সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকেই নরমাল ডেলিভারি তুলনায় সি সেকশন বা সিজার বেশি করে থাকেন। এক্ষেত্রে ডাক্তার এবং পরিবার উভয়ই দায়ী। তবে সিজারের যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধা রয়েছে। সিজারের পর ব্যথা কত দিন থাকে সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান।
আজকে আমরা সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি সিজারে পর ব্যথা কতদিন থাকে সে সম্পর্কিত আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
সিজার কি?
সিজারিয়ান সেকশন বা মার্কিন ইংরেজিতে cesarean section বলা হয়। আমাদের দেশে সি সেকশন বা সিজার নামেও পরিচিত। এটি একপ্রকার শৈল চিকিৎসা যা এক বা একাধিক শিশুর জন্মের জন্য মায়ের উদর বা জরায়ুতে অপারেশন করা হয়। এটি সাধারণত তখনই করা হয় যখন প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মদানের মাধ্যমে দুনিয়াতে সন্তান প্রসব সম্ভব হয় না।
বা সন্তান জন্মদানে মায়ের এবং শিশুর জীবন এবং স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। বর্তমানে আধুনিকভাবে সিজার করতে প্রায় ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা সময়ও লাগতে পারে। ২০১২ সালে প্রায় ২৩ মিলিয়ন সিজার পুরো বিশ্বে করা হয়েছে।
আরো পড়ুন – এবছর ফিতরা কত টাকা ২০২৪
সিজার কেন করা হয়?
সিজার কেন করতে হয় তা জানা দরকার। নিচে উল্লেখ করা হল-
- গর্ভের শিশুর আকার যদি প্রসবের রাস্তার তুলনায় যথেষ্ট চওড়া না হয়। তাহলে নিরাপদ বা নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব হয় না।
- তুলনামূলক ছোট প্রসবের রাস্তায় এবং যোনিপথ দিয়ে বড় আকারে শিশু প্রসব করা খুবই কষ্টসাধ্য বা অসম্ভব হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে সিজার করা হয়।
- এ ছাড়াও মা এবং সন্তানের শারীরিক কোন জটিলতা থাকলে
- উচ্চ রক্তচাপ
- হার্টের রোগ
- ডায়াবেটিস
- ব্রেনের নির্দিষ্ট যোজ্যতা জটিলতা
- শারীরিক অক্ষমতা সহ
- অতিরিক্ত ওজন হলেও নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয় না
- এছাড়া বাচ্চার অবস্থান যদি ব্রিজ বা উল্টা হয়
- বা গর্ভ যদি একাধিক একাধিক সন্তান থাকে তাহলে সিজার করানো লাগতে পারে
- এছাড়াও প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল সাধারণত জরা এর উপরের অংশে থাকে যদি কোন কারনে প্লাসেন্টার নিচের থেকে থাকে তাহল নরমাল ডেলিভারি করানো সম্ভব হয় না তখন সিজার করতে হয়।
সিজারিয়ান অপারেশনের ঝুঁকি
সাধারণত সিজার অপারেশন নিরাপদ একটা অপারেশন। অন্য সব অপারেশনের মধ্যে তবে এখানে কিছু অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। ঝুঁকির মাত্রা নির্ভর করে আপনার শারীরিক অবস্থা এবং সিজারে ধরণের উপর। সাধারণত অল্প সংখ্যক অপারেশনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে ।
- এমন কি মৃত্যু ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে জরায়ু কেটে ফেলে দিতে হতে পারে
- জরায় এবং আশেপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এবং কাটাস্থানের ইনফেকশন হলে এন্টিবায়োটিক ওষুধের মাধ্যমে ঠিক করা লাগতে পারে
- রক্ত জমাট বাঁধলে অর্থাৎ পায়ের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধলে চাকা তৈরি হতে পারে
- এতে করে পা ব্যথা বা ফুলে যেতে পারে
- প্রাণঘাতী শ্বাসকষ্ট হতে পারে
- মূত্রনালীন মূত্রথলি বা জরায়ুর আশেপাশে রঙ্গে আঘাত লাগলে গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে
- স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরতে অনেক সময় দেরি হয়
- নরমাল ডেলিভারির তুলনায় সিজারে সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে
- অনেক সময় ইনস্টিয়ার ওষুধ সহ চিকিৎসা ব্যবহৃত বিভিন্ন ওষুধের রিঅ্যাকশন হতে পারে
সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে ?
