সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
সন্তান জন্মদানের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছাড়া কৃত্তিম উপায়ে অথবা অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা জন্মদান পদ্ধতিকে সাধারণত আমরা সিজার বলে জানি। সিজার এর পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো কি কি হয়ে থাকে সে সম্পর্কে অনেকেরই চিন্তা থাকে। তাই অনেকেই সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে জানতে অনলাইনে সার্চ করে থাকেন।
আজকে আমরা সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ এবং সিজার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করার চেষ্টা করব। আশা করছি সম্পর্কিত আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
আরো পড়ুন – গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধ, ঘরোয়া উপায়
সিজার কি?
সিজারিয়ান সেকশন বা মার্কিন ইংরেজিতে cesarean section বলা হয়। আমাদের দেশে সি সেকশন বা সিজার নামেও পরিচিত। এটি একপ্রকার শৈল চিকিৎসা যা এক বা একাধিক শিশুর জন্মের জন্য মায়ের উদর বা জরায়ুতে অপারেশন করা হয়। এটি সাধারণত তখনই করা হয় যখন প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মদানের মাধ্যমে দুনিয়াতে সন্তান প্রসব সম্ভব হয় না।
বা সন্তান জন্মদানে মায়ের এবং শিশুর জীবন এবং স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। বর্তমানে আধুনিকভাবে সিজার করতে প্রায় ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা সময়ও লাগতে পারে। ২০১২ সালে প্রায় ২৩ মিলিয়ন সিজার পুরো বিশ্বে করা হয়েছে।
সিজারের পর স্বাভাবিক লক্ষণ
সিজারের পর অনেক সমস্যাই স্বাভাবিকভাবে দেখা যায়। কিন্তু অনেকেই হয়তো ভয় পেয়ে যান। সিজারের পরবর্তী সময়ে কোন লক্ষণগুলো স্বাভাবিক সেগুলো সম্পর্কে উল্লেখ করব।
- হালকা পেট কামড়ানো বিশেষ করে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় এমন হয়ে থাকে
- যোনিপথ দিয়ে রক্ত অথবা স্রাব যাওয়া। প্রায় এক থেকে দেড় মাস এমন রক্ত অথবা শ্রাব যেতে পারে
- এ ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে চাকা চাকা রক্ত যেতে পারে সাথে পেট কামড়ানো হতে পারে
- অপারেশনের জায়গায় ব্যথা হওয়া অথবা অবস লাগা
- কখনো কখনো একই সাথে ব্যাথা এবং অবশ অনুভব হতে পারে
- এসব নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই তবে তীব্র পেট ব্যথা ভারি রক্তপাত কিংবা সেলাই য়ে ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
সিজারের পর করণীয়
সাধারণত সিজার একটি শিশু জন্মদানের জন্য বড় অপারেশন। অপারেশনের পর সেরে উঠতে এবং নিজেকে পুনরায় সুস্থ করতে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নবজাতকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি তখন নিজেরও যত্ন নেওয়া অনেক মায়ের অবহেলা করেন। নিচে দ্রুততম সময়ে সিজারিয়ান মা সুস্থ হওয়ার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ আলোচনা করা হল-
কাটা স্থানে যত্ন নেওয়া । কাটা স্থান বা সেলাই এর জায়গাটি কিভাবে যত্ন নিতে হয় সেটি হাসপাতাল থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয় তবে সহজ ভাবে বলতে গেলে অপারেশনের জায়গাটি সাবান এবং পানি দিয়ে প্রতিদিন একবার আলতো করে পরিষ্কার করতে হবে।
- বেশি জোরে জোরে ঘষামাজা করা যাবে না
- পরিষ্কার করার পরবর্তী সময় জায়গাটা শুকনো তোয়ালে বা পাতলা গামছা দিয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে
- ঢিলেঢালা এবং আরামদায়ক সুতি কাপড় পড়তে হবে
- সিনথেটিক কাপড়ের পরিবর্তে সুতি কাপড়ের অন্তরবাস বেছে নিতে হবে
- শরীরের সাথে মিশে যায় না এমন সুতা দিয়ে পেট সেলাই করলে তা সাধারণত অপারেশনে পাঁচ থেকে সাত দিন পর খুলে ফেলা হয়।
- সেলাই কাটতে হলে অবশ্যই সময়মতো স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বা হসপিটালে গিয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তার দিয়ে সেলাই কাটতে হবে।
