শবে কদর অর্থ কি?
ফরাসি শব্দ শব আর আরবি শব্দ লাইল যার অর্থ রাত। আর কদর শব্দের অর্থ অতিশয় মহিমান্বিত বা মর্যাদাপূর্ন রাত। শবে কদর বা লাইলাতুল কদর এর আভিধানিক অর্থ মহিমান্বিত রাত বা আতিশয় মর্যাদাপূর্ন রাত। মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় বড় নেয়ামত গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে এই মাহিমান্বিত রাত কেননা এই রাতে মহান আল্লাহ তায়লা তার সৃষ্টিকুলের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান এবং ক্ষমা করে দেন।
আজকে আমরা জানবো শবে কদর ২০২৩কবে? শবে বরাতের আমল, শবে কদর নামাজ কত রাকাত ও ফজিলত, শবে কদর এর নামাজের নিয়ত ও নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারি আলোচনা করা হবে।
শবে কদর ২০২৩ কবে
সাধারনত কোন একটি অনুষ্ঠান বা আয়োজন আমরা ক্যালেন্ডার দেখে ঠিক করলেও ইসলামে সব কিছু ঠিক করা হয় চাঁদ দেখে। অর্থাৎ শবে কদর বা ঈদের মত অনুষ্ঠান গুলো চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ঠিক করা হয়। আমাদের দেশে সাধারনত ২৭ রমজান দিবাগত রাতকে শবে কদর এর রাত ধরা হয়। সে হিসেবে চাঁদ দেখা কিমিটি বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে শবে কদর পালনের তারিখ প্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে শবে কদর পালন করা হবে ১৭ এপ্রিল ২০২৩ রোজ সোমবার, আরবি ক্যালেন্ডার হিসেবে ২৭ রমজান ও বাংলা ক্যালেন্ডারে বৈশাখ ০৩, ১৪৩০।
তবে একটা ব্যাপার আপনাদের স্পস্ট করে জানা উচিৎ শবে কদরের রাত নির্দিষ্ট করে বলা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। অর্থাৎ যদিও আমরা ২৭ রমজানে শবে কদর পালন করি কারন এই রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তবে প্রত্যেক মোমিনের রমজানের শেষ ১০দিন সকল বিজোড় রজনীতে শবে কদর তলব করা উচিৎ। অর্থাৎ কেউ যদি নিশ্চিতভাবে শবে কদর পেতে চায় তাহলে সে যেনো ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ রোজার দিবাগত রাত সমূহে আল্লাহর ইবাদনে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। তাহলেই ইনশা আল্লাহ তিনি লাইলাতুল ক্বদর বা মহিমান্বিত রাতকে খুজে পাবেন।
শবে কদর নামাজের নিয়ত
শবে কদর নামাজের আরবি নিয়তঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া’লা রাকআ’তাই ছালাতি লাইলাতিল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। তবে কারো যদি আরবি নিয়ত উচ্চারনে সমস্যা হয় তাহলে শুধু বাংলা নিয়ত উচ্চারন করেও নামাজ আদায় করতে পারবে। বাংলা নিয়তঃ আমি কেবলামুখি হয়ে আল্লাহ্ এর উদ্দেশ্যে শবে কদরের দুই রাকত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করছি – আল্লাহু আকবার। তবে কেউ যদি আরবি নিয়ত উচ্চারনে অপারগ হ্য তাহলে সে মনে মনে এতটুকু নিয়ত করলেই হবে যে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নয়ফ নামাজের নিয়ত করছেন। আর এটা শুধু শবে কদর নয় বরং যেকোন নামাজের ক্ষেত্রেই নিয়ত বাধ্যতামুল নয়। তবুও পাঠকের পক্ষে যদি সম্ভব হয় আপনি আরবি নিয়ত করতে পারেন।
শবে কদর নামাজ কত রাকাত
শবে কদরের নামাজের নির্দিষ্ট কোন পরিমান নেই। অর্থাৎ ইসলামে কোথাও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি শবে কদরের ঠিক কত রাকাত নামাজ পড়া উচিৎ। শবে কদরের রাতে দুই রাকাত করে নফল নামাজ পরতে হয়। আপনি আপনার শরিরের সামর্থ্য অনুযায়ী যত রাকাত সম্ভব সুন্দর করে পড়বেন। এই রাতে নামাজের পরিমানের চেয়ে নামাজ কত ভালোভাবে পড়ছেন সেটা বেশি গুরুত্ত্বপূর্ন। সুতরাং আলোচনা থেকে যা বুঝালাম তা হলো, শবে কদর বা লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট কোন পরিমান হয় না। দুই রাকাত করে নফল নামাজ যত সুন্দর করে আদায় করা যায় ততই শ্রেয়।
লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম
যেমনটা আমরা উপরে আলোচনা করেছি শবে কদরের নির্দিষ্ট কোন পরিমান নেই। অর্থাৎ আপনি দুই রাকাত করে যত বেশি সম্ভব নামাজ পড়তে পারবেন। তবে এই বিশেষ রাতে নামাজ পড়ার কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে। এখন আমরা জানবো শবে কদর এর নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম। শবে বরাতের নামাজ হচ্ছে নফল ইবাদত। নফল নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক সাওয়াবের কাজ। এই ভাবে কম্পক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা শ্রেয় এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই ভালো।
তবে কেউ যদি উপরে উল্লেখিত সুরার কোনটি না পারে সেক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার পর অন্য সব নামাজের মত নরমাল সূরা মিলিয়ে পড়লেও হয়ে যাবে। তবে যেহেতু শবে বরাতের নামাজ হচ্ছে নফল ইবাদত। তাই এই নামাজে যত বেশি সূরা ও দোয়া করা যায় ততই উত্তম।
শবে কদরের ফজিলত
শবে কদরের গুরুত্ত্ব ও ফজিলত পবিত্র কুরান ও হাদিস দ্বারা প্রমানিত ও সর্বজন স্বিকৃত। শবে কদর বা লাইলাতুল কদর এর মহত্তের বড় একটি কারন হলো এই রাতে আল্লাহ তায়াল কুরান নাজিল করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরানে বলেন, “আমি এই কুরানকে কদরের রাত্রিতে নাজিল করেছি। তুমি কি জানো কদরের রাত্রি কি? কদরের রাত্রি হাজার মাস হতে উত্তম ও কল্যানকর” (সুরা আল কদর। আয়াত ১-৩)। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ” তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো ” (মুসলিম)।
তাহলে উপরে কুরান ও হাদিসের আলোকে এটা পরিষ্কার যে শবে কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং এই রাতের ফজিলত অনেল।
শবে কদরের আমল
শবে কদরের নির্দিষ্ট কোন আমল নেই। তবে এই রাতে যত বেশি সম্ভব নফল ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখাই শ্রেয়। কেননা এই রাতে মহান আল্লাহ তায়াল তার সৃষ্টিকুলের দিকে করুনার দৃষ্টিতে তাকান তাই এই রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ ও কুরান তেলওয়াতের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রর্থনা করতে পারি।
বিশেষ করে এই রাতে এশা ও ফজরের নামাজ মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা উত্তম। কেননা হাদিসে এসেছে ” যে ব্যক্তি ফজর ও এশার সালাত জামাতে আদায় করলো সে যেনো সমস্ত রাত্রি নামাজ আদায় করলো ” (মুসলিম)
শবে কদরের দোয়া
শবে কদরের রাত্রিতে নফল নামাজ ও কুরান তেলওয়াতের পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমানে দোয়া করতে হবে। অর্থাৎ এই দিনে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ও মুসলিম জাহানের জন্য যত বেশি সম্ভব দোয়া করা উচিৎ কেননা এই দিনে দোয়া কবুল হওয়ার গ্যারান্টি মহান আল্লাহ তায়ালা নিজে দিয়েছেন।
হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি জানতে পারি, কোন রাত্রিটি লাইলাতুল কদর এর রাত্রি — তাহলে তখন কোন দোয়া পড়বো? তখন তিনি বললেন, তুমি বলো—
اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম; তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ও ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি)
- আরো পড়ুনঃ নামাজের নিষিদ্ধ সময়
- স্বপ্নে গোরস্থান দেখলে কি হয় | স্বপ্নে কবর দেখলে কি হয় | সত্য স্বপ্ন কিভাবে বুঝবো?
মন্তব্য
আজকে আমরা শবে কদর নামাজ কত রাকাত এবং ২০২৩ সালে সবে কদর কত তারিখ এই ব্যাপারে পরিষ্কার একটি ধারনা পেয়েছেন। আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।