বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
বর্তমান সময়ে অনেকেই পোষা পানি প্রাণী নিজের বাসা বাড়িতে লালন পালন করেন। তার মধ্যে অন্যতম হলো বিড়াল। এছাড়াও অনেক সময় পোষা ছাড়াও বিড়াল অনেককেই কামড় দেয় বা আচড়ায়। বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় সে সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান।
আজকে আমরা বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লাগবে।
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
সাধারণত বিড়াল কামড়ানোর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই টিকা দিতে হয়। গৃহপালিত এই ধরনের জলাতঙ্ক হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। তাই জলাতঙ্ক থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দ্রুত আমাদের মাংসপেশিতে কিংবা চামড়ায় টিকা গ্রহণ করা উচিত। যেকোনো ব্যক্তিকে যদি বিড়াল কামর বা আঁচড় দেয় সে ক্ষেত্রে প্রথম দিন তৃতীয় দিন সপ্তম দিন ১৪ তম দিন এবং ২৮ তম দিনে টিকা দিতে হয়।
এছাড়াও গৃহপালিত অন্যান্য পশু যেমন গরু কুকুর ইদূর বা অন্যান্য প্রাণী কামড় দিলে জলাতঙ্ক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই সাথে সাথে টিকা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া বিড়াল বা অন্য কোন গৃহপালিত প্রাণী যদি কামড় দেওয়ার পর ক্ষত না হয় রক্ত বের না হয় তাহলে টিকা না দিলেও সমস্যা হবে না।
পোষা প্রাণী কামড়ালে করণীয়
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় তা আমরা জানলাম। এখন পোষা প্রাণী কামড়ালে করণীয় কি তা নিচে উল্লেখ করা হল-
- যদি বিড়ালসহ অন্য কোন পোষা প্রানী কামড় দেয় সে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত বের হয় তবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে হবে।
- আর যদি গত পাঁচ বছরে এ ধরনের কোন টিকা দেওয়া না থাকে তবে অবশ্যই এমন ব্যক্তি কিংবা শিশুর ক্ষেত্রে কামড়ানোর প্রথম দিন তৃতীয় দিন ১৪ তম দিন এবং ২৮তম দিনে টিকা নিতে হবে।
- যদি পাঁচ বছরের মধ্যে এ ধরনের কোন টিকা নেওয়া থাকে তবে প্রথম এবং তৃতীয় ডোজ নিলেই যথেষ্ট হবে।
- যদি কোন ভাবে ইমিউনোগ্লোবিন টিকা না পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে প্রথম দিনে দুই বাহুতে দুইটি টিকা গ্রহণ করতে হবে। এরপর ৩,৭,১৪ এবং ২৮ তম দিনের টিকা গ্রহণ করতে হবে।
- যারা বিড়াল লালন পালন করে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি কামড়ের পূর্বেই শূন্য এবং তিন তম দিনে দুইটি টিকা নিয়ে রাখতে হবে।
- পরবর্তীতে আক্রান্ত হলে ০,৭,২১ দিনে নিত্বে হবে।
- কামড়ের পর দশ দিন প্রাণী সুস্থ থাকলে ১৪ এবং ২৮ দিনে টিকা নিলেও চলবে।
বিড়াল কামড়ালে কি ভ্যাকসিন নিতে হবে?
