
- সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, দোয়া ও নিয়ত