রোজা রাখার নিয়ত
ইসলামের স্তম্ভ পাঁচটি। সেগুলো হলো- কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত। এদের মধ্যে রোজা অন্যতম। মুসলমানরা প্রতিবছর এক মাস সিয়াম সাধনা পালন করে আল্লাহর রহমত লাভের চেষ্টা করে। রোজাদারের মহত্ত্ব এত বেশি যে আল্লাহ তা’আলা কেয়ামতের দিন রোজাদারদের রাইয়ান নামক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তাই অনেকে রোজা রাখার নিয়ত এবং নফল বা মানতে রোজা রাখার নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায়।
আজকে আমরা রোজা রাখার নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং বিভিন্ন রোজার নিয়ত আরবি এবং বাংলা অর্থসহ তুলে ধরার চেষ্টা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
রোজার নিয়ত করা কেন জরুরী?
রোজার নিয়ত করা ফরজ। ফরজ রোজায় নিয়ত না করলে রোজা হবে না। অন্তরের সংকল্পকে নিয়োগ বলা হয় তা মুখে বলা জরুরি নয়। এ সম্পর্কে আল্লামা স্বামী রহমতুল্লাহি লিখেছেন নিয়ত হল আজম আর আজম হলো মনের দৃঢ় সংকল্প। নিয়ত হলো রোজার রোকন বা শর্ত। আর ইবাদতের সওয়াবও নিয়তের উপর নির্ভরশীল। হাদীস শরীফে আছে সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
রোজা রাখার নিয়ত
ফরজ রোজার আরবি নিয়ত
“নাওয়াই তু আন অসুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাদান আল মোবারাকি ফারদীর লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম”
অর্থ- হে আল্লাহ আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে আমার রোজা কবুল করো নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা এবং সর্ব জ্ঞানী।
রোজার নিয়ত বাংলায়
অনেকেই রোজার নিয়ত আরবিতে উচ্চারণ করতে পারেন না। তাদের জন্য সহজ ভাষায় যে যে ভাষায় নিয়ত করতে পারেন সে ভাষায় নিয়ত করবেন। শুধু মনে মনে রোজার সংকল্প করলেই রোজা আদায় হয়ে যাবে। যেমন- এভাবে নিয়ত করতে পারেন যে আমি কালকে ফরজ রোজাটি আদায় করব তাহলে নিয়ত হয়ে যাবে।
নফল রোজার নিয়ত
নিয়ত হচ্ছে মনের ইচ্ছা। ফরজ নফল কোন রোজার জন্য মুখে মুখে নিয়ত করতে হয় না। নিয়ত মনে মনে করতে হয় আর এটা মানুষের মনে তখনই হয় যে যখন মানুষ কোন কাজের ইচ্ছা পোষণ করে। যেমন কেউ যদি ভাবে আমি আগামীকাল রোজা রাখবে এটাই তার জন্য নিয়ত। এটা বাস্তবায়ন করার জন্য আপনাকে কোন বিশেষ বাক্যের মাধ্যমে নিয়ত করার প্রয়োজন নাই।
নফল নামাজের নিয়ত ও ফরজ নামাজের নিয়তের মতই।
কাজা রোজার নিয়ত
যদি কেউ কাজা রোজা পালন করতে চায় তাহলে সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ কাজা রোজা না হলে যে রমজানের রোজা পালন করবে মনে মনে সে রমজানের কথা উল্লেখ করবে। আর যদি অনেক বেশি কাজা রোজা জমা হয়ে থাকে তাহলে মনে মনে এভাবে নিয়ত করা যায় যেমন- আমি জীবনের প্রথম কাজা রোজা পালন করছি।
রোজার নিয়ত করার উত্তম সময়
ফরজ রোজার নিয়ত রাতে করা উত্তম যা হাদিসে আবি দাউদ ৩৩৩/১ এ বর্ণিত আছে। রাতে নিয়ত করতে কোন কারণে না পারলে দিনের সূর্য ঢলে পড়ার প্রায় এক ঘন্টা আগে নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে সহি বুখারী। অর্থাৎ ফরজ রোজার জন্য যোহরের ওয়াক্ত বা দুপুরের বারোটার আগেই নিয়ত করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সেহেরির পর নিয়ত করে ফেলেন।
পুরো রমজান মাসের জন্য একত্রে নিয়ত করা যাবে না বরং প্রত্যেক রোজার জন্য আলাদাভাবে নিয়ত করতে হয়। প্রতিটি রোজার ভিন্ন ভিন্ন আমল তাই প্রতিটি আমলের জন্যই নিয়ত করার জরুরী। যদিও রাতে রোজা নিয়্যত করলেও সুবেহ সাদিক পর্যন্ত পানাহারও স্ত্রী মিলনের অবকাশ থাকে তবে রোজার কোন ক্ষতি হবে এমন কাজ করা যাবে না। (সূরা বাকারা ১৮৭)
নফল রোজার নিয়ত কখন করতে হয়
নফল রোজার মধ্যে কিছু না কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। সব সময় নফল রোজার নিয়ত করা যাবে তবে যদি কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে নফল রোজা রাখার নিয়ত করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে নফল রোজা সুনির্দিষ্ট হয়ে থাকে তাহলে রোজা রাখার পূর্বেই রোজার নিয়ত করা উত্তম। অর্থাৎ ফজর হওয়ার আগে ব্যক্তি তার জন্য রোজার নিয়ত করে এটাই উত্তম কাজ। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণে নফল রোজা রাখলে রাতে নিয়ত করা উত্তম।
নিয়ত সম্পর্কে মাসআলা
আর কয়েকদিন পরে রমজান মাস চলে আসবে এ মাসের যথাযথ মর্যাদা জানতে এবং নিয়ত সম্পর্কে মাসালা জানতে অনেকে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আমরা আজকের রোজার নিয়তের মাসাআলা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নিয়োগ মুখে করা জরুরি কিনা?
