সিজারের পর খাবার তালিকা
সিজার বাচ্চা জন্মদানের স্বাভাবিক পদ্ধতির বিকল্প পদ্ধতি। যখন কোন কারণে গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতা অথবা বাচ্চা সুস্থতা নরমাল ডেলিভারির উপর নির্ভর করে না তখনই সিজার করতে হয়। অনেকেই সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে চান। সিজারে্র পর খাবার তালিকা কি কি হওয়া উচিত এবং কি কি খাওয়া উচিত নয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আশা করছি সম্পর্কে আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে
সিজারের পর খাবার তালিকা
সিজারের পর খাবার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা কোন ধরনের খাবার খাচ্ছেন তা আপনার সেলাইয়ের উপর অবশ্যই ইফেক্ট করবে। নিচে সিজার এর পর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
- বেশি বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে
- ঠান্ডা খাবার খাওয়া যাবেনা
- গরম খাবার শরীরের জন্য ভালো
- দুধ এবং ডিম জাতীয় খাবার খেতে হবে
- দুধ না খেতে পারলে দুধ দিয়ে তৈরি খাবার খেতে হবে
- ফলমূল
- এবং তাদের শাকসবজি খেতে হবে
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
- কমলালেবু
- মাল্টা
- পেয়ারা
- টক জাতীয় ফল
- প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার খাবার পানি
সিজারের পর যেসব খাবার খাওয়া যাবে না
সাধারণত সিজারে পর চিকিৎসক আপনাকে সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার খাওয়ারই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে এ সময় খাবার নিয়ে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য পুষ্টিকর খাবার তালিকায় খাবার রাখলে আপনার সুস্থ হতে সময় কম লাগবে। এ সময় খাবার খাওয়া যাবেনা তাহল-
- ভাজাপোড়া খাবার
- কার্বনেটেড ড্রিংকস
- কোমল পানীয়
- চা-কফি
- অ্যালকোহল
- ধূমপান
- বাঁধাকপি
- ফুলকপি
- ব্রকলি
- ডাল
- পেঁয়াজ
- ঢেঁড়স
সিজারের পর কি কি ফল খাওয়া যাবে
সিজারে পর সাধারণত সব ধরনের ফলে খেতে পারবেন। কোন ফল খাওয়াতে ডাক্তাররা নিষেধাজ্ঞা দেননি। তবে যেসব ফলে থাকা ফাইবার সিজার পরবর্তী কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের সাহায্য করে তা খেতে হবে লেবু আমলকি এবং পেয়ারার মতো ফলে ভিটামিন সি কাটা বা ক্ষত সারাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চাইলে এগুলো খেতে পারেন।
তবে কোন ফল খেলে যদি আপনার পেটে গ্যাস বা অস্বস্তি অনুভব করেন তাহলে সেই ফল খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন।
সিজারের কতদিন পর গরুর দুধ খাওয়া যায়?
সিজারের পর গরুর দুধ খেতে কোন বাধা নেই। কোথাও কোথায় এমন ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে সিজারের পর গরুর দুধ খেলে ঘা শুকাতে দেরি হয়। তবে ডাক্তারের ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য দেননি। সিজারের পর স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি আপনি চাইলে গরুর দুধ খেতে পারেন।
তবে গরুর দুধ কাঁচা খাওয়া যাবেনা। ফুটিয়ে পান করতে হবে ।গর্ভাবস্থায় এবং পরে মায়েদের জন্য ক্যালসিয়াম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এসময় ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে দুধ এবং দুধ জাতীয় ক্যালসিয়ামের উৎস। সিজার এর পর খাবার তালিকা তে নিয়মিত দুধ এবং দুধ জাতীয় খাবার রাখতে পারেন।
সিজারের পর কতদিন ব্লিডিং হয়?
অপারেশনের পর জরায়ু দিয়ে কিছুটা রক্তপাত হতে পারে। তবে প্রায় এক থেকে দেড় মাস এমন রক্ত অথবা স্রাব যায়। এছাড়া কিছুটা চাকা চাকা রক্ত যেতে পারে। সাথে পেট কামড়াতে পারে। এর জন্য মেটারনিটি প্যাড বা স্যানিটারী প্যাড ব্যবহার করতে হয়। এ সময় ইনফেকশন এড়াতে কয়েক সপ্তাহ যৌনি পথে টেম্পো কিছু ব্যবহার করা অথবা সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ভারী রক্তপাতের বিষয়ে সময় সতর্ক থাকতে হবে। এক ঘন্টায় যদি দুইটা পেড পুরোপুরি ভিজে যায় আর এভাবে এক থেকে দুই ঘন্টার বেশি সময় ধরে রক্তপাত হয় তাহলে তাকে ভারী রক্তপাত ধরা হয়। এমন হলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
সিজারের কতদিন পর সেলাই কাটতে হয়
যদি সিজারের সময় শরীরের সাথে মিশে যায় এমন কসমেটিক সুতা ব্যবহার না করে নরমাল সুতা ব্যবহার করা হয়। তাহলে সাধারণত অপারেশনের পাঁচ থেকে সাত দিন পর সেলাই কাটার পরামর্শ দেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে আপনার রিলিজের কাগজ এই সংক্রান্ত নির্দেশনা অবশ্যই দেওয়া থাকবে।
বাড়ি ফেরার পর অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে তা নির্ধারণ করে দিবেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের পরে গিয়ে একজন রেজিস্টার চিকিৎসক বা অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে পেটের সেলাই কাটিয়ে আসতে হবে।
সিজারে কাটা দাগ কতদিন পর শুকায়
সাধারণত সিজারের সময় কাটা অংশ পুরোপুরি শুকাতে প্রায় ছয় সপ্তাহের বেশিও সময় লাগতে পারে। তবে এই সময়টা নির্দিষ্ট নয় একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম সময়ের প্রয়োজন হয়। সিজারের পর কাঁটা শুকানোর জন্য ডাক্তার এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট সেবন করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে।
নিয়মিত এন্টিবায়োটিক সেবন করলে এবং বেশি বেশি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে যেমন লেবু মালটা এ ধরনের খাবার খেলে অবশ্যই সেলাই কাটা তাড়াতাড়ি শুকাবে। তবে নরমাল ডেলিভারির তুলনায় সিজারিয়ান নারীদের কাটা শুকাতে অনেকটা বেশি সময় লাগতে পারে।
সিজারের পর পেটের দাগ দূর করার উপায়
সময়ের সাথে সাথে সাধারণত সিজারের দাগ নিজ থেকেই মিলিয়ে যায়। তবে আমাদের দেশের মায়েদের ত্বক সাধারণত বাদামী কিংবা সাদাটে তাই সেলাইয়ের দাগ কিছুটা বাদামী বা সাদাটে হয়ে থাকে। এজন্য আলাদা কোন কোন কিছু ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না।
তবে সাধারণ সময়মতো শরীরের অন্যান্য অংশী পাশাপাশি পেটে ময়েশ্চারাইজার ভলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। তবে সিজারের পর পেটের দাগ দূর করার কোন ক্রিম নিয়ে তেমন কোন গবেষণা হয়নি। তাই ডাক্তাররা এরকম কোন ক্রিম সাজেস্ট করেন না।
সিজারের পর কতদিন পর্যন্ত বেল্ট ব্যবহার করতে হয়
সিজারের পর কোমরে মেটারনিটি বেল্ট পরলে তা আদৌ দ্রুত সরে উঠতে কিংবা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে কিনা সেই বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য জানা নেই। তবে গবেষণায় দেখা যায় বেল্ট ব্যবহার করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। তবে চাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মেটারনিটি বেল্ট ব্যবহার করতে পারেন।
সে ক্ষেত্রে মোটা কাপড় নরম বেল্ট ব্যবহার করা যেতে পারে যা পেট এবং তলপেটকে পিঠের সাথে সাপোর্ট দেবে এ ধরনের বেল্ট বিভিন্ন ফার্মেসিতে কিনতে পাওয়া যায়। বেল্ট কেনার সময় অবশ্যই ভালোমতো চেক করে নিতে হবে যে বেল্ট ভালোমতো শরীরের সাথে ফিট হয় কিনা।
