রোগা হওয়ার খাদ্য তালিকা
বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষই স্লিম থাকতে পছন্দ করেন। তাই যারা মোটা বা ওজন বেশি তারা রোগা হওয়ার খাদ্য তালিকা এবং ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চান। আজকে আমরা রোগা হওয়ার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এছাড়াও খুব সহজে রোগা হওয়ার টিপস শেয়ার করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
রোগা হওয়ার খাদ্য তালিকা সমূহ
রোগা হওয়ার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। নিচে রোগা হওয়ার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো। এসব খাবার খেলে কম সময়ে অতিরিক্ত মেদ বা ভুড়ি কমে যাবে। নিচে সেসব খাবার তালিকা বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো-
দই- ক্যালসিয়ামে ভরা এই দই ব্রেকফাস্ট ডিনার লাঞ্চ সবকিছুর জন্যই উপযোগী খাবার হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এমনকি স্ন্যাঙ্কস হিসেবেও দই খাওয়ার জন্য খুবই উপকারী। খুব সহজে রোগা হওয়ার জন্য ভাতের বদলে বিভিন্ন খাবারের সাথে দই খাওয়া যেতে পারে।
বাদাম- রোগা হতে গেলে খিদে চেপে রাখার কোন দরকার নেই। সব সময় খিদে লাগলে ভাজাপোড়া বা বাইরের খাবার না খেয়ে বাদাম খাওয়া যেতে পারে। এক মুঠ বাদাম খেলে পেট যেমন ভরে তেমনি বাদামে আছে প্রোটিন ফাইবার যা খিদে মেটাবে এবং ওজনের দিকেও খেয়াল রাখবে।
ডাল- অতিরিক্ত ডাল মোটা হবার কারণ কিন্তু পরিমাণ মতো ডাল খেলে শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী। কেননা ডালে রয়েছে প্রোটিন এবং ফাইবার যা রোগ হওয়ার জন্য ডায়েটে অবশ্যই ডাল রাখতে হবে।
শসা- লো ক্যালোরি সবজি হিসেবে যেসব নাম সবার আগে আসে শশা তাদের মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া শসা তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। যা শরীরকে হাইড্রেটের রাখতে সাহায্য করে। ভাত রুটি স্যান্ডউইচ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে শসা খাওয়া যায়। যার ফলে শরীরের পানির পরিমাণ পূর্ণ হয় এবং শরীর অতিরিক্ত মেদও জমতে দেয় না।
মুরগি- মুরগির মাংসে প্রোটিনে ভরপুর। ওয়ার্ক আউট এর আগে বা পরে শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় হলো প্রোটিন। আর এ প্রোটিন চাহিদা সবচেয়ে ভালো উৎস হল মুরগির মাংস তাই ওজনের খেয়াল রাখতে চিকেন ডায়েটে রাখতে পারেন।
আপেল- যেসব খাবার ওজন কমানোর জন্য খুবই উপকারী সেসব খাবার মধ্যে অন্যতম হলো আপেল। সবসময় ওজন কমানোর জন্য এমন সব খাবার খেতে হবে যাতে করে পেট ভরে পুষ্টি থাকে কিন্তু অতিরিক্ত ফ্যাট না থাকে। তাই আপেলে থাকে প্রচুর পরিমানে সি এবং ভিটামিন এ এবং প্রচুর পরিমাণে এনটিঅক্সিডেন্ট যা ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে।
লালাটা- রুটি ওজন কমানোর জন্য খাবার তালিকা অন্যতম লালাটা ঢেকেছাটা চাল ফাইবারে ভরপুর থাকে। পেট যেমন ভরায় তেমনি খেতে কম লাগে। ভাতের বদলে লাল আটা রুটি বা ব্রাউন বেড বা হোল হোয়াইট পাস্তা খাওয়া যেতে পারে।
দিন- প্রতিদিনের নাস্তা অবশ্যই ডিম রাখতে হবে। এতে করে পুষ্টি যেমন হবে তেমনি সারাদিন পেট ভরা ভরা লাগবে। এনার্জিও বাড়বে শুধু সাদা অংশ নয় নির্ভয়ে পুরা ডিমটাই খাওয়া যেতে পারে। এতে করে শরীরের মেদ খুব সহজে কমে যাবে।
সবুজ শাকসবজি- ওজন কমাতে হলে খাবারের তিন ভাগে দুই ভাগ সবজি থাকতে হবে। সবুজ শাকসবজি ওজন কমানোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রং যত সবুজ হয় স্বাস্থ্য ততই ভালো থাকে।