নিয়তকে বলা হয় অন্তরের ইচ্ছা। রোজার নিয়ত করা ফরজ মুখে উচ্চারণ করা জরুরী না তবে উত্তম। যারা আরবি জানে না তাদের জন্য বাংলাতে নিয়ত করা উত্তম। অন্তরে রোজা রাখার ইচ্ছার সাথে সাথে মুখে এভাবে বলতে হবে যে আমি আগামীকাল রোজা রাখার নিয়ত করলাম।
নিয়ত কখন করা আবশ্যক?
রমজানের রোজার নিয়ত রাতে করাই উত্তম। যদি কেউ রাতে নিয়ত করতে না পারে বা মনে না থাকে তাহলে মধ্য আকাশ থেকে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পরা দেড় ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ফরজ রোজার নিয়ত করা যাবে। তবে শর্ত হলো সুবে সাদিকের পর থেকে নিয়তের পূর্ব পর্যন্ত রোজার পরিপন্থী কোন কাজ করা যাবে না।
রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সেহরি খেলে কি নিয়ত হয়ে যাবে?
হ্যা রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সেহরি খেলে সেটাই নিয়ত এর জন্য যথেষ্ট। এভাবে উল্লেখ করা আছে যে রোজার নিয়ত করার পর সুবহে সাদিক পর্যন্ত পানাহার স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি করা জায়েজ আছে।
পুরো রমজান মাসের জন্য একত্রে নিয়ত করা যাবে?
এভাবে একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয় অর্থাৎ পুরো রমজানে যেন একত্রে নিয়ত করা যাবে না। প্রত্যেক রোজার জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত করতে হবে। কেননা প্রতিটি রোজা ভিন্ন ভিন্ন আমল সেজন্য প্রতিটি রোজার জন্য নিয়ত হতে হবে ভিন্ন ভিন্ন।
কাজা রোজার নিয়ত কিভাবে করা যায়?
যদি একাধিক রমজানের কাজ হয়ে যায় তাহলে কাজা রোজা আদায় করার সময় কোন কোন রমজানে রোজা কাজা আদায় করছেন এটা নির্দিষ্ট করা জরুরী। তবে যদি কাজা রোজার সংখ্যা অনেক বেশি হয় এবং তার নির্দিষ্ট করা কঠিন হয় তাহলে জীবনের সর্বপ্রথম কাজা রোজা রাখলাম এভাবেও নিয়ত করতে পারেন। (আসবা ওয়ান নাজায়ের)
নিয়ত কখন করলে ধর্তব্য হবে?
নিয়ত এর সময় শুরু হয় পূর্বের দিনের রাতের অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে যেমন সোমবারে রোজা নিয়ত রবিবারের সূর্যাস্তের পর করা যাবে। এর আগে নিয়ত করলে রোজা সহিহ হবে না।
কোন কোন রোজার নিয়ত রাতে করতে হয়?
রমজানের কাজা রোজা, অনির্দিষ্ট নিয়তের রোজা, বিভিন্ন কাফফারা রোজা, যে নফল রোজা নিয়ত করার পর যা ভেঙে ফেলা হয়েছে এসব রোজার নিয়ত রাতেই করা আবশ্যক। সুদের সাদিকের পর করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
রোজার নিয়ত নিয়ে সম্পর্কে কিছু তথ্য
রোজার নিয়তের ক্ষেত্রে সাধারণত আমরা অনেকেই দুই ধরনের ভুলের শিকার হয়ে থাকি। যেমন কেউ কেউ শব্দগুলো মুখে উচ্চারণ করেন কিন্তু অন্তরে সংকল্প করেন না আবার অনেকে শব্দগুলো মুখে উচ্চারণ করেন এবং অন্তরেও কোন কল্পনা উপস্থিত করেন না। এই দুই শ্রেণীর কারোই রোজা আদায় হবে না। হাদিস আছে রোজার ক্ষেত্রে অন্তরে সংকল্প গ্রহণযোগ্য।
আরো পড়ুন – রোজা রাখার নিয়ত
বিশেষ দ্রষ্টব্য
আমরা রোজা নিয়ত এবং ইফতারের জন্য যে দোয়া পড়ে থাকি তা কুরআন এবং হাদিসে কোথাও বর্ণিত নেই। কুরআন হাদিসের রোজার নিয়ত এবং ইফতারে কোন দোয়া পাওয়া যায়নি বা বর্ণীত নেই। এই দোয়াগুলো কোন এক আল্লাহর অলি এই দোয়াগুলা পড়তেন এবং অন্যদেরকে শিক্ষা দেন যার অর্থ গুলো সুন্দর হওয়ায় সবার মাঝে দোয়া গুলো খুব বেশি পরিচিতি লাভ করে।
তাই আমরা এই দোয়াকে বাধ্যতামূলক ফরজ মনে করতে পারবো না। কিন্তু রোজার নিয়ত করা ফরজ যেটা মনে মনে করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। আপনি চাইলেই এসব দোয়া পড়তে পারেন আবার চাইলে নিজের মন মতো নিয়ত করেও পড়তে পারেন। কোন সমস্যা নেই রোজা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।
রোজা রাখার নিয়ত
আজকে আমরা রোজা রাখার নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি রোজা রাখার নিয়ত আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন দিতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন –