বিবাহের খুতবা আরবী
বিবাহ আল্লাহতালার পক্ষ থেকে নারী এবং পুরুষদের একত্রে বসবাসের জন্য একটি বৈধ উপায়। আল্লাহতালা দুনিয়াতে যেসব রহমত নাযিল করেন তার বেশিরভাগ রহমত স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্কের উপর নাযিল করেন। বিয়ের জন্য খুতবা প্রয়োজন বিবাহের খুতবা এবং বিবাহের খুতবা বাংলা দুইভাবে অনেকেই জানার জন্য সার্চ করে থাকেন।
আজকে আমরা বিবাহের খুতবা আরবি এবং বিবাহের খুতবা বাংলা দুইভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করব। আশা করছি বিবাহের খুতবা আরবী সম্পর্কে আর্টিকেলটা আপনাদের ভালো লাগবে।
- আরো পড়ুন – চাশতের নামাজের সময়, নিয়ত ও দোয়া
বিবাহের খুতবা আরবী
বিবাহের খুতবা আরবী তে নিচে বিস্তারিত অনুবাদ সহ উল্লেখ করা হল-
উচ্চারন- ইন্নাল হামদা লিল্লাহি নাহমাদুহু ওয়া নাস্তাইনুহু ওয়া নাস্তাগফিরুহু ওয়া নাঊযুবিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা ওয়ামিন সায়্যিআ-তি আ’মালিনা, মাই ইয়াহদিহিল্লাহু ফালা মুদ্বিল্লালাহ, ওয়া মাই ইউদ্বলিল ফালা হাদিয়া লাহ।
ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহ, আল্লাযি উরসিলা ইলান্না-সি কা-ফ্ফাতাম বাশীরাও ওয়া নাযিরা।
ওয়া দা-ইয়ান ইলাল্লা-হী বিইযনিহী ওয়া সিরাজাও ওয়া ক্বামারাম মুনীরা।
আম্মা বা’দ: ফাআঊযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম। বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম।
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানুত তাকুল্লাহা হাক্কা তুকাতিহি ওয়ালা তামুতুন্না ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমুন।
ওয়াক্বালা তা’য়ালা—ইয়া আইয়্যুহান্নাসুত তাকু রাব্বাকুমুল লাযি খালাকাকুম মিন নাফসিও ওয়াহিদাতিও ওয়া খালাকা মিনহা যাওজাহা ওয়া বাসসা মিনহুমা রিজালান কাসিরাও ওয়া নিসা, ওয়াত তাকুল্লাহাল্লাযি তাসা আলুনা বিহি ওয়াল আরহাম, ইন্নাল্লাহা কানা আলাইকুম রাকিবা।
ওয়াক্বালা তা’য়ালা—ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানুত তাকুল্লাহা ওয়া কূলূ কাওলান সাদিদা। ইউসলিহ লাকুম আ’মালাকুম ওয়াগ ফির লাকুম যুনুবাকুম, ওয়ামাই য়ূতিয়িল্লাহা ওয়া রাসূলাহু ফাকাদ ফাযা ফাওযান আযিমা।
ওয়াক্বা-লা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম: ইযা তাযাওয়াযাল আব্দু ফাকাদ ইসতাকমালা নিসফাদ দ্বীন‚ ফালইয়াত্তাক্বিল্লাহা ফীন নিসফিল বাক্বী। (সহীহ হাদীস শুয়াবুল ইমান)
ওয়াক্বা-লা আলাইহিস সালাতু ওয়াসসালাম: আন্নিকাহু সুন্নাতী, ফামান রাগিবা আন সুন্নাতি ফালাইসা মিন্নী। (সহীহ)
বাংলা অনুবাদ
নিশ্চয়ই প্রশংসা আল্লাহ র জন্য। আমরা তার প্রশংসা করছি। তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা আমাদের নফসের অকল্যাণ থেকে এবং আমাদের খারাপ কর্মগুলো থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত করেন তাকে কেউ বিভ্রান্ত করতে পারেনা, আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তাকে কেউ হেদায়াত দিতে পারেনা এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে সত্যিকারে ভয় করো এবং মুসলিম না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না।
হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে একটি প্রাণ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার জোড়াকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। ভয় করো যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট জিজ্ঞাসা করো এবং সতর্ক থাকো রক্ত আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তিক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন। (সূরা নিসা: ১)
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো। তিনি তোমাদের কর্মক্ষেত্র ত্রুটি মুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করে। (সূরা আহযাব: ৭০-৭১)
আনাস রাঃ হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা যখন বিবাহ করে তখন সে তার অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ করে নেয়। অতএব তাকে তার অবশিষ্ট অর্ধেক দ্বীনের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা উচিত।
বিবাহের আরেকটি খুতবা
বিবাহের খুতবা আরবী উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কাজি চাইলে উপরোক্ত (ومن يطع الله ورسوله فقد فاز فوزا عظيما) ‘ফাকাদ ফাযা ফাওযান আযিমা’ বলার পর নিম্নোক্ত বিবাহের খুতবা আরবী আয়াত ও হাদিসটি পড়তে পারেন-
উচ্চারন- আম্মা বা’দ, ফা ইয়া আইয়্যুহাল মুসলিমুন, কালাল্লাহু তায়ালা, ওয়ামিন আয়াতিহি আন খালাকা লাকুম মিন আনফুসিকুম আযওয়াজান লিতাসকুনূ ইলাইহা ওয়াজা আলা বাইনাকুম মাওয়াদ্দাতাও ওরাহমাহ, ইন্না ফি যালিকা লা আয়াতিল লিকাওমিই ইয়াতাফাক্কারুন। (সূরা রূম ২১)