কতক্ষণ এবং কিভাবে বেল্ট পড়তে হবে সেটা অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিবেন। ব্যবহার করার সময় অসুস্থ অনুভব করলে বেল্ট ব্যবহার না করাই ভালো।
সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি হওয়া কি সম্ভব
সিজারের মাধ্যমে প্রথম সন্তানের ডেলিভারি হয়ে থাকলে পরবর্তী সন্তান ডেলিভারির সময় সিজার করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। চিকিৎসকরা বলেন সব কিছু ঠিক থাকলেই প্রথম সন্তান সিজারের মাধ্যমে ডেলিভারি হলেও পরবর্তী সন্তানের ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব হয়।
তবে সে ক্ষেত্রে সন্তান এবং মায়ের স্বাস্থ্য সুস্থ থাকতে হবে এবং নরমাল ডেলিভারির উপযোগী হতে হবে। খাবার তালিকা সাস্থ্যকর ভাবে মেনে চললে নরমাল ডেলিভারী সম্ভব হয়।
সিজারে কতদিন পর আবার বাচ্চা নেওয়া যায়
সিজারের পর সাধারণত সিঁড়ি উঠতে নরমাল ডেলিভারির চাইতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে। তাই এ সময়ে পেটের কাটা এবং জরাতে সৃষ্টি হওয়া ক্ষত সেরে উঠতে সময় লাগে। সিজারের পর পুনরায় গর্ভধারণ করার আগে শরীরকে সেরে ওঠার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দুই গর্ভধারণের মাঝে যথেষ্ট বিরতি না থাকলে মা এবং শিশুর বিভিন্ন স্বাস্থ্য এর সমস্যা থাকে। এমনকি শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। চিকিৎসকদের মধ্যে সিজারের পর বাচ্চা নেওয়ার আগে দেড় থেকে দুই বছর অপেক্ষা করা উচিত। বিশেষ করে পরে বার নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবের চেষ্টা করতে চাইলে অপেক্ষা করতে হবে।
সিজারের পর কতদিন পর গোসল করা যায়
কসমেটিক সেলাইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের দেশের সাধারণত সিজারের দুই থেকে চার দিন পরে ডাক্তার গোসল করার পরামর্শ দেন। তবে যেসব ক্ষেত্রে সেলাই কাটতে হয় সেসব ক্ষেত্রে সেলাই কাটানোর পর গোসল করার পরামর্শ দেওয়া হয়। গোসল করলে সেলাইয়ের সমস্যা হতে পারে।
এছাড়া যেখানে শরীর ডুবিয়ে গোসল করতে হয় যেমন সুইমিং পুল বাথটাব পুকুর সেখানে গোসল করার আগে ঘা শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে গোসল করার সময় সিজারের সেলাই এর জায়গায় ঘষাঘষি করা যাবে না।
আলতো করে বসে বসে পরিষ্কার করতে হবে। চাইলে সাবান বা বডি ওয়াশ হাতে নিয়ে দুই হাত খসে ফেনা বানিয়ে নিতে পারেন এরপর সেলাইয়ের জায়গায় সে ফেনা দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে পারেন।
আরো পড়ুন – সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
সিজারের কতদিন পর ভারী কাজ করা যায়
সাধারণত সিজারে পর বাড়ি ফেরার পর পরে আপনি হালকা কাজকর্ম করতে পারেন। তবে আপনার সন্তানকে কোলে নিয়ে হাঁটাচলা করতে পারবেন। কিন্তু নবজাতকের চেয়েও ওজনে ভারী কিছু বহন করা ব্যায়াম সহবাস কিংবা গাড়ি চালানোর মতো ভারী কাজ কমপক্ষে ছয় সপ্তাহে পর করতে হবে।
এসব কাজ করার জন্য নিজের শারীরিক এবং মানসিকভাবে যখন ফিট মনে করবেন কেবল তখনই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনের সব কাজ কর্ম করতে পারবেন।
সিজারের পর খাবার তালিকা
আজকে আমরা সিজারের পর খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- সিজারের পর ব্যথা কতদিন থাকে
- সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
- চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে
- নরমাল ডেলিভারির জন্য করনীয়