সিজারের পর ইনফেকশনের কারণ
কি কি কারণে সেলাইয়ের জায়গা ইনফেকশন হয় তা জানতে হবে। নীচে সেগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
- হাসপাতালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
- সিজারের সময় জিনিসপত্র সঠিকভাবে জীবাণু দূর না করা
- সিজারে কখনো সঠিকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করা
- রোগীর পোশাক পরিমিত পরিস্কার না থাকা
- রোগীকে তার কক্ষে নেওয়ার পরে আত্মীয়-স্বজনরা পরিষ্কারভাবে দেখা সাক্ষাৎ না করা
- বিভিন্ন রোগের কারনে
- পুষ্টির অভাব
- সিজারের সময় ব্যবহারেত পানি জীবাণমুক্ত না করা
- সিজারের পর ভিতরে ময়লা থেকে যাওয়া
- রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা
- হাসপাতালের এক ব্যক্তিকে অন্য বেডের দূরত্ব কম থাকে একই সাথে অনেক রোগীর সংক্রমণের ফলেও ইনফেকশন হতে পারে।
- তাছাড়া সেলাইয়ের পর সেলাই সময় রক্তনালী সঠিকভাবে বন্ধ না হলে ইনফেকশন হতে পারে
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
বিভিন্ন কারণে সিজারের পর ইনফেকশন হতে পারে। কি কি কারণে ইনফেকশন হয় তা আমরা উপরে জেনেছি এবং ইনফেকশনে লক্ষণ গুলো কি কি সে বিষয়ে এখন জানব-
- সেলাইয়ের জায়গা লাল হয়ে যাওয়া
- ফুলে যাওয়া
- পুজ বা দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হওয়া
- ব্যথা হওয়া
- জ্বর আসা
- সাধারণত প্রস্রাব করতে খুবই কষ্ট হয়
- জরায়ুর রাস্তা দিয়ে গন্ধ যুক্ত তরল বা রক্ত আসা
- এমনকি শরীর ফুলে যাওয়া
- ক্ষতস্থান অথবা পেটে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া
সিজারে পর ইনফেকশন হলে করণীয়
চিকিৎসকরা বলেন সিজারের ক্ষেত্রে ওটির নিয়ম মানা এবং প্রতিটি রোগের জন্য আলাদা আলাদা ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা জরুরী। সিজারের পর ইনফেকশন হলে-
- কাটা জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে
- সাবধানে চলাফেরা করতে হবে
- ময়লা বা ঘাম জমতে দেওয়া যাবে না
- সঠিকভাবে ড্রেসিং করতে হবে
- সঠিক সময়ে ঔষধ সেবন করতে হবে
- এন্টিবায়োটিক ডোজ মিস করা যাবে না
- ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বেশি বেশি খেতে হবে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভালো ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে হবে
- ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ ব্যবহার করতে
সিজারের পর খাবার তালিকা
সিজারের পরবর্তী সময়ের রোগীর খাদ্য তালিকার উপর বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। কেননা এ সময় সেলাই শুকানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার খুবই সাহায্য করে থাকে। সিজারের পর খাবার তালিকা হল-
- দুধ এবং ডিম জাতীয় খাবার খাওয়া
- ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়া
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
- কমলালেবু
- মালটা
- বেশি খাওয়া টক জাতীয় খাবার কম সেবন করা
সিজারের পর যেসব খাবার খাওয়া যাবেনা
সাধারণত সিজারের পর চিকিৎসক আপনাকে সব ধরনের স্বাভাবিক খাবারই খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিবেন। এসময় খাবার নিয়ে তেমন কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য পুষ্টিকর খাবার তালিকা মেনে চলতে হবে এবং কিছু খাবার কাঁটা এবং ক্ষত সারাতে ভূমিকা রাখে যেমন লেবু আমলকি পেয়ারা ভিটামিন সি যুক্ত খাবার ডিমযুক্ত খাবার।
- ভাজাপোড়া খাবার
- কার্বনেটেড ড্রিংক
- কোমল পানীয়
- চা কফি
- অ্যালকোহল
- ধূমপান
- বাঁধাকপি
- ফুলকপি
- ব্রকলি
- ডাল
- পেঁয়াজ এবং
- ঢেঁড়স
সিজারের পর বেল্ট ব্যবহারের নিয়ম