সিজারের পর অপারেশনের জায়গা বা কাটা জায়গায় কয়েক দিন বেশ ব্যথা থাকবে। কারণ সেখানে বড় সেলাই থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যথা থাকতে পারে। মূলত সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে বা অপারেশনের জায়গায় ব্যথা কেমন থাকবে তা নির্ভর করে রোগীর শরীর কতটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন তার ওপর ।
এছাড়াও সিজারের সময় কোন ধরনের সেলাই করেছে তার ওপর নির্ভর করে ব্যথা কম বেশি হতে পারে। তবে ঘরে ব্যথা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং নরমাল ডেলিভারির তুলনায় সিজার হলে সুস্থ হতে বা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে কিছুটা সময় বেশি প্রয়োজন হয়।
সিজারের পর ব্যথা হলে করণীয়
সিজারের অপারেশনের পর ব্যথা নাশক হিসেবে ডাক্তাররা প্যারাসিটামল অথবা আইবো প্রফেন রেফার করে থাকেন এগুলো ওভারটা কাউন্টার ঔষধ। ওভার কাউন্টার ঔষধ গুলো ফার্মেসি থেকে কিনে সাথে সাথে নির্দেশিক অনুযায়ী সেবন করা যায়।
তবে ডাক্তাররাই এর ডোজ আপনাকে জানিয়ে দিবেন। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যথা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালেও এসব ওষুধ সেবন করা যায় তবে সাধারণত ব্যথার জন্য স্পেলিং বা কোডেন জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলতে হবে।
সিজার অপারেশনের দাগ
অপারেশনের জায়গাটা ধীরে ধীরে সেরে গিয়ে তলপেটে একটি দাগ তৈরি করবে। যেহেতু সেখানে কেটে অপারেশন করা হয়েছে বা সেলাই করা হয়েছে তাই তলপেটে একেবারে নিজের অংশের মাঝ বরাবর ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার লম্বায় আড়াআড়ি একটি দাগ দেখা যাবে।
প্রথম প্রথম দাগটি লাল রঙের হয়ে থাকে তবে এ সময় ডাকতে বেশি স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায়। সময়ের সাথে সাথে দাগ মিলিয়ে যাবে। তবে অনেক সময় যৌনাঙ্গের আশেপাশে চুল দিয়ে দাগটি ঢাকা পড়ে যেতে পারে। গায়ের রঙ গাঢ় হলে তকে বাদামী অথবা সাদা দাগের মতো দাগ হতে পারে।
এই দাগ দূর করার কোন ক্রিম বা কোন ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। সময়ের সাথে সাথেই দাগ মিলিয়ে যায়।
সিজারের পর কোমর ব্যথার কারণ
আমাদের দেশের মায়েদের সিজারের পর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলো কোমর ব্যথা। সিজার করার পর কোমর ব্যথার সম্ভাব্য কারণ গুলো হল-
- হরমোনগত পরিবর্তন
- ওজন বৃদ্ধির মেরুদন্ডের উপর চাপ পড়া
- বাচ্চাকে কোলে নিতে গিয়ে নিচের দিকে ঝুকা
- দীর্ঘ সময় বাচ্চাকে দুধ পান করানো
- সময় ঘাড়ে এবং মেরুদন্ডে চাপ পড়া
- সিজারের পর পূর্ণ সুস্থ না হয়ে ভারী কাজ করা
- ডেলিভারির পর বা সিজারের পর তিন মাস পর্যন্ত আয়রন ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন না করা
- অস্বাস্থ্যকর খাবার ডায়েট
সিজারের পর কোমর ব্যথা হলে করণীয়
সিজারে পর ব্যথা কতদিন থাকে তা আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এখন আমরা সিজারে পর কোমর ব্যথা হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
- বাচ্চাকে কোলে নেওয়ার সময় ঝুকবেন না
- স্তন্যপান বা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পেট সোজা রাখুন