ওটস- ওটস পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি খাবার বানানোও সোজা দামও খুব কম। এক বাটি ওটসে থাকে চার গ্রাম ফাইবার এবং পাঁচ গ্রাম প্রোটিন। প্রতিদিন সকালে নাস্তায় ওটস খেলে ওজন কমানো নিয়ে তেমন চিন্তার কোন দরকার নেই।
ডার্ক চকলেট- চটজলদি রোগা হওয়ার জন্য স্নাক্স হিসেবে ম্যাজিক এর মত সাহায্য করে এই টাইপ চকলেট। এই ডার্ক চকলেট খাওয়ার পর মিষ্টি খেতে চাইলেও মিষ্টি হিসেবে এটা চকলেট খাওয়া যেতে পারে। করে শরীর স্বাস্থ্য হবে কোন ক্ষতি হয় না মেদ বাড়ে না।
পানি- শরীরের ওজন কমানো থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন রোগ দমনের জন্য পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সব সময় শরীরকে ডিহাইড্রোয়েড রাখতে পানির কোন বিকল্প নেই। চাইলে খাওয়ার আগে একগ্লাস পানি পান করা যেতে পারে। এতে করে হজম শক্তি ভালো হয় এবং খাবারের প্রতিও তেমন আগ্রহ কম থাকে।
রোগা হওয়ার সহজ উপায়
আজকে আমরা রোগা হওয়ার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তবে রোগা হওয়ার সহজ উপায় নিচে তুলে ধরা হলো-
ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া- খাবার খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে ভালো করে খাবার চিবিয়ে খেতে হবে। আর খাওয়ার সময় টিভি বা মোবাইল না দেখলে শরীরের জন্যই ভালো পেট ভরে গেলে হরমোন আমাদের মস্তিষ্কে সিগনাল পাঠায় যার ফলে খাওয়ার ইচ্ছা আর সে রকম হয় না। তবে যদি তাড়াতাড়ি খাবার খায় তাহলে সরিয়ে হরমোন গুলা ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না ফলে ওজন বেড়ে যায়।
খাবার তালিকায় প্রোটিন রাখা- প্রতিদিন খাবারের ডায়েটে প্রতিনের ঘাটতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কার্বোহাইড্রেটের এবং ফ্যাট কমলে প্রোটিন যথোপযুক্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন সব রকমের ডাল সয়াবিন দুধ পনির মাছ ডিম মাংসের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। তাই প্রতিদিন খাবার তালিকা এসব রাখতে হবে।
চিনি এড়িয়ে চলা- খাবারে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় জিনিস অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হয়। চা বা দুধ যেকোন ডেজার্ট থেকে চিনি খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। চিনির পরিবর্তে মিস্রি খাওয়া যেতে পারে দেখবেন অতি তাড়াতাড়ি মেদ কমে যাচ্ছে এবং রোগা হতে পারবেন।
নিজের কাজ করা- নিজেকে সবসময় সক্রিয় রাখতে হবে। মানে নিজের সব ধরনের ছোটখাট কাজ করা নিজেকেই করতে হবে। শুয়ে বসে না থেকে প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে হাঁটতে পারেন। একদিকে ব্যায়াম শরীর এর ওজন কমাতে পারে। তাই ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন ছোটখাটো কাজ করতে পারেন।
ঘুমানোর নির্দিষ্ট রুটিন- ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন ঘুমানো নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করতে হবে। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শরীরকে যথাযথ বিশ্রাম না দিলে পরবর্তীতে কাজ করার জন্য এনার্জি পাওয়া যাবে না।
ব্যায়াম করা- রোগা হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর হলো ব্যায়াম। প্রতিদিন নিয়মিত কিছু ব্যায়াম করলে অথবা ৩০ মিনিট করে হাটাহাটি করলে অথবা নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম রয়েছে যেমন সাঁতার কাটা সাইক্লিং এসব করলে খুব সহজে রোগা হওয়া যায়।
ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
বর্তমান সময়ে ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পারফেক্ট ডায়েট চার্ট পাওয়া যায়। নিচে আমরা আট ধরনের ডায়েট চার্ট উল্লেখ করব যার রোগা হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি কার্য করে ভূমিকা পালন করে-
এলকে লাইন ডাল ডায়েট- অ্যালকালাইন ডায়েটে মূলত খাবারের প্রভাব কম করে। খাবার হজম হওয়ার পর শরীরে এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এরকম ডায়েটে থাকে দুই থেকে তিন অংশ অ্যালকেলেজিং ফুট বা সবুজ সবজি বাকি এক তৃতীয়াংশ থাকে। এসি ডিফাইন খাবার অর্থাৎ খাসির মাংস চিজ এসব খাবারের ফলে শরীরের ভারসাম্য থাকে এবং শরীরের ওজন কমে যায়।
ডিউকান ডায়েট- ওজন কমানোর জন্য এই ডায়েটের গুরুত্ব অপরিসীম। সাত দিনের রোগা হওয়ার সহজ উপায় গুলোর মধ্যে এই ডায়েট অন্যতম। ডিওকার ডায়েট মানে খাবার চার্ট থেকে বাড়তি খাবার বাদ দিয়ে দেওয়া। এই ডায়েটে থাকে হাই প্রোটিন কম ক্যালরি বাদ পড়ে অতিরিক্ত ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট খাবার।
কোন নিউট্রেশন- কোন নিউট্রেশন তাদের জন্য যারা খেতে পছন্দ করেন। এই ডাইটে খাবারে কোন নিষেধ নেই যা ইচ্ছে তাই খাওয়া যায় তবে সেটা দিনে একবারই সারাদিন যাদের মুখ চলতেই থাকে যারা কিছু না কিছু খেয়ে থাকেন তাদের জন্য এই ডায়েট চার্ট। এ ডায়েট শুরু হয় ভারী খাবার দিয়ে যেখানে প্রাণিজ প্রোটিন থাকে।
এর পরবর্তীতে লাঞ্চে সাদা মাটা খাবার থাকে এবং হালকা ডিনার থাকে। তবে ডিনারে কোন ক্যালরি থাকা যাবে না।
ডেটক্স ডায়েট- খুব সহজের রোগা হওয়ার জন্য ডেটক্স খুবই পরিচিত। সাত দিনের এই ডায়েটে তিন দিন খেতে হবে শুধু ফল এবং তরল জাতীয় পানীয়। পরের বাকি দুদিন হালকা করে রান্না করার শাকসবজি। শেষ দুদিনে থাকবে প্রোটিন অর্থাৎ মাছ মাংস এবং ডিম খাবার তালিকায়।
লো ফরম্যাট ডায়েট- লো ফরম্যাট ডায়েট তৈরি করেন এক অস্ট্রেলিয়া নিউট্রেশানেস্ট। এ ডায়েটে তিনি কিছু বিশেষ সবজি ফল দুগ্ধজাত খাবার মাশরুম ডাল অল্প পরিমাণে মিষ্টি খাবার রেখেছেন। সব ধরনের ফলে ক্ষেত্রে খাওয়া যাবেনা ফলের তালিকায় থাকতে হবে আঙ্গুর কলা আনারস কমলা লেবু টমেটো।
ওয়াকিনাওয়া ডায়েট- ওয়াকিনাওয়া ডায়েট হল সব ধরনের খাবারের ব্যালেন্স হিসেব করা ডায়েট। এই ডায়েটে থাকে শাক সবজির ফল মাছ-মাংস শস্য বাদামের তালিকা কখন খাবেন বা কি পরিমান খাবেন সেটা অবশ্যই একজন ডায়েটিশিয়ান নির্ধারণ করে দিবেন।
ব্লাড টাইপ ডায়েট- এ ডায়েট চার্ট তৈরি হয় রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী ও গ্রুপের লোকেরা মাছ-মাংসের সবজি সবরকম খেলেও একদম খেতে পারবেন না দুগ্ধজাত জাতীয় খাবার। বি গ্রুপের সবার জন্য বাদ দিতে হবে মুরগির মাংস ভর্তা পিনাট। রোগা হতে হলে এই গ্রুপের লোকদের বেশি বেশি শাক খেতে হবে দুগ্ধজাত খাবার খাসির মাংস বিয়ার এসব খাওয়া চলবে না।
পালেও ডায়েট- পালেও ডায়েট এক কথায় সাদামাটা ডায়েট বলা যায়। কেননা এই ডায়েটে যেসব খাবার থাকবে সেখানে কোন তেল মসলা এমনকি লবণও থাকবে না। কার্বোহাইড্রেট খাবারের সঙ্গে সঙ্গে বাদ দিতে হবে সব রকমের প্রসেসড ফুড এবং কোমল পানীয়।
রোগা হওয়ার খাদ্য তালিকা
আজকে আমরা রোগা হওয়ার খাদ্য তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- মোটা হওয়ার ভিটামিন সিরাপ ও ক্যাপসুল
- আমি চিকন হবো কিভাবে, চিকন হওয়ার উপায় কি
- স্থায়ীভাবে মোটা হওয়ার ইসলামিক উপায় | মোটা হওয়ার প্রাকৃতিক ও কার্যকরি খাবার