অবশ্যই বিড়াল কামড়ালে ভ্যাকসিন নিতে হবে। তবে যদি ক্ষতস্থানে অল্প ক্ষত হয় বা রক্ত বের না হয় সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে এরপর ক্ষতস্থানে স্যানিটাইজার কিংবা চাইলে পানি ব্যবহার করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। তবে অতিরিক্ত ক্ষত হলে অবশ্যই টিকা নিতে হবে।
কেননা বিড়াল এবং পোষা প্রানী কামড় দিলে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। বাংলাদেশে বর্তমানে সাধারণত তিন ধরনের বিড়ালের ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে।
- Quadricat
- Rabisin
- Nobivac felun 1 hcpch
বিড়ালের ভ্যাকসিনের দাম
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শুরু করে বড় বড় মেডিসিনের দোকানে এই বিড়ালের ভ্যাকসিন বা জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন গুলো পাওয়া যায়। একেক জায়গায় ভ্যাকসিন গুলোর দাম একেক রকম হলেও এ ভ্যাকসিন গুলোর নির্দিষ্ট দাম হলো Quadricat ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা, Nobivac ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। রেবি সিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।
এছাড়াও জায়গা এবং দোকানের ভিন্নতার কারণে এই টিকা গুলোর দাম কম বেশি হতে পারে।
বিড়ালের টিকা কোথায় পাওয়া যায়
বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ক্লিনিক থেকেই ভ্যাকসিন গুলো দেওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন হসপিটাল কিংবা বড় বড় ঔষধের ফার্মেসীগুলোতে বিড়াল কামড়ালে ভ্যাকসিন গুলো পাওয়া যায়। এছাড়ো বিভিন্ন পোষা প্রাণী কামড় দিলে জলাতঙ্ক রোগ থেকে মুক্তির জন্য ভ্যাকসিন গুলো সেখানে পাওয়া যায়।
বিড়াল কামড়ানোর টিকার ধরন এবং ডোজ
জলাতঙ্কের দুই ধরনের টিকা রয়েছে।
১। ধরনের টিকা মাংসপেশীতে এবং
২। অন্যটি চামড়া দিতে হয়
চামড়া দেওয়ার টিকা বেশি কার্যকর হয়। কম খরচ হলেও প্রশিক্ষিত ডাক্তারের অভাবে মাংসপেশির টিকাই বেশি প্রচলিত হয়। সাধারণত যারা গত ৫ বছরে কোন টিকা নেন নি এমন কোন ব্যক্তি বা শিশুর জন্য শূন্য অর্থাৎ কামড় নয় টিকা দেওয়ার দিন ৩, ৭ ১৪ এবং ২৮ তম দিন টিকা দিতে হয় এবং আরেকটি সূচি হচ্ছে শূন্যতম দিনে দুই বাহুতে দুটি টিকা এবং ৭ এবং ২১তম দিনে একটি করে টিকা দিতে হয়।
বিড়াল কামড়ানোর টিকার ডোজ
পশু আক্রমণের সঙ্গে অন্তত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিষেধক টিকা নিয়ে নেয়া উচিত। কোন কারণে ইমিউনোগ্লোবিং টিকা না পাওয়া গেলে শূন্যতম দিনে দুই বাহুতে দুই টাকা নিতে হবে। ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮ তম দিনে করতে হবে। পাঁচ বছরের মধ্যে টিকা নেওয়া থাকলে শূন্য এবং তৃতীয় দিনেই হয়ে যাবে।
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির ক্ষেত্রে কামড়ের আগেই টিকা শূন্য এবং তৃতীয় দিন এরপর আক্রান্ত হলে শূন্য, সাত এবং ২১ থেকে ২৮ তম দিন টিকা দিতে হবে। শুধুমাত্র গৃহপালিত কুকুর এবং বিড়ালের কামড়ের পর যদি সেই প্রাণী পরবর্তী ১০ দিন সম্পূর্ণ থাকে তবে ১৪ এবং ২৮ তম দিনে টিকা না দিলেও চলবে।
বিড়াল কামড় দিলে করনীয়
অনেকেই বিড়ালে আঁচড় বা কামড় দেওয়ার পর বুঝতে পারেন না কি করবেন। বিড়াল কামড় দিলে করনীয় কি বা বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় সে সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো-
ক্ষতের গভীরতা দেখা- মাঝে মধ্যে বিড়ালের আঁচড় লাগলেও তেমন কোন ক্ষত তৈরি হয় না। সে ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই তবে অনেক ক্ষেত্রে বিড়াল কামড় দিলে ক্ষতস্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং ক্ষত গভীর হলে বা অতিরিক্ত রক্তপাতে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এন্টিবায়োটিক- ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে বিড়াল কামড়ে দেওয়ার পরপরই তো এনটিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্যাভলন ডেটল বা স্যানিটাইজার বেশ ভালো কাজ করে। তবে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এরপর রক্তপাত বন্ধ করতে ব্যান্ডেজ বা গজ কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।