- গরম পানিতে গোসল করুন
- নিয়মিত বিশ্রাম নিন
- হালকা দেয়া শুরু করতে পারেন
- যেমন সিটেড টেকেল ওয়াল সিট
- ডেলিভারি পর সুস্থ না হয়ে ভারী কাজ করবেন না
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- হাটাহাটি করুন
- পুষ্টিকর খাবার খান
- প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার পানি পান করুন
- সিজারের পর দুই থেকে তিন মাস আয়রন ক্যালসিয়াম ওষুধ নিয়মিত সেবন করুন
সিজার করতে কত টাকা খরচ হয়
বর্তমানে সিজারের সরকারি হাসপাতালের খরচ এবং বেসরকারি হাসপাতালে খরচ এক এক রকম হয়ে থাকে। বেসরকারি হাসপাতালে কোন ডাক্তার অপারেশন করছেন সেটাও খরচ কম বেশি হতে পারে। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে সিজার করতে সব মিলিয়ে ৭ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ লাগতে পারে।
বেসরকারি হাসপাতালে সিজার করাতে গেলে ৩০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। যদিও এটি হাসপাতালের উপর নির্ভর করে খরচ কম বেশি হতে পারে।
সিজারের পর মায়েদের করণীয়
সিজারের পর মায়েদের করনীয় কি তা জানতে হবে। সিজারে পর মায়েদের করণীয় কি তা আপনার হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করার আগে আপনার চিকিৎসা আপনাকে জানিয়ে দিবেন। তবে কিছু কাজ রয়েছে যা সিজারের পর অবশ্যই করতে হবে তা হলো-
- সিজারিয়ান অপারেশনের পর যত দ্রুত সম্ভব হালকা কাজকর্মে ফিরে গিয়ে নিজেকে সক্রিয় রাখতে হয়
- হালকা প্রতিদিন হালকা হাটাহাটি করতে পারেন
- অপারেশনের কাঁটা স্থানের যত্ন নিতে হবে
- কাঁটা স্থানে ব্যাথা থাকলে প্যারাসিটামল অথবা আইবো প্রফেন সেবন করতে পারেন
- যোনিপথে হালকা রক্তপাত হতে পারে এজন্য সেনেটারী ব্যবহার করতে হবে
- দিনের পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন
- প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন
- পরিমাণ মতো পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে
- কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে ডাক্তারি পরামর্শ নিতে হবে
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?
সিজারের পর যে পর্যায়ে লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়-
- জ্বর
- শরীর কাঁপনী
- অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশন হওয়া
- যোনিপথে ভারি রক্তক্ষরণ
- সেলাই ফুলে যাওয়া
- সেখান থেকে পুঁজ বা দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হওয়া
- সেলায়ের জায়গা অনেক লাল হয়ে যাওয়া
- তীব্র পেটে ব্যথা
- প্রস্রাব ছুটে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট হওয়া
- পায়ে ব্যথা হওয়া
- পা ফুলে যাওয়া
- পায়ে পানি জমা
- প্রস্রাবের সময় ব্যথা হওয়া
- শরীর জ্বালাপোড়া হওয়া
সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে
আজকে আমরা সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- কি খেলে মাথা ঘোরা কমবে, মাথা ঘোরার ঔষধ
- গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধ, ঘরোয়া উপায়
- দ্রুত গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম
- গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়