যারা সিজারের প কোমরে মেটারনিটি বেল্ট অনেকেই পরতে দেখা যায়। কিন্তু সেটি আসলেই ব্যথা কমাতে সাহায্য করে কিনা সে বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য নেই। তবে সিজারের পর বেল্ট পড়তেই হবে এমন কোন কথা নেই। তবে আপনি চাইলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এই বেল্ট ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নরম মোটা কাপড়ের বেল্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
অসুবিধা হলে না ব্যবহার করাই ভালো।
সিজারের পথ দ্রুত সেলাই শুকানোর উপায়
সিগারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ কি তা উপরে আমরা আলোচনা করেছি। এখন আমরা জানব সিজারের পর ইনফেকশন না হবার জন্য কিভাবে দ্রুত সিজারের সেলাই শুকানো যায়-
- কাটা স্থানটি সবসময় পরিষ্কার এবং শুকন রাখতে হবে
- পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে
- নিজের স্বাস্থের খেয়াল রাখতে হবে
- স্বাভাবিক কাজকর্ম করে শরীর স্বচল রাখতে হবে
- ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে
- প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটতে হবে
- রক্তজমার বাধা দিয়ে জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে হালকা কিছু ব্যায়াম করতে পারেন।
- বিভিন্ন ব্যায়াম করা যেতে পারে
- পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে
- ডেলিভারি পরবর্তী তিন মাস আয়রন ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেতে হবে
- পাশাপাশি মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট চাইলে সেবন করা যায়
- কোষ্ঠকাঠিন্যা এরাতে বেশি করে পানি পান
সিজারের পর কাটা জায়গায় ব্যথা হলে করণীয়
সিজারের পর কাটা জায়গায় কয়েকদিন বেশ ব্যথা থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যথা থাকতে পারে। সিজারের পর ইনফেকশনের এর এক্ষেত্রে ব্যথা নাশক হিসেবে প্যারাসিটামল অথবা আইবু প্রোফেন সেবন করতে পারেন। এগুলো ওভারটা কাউন্টার ঔষধ হিসেবে পরিচিত।
ফার্মেসি থেকে কিনে সাথে থাকা কাগজে নির্দেশনা অনুযায়ী সেবন করা নিরাপদ। আপনার আগে কোন স্বাস্থ্য বিষয় সমস্যা থাকলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালেও প্যারাসিটামল এবং আইবুপ্রোফেন সেবন করা যায়। তবে সাবধানতা হল এসপিরিন এবং কোডিং জাতীয় ঔষধ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা।
সিজারের পর যোনিপথে রক্তক্ষরণ সম্পর্কে তথ্য
অপারেশনের পর জরায়ু দিয়ে কিছুটা রক্ত যেতে পারে। সেটার মেয়াদ এক থেকে দেড় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এজন্য মেটানীটি ্প্যাড বা স্যানেটারি প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। ভারী রক্তপাত হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এ সময় ইনফেকশনের হাতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত যোনিপথে টেম্পোরের মতো কিছু ব্যবহার করে এবং সহবাস করা থেকে বিরত থাকুন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ বা সিজারের পর যে লক্ষণ গুলো দেখা দেওয়ার সাথে সাথে জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরী সেগুলো হলো-
- অতিরিক্ত জ্বর
- শরীরে কাঁপুনি বা খিচুনি দেখা যাওয়া
- অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশন
- সেলাইয়ের জায়গা লাল হওয়া ফুলে যাওয়া
- ব্যথা হওয়া
- সেখান থেকে দুর্গন্ধযুক্ত পানি বের হওয়া
- অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
- তীব্র পেটে ব্যথা
- পায়ে ব্যথা হওয়া
- অথবা পায়ে পানি জমে যাওয়া
- শ্বাসকষ্ট অথবা কাশি হওয়া
- প্রস্রাব ছুটে যাওয়া
- প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হওয়া
সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ
আজকে আমরা সিজারের পর ইনফেকশনের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারে।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –
- নরমাল ডেলিভারির জন্য করনীয়
- পিত্তথলির পাথর গলানোর ঔষধ, চিকিৎসা খরচ
- গর্ভবতী মায়ের গ্যাসের ঔষধ, ঘরোয়া উপায়