রক্তপাত বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যান্ডেজ খুলে দিতে হবে। কেননা বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষতস্থানে ধনুষ্টংকারের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। এছাড়া এন্টিবায়োটিক মলম বা ক্রিম ব্যবহার না করাই উত্তম।
ক্ষতস্থান পরিস্কার রাখা- রেবিস ভাইরাসরা জলাতঙ্কের জীবাণুর রোধে সবচেয়ে কার্যকর হলো সাবান পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করা। অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক সলিউশন এই জীবন জীবাণু ধ্বংস করতে পারে না। তাই ক্ষত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাবান পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে জীবাণু সংক্রমিত হয় না।
সংক্রমণ- ক্ষত যদি গভীর না হয় এতে জীবানু সংক্রমিত হতে পারে। ফলে হালকা ক্ষত দেখে অবহেলার চোখে দেখা যাবে না। ক্ষতস্থান ফুলে গেছে কিনা সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ ছাড়া লাল হয়ে গেলে রক্তপাত বন্ধ না হলে বা তীব্র ব্যথা হলে বুঝতে হবে জীবাণু সংক্রমিত হচ্ছে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
জ্বর- বেশিরভাগ সময় আচড়ের ফলে বয়স্কদের তেমন কিছু না হলেও ছোটদের জ্বর আসতে লক্ষ্য করা যায়। এটি জীবাণুঘঠিত কারণে হয়ে থাকে। একে বলে ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ জ্বর আসা ফোসকা পরা পিঠ বা পিঠ পেট ব্যথার মত বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বাচ্চাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে নতুবা বড় ধরনের সমস্যার তৈরি হতে পারে।
টিকা দেওয়া- বিড়াল কামড়ালে ক্ষতস্থান রক্ত পড়লে বা ব্যথা হলে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে টিকা দেওয়াই উত্তম। পোষা বিড়াল হলেও টিকা দিলে ধনুষ্টংকার রোগের সমস্যা জলাতঙ্ক রোগের চিন্তা থাকে না।
যেসব প্রাণী থেকে জলাতঙ্কের জীবাণু ছড়ায়
গৃহপালিত বিভিন্ন জীবজন্তু থেকেই জলাতঙ্ক জীবাণু ছড়াতে পারে। এইসব প্রাণী আঁচড় বা কামড় দিলে অথবা এসব প্রাণের বিভিন্ন ধরনের রোগের মাধ্যমেও জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। যেমন-
- কুকুর
- বিড়াল
- গরু
- মহিষ
- ছাগল
- ভেড়া
- শুকোর
- গাধা
- ঘোড়া
- উট
- শেয়াল
- বানর
- নেকড়ে
- বাদুর
- ইঁদুর
- কাঠবেড়ালি
- চিকা
- বন বিড়াল
- খরগোশ এসব প্রাণী থেকে খুব সহজেই জলাতঙ্ক হতে পারে
বিড়াল কামড়ানো সম্পর্কে সতর্কতা
অনেকে বিড়ালে কামড়ালে অনেক ধরনের কুসংস্কার থেকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন। যা চামড়া এবং শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
- হাত দিয়ে কাঁটা স্থান সরাসরি স্পর্শ করা যাবে না
- মাটি কয়লা তেল চক লাগানো যাবে না
- সেলাই করা যাবে না
- বৈদ্যুতিক কোটারি বা পুড়িয়ে দেওয়া যাবেনা
- টিকা এবং ইমিউনোগ্লোবিন একই সিরিজে ব্যবহার করা যাবে না
- দেওয়ার আগে ত্বক পরীক্ষা করে নিতে হবে
জলাতঙ্ক টিকা সম্পর্কে সতর্কতা
জলাতঙ্ক মস্তিষ্কের এমন একটি ভয়ংকর অসুখ যেটা প্রতিরোধের জন্য কোন ধরনের অবহেলা করাই উচিত নয়। অন্তঃসত্ত্বায় স্তন্যদানকারী মা নবজাতক শিশু এবং বয়স্করাও এটিকে নিতে পারবেন। কোন রকমের ভয় বা অবহেলা করে টিকা অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি নিয়ে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয়
আজকে আমরা বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে ফ্রেন্ডস এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং বিড়াল কামড়ালে কত দিনের মধ্যে টিকা দিতে হয় আর্টিকেল সম্পর্কে কোন মন্তব্য মতামত অথবা পরামর্শ থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমরা অতি শীঘ্রই রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন নতুন নতুন সব আপডেট ইনফরমেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ
- চিকেন পক্স হলে কি গোসল করা যাবে
- গর্ভবতী হওয়ার ঔষধের নাম [১০০% কার্যকরী]
- অয়েলি স্কিনের জন্য সিরাম কোনটা ভালো