ওয়াকালা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আন নিকাহু মিন সুন্নাতি, ফামান লাম ইয়াফআল বিসুন্নাতি ফালাইসা মিন্নী। ওয়াতাযাওয়াজু ফাইন্নি মুকাসিরুন বিকুমুল উমাম।
ক্বলা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইয়া মা’শারাশ শাবাব, মানিস তাত্বায়া মিনকুমুল বায়াতা ফালিয়াতাযাওয়াজ। ফাইন্নাহু আগায্যু লিল বাসারি ওয়া আহসানু লিল ফারজি ওমান লাম ইয়াস তাত্বি ফা আলাইহি বিস সাওম।
আইয়্যুহাশ শাবাব,বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা ওয়াজামাআ বাইনাকুমা ফি খাইর।
বাংলা অনুবাদ
অতঃপর হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: এবং তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম যে, তিনি তোমাদের থেকেই তোমাদের সঙ্গী-সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন। যেন তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন পারস্পরিক ভালোবাসা ও দোয়া। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। (সূরা রূম: ২১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিয়ে আমার সুন্নত বা রীতি। কাজেই যে ব্যক্তি আমার সুন্নত পালন করবে না, সে আমার সাথে সম্পর্কিত নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা বিবাহ করো, কারণ আমি আমার উম্মতের বর্ধিত সংখ্যা দিয়ে অন্যান্য জাতির কাছে গৌরব প্রকাশ করব।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কারণ বিয়ে দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যে বিয়ে করতে সামর্থ রাখে না সে যেন রোজা রাখে। (সহিহ মুসলিম)
হে যুবক! আল্লাহ তায়ালা তোমার উপর বরকত দিক এবং চিরকল্যাণের সহিত তোমাদেরকে একত্রিত রাখুন। আমিন।
বিবাহ পড়ানোর সুন্নতি পদ্ধতি
বিবাহের খুতবা আরবী এবং সাধারণত অনেকেই বিবাহ পড়ানোর সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। নিচে বিবাহ পড়ানো সুন্নতি পদ্ধতি সম্পর্কে তুলে ধরা হলো-
১। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র পাত্রীর সম্মতি অবশ্যই থাকতে হবে। সম্মতি না থাকলে কোন অবস্থায় ছেলে বা মেয়েকে বিয়ের জন্য বাধ্য করা উচিত নয়।
২। বিবাহের জন্য মসজিদ এবং জুমার দিন হওয়া উত্তম এতে ঘোষণা এবং জনসমাগম বেশি হয়। তবে অন্যদিন অন্য স্থানেও বিবাহ পড়ানো যায়।
৩। বিবাহ পড়ানোর সুন্নত পদ্ধতি হল প্রথমে কোণের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
৪। বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী ব্যবহার করলে মুখ খোল যারা সারা জীবন একসঙ্গে ঘর সংসার করবে আগে তাদের সম্মতি থাকতে হবে। কোন অবস্থায় ছেলেমেয়েদেরকে তাদের অসম্মতিতে বিবাহ দেয়া উচিত না। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেন হে ঈমানদারগণ তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে। (সূরা নিসা আয়াত ১৯)
৫। এরপর অভিভাবক যিনি বা যিনি বিবাহ করাবেন তিনি বিবাহের খুতবা পাঠ করবেন।
৬। এরপর মেয়ের অভিভাবক বরের সামনে যে মেয়ের পরিচয় এবং মোহরানার পরিমাণ উল্লেখ করবেন।
৭। তারপর তিনি বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবেন অথবা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি হবু বরের কাছে বিবাহের প্রস্তাব তুলে ধরবেন এটাকে ইসলামের ভাষায় হিজব বলা হয়।
৮। যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি উপস্থিত মজলিসে হবু বরের উদ্দেশ্যে বলবেন যে অমুকের মেয়ে অমুককে এত টাকা মোহরানা আপনার কাছে বিবাহ দিলাম। আপনি বলুন কবুল বা আমি গ্রহণ করলাম।
৯। বিবাহ পড়ানোর সময় কমপক্ষে দুজন সাক্ষী উপস্থিত থাকতে হবে।
১০। তখন বর উচ্চস্বরে কবুল অথবা আমি গ্রহণ করলাম বা সম্মতির সুযোগ আলহামদুলিল্লাহ বলবে। এভাবে তিনবার বলা উত্তম। শুধু বরকে কবুল বলাতে হয় কনের কাছ থেকে কনের অভিভাবক শুধু অনুমতি নিবেন।
১১। সাক্ষী দেওয়া উপস্থিতিতেই লেখার মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হবে।
১২। এরপর উপস্থিত হবে আলাদাভাবে সুন্নতি দোয়া পাঠ করবে।
বিবাহ পড়ানোর দোয়া
বিবাহের দোয়া টি হল-
বারাকাল্লাহু লাকা ওয়া বারাকাত ওয়াজ বাইনা ঘুমা ফি খাইএর
অর্থ- আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন তোমার উপর বরকত দিন এবং তোমাদের দুজনকে কল্যাণের সঙ্গে মিলিত করুন।
বিবাহের খুতবা আরবী
আজকে আমরা বিবাহের খুতবা আরবি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- সকাল সন্ধ্যার দোয়া ও শ্রেষ্ঠ আমল
- মনের ইচ্ছা পূরণের দোয়া আমল, নামাজ ও তাসবিহ
- সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম, দোয়া ও নিয়ত